ইতিকাফ ইমানদারের এক গুরুত্বপূর্ণ আমল

রমজানে একটি ফরজ—এক মাস রোজা রাখা; দুটি ওয়াজিব—সদকাতুল ফিতর দেওয়া ও ঈদের নামাজ আদায় করা; পাঁচটি সুন্নত—সাহ্‌রি খাওয়া, ইফতার করা, তারাবিহ পড়া, কোরআন করিম তিলাওয়াত করা ও ইতিকাফ করা।

হজরত উম্মে ছালামাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তিনটি আমল কখনো পরিত্যাগ করেননি—তাহাজ্জুদ নামাজ, প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ‘আইয়ামে বিদ’-এর রোজা পালন ও রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা। (জামিউস সগির ও সহিহ বুখারি: ১৯৭৫)

 হজরত আয়িশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) আজীবন রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করেছেন। তাঁর ওফাতের (আগে) পরেও তাঁর বিবিরা (ঘরে) ইতিকাফ করতেন। (বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফ; আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৪৬, পৃষ্ঠা: ১২৯)

দুনিয়ার সব আকর্ষণ থেকে মুক্ত হয়ে, সব মোহ-মায়া ত্যাগ করে সব বাধা-বন্ধন উপেক্ষা করে একান্তভাবে আল্লাহ তাআলার ধ্যানে মগ্ন হওয়ার নাম ইতিকাফ

‘ইতিকাফ’ অর্থ অবস্থান করা, আবদ্ধ করা, আবদ্ধ থাকা বা আবদ্ধ রাখা। পরিভাষায় ইতিকাফ হলো ইবাদতের উদ্দেশ্যে ইতিকাফের নিয়তে নিজেকে নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আবদ্ধ রাখা। যিনি ইতিকাফ করেন, তাঁকে ‘মুতাকিফ’ বলে। দুনিয়ার সব আকর্ষণ থেকে মুক্ত হয়ে, সব মোহ-মায়া ত্যাগ করে সব বাধা-বন্ধন উপেক্ষা করে একান্তভাবে আল্লাহ তাআলার ধ্যানে মগ্ন হওয়ার নাম ইতিকাফ।

মসজিদের বিশেষ আমল হলো ইতিকাফ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি ইব্রাহিম ও ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু–সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১২৫)

২০ রমজান সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে ঈদের চাঁদ তথা শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়া বা ৩০ রমজান পূর্ণ হয়ে ওই দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়াহ। কোনো মসজিদ মহল্লায় কয়েকজন বা কোনো একজন আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হবেন। আর কেউই আদায় না করলে সবাই সুন্নত তরকের জন্য দায়ী থাকবেন। তবে যিনি বা যাঁরা আদায় করবেন, শুধু তিনি বা তাঁরাই সওয়াবের অধিকারী হবেন।

পুরুষদের মসজিদে ইতিকাফ করতে হয়, আর নারীরা নির্দিষ্ট ঘরে বা নির্ধারিত কক্ষে ইতিকাফ করবেন। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ও একান্ত বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ইতিকাফের ঘর বা কক্ষ থেকে বের হবেন না।

অজু-ইস্তিঞ্জা বা পাক-পবিত্রতার জন্য বাইরে বের হলে কারও সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন না বা সালাম বিনিময় করবেন না। কেউ সালাম দিলে তার জবাবও দেবেন না। তবে দরকার হলে ওই কক্ষের ভেতর থেকে বাইরের কাউকে ডাকতে পারবেন এবং কেউ ভেতরে এলে তার সঙ্গে সালাম বিনিময় ও কথাবার্তা বলতে পারবেন।

ইতিকাফ কক্ষে এমন কেউ অবস্থান করতে পারবেন, যাঁরা ইতিকাফ করছেন না। ইতিকাফ কক্ষটি যদি শয়নকক্ষ হয় এবং একই কক্ষে বা একই বিছানায় অন্য যেকোনো কেউ অবস্থান করেন, তাতেও কোনো ক্ষতি নেই; এমনকি স্বামীও পাশে থাকতে পারবেন; তবে স্বামী-স্ত্রীসুলভ আচরণ ইতিকাফ অবস্থায় নিষিদ্ধ; এর দ্বারা ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।

আল্লাহ তাআলা কোরআন মজিদে বলেন, ‘আর তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ো না, যখন তোমরা ইতিকাফরত থাকবে মসজিদে (বা নির্দিষ্ট স্থানে)।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)

ইতিকাফ জামে মসজিদে যেমন করা যায়, তেমনি পাঞ্জেগানা মসজিদেও করা যায়। এমতাবস্থায় জুমার নামাজ আদায়ের জন্য শুক্রবারে জামে মসজিদে যেতে হবে, এতে ইতিকাফের কোনো ক্ষতি হবে না। জুমার আজানের পর যাবেন এবং নামাজের পর চলে আসবেন। এ সময় আসা-যাওয়ার পথে বা জুমা মসজিদে কারও সঙ্গে কথা বলবেন না, প্রয়োজনে ইশারায় বা সংকেতে নির্দেশ ও উত্তর প্রদান করবেন।

পাঞ্জেগানা মসজিদে ইতিকাফকালীন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করবেন। কখনো কোনো কারণে জামাত না হলে নিজেই আজান–ইকামাত দিয়ে নামাজ আদায় করবেন। ওয়াক্তিয়া নামাজের জামাতের জন্য ইতিকাফ ছেড়ে অন্যত্র যাওয়া যাবে না। এ জন্যই সম্ভব হলে জামে মসজিদে ইতিকাফ করাই উত্তম।

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

    যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

    [email protected]