জাপানি ফুটবল দর্শকদের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। কাতারে অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২–এ চারবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে হারিয়ে নিজেদের দেশকে আনন্দ–উল্লাসে ভাসিয়েছিল জাপান।
বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে ইতিহাস গড়া এ ম্যাচে জয়ের আনন্দ–উল্লাস করলেও খেলা শেষে গ্যালারির ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কার করতে ভোলেননি জাপানি দর্শক–সমর্থকেরা।
জাপানিদের এই স্বেচ্ছাসেবী কাজের খবর ও ছবি মুহূর্তেই ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, প্রশংসা কুড়ায় বিশ্ববাসীর।
বাংলাদেশেও জাপানিরা নিষ্ঠা ও সততার অনন্য নজির স্থাপন করে গেছেন তিনটি সেতু (কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতি ২য় সেতু) নির্মাণ করতে গিয়ে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে নির্মাণকাজই কেবল শেষ করেনি, তিনটি সেতুর মোট নির্মাণ ব্যয় থেকে বেঁচে যাওয়া ৭৩৮ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারকে ফেরত দিয়ে গেছে জাপানের তিন নির্মাতা কোম্পানি।
বাংলাদেশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেখানে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করে উল্টো দফায় দফায় প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর ধান্দায় থাকে, সেখানে জাপানিরা দেখিয়ে দিয়ে গেল তাদের শিক্ষার অনন্য নজির।
আমাদের দেশে নাগরিকদের দৈনন্দিন কর্মকালের মধ্যে বিবেচনাবোধের পরিচয় দেখা যায় না প্রায়ই। রাস্তায় বেরিয়ে একজন সচেতন নাগরিককে চলমান অনাচারগুলো দেখে পদে পদে হতাশ হতে হয়।
আগে শহরাঞ্চলে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, বিচারালয় ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আবাসনের পাশে ‘নীরব এলাকা’ লেখাসংবলিত সাইনবোর্ড দেখা যেত।
এখন উন্নয়নের ডামাডোলে এসব সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড হারিয়ে যাচ্ছে। এসবের তোয়াক্কা করা লোকের সংখ্যাও কমছে। একসময় অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ শুনে অন্য যানবাহন জায়গা ছেড়ে দিলেও অ্যাম্বুলেন্সের বহুমুখী ব্যবহারের ফলে এখন সাইরেনের শব্দ রাস্তায় চলাচলকারীদের মধ্যে ভাবান্তর ঘটায় খুব কমই।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে মেলা, বাজার, যাত্রাপালা ও কোরবানির পশুর হাট বসানোর অনুমতি নির্বিঘ্নে পাওয়া যাওয়ার সূত্রে অনেক জায়গায় অবৈধ দখল করে জোরপূর্বক পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সমাজের নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা পড়ে বলে এসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারও।
গৃহস্থালির ময়লা, বর্জ্য, উচ্ছিষ্টগুলো আবাসিক ভবনগুলোর বারান্দা আর জানালা দিয়ে সামনের চলাচলের রাস্তা কিংবা ভবনের পাশে ফেলার অভ্যাস বদলাতে যে বাঙালির কত বছর লাগবে, তা বোধ করি জানা নেই কারও। ভিক্ষুক, হকার, ভাঙারি বিক্রেতা—সবার হাতে মাইক; তাঁরা উচ্চ শব্দে ডাকাডাকি করে আবাসিক এলাকার পরিবেশ বিঘ্নিত করছেন।
স্বল্পপাল্লা ও দূরপাল্লা—সব গাড়ির চালকই যাত্রী তুলতে ইচ্ছাকৃত রাস্তার মাঝবরাবর গাড়ি থামান, সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি করেন। পুলিশের গাড়ির উল্টো দিকে চলার দৃশ্য এখন নিয়মিত। মোটরবাইক ফুটপাতে চালাতে এখন আর কেউ দ্বিধা করেন না!
সাধারণ বাইকার আর পুলিশ সদস্যের মধ্যে কোনো ভেদ নেই। ফুটপাতে হেঁটে চলা পথচারীকে পথ ছেড়ে দিতে বেপরোয়া বাইকারদের মাস্তানি চলে হামেশাই। রমজান মাসে দুপুরের পর থেকেই ফুটপাতজুড়ে ইফতারির পসরা আর দোকানের সামনে বহনযোগ্য সাইনবোর্ড তো আছেই।
পরিবহন সেক্টরে অবক্ষয়টা বেশি। প্রতিদিন নগদ টাকা নিয়ে ঘরে ফেরা এই সেক্টরের মানুষগুলো—কন্ডাক্টর, হেলপার, ক্ষেত্রবিশেষে চালকও একটু বেশি রকমের ভয়ংকর। লোকাল বাসের (দূরপাল্লা কিংবা শহরে) অনেক কন্ডাক্টর, হেলপার যাত্রীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করেন নিয়মিতই।
মানুষের মধ্যে বিচার-বিবেচনা, দায়িত্ববোধ, সচেতনতা তৈরিতে দরকার পারিবারিক শিক্ষার পাশাপাশি সরকারি–বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে জোরালো প্রচার–প্রচারণা। নগর কর্তৃপক্ষ, প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে নিয়মভঙ্গে জেল-জরিমানার মতো শাস্তির ব্যবস্থা। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে আহ্বান জানাতে হবে।
কদিন আগে গাজীপুরের চন্দ্রা মোড়ে সিরাজগঞ্জে যাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ কোলের শিশুসহ দরিদ্র দুই নারীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে টাঙ্গাইলগামী গাড়িতে তুলে নিয়ে রাতের বেলায় নামিয়ে দেওয়া হয় টাঙ্গাইল শহরে ঢোকার রাস্তার মুখে, যেখানে দূরপাল্লার কোনো গাড়ি থামে না।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক সিনিয়র সাংবাদিক জগলুল আহমেদ চৌধুরীর বাস থেকে নামতে গিয়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করার ঘটনা ভুলে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। নিজের গাড়ির বদলে সেদিন বাসের যাত্রী হয়ে একটি টিভি টক শোতে অংশ নিতে আসছিলেন। কারওয়ান বাজার স্টপেজে নামতে গিয়ে চালক ও হেলপারের খামখেয়ালিপনার শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে হয় দেশবরেণ্য এই সাংবাদিককে!
দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, বাস থেকে পড়ে গিয়ে আহত অবস্থায় সেখানেই পড়ে ছিলেন তিনি। তাৎক্ষণিকভাবে আশপাশের কেউ তাঁকে উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি। অনেক পরে এক সহৃদয় পথচারী তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এ ঘটনার তদন্তে কমিটি হলেও তাদের দায়িত্বহীনতায় দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ করাও সম্ভব হয়নি।
নাগরিকদের অবিবেচনার সবচেয়ে নিকৃষ্ট চিত্রটা দেখা যায় সিটি করপোরেশন কর্মীদের সুয়ারেজ লাইন ও ম্যানহোল পরিষ্কার করার সময়। ব্যবহৃত পানি পানীয়ের বোতল, হাতব্যাগ, পুরোনো কাপড়, প্লাস্টিকসামগ্রী, গৃহস্থালির বাতিল সামগ্রী—এমন কোনো জিনিস নেই, যা শহরবাসী নর্দমায় ফেলে না।
এগুলো ড্রেনে বর্জ্যপানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এতে জলাবদ্ধতার ভোগান্তির শিকার হয় নগরবাসী।
আমাদের বহু আকাঙ্ক্ষার অত্যাধুনিক মেট্রোরেলে আরোহণ করতে গিয়ে শিক্ষিত নাগরিকেরা মুহূর্তেই তাঁদের শিক্ষা–রুচি, বিবেচনাবোধ জলাঞ্জলি দিয়ে যাত্রীদের নামার আগেই ঠেলে ওঠার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। পাশের দেশের কলকাতায় মেট্রো চালু হয়েছে ১৯৮৫ সালে। ওখানে ঠিকই ভারতীয় নাগরিকেরা যাত্রীদের আগে নামার সুযোগ দিয়ে তবেই ওঠেন, আর সিনিয়র সিটিজেন, মহিলা যাত্রীকে বসার জন্য আসন ছেড়ে দিচ্ছেন নির্দ্বিধায়। আমাদের নাগরিকদের মধ্যে তেমন ভব্যতাবোধ কবে তৈরি হবে?
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগছে, পেশাগত দায়িত্ব–বিবেচনাবোধ থেকে কি সরে যাচ্ছেন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, আইনের লোক, চিকিৎসক, শিক্ষক, প্রকৌশলী, ব্যাংকার, আইনজীবীসহ দায়িত্ববান পদে আসীন ব্যক্তিরা? বাণিজ্যিক মনোভাব ও খ্যাতির মোহ চিকিৎসকদের দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে সরিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য পেশাজীবীরা। সম্প্রতি চিকিৎসা নিতে আসা বেশ কয়েক রোগীর মৃত্যুই এর প্রমাণ।
শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে দায়িত্ববোধ। আগে বহু ক্ষেত্রেই দেখা যেত, পেশাগত সম্পর্ক ছাপিয়ে স্নেহ–শ্রদ্ধা–নির্ভরতার বন্ধনে বাঁধা পড়ে যেত দুই পক্ষ—শিক্ষক ও শিক্ষার্থী। বর্তমানে রাজনীতি ও স্বার্থসর্বস্বতা অন্য ক্ষেত্রগুলোর মতোই শিক্ষকতাকেও গ্রাস করেছে। বহু শিক্ষক নিজ কর্তব্য ভুলে শিক্ষাকে পণ্য বানিয়েছেন।
ধর্মান্ধতাও মানবতা বিবর্জিত করে তোলে আমাদের। এক সহকর্মীর অসুস্থ মায়ের জন্য জরুরি পরিস্থিতিতে রক্তের প্রয়োজন হয়। মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচাতে রক্ত দিতে আসা ব্যক্তি রক্ত না দিয়েই চলে যান যখন জানতে পারেন, রোগী অন্য ধর্মাবলম্বী। অনেক কষ্টে শেষ মুহূর্তে রক্ত জোগাড় হলেও সেই রোগীকে আর বাঁচানো যায়নি।
এ দেশে এখন অল্প সময়ে বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় পেয়ে বসেছে অধিকাংশ মানুষকে। অনিয়ম, দুর্নীতি ও অনৈতিকতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র বা সমাজে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে না ওঠায় এসব অলিখিত বৈধতা পেয়ে যাচ্ছে। জড়িত ব্যক্তিদের আইন কিংবা বিচারের মুখোমুখিও করা সম্ভব হচ্ছে না। সম্প্রতি দেশে নিজ নিজ ক্ষেত্রে শীর্ষ পদের অবসরপ্রাপ্ত দুজন ‘আলোচিত’ ব্যক্তি এবং কাস্টমসের এক শীর্ষ কর্তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ আর কয়েকবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্যের প্রতিবেশী দেশে গিয়ে রহস্যজনকভাবে খুন হওয়ার ঘটনা চলমান অনাচারের বর্ধিত রূপ।
গত এক বছরে দেশে কাটা হয়েছে ২৫ লাখ গাছ। এই মহান কর্মে এককভাবে সবচেয়ে বেশি সাফল্য বন বিভাগের! বেশি গাছ কাটা হয়েছে চট্টগ্রাম জেলায়—৫ লক্ষাধিক। স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোও কম যায় না। একক বৃক্ষনিধনকারী হিসেবে সবার ওপরে নীলফামারীর তিস্তা সেচ প্রকল্প প্রায় চার লাখ গাছ কেটেছে।
৫ জুন ২০২৪ বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে প্রস্তুত করা ‘রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টার’–এর মিডিয়া মনিটরিং রিপোর্টে উঠে এসেছে এ তথ্য। বৃক্ষনিধনকারী হিসেবে আরও উঠে এসেছে বিভিন্ন ইকো-ট্যুরিজম প্রকল্প; মোটাদাগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম।
একটা শিশুর মনে দায়িত্ব, কর্তব্য ও বিবেচনাবোধ জাগিয়ে তোলার প্রাথমিক সূচনাটা হয়ে থাকে প্রথমত নিজের ঘর, মা–বাবা, পরিবার–পরিজনের কাছেই।
ধর্মীয় শিক্ষা ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, পারিপার্শ্বিকতা ও নিজস্ব সামাজিক পরিমণ্ডলের ভালো কাজের অনুশীলন দেখেও তা দৃঢ়ভাবে রেখাপাত করে তাদের মনে। কিন্তু আমাদের সমাজে শিশু–কিশোরদের সামনে ঘটে চলেছে একের পর এক অন্যায়, পেশিশক্তির প্রদর্শনী, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন আর আশ্রয়প্রশ্রয়; যার বাইপ্রোডাক্ট দৃশ্যমান নতুন উপদ্রব ‘কিশোর গ্যাং’।
নানা গোত্র ও পক্ষ তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, ধর্মীয় বিশ্বাস ও অবস্থান থেকে ধর্মের বাণী প্রচার করছে। তাদের অনুসারীর সংখ্যাও বাড়ছে, বাড়ছে তাদের আস্তানা–উপাসনালয়ের জৌলুশও। কিন্তু সমাজে এসবের ইতিবাচক প্রভাব চোখে পড়ছে খুব কমই। আপনি চারদিকে চোখের সামনে ঘটে চলা অনাচার–অবক্ষয় রোধে স্বীয় উদ্যোগে কাউকে বারণ করলে জবাব পাবেন—‘সবাই তো করে, আমিও করি’।
সদ্য অবসরে আসা সরকারি চাকরিজীবী হুমায়ুন শামসের বসবাস খিলগাঁও এলাকায়। একসময়ের শান্ত, নিরিবিলি ও পরিকল্পিত আবাসিক এলাকায় এখন চরম বিশৃঙ্খলা। তালতলা মার্কেটের পর থেকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া পর্যন্ত গড়ে উঠেছে শতাধিক রেস্তোরাঁ।
বিকেলে, সন্ধ্যায় যানজটে নাকাল হয় পুরো এলাকা। ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ বেইলি রোডে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক প্রাণহানির জেরে সরকারের নানা সংস্থার তৎপরতায় বেশ কিছু রেস্তোরাঁ বন্ধ হলেও মাসখানেকের মাথায় সব কটি চালু হয়ে গেছে।
হুমায়ুন শামস তাঁর ছোট ভাইয়ের ক্যান্টনমেন্টের বাসায় যাতায়াত করার সময় দেখেন, সেখানে ভিন্ন এক বাংলাদেশ। সব যানবাহন চলে নির্ধারিত গতিসীমা মেনে; লেন পরিবর্তন ও নির্দিষ্ট স্থানে ইউটার্ন নেওয়াসহ রাস্তার সব নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল তখন চালকেরা। যেকোনো রকম অনিয়মে নগদ শাস্তির ব্যবস্থাটা আছে বিধায় এখানে সবাই ‘বাধ্য ছাত্র’। কিন্তু জাহাংগীর গেট কিংবা বনানীর সৈনিক ক্লাব পার হয়েই চিরাচরিত বাংলাদেশে এসে সেই ‘বাধ্য ছাত্র’গুলোর প্রায় সবাই বদলে যায়।
তবু আশার আলো কিছু ভালো উদাহরণ
রাজধানী ঢাকার ডেমরা রোডের মল্লিক পাড়ার আবদুল লতিফ পালোয়ান ও তাঁর পরিবার বিনা মূল্যে কাফনের কাপড় দিচ্ছেন হতদরিদ্রদের। ৩২ বছর ধরে এই সেবা করে আসছেন আবদুল লতিফ পালোয়ান (সদ্য প্রয়াত) ও তাঁর কন্যা সিফাতি ফেরদৌস রিয়া।
চট্টগ্রামের ছাত্রনেতা ও ঠিকাদার আবু তৈয়বের চট্টগ্রাম নগরে ‘বায়েজিদ সবুজ উদ্যান’ নির্মাণে মানসম্মত কাজ করেও বরাদ্দের (১২ দশমিক ৭৪ কোটি টাকা) উদ্বৃত্ত ৪ দশমিক ৪৪ কোটি টাকা গণপূর্ত বিভাগকে ফেরত দেওয়ার ঘটনা নীতিনৈতিকতার ক্রমশ অবনমনের এ সময়ে অনুপ্রেরণাদায়ী একটা উদাহরণ।
নানা শ্রেণি পেশার নাগরিকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সীমিত পরিসরে দায়িত্ববোধের অনুশীলন দেখা যাচ্ছে এখনো। এলাকার বিবেকবান ব্যক্তিদের উদ্যোগে ঢাকনা চুরি যাওয়া ম্যানহোলের ওপর মাথায় নিশানাসমেত বাঁশ কিংবা লাঠি পুঁতে দিয়ে এটি নজরে আনেন পথচারীদের।
মানুষের মধ্যে বিচার-বিবেচনা, দায়িত্ববোধ, সচেতনতা তৈরিতে দরকার পারিবারিক শিক্ষার পাশাপাশি সরকারি–বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে জোরালো প্রচার–প্রচারণা। নগর কর্তৃপক্ষ, প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পক্ষ থেকে নিয়মভঙ্গে জেল-জরিমানার মতো শাস্তির ব্যবস্থা। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করতে আহ্বান জানাতে হবে।
শেষ কথা, আত্মজিজ্ঞাসার অনুভবে জাগ্রত হোক আমাদের বোধ।
মুহাম্মদ লুৎফুল হায়দার ব্যাংকার