স্বাগত মাহে রমজান: ব্যবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই সংযমী হই

স্বাগত মাহে রমজান। আহলান সাহলান মাহে রমজান। রমজান মাস মুমিনের জন্য আনন্দের মাস। ইসলামের মূল পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম হলো রমজান মাসে সিয়াম পালন। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের ওপর প্রতিষ্ঠিত। সেগুলো হলো—এই সাক্ষ্যদান করা যে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নেই আর নিশ্চয় হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল; সালাত কায়েম বা প্রতিষ্ঠা করা; জাকাত প্রদান করা; হজ করা এবং রমজান মাসে সিয়াম পালন করা।’ (বুখারি: ৭)

মহাগ্রন্থ আল–কোরআনুল কারিমে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বর্ণনা করেন, ‘রমজান মাস! যে মাসে মানুষের দিশারি, সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্য নিরূপণকারী হিসেবে কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে, তারা যেন এই মাসে সাওম পালন করে।’ (সুরা–২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

সংযম, আত্মনিয়ন্ত্রণ তথা তাকওয়ার মাস রমজান। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতিও; যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা–২ বাকারা, আয়াত: ১৮৩)

রমজানের উদ্দেশ্য তাকওয়া। তাকওয়া অর্থ আল্লাহর ভয়। আল্লাহর ভয়ে সব মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা। সংযম অবলম্বন করা। এ সংযম সব শ্রেণির মানুষের জন্য। ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা অতি মুনাফার লোভ সংযত করবেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি থেকে বিরত থাকবেন। ভোক্তা ও ক্রেতারা অহেতুক অধিক পরিমাণে পণ্য ক্রয় থেকে বিরত থাকবেন। সরকার, প্রশাসন শুধু রাজস্ব বাড়ানোর পরিবর্তে জনকল্যাণে ব্রতী হবে। তবেই পবিত্র রমজানের উদ্দেশ্য সফল হবে। রহমতের অফুরন্ত ধারা প্রবাহিত হবে। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভ হবে।

রমজানে সিয়াম বা রোজার পূর্ণতার জন্য সহায়ক ও পরিপূরক আমল হলো: নিয়মিত ২০ রাকাত তারাবির সালাত আদায় করা, সাহ্রি খাওয়া, ইফতার করা, কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত করা এবং পবিত্র রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা। বিশেষত অপ্রয়োজনীয় বাক্যালাপ, বেহুদা-অযথা সংলাপ থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য।

সিয়াম সাধনার অন্যতম উদ্দেশ্য ধনীদের মধ্যে অভাবী মানুষের ক্ষুধার যন্ত্রণা উপলব্ধি জাগরূক করা। তাই পবিত্র রমজানকে ভোজের আয়োজনে পরিণত করা উচিত নয়। পানাহারের প্রতি এত বেশি মনোযোগী হওয়া উচিত নয়, যাতে ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। সামর্থ্যবানেরা এত বেশি পরিমাণে বাজার করা উচিত নয়, যাতে গরিব মানুষ কেনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এসব রমজানের শিক্ষা ও উদ্দেশ্যের পরিপন্থী।

আমাদের আশপাশে প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজন যাঁরা অভাবী আছেন, তাঁদের ইফতার ও সাহ্রির ব্যবস্থা করা আমাদের সবার নৈতিক ও ইমানি দায়িত্ব। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি পরিপূর্ণ ইমানদার নয়, যে পেট পুরে আহার করে আর তার প্রতিবেশী অনাহারে থাকে।’ (মুসলিম)

রমজান মাসে আল্লাহর রহমত ব্যাপকভাবে বর্ষিত হয়ে থাকে। জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। ফলে রোজা, নামাজ, তিলাওয়াত, দান–সদকা, ফিতরা, জাকাত, জিকির–আজকার যাবতীয় ইবাদত অনুশীলন ও তাকওয়া অর্জন সহজ হয়।

সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সব মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় দানশীল ব্যক্তি। যখন রমজান মাস আসত, জিবরাইল (আ.) প্রতি রাতে নবীজি (সা.)–এর কাছে আসতেন, কোরআনের তালিম করতেন, তখন

রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রবাহিত বায়ু অপেক্ষা অধিক হারে দান–খয়রাত ও নেক আমল করতেন।’ (বুখারি: ৪৭১১; মুসলিম: ২৩০৮)

সংযমের মাস রমজানে রহমত পাওয়ার জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে সংযমী ও নিয়ন্ত্রিত আচরণ করতে হবে। সাওম বা রোজা পালনের পাশাপাশি তাকওয়া তথা খোদাভীতি সদা মনে জাগরূক রাখতে হবে।

রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষায় ইবাদতের ভাবগম্ভীর পরিবেশ বজায় রাখা সবার দায়িত্ব। যাঁরা কোনো ওজরের কারণে রোজা রাখতে পারছেন না, তাঁদেরও দিনের বেলায় প্রকাশ্যে বা রোজাদারের সামনে পানাহার থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমে বলেন: ‘যারা আল্লাহর নিদর্শনকে সম্মান করে, এটা তাদের অন্তরের তাকওয়ার পরিচয় বহন করে।’ (সুরা-২২ হজ, আয়াত: ৩২)

 মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]