মতামত
ইসরায়েলের কারাগার ও গাজায় শান্তির আশা
ইসরায়েলের হাতে আটক ফিলিস্তিনি বন্দীরা ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হলেও বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো উচ্চবাচ্য নেই। সব ফিলিস্তিনিকে মুক্তি না দিলে কেন শান্তি প্রতিষ্ঠার আশা করা যায় না, তা নিয়ে লিখেছেন ডেডিভ হার্স্ট
রোবেন আইল্যান্ডের প্রবেশদ্বারে একটি ফলকে তার সবচেয়ে বিখ্যাত বন্দী ৪৬৬৬৪ নম্বর কয়েদির একটি উক্তি খোদাই করা আছে; ‘কারাগারের ভেতর না গেলে কোনো জাতিকে সত্যিকার অর্থে চেনা যায় না। জাতি নিজের সেরা নাগরিকদের সঙ্গে কেমন আচরণ করে, তা দিয়ে নয়; বরং সবচেয়ে নিচের অবস্থানে থাকা মানুষদের প্রতি তার আচরণ দিয়ে বিচার করা উচিত।’ নেলসন ম্যান্ডেলার এই কথাগুলো আজ যেন ইসরায়েল রাষ্ট্রের ওপর মৃত্যুঘণ্টার মতো বাজছে।
দুই বছর আগে গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের সময় ‘নিখোঁজ’ হওয়া ৩৪৫ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ এখন খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মরদেহগুলো এমনভাবে বিকৃত যে মাত্র ৯৯ জনকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
মিডল ইস্ট আইয়ের সাংবাদিক মাহা হুসাইনি যুদ্ধের পুরো সময়জুড়ে গাজা থেকে প্রতিবেদন পাঠিয়েছিলেন; তিনি বর্ণনা করেছেন কীভাবে পরিবার ও ফরেনসিক চিকিৎসকেরা শোকাবহ পরিস্থিতিতে দেহ শনাক্ত করার চেষ্টা করছেন, যদিও মৃত ব্যক্তিরা কীভাবে মারা গেছেন তা জানার মতো তাঁদের কাছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই।
► জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির নভেম্বরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের ‘ব্যাপক ও সংগঠিত নির্যাতনের একটি বাস্তবিক রাষ্ট্রীয় নীতি’ আছে।
► ইসরায়েল এমন একটি পথে হাঁটছে, যা রাষ্ট্রটিকে স্থায়ী যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে, ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে এবং আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের সঙ্গেও।
মুহাম্মদ আয়েশ রামাদান তাঁর ভাইয়ের দেহাবশেষ শনাক্ত করেন। আহমেদে যুদ্ধের প্রথম দিন থেকেই নিখোঁজ ছিলেন। তিনি দেখতে পান, দেহটি পুড়ে গেছে, ছয় বা সাতটি গুলিবিদ্ধ চিহ্ন রয়েছে এবং বুক থেকে নিচে দীর্ঘ উল্লম্ব চেরা দাগ আছে। তাঁর ভাইয়ের একটি পায়ের আঙুলও কাটা ছিল।
ফিলিস্তিনি চিকিৎসকদের মতে, ডিএনএ পরীক্ষার অজুহাতে ইসরায়েলি চিকিৎসকেরা নিয়মিতভাবেই বন্দীদের হাতের ও পায়ের আঙুল কেটে ফেলেন। অন্যান্য মরদেহেও নির্যাতনের স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। উত্তর গাজার বেইত হানুনের জয়নাব ইসমাইল শাবাত জানতে পারেন যে তাঁর ৩৪ বছর বয়সী নিখোঁজ ভাই মাহমুদের তর্জনী কাটা, হাত দুটি পেছনে বাঁধা, ধাতব কিছু দিয়ে বেঁধে রাখার চিহ্ন পায়ে দাগ ফেলে দিয়েছে। তাঁর মুখ এমনভাবে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত যে খুলি ভেঙে গেছে, আর গলায় ঝোলানোর দাগ ছিল।
জয়নাব ইসমাইল শাবাত বলেন, ‘স্পষ্ট ছিল যে তাঁকে বাঁধা অবস্থায়ই হত্যা করা হয়েছে। তাঁর শরীর সম্পূর্ণ উলঙ্গ ছিল। ঊরুতে গুলির চিহ্ন ছিল; আর বুকে ছোট ছোট কাঠের টুকরো পাওয়া গেছে।’
ধর্ষণ ও নির্যাতন
গত দুই বছরে ইসরায়েলি হেফাজতে কত ফিলিস্তিনি মারা গেছেন, তার হিসাবে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস-ইসরায়েলের কাছে সেনাবাহিনী ও কারা কর্তৃপক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সংখ্যাটা ৯৮। তবে সংস্থাটি বলছে এটি মারাত্মকভাবে কম দেখানো হয়েছে, গাজা থেকে আসা আরও শত শত বন্দী এখনো নিখোঁজ।
বেঁচে ফেরা বন্দীরা ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা বিটসেলেমের কাছে দেওয়া সাক্ষ্যে বলা হয়, ২০২৩ সালের নভেম্বরে কেতসিওত কারাগারের এক সেলে বিশেষ বাহিনী ঢুকে বন্দীদের মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে যায়।
বিশেষ বাহিনী ৩৮ বছর বয়সী থায়ের আবু আসাবের ওপর হামলা চালায়, যতক্ষণ না তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। তাঁর দেহ এক ঘণ্টা মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। পরে তাঁকে সরিয়ে নিয়ে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরদিন শিন বেত সব বন্দীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অভিযোগ তোলে যে, তারা নাকি আবু আসাবকে আক্রমণ করে দায় কারারক্ষীদের ওপর চাপাতে চেয়েছে।
সদে তেইমান একটি বন্দিশিবির বিশেষভাবে ধর্ষণ, নির্যাতন ও মৃত্যুর জন্য কুখ্যাত হয়ে উঠেছে। ইব্রাহিম সালেম প্রায় আট মাস আটক থাকার পর আগস্টে মুক্তি পান। তিনি সেই কারাগারে ৫২ দিন আটক থাকার পর সেটিকে জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন বলেছেন। তিনি বলেন, একটি চেয়ার তাঁর বুকে ভেঙে ফেলা হয়। তাঁর যৌনাঙ্গে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করা হয়। অন্য বন্দীদের নারী সেনারা ‘ধর্ষণ’ করেছিল।
এ ক্ষেত্রে বন্দীকে একটি টেবিলের ওপর ঝুঁকিয়ে সামনে হাতকড়া লাগানো অবস্থায় রাখা হতো। পেছনে দাঁড়ানো নারী সেনা তাঁর পায়ুপথে আঙুল ও অন্যান্য বস্তু প্রবেশ করাত। বন্দী প্রতিক্রিয়া দেখালে বা সরে গেলে সামনে থাকা সেনা তাঁর মাথায় আঘাত করে আবার ঝুঁকতে বাধ্য করত।
ইসরায়েলি কারাগার ও আটককেন্দ্রে ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো নির্যাতনের চিত্র নিয়ে আধুনিককালে এত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে যে একটি ছোট লাইব্রেরি তাতে ভর্তি হয়ে যাবে।
ভয়াবহ সংকট
জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির নভেম্বরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের ‘ব্যাপক ও সংগঠিত নির্যাতনের একটি বাস্তবিক রাষ্ট্রীয় নীতি’ আছে। এর মধ্যে রয়েছে নির্মম প্রহার, কুকুর লাগিয়ে দেওয়া, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করা, ওয়াটার বোর্ডিং, দীর্ঘ সময় চাপের ভঙ্গিতে দাঁড় করানো ও যৌন সহিংসতা।
ইসরায়েলের নিজস্ব পাবলিক ডিফেন্ডারস অফিস—যা বিচার মন্ত্রণালয়ের অংশ—ফিলিস্তিনি বন্দীদের গাদাগাদি করে রাখা, অনাহার এবং প্রায় প্রতিদিন মারধরের বর্ণনা দিয়েছে। তারা বলেছে, এ পরিস্থিতি ‘রাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ আটক সংকটগুলোর মধে৵ একটি।’
বন্দী নির্যাতনের এত বিপুলসংখ্যক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মাত্র একজন ইসরায়েলি সেনার বিচার হয়েছে। তিনি মাত্র সাত মাসের সাজা পেয়েছেন। ফুটেজ ফাঁস হওয়ার পর আরও পাঁচ সেনার বিরুদ্ধে সদে তেইমানে নির্যাতন ও গুরুতর শারীরিক আঘাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
লক্ষণীয়, ইসরায়েল সেনাবাহিনীর আইনজীবী ইফাত তমার-ইয়েরুশালমির ফাঁস করা সেই ভিডিওতে নির্যাতনের অপরাধগুলো নিজে থেকে কোনো ক্ষোভের কারণ হয়নি; বরং ইসরায়েল সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়া নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ওই আইনজীবীকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। অন্যদিকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত সেনারা সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করে ‘তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট’ হওয়ার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
ইসরায়েলের উচ্চ আদালতের বাইরে অভিযুক্ত সেনারা সংবাদ সম্মেলন করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচার এড়াতে ‘মুখোশ’ পরিহিত ছিলেন। সেখানে তারা গর্বভরে জানায় যে তারা এখনো মুক্ত এবং ঘোষণা করে, ‘আমরাই জয়ী হব।’
অভিযুক্ত সেনারা বলেন, ‘তোমরা আমাদের ভাঙতে চেয়েছিলে; কিন্তু একটি বিষয় ভুলে গেছ, আমরা ফোর্স ১০০।’ এটি তাদের সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিটের প্রতি একটি ইঙ্গিত।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ হামলার নিন্দা জানাননি; বরং তিনি ফুটেজ ফাঁস হওয়াকে অভিহিত করেছেন ‘রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইসরায়েল যে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রচারণা ও আক্রমণের শিকার হয়েছে, এটি সম্ভবত তার মধে৵ একটি।’ হিসেবে। তাঁর উদ্বেগ ছিল ইসরায়েলের ভাবমূর্তি নিয়ে, ভিডিওতে নির্যাতিত মানুষের জন্য নয়।
হারেৎজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ আইনি কর্মকর্তা ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করা এড়িয়ে গেছেন। কারণ, ডানপন্থী শক্তিগুলোর প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভয় ছিল।
মৃত্যুদণ্ডের পথে
এদিকে ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। অ্যাডভোকেসি সংগঠনগুলোর হিসাবে নভেম্বর মাসে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২৫০। এর মধ্যে ৩ হাজার ৩০০ জনের বেশি ‘প্রশাসনিক’ বন্দী; যাদের বিরুদ্ধে না আছে কোনো অভিযোগ, না আছে কোনো বিচারিক প্রক্রিয়া।
তাদের ‘বন্দী’ বলা আসলে শব্দটির অর্থই বিকৃত করা। তারা ইসরায়েলের রাতের অভিযানে ধরে আনা জিম্মি। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কেউ এ নিয়ে কোনো কথা বলে না।
কারাগারে অনাহার ও মারধর চালু করার পরও থেমে নেই জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন–গভির। এখন তিনি নেসেটে এমন একটি বিল চাপিয়ে দিচ্ছেন, যাতে ‘রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত’ ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
এই সংজ্ঞা এমনভাবে তৈরি করা, যাতে ইহুদিরা বাদ পড়ে। কারণ, চরম ডানপন্থীদের মতে, সন্ত্রাসবাদের চর্চা শুধুই আরবদের কাজ। বিলটির অন্যতম প্রস্তাবক, এমকে লিমর সন হার-মেলেখ বলেছেন, ‘ইহুদি সন্ত্রাসী বলে কিছু নেই।’
১৯৫৪ সালে ইসরায়েল হত্যা মামলার জন্য মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছিল; কিন্তু হলোকাস্ট ও গণহত্যা-সংক্রান্ত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি আইনে বহাল রেখেছিল। ইতিহাসে ইসরায়েল মাত্র একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে; ১৯৬২ সালে হলোকাস্টের প্রধান পরিকল্পনাকারী অ্যাডলফ আইখম্যানকে।
অধিকৃত পশ্চিম তীরে সামরিক আদালতগুলোর জন্য মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়েছিল; কিন্তু কখনো প্রয়োগ করা হয়নি। এটি নিয়ে বহুবার বিতর্ক হয়েছে এবং শিন বেত ও সেনাবাহিনীর প্রধানেরা নিয়মিতভাবে এর বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়েছেন।
আজ সেই বাধাগুলো সব তুলে নেওয়া হয়েছে। শিন বেতের বর্তমান প্রধান জায়ানিস্ট মেজর জেনারেল ডেভিড জিনি বিলটির সমর্থক এবং
বেন–গভিরের নির্বাহী ক্ষমতায় পরিস্থিতিকে আমূল বদলে দিয়েছে।
ইসরায়েলে যা একসময় ডানপন্থী উসকানি হিসেবে বিবেচিত হতো, এখন তা রাষ্ট্রের মূলধারার নীতি। প্রথম দফায় বিলটি পাসের পর বেন–গভির আনন্দের সঙ্গে মিষ্টি বিলিয়েছেন এবং ধারণা করা হচ্ছে এটি শেষ পর্যন্ত আইনে পরিণত হবে।
ম্যান্ডেলার ‘উত্তরাধিকার’
দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ইসরায়েলি কারাগারেও রয়েছেন সেই প্রধান ফিলিস্তিনি নেতারা, যাঁরা চাইলে সংঘাতের অবসান নিয়ে আলোচনায় বসতে পারেন। এর মধ্যে আছেন ফাতাহর জে৵ষ্ঠ নেতা মারওয়ান বারগুতি। তিনি পাঁচটি যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছেন। তিনি মাহমুদ আব্বাসের জায়গায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার মতো জনপ্রিয়। তাঁর সঙ্গে আছেন আবদুল্লাহ বারগুতি—হামাসের সামরিক নেতা, যিনি ৬৭টি যাবজ্জীবন সাজায় দণ্ডিত।
হামাসের কমান্ডার ইব্রাহিম হামেদ ৫৪টি যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছেন আর পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের সাধারণ সম্পাদক আহমাদ সা’দাত ৩০ বছরের সাজা খাটছেন। অন্যান্য প্রভাবশালী হামাস নেতা হাসান সালামেহ (৪৮টি যাবজ্জীবন), আব্বাস আল-সাইয়্যেদ (৩৫টি যাবজ্জীবন) এখনো কারাগারে।
বারগুতির মুক্তির দাবিতে একটি আন্তর্জাতিক আন্দোলন শুরু হয়েছে—দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন যেমন ম্যান্ডেলার মুক্তিকে প্রধান দাবি করেছিল। ম্যান্ডেলা নিজে বলেছিলেন, ‘শুধু মুক্ত মানুষই আলোচনা করতে পারে। বন্দীরা কোনো চুক্তি করতে পারে না।’
ম্যান্ডেলার মুক্তি তখন শান্তির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখা হয়েছিল। তিনি আলোচনার নেতৃত্ব দিয়ে ১৯৯৪ সালের প্রথম বহুজাতিক গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথ খুলে দেন, যেখানে তাঁর আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস বিপুল ভোটে জয়ী হয়।
কিছু সাবেক শিন বেতপ্রধান, যাঁরা অনেক আগেই ক্ষমতার বাইরে এবং কোনো বাস্তব প্রভাব নেই—এ বাস্তবতা বোঝেন; কিন্তু বেন–গভিরের নেতৃত্বে ইসরায়েল এমন একটি পথে হাঁটছে, যা রাষ্ট্রটিকে স্থায়ী যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবে, ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে এবং আঞ্চলিক প্রতিবেশীদের সঙ্গেও।
একই সময়ে এই যুদ্ধের প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে; ভূখণ্ডকেন্দ্রিক সংঘাত থেকে এটি পরিণত হচ্ছে ধর্মযুদ্ধে। অতীতে এই ভূমি দখলের জন্য চালানো সব ক্রুসেডের পরিণতি যেমন হয়েছে, এটিও তার ব্যতিক্রম হবে না। আরও ভয়াবহ পরিণতির আগে যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সত্যিই এখনই এই সংঘাতের অবসান চায়, তবে সব ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তির বিষয়টি প্রধান দাবি হতে হবে।
যেসব মানুষ প্রতিদিনের মারধর, ধর্ষণ, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করা, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যুর পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও উদ্যাপন করে; তাদের বিচারও ঠিক সেভাবে হওয়া উচিত, যেভাবে আইখম্যানের বিচার হয়েছিল। কারণ, তারা সত্যিই তাঁর উত্তরাধিকার বহন করছে।
● ডেভিড হার্স্ট মিডল ইস্ট আইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং এডিটর ইন চিফ। তিনি গার্ডিয়ানের পররাষ্ট্রবিষয়ক সম্পাদকীয় লেখক ছিলেন এবং বিভিন্ন দেশে সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেছেন।
মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মনজুরুল ইসলাম