ইসরায়েল দীর্ঘ প্রতিশোধের পরিকল্পনা করেছে

ইরানের ছোড়া একটি মিসাইলআল জাজিরার ভিডিও থেকে

ইরান আক্রমণ করেছে ইসরায়েলকে। এখন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত যাঁরা, তাঁরা কী ভাবছেন। তাঁদের কথা থেকে মনে হচ্ছে ইসরায়েল বেশ আটঘাট বেঁধে তাদের কাজ শুরু করেছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং সাবেক কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েল ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া হিজবুল্লাহর বড় ক্ষতি করেছে। ফলে তেহরানের ইসরায়েলকে আক্রমণের ক্ষমতা অনেকটাই কেড়ে নিতে পেরেছে তারা।

এবার ইরান যে মিসাইল আক্রমণ করেছে, তার জবাব গত এপ্রিলে দেয়া ইসরায়েলের জবাবের চেয়ে কঠিন হবে। এপ্রিলের জবাব ছিল অনেকটাই প্রতীকী।

এপ্রিলে ইসরায়েল এই ভয়ে ছিল যে পাল্টা আক্রমণ খুব কঠোর হলে ইরান তাঁর সমর্থিত মিলিশিয়াদের দিয়ে ব্যাপক আক্রমণ করবে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক ছিল তারা হিজবুল্লাহকে নিয়ে।

কিন্তু গত সপ্তাহে ইসরায়েল লেবাননে আক্রমণ চালিয়েছে। সে আক্রমণ ছিল ব্যাপক। নিহত হয়েছেন হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। সেই সঙ্গে লেবাননে তারা শুরু করেছে স্থল আক্রমণ। সব মিলিয়ে তারা সাময়িকভাবে হলেও হিজবুল্লাহকে দুর্বল করতে পেরেছে। ফলে ইরানের পক্ষ হয়ে কড়া পাল্টা জবাব দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই হিজবুল্লাহ। ইরানকে এখন লড়তে হবে মূলত একা। এ কথা বলছেন ইরান বিশেষজ্ঞ দয়ানি সিট্রিনোইজ।

তিনি আরও জানাচ্ছেন, ‘ইরানের প্রেক্ষাপটে এপ্রিলের তুলনায় ইসরায়েলের অনেক বেশি লাগামছাড়া হতে পারবে। কারণ, হিজবুল্লাহ যুদ্ধে পুরোমাত্রায় যোগদান করার আর কোনো হুমকি নেই।’

বাইডেন প্রশাসন ইসরাইলকে তার প্রতিক্রিয়া কিছুটা কমিয়ে আনার পরামর্শ দিতে পারে। যেহেতু কয়েক দিন পরই আমেরিকায় নির্বাচন আসছে। গত এপ্রিলে ইসরায়েলের আক্রমণে যতটা প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, আমেরিকান কর্মকর্তারা সম্ভবত চাইবেন যে এর চেয়ে কম বা হালকাভাবে যেন এই সমস্যা পার হওয়া যায়। তখন নির্বাচনের দেরি ছিল। এখন তো খুব কাছে এসে পড়েছে। ফলে আমেরিকান প্রশাসনের এই মনোভাব একটা ভূমিকা রাখবে ইসরায়েলের পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েলের জন্য ভয়ের কারণ হয়ে আছে। সেখানেও আক্রমণ করার কথা হয়তো ইসরায়েল হয়তো বিবেচনা করবে।

এভাবে যুদ্ধ বেড়েই যেতে থাকলে এর শেষ কোথায় তা বলা কঠিন। ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণ নিশ্চিতভাবেই ইরানের পক্ষ থেকে আরেক দফা প্রতিক্রিয়া ডেকে আনবে। ফলে তা উত্তরোত্তর বেড়েই যাবে। ফলে ইসরায়েল আর ইরানের মধ্যে এই যে সরাসরি সংঘাত শুরু হলো তা সহজে থামবে না।

আধা ঘণ্টায় ইরান প্রায় ১৮০টি মিসাইল ছুড়েছে। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে চ্যালেঞ্জ ছিল ইরানকে আক্রমণ করা নয়। বরং সব দিক গুছিয়ে আরও শক্তভাবে জবাব দেওয়া। এই মত ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জাতীয় প্রতিরক্ষা পরামর্শক মেজর জেনারেল ইয়াকভ আমিদর।

জেনারেল আমিদর বলছেন, একমাত্র বিবেচনার বিষয় হচ্ছে ‘আমরা তাদের কতটা ক্ষতি করতে পারব আর পাল্টা তারা আমাদের কতটা ক্ষতি করতে পারবে’।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েলের জন্য ভয়ের কারণ হয়ে আছে। সেখানেও আক্রমণ করার কথা হয়তো ইসরায়েল হয়তো বিবেচনা করবে।

সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, এই অঞ্চলের চেহারা বদলে দেওয়ার এটা ‘গত ৫০ বছরে সবচেয়ে বড় সুযোগ’।

তিনি বলছেন, ‘ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প ধ্বংস করতে আমাদের এখনই নেমে পড়া উচিত। সেই সঙ্গে তাদের শক্তি উৎপাদনকেন্দ্রগুলো ধ্বংস করা এখন ইসরায়েলের আশুকর্তব্য। তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে আঘাত লেগেছে। মাথায় আঘাত করার এখনই সময়।’ নিশ্চিতভাবেই বেনেট হিজবুল্লাহপ্রধানের হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করছেন।

সব মিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে, দুই পক্ষই পরিস্থিতি নিজের পক্ষে টেনে নিতে চাইছে। তবে ইসরায়েল যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে তা বোঝা যাচ্ছে স্পষ্ট।

অ্যারন বক্সারম্যান, সাংবাদিক, নিউইয়র্ক টাইমস, জেরুজালেম

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ জাভেদ হুসেন