এবারের পয়লা বৈশাখ কতটা স্বতঃস্ফূর্ত ছিল

মঙ্গল শোভাযাত্রা নাম পাল্টে এবার হয়েছে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রাছবি: সাজিদ হোসেন

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান, ক্ষমতার পালাবদল, রাষ্ট্র ও সমাজে বিবিধ পরিস্থিতি, মব ভায়োলেন্স, আইনশৃঙ্খলা ইস্যু—সবকিছু মিলিয়ে এবারের পয়লা বৈশাখ কেমন হবে, কতটা স্বতঃস্ফূর্ত হবে, তা নিয়ে অনেকেরই একপ্রকার সংশয় ছিল। থাকাটাই স্বাভাবিক।

আর প্রতিবছর পয়লা বৈশাখ আসলে ধর্ম-সংস্কৃতি নিয়ে ‘বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য—কাজিয়া’ এবারও ছিল যথারীতি। সেই কাজিয়া এবার কতটা প্রকট হয়ে ওঠে, তা নিয়েও যে অনেকের মধ্যে দুশ্চিন্তা ছিল না, তা নয়। আর রাজনৈতিক ক্যাচাল থাকবে, তা তো আরও বেশি স্বাভাবিক। যেহেতু বিগত বছরগুলোতে পয়লা বৈশাখকে কীভাবে রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে, সেই আলাপও হাজির আছে।

‘স্বৈরাচারের মুখাকৃতি’ নামে মোটিফে পতিত স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনাকে উপস্থাপন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক ছিল শুরু থেকেই। পয়লা বৈশাখের দুই দিন আগে সেটি পুড়িয়েও দেওয়া হলো। অভিযোগ উঠল পতিত শক্তির বিরুদ্ধে। এরপর তো আবারও নতুন করে তৈরিই করা হলো সেই মোটিফ। কয়েকটি ধর্মীয় রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীর আপত্তির মুখে বা সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদকে তুষ্ট করতে মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পাল্টে করা হলো বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। চারুকলার আয়োজনের ওপর এভাবে সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে সমালোচনা ও তর্ক–বিতর্কও উঠলো।

শোভাযাত্রায় গণহত্যার শিকার গাজাবাসীর প্রতি সংহতি প্রকাশের পাশাপাশি জুলাই গণহত্যার বিচার, ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তি বাতিল ও শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা পরিশোধের দাবিতে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়।
ছবি: সাজিদ হোসেন

যাক, এত কিছুর মধ্য দিয়ে চৈত্রসংক্রান্তিতেই উৎসব নিয়ে মানুষের আগ্রহ-উত্তেজনা-উদ্দীপনা-আনন্দ দেখা গেল, তাতেই বোঝা হয়ে যায় এবার পয়লা বৈশাখের আয়োজন কেমন হতে যাচ্ছে।

চৈত্রসংক্রান্তির রাতে নানা দিকে ঘুরে ঘুরে দেখা হলো বিপুল প্রস্তুতি। রাজধানীতে সেদিনও অনেক জায়গায় কনসার্ট ছিল। মধ্যরাত পর্যন্ত মানুষ কনসার্ট উপভোগ করে ঘেমে-তেমে ফিরছে, এমনটা দেখলাম। রাত দুইটা-তিনটা পর্যন্ত রাজধানী ঢাকা শহরের অনেক সড়ক যানজটে নাকাল তখন। পরদিন তো দেখাই গেল, গোটা দেশ উৎসবের আনন্দে কতটা মাতোয়ারা হতে পারে।

এত মেলা, এত অনুষ্ঠান, এত আয়োজন, এত আনন্দ, এত উচ্ছ্বাস, এত ভিড়—পাহাড় থেকে সমতলে এমন পয়লা বৈশাখে আমরা কবে দেখেছিলাম! ছোট-বড় প্রতিটা শহরে, প্রতিটা জেলায়-উপজেলায়, ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে, প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে, সংগঠনে সংগঠনে এত উৎসব-আয়োজন ছিল, মানুষের ভিড়েই ‘দমবন্ধ’ হওয়া অবস্থা ছিল বলতে হয়।

এ দেশের মানুষ যে উৎসবপ্রিয় জাতি এবং কোনো বিধিনিষেধ বা তর্কবিতর্ক তাদের আটকিয়ে রাখতে পারে না, তা আবারও যেন সত্য হলো। কিন্তু কেন মানুষের এত স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল এবারের পয়লা বৈশাখে?

মহামারি ও পবিত্র রমজান মাসের প্রভাব

কয়েক বছর আগে বিশ্বব্যাপী শতাব্দীর ভয়াবহ মহামারি চলাকালে লকডাউনের কারণে গোটা দেশের মানুষ ‘গৃহবন্দীই’ ছিল বলতে হয়। ঘরে থেকে ‘সীমিত পরিসরে’ ঈদ উদ্‌যাপন করেছে মানুষ। সে সময় দুই বছর ২০২০ ও ২০২১ সালের পয়লা বৈশাখও উদ্‌যাপিত হয়নি মানে সুযোগই ছিল না। এর মধ্যে ২০২১ সালের পবিত্র রমজান মাস শুরুই হলো পয়লা বৈশাখের দিন বা পরের দিন থেকে। সেবার পহেলা বৈশাখের দিন মুখে মাস্ক পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি গিয়েছিলাম, রীতিমতো খাঁ খাঁ করছিল এলাকাটা।

এরপরের দুই বছর ২০২২ ও ২০২৩ সালও পয়লা বৈশাখ পড়ল পবিত্র রমজান মাসে। রোজা, ইফতার, সাহ্‌রি, তারাবিহ নিয়ে ব্যস্ত ছিল দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষ।

২০২৪ সালে পয়লা বৈশাখ আসল ঈদুল ফিতরের মাত্র কয়েক দিন পর, সেটিও ঈদের ছুটির আমেজ ও ব্যস্ততার কাছে ঢাকা পড়ে যায়। ছোটখাটো আয়োজনেই পালিত হয় পয়লা বৈশাখ। ফলে এবার ছয় বছর পর মানুষ একটা উপযুক্ত সময়ে ‘প্রাণভরে’ পয়লা বৈশাখ পালনের সুযোগ পেল।

পাহাড়–সমতলের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ এবারের শোভাযাত্রাকে আরও অংশগ্রহণমূলক করে তোলে। রাজধানীর শাহবাগ এলাকা। ১৪ এপ্রিল
ছবি: প্রথম আলো

প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহ

গত কয়েক বছরে একের পর এক রেকর্ড তাপমাত্রা দেখেছি আমরা। এল নিনোর প্রভাব ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে টানা ২৬ দিনের যে তাপপ্রবাহ চলে গোটা দেশের ওপর, এ তাপমাত্রা বিগত ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল। একে তো ঈদের ছুটির আমেজ, তার ওপর ভয়াবহ গরম, ফলে সে বছর ঘটা করে পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপনে ছেদ পড়ে।

তার আগের বছর মানে ২০২৩ সালেও চরম তাপপ্রবাহে নাকাল ছিল দেশের মানুষ। বৈশাখ শুরুর আগেই প্রচণ্ড তাপে যশোরের রাস্তার পিচ গলে যাওয়ার খবর বেশ আলোচনা তৈরি করেছিল। সেবারও রোজায় ঢাকায় অনেক মানুষ পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন করতে বাইরে বের হয়েছিল ঠিক, কিন্তু অতি গরমে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছিল।

সহকর্মী সারফুদ্দিন আহমেদ এক লেখায় সেদিনের বর্ণনা দিয়েছিলেন এভাবে, ‘নিতান্ত গোবেচারা নরম-সরম লোকেরও মাথা গরম করা চরম গরম নিয়ে বৈশাখ এসে গেছে। ঘরের বাইরে পা ফেলামাত্র তাওয়া তাতানো তাপ ছ্যাঁৎ করে চামড়ার ওপর কামড় বসাচ্ছে। ঘাম বের হচ্ছে না, কিন্তু জান “বের হব হব” করছে। টাক ফাটানোর পাশাপাশি আজ “কাঠ ফাটা রোদ সেঁকে চামড়া”। শরীর জ্বালাপোড়া করছে। ঠোঁট শুকিয়ে ফেটে যাচ্ছে। এর মধ্যেই এসেছে বৈশাখ।’

বুঝতেই পারছেন, এমন তপ্ত আবহাওয়ায় পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন কতটা অসাধ্য ছিল। এবার পহেলা বৈশাখে বৈশাখের স্বাভাবিক গরমই ছিল। গাছের পাতায়ও ছিল কিঞ্চিৎ বাতাস। ফলে তুলনামূলক গরম কম থাকায় ঘর থেকে মানুষের বের হতে তেমন বেগ পেতে হয়নি।

সিআরবি এলাকায় বর্ষবরণ আয়োজন। চট্টগ্রাম শহর। ১৪ এপ্রিল
ছবি: জুয়েল শীল

ক্ষমতার দাপট ও দলীয় নিয়ন্ত্রণ

প্রতিটি ক্যাম্পাসে, প্রতিষ্ঠান ও এলাকাগুলোয় উৎসব আয়োজনে ক্ষমতাসীন দলের মানুষদের নিয়ন্ত্রণ তৈরি হয়েছিল বিগত বছরগুলোতে। সবকিছুতে ছিল চরম দলীয়করণ। এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানে।

এবারের বিজয় দিবসেও মানুষের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বিজয় উদ্‌যাপনের এক অনুষ্ঠানে এক লেখক ও অনুবাদকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। সেদিন তিনি বললেন, তাঁর স্ত্রীকে এ দিনে অফিসে যেতে হয়, অফিসের বসদের নানা আয়োজন ও খাবারদাবার দিয়ে খুশি করতে হয়, কিন্তু এবারের বিজয় দিবসে সেটি ছিল না। ফলে ইচ্ছামতো তাঁরা ঘুরতে পেরেছেন।

এ বছরের পয়লা বৈশাখেও সেটি ঘটেছে আসলে। পয়লা বৈশাখের রাতে টিএসসিতে এক আড্ডায় ক্যাম্পাসের একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, সে ঠিকঠাক বলতেই পারল না, তার দলের আয়োজন কেমন বা কোথায় ছিল? কারণ সেসব আয়োজনে অংশগ্রহণ কর্মীদের জন্য ‘বাধ্যবাধকতা’ ছিল না। আর নতুন দল এনসিপির অনুষ্ঠানে মানুষজনের কম উপস্থিতি নিয়ে তো সমালোচনা আমরা দেখলামই।

তার মানে মানুষ আসলে এ দিন উৎসবের আমেজেই থাকতে চায়, কোনো রাজনৈতিক ঘেরাটোপে বন্দী নয়। যার কারণে এবার বিজয় দিবস, রমজানের আগমন, চাঁদরাত আয়োজন, ঈদুল ফিতরে কমিউনিটি চর্চা ছিল তুলনামূলক চোখে পড়ার মতো।

বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে বাবুডাইং আলোর পাঠশালার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শোভাযাত্রা। বাবুডাইং, গোদাগাড়ী, রাজশাহী, ১৪ এপ্রিল
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর গুলশান, বারিধারা, উত্তরা, ধানমন্ডিতেও এবার পার্কে পার্কে স্থানীয় কমিউনিটি যে বর্ণিল ও উদ্দীপনার পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন করল, তা অভাবনীয়।
২০২৩ সালের মঙ্গল শোভাযাত্রায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানুষের মুখ বন্ধ রাখা ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে নিয়ে প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশগ্রহণ করেছিল বাম সংগঠনের কিছু কর্মী। তাঁরা সরকারি মাস্তানদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের প্ল্যাকার্ড কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।

এবারও সরকারের সমালোচনা করে জুলাই গণহত্যা বিচার, ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তি বাতিল, শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া, বম জাতিগোষ্ঠীর ওপর অবিচার বন্ধের দাবিতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশগ্রহণ ছিল, কোনো বাধা আসেনি। শোভাযাত্রায় নাগরিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছিল অক্ষুন্ন। জেলখানার বন্দীদের মধ্যে পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছে নববর্ষের উদ্‌যাপন। স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর মানুষ যেন রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি থেকেই বাঁচল—তা এবারের উৎসব আয়োজনেই প্রতীয়মান হয়।

কালচারাল বাইনারির ঘেরাটোপ

মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে একটি অভিযোগ তো কিছু বছর ধরে উঠছিল যে ঢাকার চারুকলাকেন্দ্রিক এই শোভাযাত্রাই পয়লা বৈশাখের প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে পড়েছে এবং বাঙালি-অবাঙালির বিচিত্র সব ঐতিহ্যের উপস্থাপন এ দিনের আয়োজনে যেন ঢাকা পড়ে গিয়েছিল।

যে কৃষি ঐতিহ্য ও প্রকৃতি-পরিবেশ প্রতিপালনের দায় থেকে পয়লা বৈশাখ আরও বেশি জীবন্ত হয়ে ওঠার কথা, তা তো দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে বলতেই হয়, সেই সঙ্গে সেসব যেন মোটিফের খাঁচায় বন্দী হয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় সংকুচিত হয়েও পড়েছিল। জাতিবাদী ও ভাবাদর্শসহ দলীয় ও ক্ষমতার বিভিন্ন রাজনীতিকরণের কারণে একটা সময় আমরা এ–ও দেখলাম, পুলিশ-র‍্যাব পাহারার মঙ্গল শোভাযাত্রা পালিত হচ্ছে।

নাম বদলের বিতর্ক বাদ দিলে এবার সেই শোভাযাত্রা যেন প্রাণ পেয়েছে। বাঙালি ছাড়া এই প্রথমবারের মতো পাহাড়–সমতলের আরও ২৭টি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ ও তাদের সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা এ শোভাযাত্রাকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে গেছে বলতেই হবে। কিছু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও ঘটা করে পয়লা বৈশাখ পালন হতে দেখলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। রাজধানীতে ধর্মীয় একটি গোষ্ঠী নিজেদের মতো শোভাযাত্রাও বের করেছে।

শোভাযাত্রায় শহুরে মধ্যবিত্ত ছাড়াও কৃষক, জেলে, তাঁতি, শ্রমিক—নানা পেশার মানুষের উপস্থাপন ঘটানো হয়েছে। কুষ্টিয়া থেকে এসেছিলেন ফকির-বাউলরাও। জেলা-উপজেলায় বা মফস্‌সলে এমনকি ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসেও গ্রামীণ খেলাধুলা, মেলা ও বিভিন্ন ঐতিহ্য উপস্থাপনের সমাহার ছিল, তা এবারের পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপনকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছিল।

নববর্ষের আনন্দ শোভাযাত্রায় গ্রামীণ নানা সাজে শিশু-কিশোরেরা। নওয়াববাড়ী সড়ক, বগুড়া, ১৪ এপ্রিল
ছবি: সোয়েল রানা

একটি খারাপ দৃষ্টান্তও থাকল


রমনার বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান ছাড়া রাজধানী ঢাকাবাসীর বৈশাখ বরণ যেন জমেই না। এবারও যথারীতি সেই অনুষ্ঠান হলো। পয়লা বৈশাখকে কতটা বৈচিত্র্যপূর্ণ করা যায়, আগেই তার পরিকল্পনা হাজির করেছিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। স্বৈরাচারের মোটিফ, শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন ও চারুকলার আয়োজনের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তর্কবিতর্ক ও সমালোচনা ছাড়া পয়লা বৈশাখ নিয়ে আয়োজনে তারা বেশ সফল বলা যায়। এসব বিতর্ক ও সমালোচনা এড়াতে পারলে হয়তো এ দিনের আনন্দের সঙ্গে আরও মানুষ একাত্ম হতে পারত।

আগের দিন চট্টগ্রামে ডিসি হিলে পয়লা বৈশাখের ঐতিহ্যবাহী আয়োজনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। মূলত মেলার নিয়ন্ত্রণ নিতে এবারের আয়োজন ভন্ডুল করে দিয়েছে একটি গোষ্ঠী। সিআরবির আয়োজনে ঘাটতি না থাকলেও ডিসি হিলের আয়োজন স্থগিত থাকায় চট্টগ্রামে পয়লা বৈশাখের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অনেকে। এ ভাঙচুরের ঘটনায় আটক ব্যক্তিদের ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। এভাবে ঐতিহ্যবাহী একটি বৈশাখী আয়োজন ভাঙচুর চালিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হলো, সরকার বা প্রশাসন কিছুই করবে না, এটি নিঃসন্দেহে খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

তবে এবার পয়লা বৈশাখের বর্ণিল আয়োজনে বেশ গভীরভাবে উপলব্ধি করা গেল যে, এটি শুধু বাঙালির উৎসব না। বাঙালিসহ পাহাড়-সমতলের সকল জাতিগোষ্ঠীরই উৎসব। সব জাতিগোষ্ঠী যার যার মতো নববর্ষ উদ্‌যাপন করলেও জাতি–বর্ণনির্বিশেষে উৎসবে অংশগ্রহণে একাত্ম হয়ে যাওয়ার প্রয়াস দেখা গেল এবার।

নতুন বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে যাবতীয় তর্কবিতর্ক ছাপিয়ে গিয়ে এমন অংশগ্রহণমূলক, সৌহার্দ্যপূর্ণ, উদ্‌যাপনমুখর ও স্বতঃস্ফূর্ত উৎসব আয়োজনই হোক সামনের দিনগুলোতেও।

  • রাফসান গালিব প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী। ই–মেইল: [email protected]