বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো র‍্যাঙ্কিংয়ে কেন পিছিয়ে

বিশ্বায়নের যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা সাধন, সমাজ পরিবর্তন, আদর্শ জাতি গঠন, প্রতিভা বিকাশ, মুক্ত চিন্তা, মেধা চর্চার সর্বোত্তম স্থান হলো বিশ্ববিদ্যালয়। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহর লাল নেহরু বলেছিলেন, ‘দেশ ভালো হয় যদি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো হয়।’ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকালে কী প্রতীয়মান হয়?

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বা ইউজিসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৩টি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১১৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আবার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত, যেমন: সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় এবং কেন্দ্রীয়ভাবে সংযুক্ত বিশেষ বিশ্ববিদ্যালয়। এদের মধ্যে আছে শতবর্ষী বিশ্ববিদ্যালয়, বেশ কয়েকটি আবার ৫০ বছরের কোঠা অতিক্রম করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিং নিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সাইবার কমিউনিকেশনের যুগে মূল ধারার সংবাদমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিং নিয়ে বাংলাদেশের ভেতরেও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

বিশ্বায়নের যুগে র‍্যাঙ্কিং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচিত করে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিং শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি মূল্যবান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পদ্ধতিগত মূল্যায়ন, যেমন উচ্চশিক্ষার গুণগত মান, গবেষণা আউটপুট এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসহ বিভিন্ন মানদণ্ডের ভিত্তিতে র‍্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠানের শক্তি এবং দুর্বলতাগুলোকে দৃশ্যমান করে।

লন্ডনভিত্তিক শিক্ষা বিষয়ক সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন ৫টি মানদণ্ড, যথা: শিক্ষা, গবেষণা, সাইটেশন, আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইন্ডাস্ট্রি ইনকাম অর্থাৎ শিল্পের সঙ্গে গবেষণাকর্মের বাণিজ্যিকীকরণের উপর ভিত্তি করে র‍্যাঙ্কিং প্রকাশ করে।

স্পেনের মাদ্রিদভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েবমেট্রিক্স র‍্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটের কনটেন্ট, শীর্ষ গবেষক এবং সেরা গবেষণা  প্রবন্ধের সাইটেশনের উপর (ওয়েবসাইটের কনটেন্ট ৫০ শতাংশ, টপ সাইটেড গবেষকদের ১০ শতাংশ এবং টপ সাইটেড প্রবন্ধ ৪০ শতাংশ হিসাবে বিবেচনা করে)। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সংস্থা সেন্টার ফর ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির সূচক ৪টি, যথা: শিক্ষা, নিয়োগযোগ্যতা, যোগ্য শিক্ষকদের সংখ্যা, ও গবেষণা (গবেষণা আউটপুট, উচ্চ মানের প্রকাশনা, গবেষণার প্রভাব ও সাইটেশন)।

বিশ্ববিখ্যাত কোয়াকুয়ারেলি সাইমন্ডস (কিউএস) ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাঙ্কিংয়ে ৯টি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়: প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি, নিয়োগকর্তাদের খ্যাতি, শিক্ষার্থী সংখ্যা, শিক্ষক প্রতি গবেষণা প্রবন্ধের সাইটেশন, বিদেশি শিক্ষকের সংখ্যা, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা, আন্তর্জাতিক গবেষণা নেটওয়ার্ক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাফল্য এবং সাসটেইনেবিলিটি। প্রতিটি সূচকে স্কোর থাকে ১০০, অর্থাৎ ৯টি সূচকে সর্বমোট ৯০০ মার্কের গড় মান হিসাব করে সর্বোচ্চ অর্জিত মানের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‍্যাঙ্কিং করা হয়।

সম্প্রতি প্রকাশিত  কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি সামগ্রিক র‍্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের সেরা ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। এমনকি টাইমস হায়ার এডুকেশনের এ বছরের আঞ্চলিক র‍্যাঙ্কিং অনুযায়ী এশিয়ার সেরা ৩০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও নেই বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, তবে এদের মাঝে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এগিয়ে যাচ্ছে। কিউএস সূচকগুলোর গড় মান ১০০ এর মধ্যে ১০০ পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) তালিকার শীর্ষস্থান অর্জন করেছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ (৯৯.২) ও অক্সফোর্ড (৯৮.৯) বিশ্ববিদ্যালয় এবং পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড (৯৮.৩) ও স্ট্যানফোর্ড (৯৮.১) বিশ্ববিদ্যালয়।

এশিয়া মহাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, যেমন: চীন, জাপান, কোরিয়া, হংকং, সিঙ্গাপুর, প্রভৃতি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার মানের দিক থেকে উন্নত বিশ্বের তাবড় তাবড় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমান্তরালে প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে চলেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের এবং পাকিস্তানের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় জায়গা করে নিচ্ছে সামনের কাতারে। সেরা ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় চীনের ২৯টি, জাপানের ১৫টি, ভারতের ১১টি এবং পাকিস্তানের ২টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

যদিও কিউএস র‍্যাঙ্কিংয়ে সেরা ৭০০-১০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়)। তবে এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিছু সূচকে মান পেলেও সামগ্রিকভাবে গড় মান অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। প্রসঙ্গত কারণেই বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান নিয়ে বিভিন্ন মহলে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠছে। উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান ইউজিসি নিজেই। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‍্যাঙ্কিংয়ে এমন পিছিয়ে থাকার কারণ আসলে কী?

অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতিতে সুসংহত কাঠামো ও যথাযথ মূল্যায়ন ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষাদানের সময়কে প্রাধান্য দিয়ে গবেষণাকে গৌণ করে ফেলা হয়েছে। যার প্রমাণ গবেষণাহীন এবং পিএইচডি ডিগ্রি ছাড়া অধ্যাপকের সংখ্যা এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেহাত কম নয়, যা উদ্বেগজনক।

বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিংয়ে স্কোরের একটি বড় অংশ গবেষণা দ্বারা নির্ণীত হয়। শিক্ষকদের অন্যতম মূল কাজ হলো মৌলিক গবেষণা পরিচালনা করে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ক্রিটিক্যালি বিশ্লেষণ করা, নিত্যনতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে এসব জ্ঞান বিতরণ করা। কিন্তু আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণার সংখ্যা ও মান আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এগোতে পারছে না। এর একাধিক কারণও রয়েছে, যেমন: শিক্ষকদের পদোন্নতিতে মৌলিক গবেষণা বাধ্যতামূলক থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা অনেক ক্ষেত্রেই শিথিল করছে।

অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতিতে সুসংহত কাঠামো ও যথাযথ মূল্যায়ন ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষাদানের সময়কে প্রাধান্য দিয়ে গবেষণাকে গৌণ করে ফেলা হয়েছে। যার প্রমাণ গবেষণাহীন এবং পিএইচডি ডিগ্রি ছাড়া অধ্যাপকের সংখ্যা এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেহাত কম নয়, যা উদ্বেগজনক।

পিএইচডি শুধু একটি ডিগ্রি নয়, একজন গবেষক বা শিক্ষকের গবেষণার প্রবেশদ্বারও বটে। উন্নত বিশ্বে পিএইচডি ডিগ্রি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ফলে শিক্ষকদের মধ্যে গবেষণার প্রতি অনীহা তৈরি হচ্ছে, যার প্রভাব প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানে।

আরও পড়ুন

মৌলিক ও গুণগত মানসম্পন্ন প্রকাশনার সংখ্যা এবং প্রকাশিত প্রবন্ধের যথাযথ সাইটেশন বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। গবেষণা যত সমসাময়িক ও মৌলিক হবে, প্রকাশনা তত ভালো জার্নালে হবে এবং সাইটেশন তত বেশি হবে।

অপরদিকে দুর্বল ও মানহীন গবেষণাপত্র আন্তর্জাতিক স্কোপাস ইনডেক্সড জার্নালে প্রকাশ করা দুরূহ ব্যাপার। কারণ এসব জার্নালে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন এডিটরিয়াল বোর্ড থাকে, প্রকাশনায় মানের ক্ষেত্রে তারা সর্বদাই আপসহীন। আমাদের দেশের বেশির ভাগ গবেষণাপত্র পিয়ার রিভিউবিহীন দুর্বল প্রিডেটরি জার্নালে প্রকাশিত হয়, যেগুলো গুণগত মানের জার্নালে সাইটেশন হয় না বললেই চলে। ফলে এসব গবেষণালব্ধ প্রকাশনা দ্বারা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে সাইটেশন অংশে স্কোর অর্জনে পিছিয়ে থাকছে।

শিক্ষার্থীর সংখ্যা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও র‍্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির একটি নিয়ামক। বৈশ্বিকভাবে উচ্চশিক্ষার মানদণ্ডে ন্যূনতম শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত থাকা উচিত ১:২০। সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত এখন ১:৩৫-৫০ এর মধ্যে। অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর কারণে শিক্ষকদের উপর ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন প্রভৃতি নেওয়ার বাড়তি চাপ পড়ে যাচ্ছে, ফলে শিক্ষার মান নিচে নেমে যাচ্ছে।

কয়েক দশক আগেও বাংলাদেশের প্রথম সারির সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচুর সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতো, বর্তমানে এ সংখ্যা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। ওয়েবসাইটে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব, ভর্তি ও ভিসাসংক্রান্ত জটিলতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, আধুনিক আবাসনের সমস্যা, বাংলা ভাষায় পাঠদান এবং আন্তর্জাতিক মানের কমিউনিকেশন সেল না থাকায় বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ হারাচ্ছে। উপরিউক্ত কারণে বিদেশি ফ্যাকাল্টি বা শিক্ষকের পরিমাণও কমে গেছে উল্লেখযোগ্য হারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিংয়ে স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক, র‍্যাঙ্কিংভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। ওয়েবসাইটে কিছু তথ্য থাকলেও বেশির ভাগই থাকে পুরোনো, নিয়মিত হালনাগাদ করা হয় না।

আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে কিছু চাকরির খবর আর সভা, সমাবেশের ছবি দিয়ে ভর্তি থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত ইমেইল পর্যন্ত অনেক সময় ভুল থাকে, আবার অনেক ইমেইলে যোগাযোগ করা হলে রেসপন্স পাওয়া যায় না, এমন কথাও প্রচলিত আছে।

বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে জায়গা পেতে হলে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করলে চলবে না, শিক্ষার মান বজায় রাখার পাশাপাশি শিক্ষকদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তবে বর্তমান সময়ে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন, বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি, ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল প্রতিষ্ঠা, রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা, আউটকাম-বেসড এডুকেশন সিস্টেম চালু, ইত্যাদি। সরকারের এসব উদ্যোগ এবং বর্ধিত অনুদান অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার মতো।

কিন্তু উপর উল্লেখিত আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিংয়ে উন্নীত হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলোর সমাধান করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের নেতৃত্বে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। যে উদ্যোগের ভেতর নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।

একাডেমিক অবকাঠামো এবং কোর্স কারিকুলাম সময়ের সঙ্গে আধুনিকীকরণ করে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়ন ও মৌলিক গবেষণা পরিচালনার জন্য স্মার্ট ও ভার্চুয়াল ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা, আধুনিক যন্ত্রপাতি সুসজ্জিত ল্যাবরেটরি, দ্রুত গতির ইন্টারনেট, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনের সংস্কৃতি গড়ে তোলা, গবেষণা তহবিল বৃদ্ধি করা, এবং অনুষদ সদস্যদের গবেষণায় উৎসাহিত করার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একাডেমিক প্রোফাইলকে উন্নত করতে পারে।

স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সমঝোতা স্মারকলিপি করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং অংশীদারত্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বব্যাপী সুনাম প্রসারিত করা যায়। শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যৌথ গবেষণা কার্যক্রম, ক্রেডিট ট্রান্সফার, স্কলারশিপ এবং ছাত্র বিনিময় সুযোগ তৈরি করে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণ করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে  শিক্ষা ও শিক্ষক বান্ধব নীতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ও বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্তিকরণের বিষয়টি শিক্ষকদের আত্মমর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করেছে বলে শিক্ষকেরা মনে করছেন, যা ভবিষ্যতে শিক্ষকতার পেশায় ও উচ্চশিক্ষায় মেধাবীদের আসতে নিরুৎসাহিত করবে। এ সমস্ত সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট সকল স্টেকহোল্ডারদেরকে সমন্বয়ের মাধ্যমে ইউজিসি এবং সরকারের অন্যান্য সংস্থাগুলো যৌথ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিং-এ উচ্চ স্কোর অর্জনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার কাজকে ত্বরান্বিত করতে পারে।

  • ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক অধ্যাপক, একোয়াকালচার বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
    ইমেইল: [email protected]

  • ড. মো. মেহেদী আলম সহকারী অধ্যাপক, ফিশারি রিসোর্সেস কনজারভেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা
    ইমেইল: [email protected]