ফসল উৎপাদনের মৌসুম শেষ হয়েছে। এবার উৎপাদিত ফসল বাজারে বিক্রি করাই মূল কাজ। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কৃষক দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে যে ফসল ঘরে তুলেছেন, তা নিয়ে বাড়িতে আনন্দের হাওয়া বইতে পারত। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় কৃষকের কষ্ট আজ দুর্দশায় রূপ নিয়েছে।
ফসল আবাদে কৃষকদের শুরু থেকেই চড়া দামে বীজ, সার, কীটনাশক ও অন্যান্য উপকরণ কিনতে হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শ্রমের খরচ। ফসল ঘরে তোলার পর বাজারে তা বিক্রি করে উৎপাদন খরচ ওঠানোও কঠিন হয়ে পড়েছে। কুষ্টিয়ার কৃষকদের উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একটি ফুলকপির চারা ৩-৪ টাকায় কিনে রোপণ করতে হয়।
এরপর সার, কীটনাশক ও পরিচর্যার খরচ যোগ করে উৎপাদন শেষে প্রতি কেজি ফুলকপি বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৪-৫ টাকায়। একইভাবে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি করতে হচ্ছে ৩৫-৪০ টাকায়। শিমের ক্ষেত্রে চিত্রটা আরও করুণ, প্রতি কেজি শিম ১০-১২ টাকা, যা উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম এবং মুলা ৭-১০ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকেরা।
সঠিক দাম না পাওয়ায় অনেক কৃষক হতাশ হয়ে নিজের উৎপাদিত ফসল মাঠে নষ্ট করছেন, অনেকে আবার গবাদিপশুকে খাওয়াচ্ছেন। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কৃষির প্রতি কৃষকদের আগ্রহ কমে যাবে, যা দেশের কৃষিব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত নেতিবাচক।
অন্যদিকে খুচরা বাজারে এসব ফসলের দাম দেড় গুণ থেকে দুই গুণ বেশি। টমেটো প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়, ফুলকপি প্রতিটি ২০-২৫ টাকায়, শিম ৩০-৩৫ টাকায় আর মুলা ২০-২৫ টাকায়। বাজারের এই অসামঞ্জস্যতার ফলেই ফসল বিক্রি করে কৃষক তাঁদের উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না।
সঠিক দাম না পাওয়ায় অনেক কৃষক হতাশ হয়ে নিজের উৎপাদিত ফসল মাঠে নষ্ট করছেন, অনেকে আবার গবাদিপশুকে খাওয়াচ্ছেন। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কৃষির প্রতি কৃষকদের আগ্রহ কমে যাবে, যা দেশের কৃষিব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত নেতিবাচক।
ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমিয়ে কৃষকদের সরাসরি ফসল বিক্রির সুযোগ সৃষ্টি করলে এ সমস্যার অনেকটাই সমাধান হতে পারে।
মো. সাকিব উদ্দিন
শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা