মতামত
বন্যা সমস্যা এবং রবীন্দ্রনাথের ‘জুতা আবিষ্কার’
বাংলাদেশের বন্যা সমস্যা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন একটি নতুন দর্শন বা দৃষ্টিভঙ্গি। এ ক্ষেত্রে কেন রবীন্দ্রনাথের ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতার কাছে ফিরে যাওয়া দরকার, তা নিয়ে লিখেছেন নজরুল ইসলাম
রবীন্দ্রনাথের ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতাটি অনেকেরই জানা। রাজা হবুচন্দ্র তাঁর পায়ে ধূলি লাগা পছন্দ করছিলেন না। তিনি মন্ত্রী গবুচন্দ্রকে আদেশ দিলেন সমস্যার সমাধান করতে।
মন্ত্রিপরিষদ বহু সমাধানের চেষ্টা করে বিফল হয়ে শেষমেশ পুরো রাজ্যকে চামড়া দিয়ে ঢেকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং সে জন্য চামারকে ডেকে আনলেন।
চামার শুনে বললেন, রাজার পায়ে ধূলি না লাগার জন্য পুরো রাজ্য চামড়া দিয়ে ঢাকার কী প্রয়োজন? রাজার পদযুগল চামড়া দিয়ে ঢেকে দিলেই তো হয়! এভাবেই জুতার আবিষ্কার এবং ধূলি সমস্যার সমাধান হলো।
২.
বাংলাদেশের বন্যার জন্য এই কবিতার মর্মবাণীটি খুবই প্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশে নদ–নদীর প্রবাহের ঋতুভেদ চরম। এর দুটি কারণ।
প্রথমত, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বৃষ্টিপাতের ঋতুভেদ চরম। বছরে গড়ে ৮০ ইঞ্চির মতো বৃষ্টিপাত হয়, কিন্তু তার প্রায় ৮০ শতাংশ বছরের চার মাসে ঘনীভূত হয়।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের নদীপ্রবাহের প্রায় ৯৩ শতাংশ সীমান্তের বাইরে থেকে আসে এবং সেখানেও বৃষ্টিপাতের একই রকম ঋতুভেদ। ফলে বাংলাদেশে নদীপ্রবাহের ঋতুভেদসম্পন্ন প্রবাহ প্রায় ১৪ গুণ বৃদ্ধি পায়। ফলে বর্ষাকালে নদীগুলো কূল ছাপিয়ে প্লাবনভূমিতে বিস্তৃত হয় এবং বাংলাদেশের মোট আয়তনের গড়ে প্রায় ২০ শতাংশ বর্ষাকালে প্লাবিত হয়।
এই এলাকাকে ‘সক্রিয়’ প্লাবনভূমি বলা হয়। তবে কোনো কোনো বছর বিশেষ পরিস্থিতির কারণে দেশের আরও বিরাট এলাকা প্লাবিত হয়। যেমন ১৯৮৮ সালে দেশের ৬১ শতাংশ এবং ১৯৯৮ সালে ৬৮ শতাংশ প্লাবিত হয়েছিল। প্লাবন অতিরিক্ত হলে তাকে আমরা বন্যা বলি।
৩.
স্বাভাবিক প্লাবন আমাদের প্রয়োজন। এতে প্লাবনভূমি এবং তাতে অবস্থিত জলাধারগুলো নবায়নযোগ্য হয়, প্লাবনের পানি সেচের কাজ করে, পলিপতনের মাধ্যমে ভূমির উচ্চতা বাড়ে, জমির উর্বরতা বজায় থাকে, উন্মুক্ত মৎস্যসম্পদ জন্ম নিচ্ছে এবং ভূগর্ভস্থ পানিস্তর নবায়নযোগ্য হয়।
আমাদের পূর্বসূরিরা এসব উপকারের মাধ্যমে আকৃষ্ট হয়েই এ দেশের প্লাবনভূমিতে বসতি স্থাপন করেছিলেন। সে জন্য প্রথমে তাঁরা পুকুর খনন করতেন এবং খনন করা মাটি দিয়ে উঁচু করে ভিটা তৈরি করতেন। তারপর সেখানে ঘরবাড়ি নির্মাণ করতেন।
প্লাবনভূমিতে পানির চলাচল অবাধ রাখার জন্য তাঁরা সড়ক নির্মাণে উৎসাহী হননি। বর্ষাকালে নৌকা ব্যবহার করতেন। তাঁরা বার্ষিক প্লাবনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শস্যচক্রের উদ্ভাবন করেছিলেন।
এটা ঠিক, কোনো কোনো বছর অতিরিক্ত প্লাবন তথা বন্যা হতো এবং তাতে ফসলের ক্ষতি হতো। তবে পানি সরে গেলে পুনরায় ধান রোপা হতো এবং অধিক পলিজনিত উর্বরতার কারণে সেসব বছরে ফসল আরও বেশি হতো। অর্থনীতি ও জীবনপ্রণালি স্থায়িত্বশীল ছিল।
বাংলাদেশের মতো নদীপ্রবাহের চরম ঋতুভেদ পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। পশ্চিমের শিল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য এ কথা বিশেষভাবে প্রযোজ্য।
ফলে সেখানকার বিশেষজ্ঞদের যখন পঞ্চাশের দশকে বাংলাদেশের বন্যা সমস্যার সমাধান করার জন্য ডেকে আনা হয়, তখন তাঁরা বাংলাদেশের প্লাবন অর্থনীতির বৈশিষ্ট্যগুলো হৃদয়ঙ্গম করতে অসমর্থ হন। তাঁদের কাছে শুধু বন্যা নয়, বার্ষিক স্বাভাবিক প্লাবনও অগ্রহণযোগ্য মনে হয়।
বর্তমানে মাটি উঁচু করে সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণের জন্যই বেশি অর্থ ব্যয় ও সময় ব্যয় হয়। পিলারের ওপর সড়ক নির্মাণ এই উভয় সমস্যাকে প্রশমিত করবে। বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই যন্ত্রচালিত (শ্যালো মেশিন) নৌকা প্রচলিত হয়ে গেছে এবং প্লাবনভূমি উন্মুক্ত হলে সেগুলো আরও সচ্ছন্দে চলাচল করতে পারবে। জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে না।
রবীন্দ্রনাথের ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতার হবুচন্দ্র রাজার মতো তাঁরা সমগ্র প্লাবনভূমিকে প্লাবন থেকে মুক্ত করার পরামর্শ দেন। কীভাবে এটা করা যাবে, সেটার পদ্ধতিও তাঁরা বাতলে দেন এবং সেটা হলো প্লাবনভূমির চারদিকে বেড়িবাঁধ নির্মাণ।
এভাবেই বাংলাদেশে নদ–নদীতে ‘বেষ্টনী পন্থা’ চালু হয়, ইংরেজিতে যেটাকে ‘কর্ডন পন্থা’ কিংবা ‘পোল্ডার পন্থা’ বলা হয়। সারা দেশে পোল্ডার নির্মাণের এক মহাযজ্ঞ শুরু হয়।
বেড়িবাঁধের আনুষঙ্গিক হিসেবে স্লুইস গেট, ফ্ল্যাপ গেট, রেগুলেটর ইত্যাদি নির্মিত হতে থাকে। বাংলাদেশে এমন কোনো প্রণিধানযোগ্য নদী নেই, যা এই বেষ্টনী পন্থার শিকার হয়নি। সারা দেশ পোল্ডার দ্বারা আকীর্ণ করে ফেলা হয়েছে।
৪.
দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই বেষ্টনী পন্থা বাংলাদেশের বন্যা সমস্যা নিরসনের পরিবর্তে এটাকে আরও জটিল, তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী করেছে। একটি বেষ্টনী হয়তো একটি এলাকাকে প্লাবনমুক্ত করতে পারে। কিন্তু তাতে অন্য এলাকার ওপর পানির চাপ বাড়ে এবং সেখানে প্লাবন বন্যায় রূপান্তরিত হয়। যে এলাকা আপাতদৃষ্টে প্লাবনমুক্ত হয়, সেখানেও বাঁধ ভেঙে কিংবা টপকে বন্যা হওয়ার বিপদ বাড়ে।
বাঁধের ভেতরে কৃত্রিম শুষ্ক পরিবেশের ফলে মানুষ সেখানে প্লাবনসীমার নিচে ঘরবাড়ি ও স্থাপনা নির্মাণ করে। ফলে সেখানে যখন বাঁধ ভেঙে কিংবা টপকে নদীর পানি ঢোকে, তখন তা প্রলয়ংকরী রূপ নেয়।
তা ছাড়া প্লাবন থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে বাঁধের ভেতরের এলাকা পলিবঞ্চিত হয়, জমির উর্বরতা হ্রাস পায় এবং ভূমি অবনমনের সম্মুখীন হয়, বেষ্টনীর ভেতর আবদ্ধকৃত নদী–জলাধারগুলো অবক্ষয় এবং মৃত্যুর সম্মুখীন হয়, উন্মুক্ত মৎস্যসম্পদের বিপর্যয় ঘটে এবং পরিবেশ-প্রতিবেশের অবক্ষয় সাধিত হয়।
সর্বোপরি অচিরেই স্লুইসগেট এবং ফ্ল্যাপ গেটগুলো অকেজো হয়ে যায়। ফলে বেড়িবাঁধের ভেতরে জমা হওয়া বৃষ্টির পানি বেরোতে পারে না এবং জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
দেশব্যাপী বেড়িবাঁধ নির্মাণের ফলে নদীর পানির সমুদ্রে যাওয়ার পথ ভীষণভাবে সংকুচিত হয়, যার ফলে বন্যা ও জলাবদ্ধতা প্রলম্বিত হয়। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা বেষ্টনী পন্থার এসব কুফল দিন দিনই স্পষ্ট করে তুলেছে।
৫.
সুতরাং যেটা প্রয়োজন তা হলো রবীন্দ্রনাথের ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। পুরো এলাকাকে প্লাবনমুক্ত করার প্রয়োজন নেই। প্লাবনের অসুবিধা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঘরবাড়ি এবং স্থাপনাগুলোর পাটাতন উঁচু করাই যথেষ্ট। প্লাবনভূমিকে প্লাবিত হতে দেওয়া প্রয়োজন এবং প্লাবনের সুফলগুলোর সদ্ব্যবহার করা দরকার।
তার মানে এই নয় যে আমাদের শিল্পায়ন-পূর্ববর্তী যুগের প্রযুক্তিতে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। প্লাবনভূমিতে সব সড়ক পিলারের ওপর নির্মিত হতে হবে, যাতে মোটরগাড়ি চলতে পারে। এতে ভূমিরও সাশ্রয় হবে।
বর্তমানে মাটি উঁচু করে সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূমি অধিগ্রহণের জন্যই বেশি অর্থ ব্যয় ও সময় ব্যয় হয়। পিলারের ওপর সড়ক নির্মাণ এই উভয় সমস্যাকে প্রশমিত করবে। বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই যন্ত্রচালিত (শ্যালো মেশিন) নৌকা প্রচলিত হয়ে গেছে এবং প্লাবনভূমি উন্মুক্ত হলে সেগুলো আরও সচ্ছন্দে চলাচল করতে পারবে। জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হবে না।
উঁচু ভিটাতে ঘরবাড়ি নির্মাণের ফলে সুপেয় পানির নলকূপ এবং পয়োনিষ্কাশনের পিটগুলো প্লাবনসীমার ওপরে রাখা সহজ হবে। ফলে বিভিন্ন পানিবাহিত জীবাণু ও রোগ এড়ানো সহজ হবে।
৬.
নদীর স্বাভাবিক প্লাবনকে বাধাগ্রস্ত না করার এই পন্থাকে ‘উন্মুক্ত পন্থা’ বলা হয়। বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতির জন্য এটাই উপযোগী পন্থা। এই পন্থার সুফল বাড়ানোর জন্য গ্রামীণ বসতি আরও সংহতকরণকে উৎসাহিত করা যেতে পারে।
জোর করে নয়, বরং এমন সব প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যাতে গ্রামবাসী নিজেরাই ছড়িয়ে–ছিটিয়ে ঘরবাড়ি নির্মাণের পরিবর্তে গুছিয়ে এবং ঘনবদ্ধভাবে বসতি স্থাপন করেন।
সে ক্ষেত্রে গ্রামবাসীর কাছে বিভিন্ন আধুনিক উপযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সংস্কৃতিসেবা পৌঁছানোও সহজ হবে। গ্রাম ও শহরের মধ্যে পার্থক্য আরও সুষম উপায়ে দূরীভূত হবে।
নিঃসন্দেহে এটা সহজ কাজ নয়। বিদ্যমান ঘরবাড়ি নতুন করে উঁচু ভিটার ওপর নির্মাণ একটি আয়াসসাধ্য কাজ। কাঁচা ও টিনের ঘরবাড়ির জন্য এটা সম্ভব হলেও পাকা বাড়ির জন্য এটা কঠিন। অথচ বাংলাদেশে এখন গ্রামাঞ্চলে পাকা বাড়ি নির্মাণের প্রক্রিয়া দ্রুত বেগে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে যত সময় যাবে, ততই পুনর্নির্মাণ কঠিন হবে।
অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের বৃষ্টিপাত এবং নদীপ্রবাহের ঋতুভেদ আরও বাড়ছে। গবেষণা দেখায়, ১৯৫০-২০১১ মেয়াদকালে বর্ষাকালে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২ দশমিক শূন্য ৫ মিলিমিটার বেড়েছে। পক্ষান্তরে শীতকালে জন্য এই বৃদ্ধির পরিমাণ মাত্র শূন্য দশমিক ২ মিলিমিটার।
ভবিষ্যতে এই পার্থক্য আরও বাড়বে। বর্ষাকালে নদ–নদীর প্রবাহের পরিমাণও বাড়ছে। গবেষণা দেখায়, ২০৫০ সাল নাগাদ ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা ও মেঘনা নদীর জুন মাসের প্রবাহের পরিমাণ যথাক্রমে ১০ দশমিক ৯, ১৬ দশমিক ৭, এবং ৭ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়বে। সুতরাং কঠিন হলেও উন্মুক্ত পন্থার ধারায় অগ্রসর হওয়ার বিকল্প পাওয়া কঠিন।
৭.
এ ক্ষেত্রে একটি বিষয় বাংলাদেশের অনুকূল এবং তা হলো বসতি স্থানের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য মাটির প্রাচুর্য। বাংলাদেশের নদ–নদী খনন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটি সাধারণ সমস্যা হলো খনন করা মাটির সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব। অনেক ক্ষেত্রে এই মাটি নদীর পাড়ে স্তূপ করা হয় এবং বৃষ্টির পানিতে তা নদীতে বাহিত হয়ে খননের উদ্দেশ্য ভন্ডুল করে।
একটি যথাযথ পরিকল্পনার অধীনে নদ–নদী, খালবিল, পুকুর-দীঘির পুনঃখননসৃষ্ট মাটি নিকটস্থ গ্রামগুলোর পাটাতন উঁচু করার জন্য ব্যবহার করা সম্ভব। তাতে একসঙ্গে জলাধারের সংস্কার এবং গ্রামের পাটাতনের উচ্চতা বৃদ্ধি উভয় লক্ষ্যই অর্জন করা সম্ভব হবে।
শস্যচক্রকেও স্থায়িত্বশীল করতে হবে। যেসব স্থানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নবায়নযোগ্য নয় (যেমন বরেন্দ্রভূমিতে) সেখানে নলকূপনির্ভর বোরো চাষ স্থায়িত্বশীল নয়। নদীর পানির লভ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্মুক্ত পন্থা স্থায়িত্বশীল শস্যচক্রের দিকে অগ্রসর হতে দেশকে সাহায্য করবে।
(কীভাবে বাংলাদেশে উন্মুক্ত পন্থা বাস্তবায়িত হতে পারে, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য দেখুন লেখকের বই ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ: পাস্ট, প্রেজেন্ট, ফিউচার এবং বাংলাদেশে পানি উন্নয়ন: বর্তমান ধারার সংকট এবং বিকল্প পথের প্রস্তাব)।
বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উপযোগী করার জন্য নদ–নদীর প্রতি বিদ্যমান বেষ্টনী তথা পোল্ডার পন্থা বাদ দিয়ে উন্মুক্ত পন্থা অবলম্বন করা অত্যাবশ্যক।
দেশের উপকূলীয় এলাকার জন্য এটা বিশেষভাবে জরুরি হয়ে পড়েছে। সেখানে পোল্ডারের কারণে জমিতে পলি পৌঁছায় না। ফলে জমির উচ্চতা বৃদ্ধির পরিবর্তে বরং কমছে এবং এসব এলাকা ক্রমেই সমুদ্রসীমার নিচে চলে যাচ্ছে।
অথচ যেসব এলাকা পোল্ডারের বাইরে (যেমন সুন্দরবন) সেখানে পলিভরণের কারণে জমির উচ্চতা প্রতিবছর প্রায় ২৫ মিলিমিটার করে বাড়ছে। ফলে এসব এলাকা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে পারছে।
উপকূলের জন্য পোল্ডার কর্মসূচি বাংলাদেশের জন্য আত্মহননের শামিল হয়েছে। অথচ পোল্ডার ক্রমশ উন্মুক্ত করার পরিবর্তে ‘উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পে’র নামে এখন এগুলোকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের বন্যা সমস্যা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন একটি নতুন দর্শন বা দৃষ্টিভঙ্গি। ফিরে যাওয়া দরকার রবীন্দ্রনাথের ‘জুতা আবিষ্কার’ কবিতার কাছে। পুরো এলাকাকে প্লাবনমুক্ত করা একটি আত্মঘাতী প্রয়াস। বসতবাড়ি ও স্থাপনাগুলোকে প্লাবনের নাগালের বাইরে রাখাই যথেষ্ট।
নজরুল ইসলাম অধ্যাপক, এশীয় প্রবৃদ্ধি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং জাতিসংঘের উন্নয়ন গবেষণার সাবেক প্রধান
মতামত লেখকের নিজস্ব