এরদোয়ানের আহ্বান কেন কেউ কানে তুলছে না

রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গ্রুপ হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের কয়েক শ বেসামরিক লোক ও সেনাদের হত্যা করার পরপরই তুরস্ক সরকার তার ভূখণ্ডে থাকা হামাস নেতাদের বেরিয়ে যাওয়ার আদেশ দেয়। এতে বোঝা যাচ্ছিল, তুরস্ক চায় না হামাসের হামলায় তাদের কোনো সহযোগিতা বা কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার কথা উঠুক। বরং তুরস্ক উদ্ভূত এই সমস্যা সমাধানে নিজেকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দাঁড় করাতে চেয়েছে।

সংঘাত শুরুর পরপরই তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান একটি ভারসাম্যমূলক বিবৃতি দেন। সে বিবৃতিতে তিনি ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের হামলা এবং গাজায় ইসরায়েলের বোমা হামলা—দুটিরই নিন্দা জানান। তিনি অবিলম্বে সংঘাত বন্ধ করে সংলাপে বসার জন্য উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান এবং হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া ইসরায়েলি নাগরিকদের মুক্ত করার কাজে সহায়তা দিতে রাজি আছেন বলেও জানিয়ে দেন।

কিন্তু এরদোয়ানের এই আহ্বান কোনো ফল বয়ে আনেনি। আঙ্কারার কূটনৈতিক তৎপরতার প্রভাবও সীমিত থেকেছে। এখন পর্যন্ত অস্ত্রবিরতির কোনো ঘোষণা ঘোষণা আসেনি।

তুরস্কের কূটনৈতিক দৌড়ঝাঁপে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পাওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। আসলে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তুরস্কের মধ্যস্থতায় সফলতা পাওয়ার সঙ্গে গাজা পরিস্থিতির পার্থক্য আছে। আঙ্কারা যেহেতু রাশিয়া ও ইউক্রেন—উভয়েরই অতি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার, সেহেতু সহজেই তুরস্ক তাদের সংলাপে ডাকতে পেরেছে। এরদোয়ানের প্রতি এই দুই শিবিরেরই যথেষ্ট ভরসা ছিল। এ কারণে তারা বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছে।

কিন্তু গাজা যুদ্ধের ক্ষেত্রে তুরস্কের হাতে এমন কোনো হাতিয়ার ছিল না, যা ব্যবহার করে এরদোয়ান ইসরায়েলকে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করতে পারে। আঙ্কারা ও তেল আবিবের সঙ্গে জোরালো অর্থনৈতিক বন্ধন থাকলেও সেই বন্ধনের তেমন কোনো রাজনৈতিক ওজন নেই। এরদোয়ানের প্রতি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর তেমন কোনো টান নেই। এটি তেল আবিব ও আঙ্কারা উভয়ই জানে।

ইসরায়েলের কর্মকর্তারা বলেছেন, হামাস তঁাদের জিম্মিদের ছেড়ে না দেওয়া পর্যন্ত তঁারা কোনো ধরনের সংলাপ বা সালিসে বসতে রাজি নন। ফলে ইসরায়েল সংলাপের দিকে না গিয়ে ‘গাজাকে মুছে দেওয়া’ এবং প্রতিশোধ নেওয়ার দিকে মন দিয়েছে।

আরও পড়ুন

অবাক করা ব্যাপার হলো ৭ অক্টোবরের হামলার পর পরই আঙ্কারা হামাস নেতাদের তুরস্ক ছাড়তে বলার পরও ইসরায়েলের নেতারা এরদোয়ানকে ধন্যবাদ কিংবা অভিনন্দন জানিয়ে কোনো বিবৃতি দেননি। হামাসের ওপর অন্য দেশগুলোর তুলনায় তুরস্কের অনেক বেশি ভারসাম্যপূর্ণ প্রভাব আছে, যার ব্যবহার চলমান সংঘাতের সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষের উপকারে আসতে পারত।

জর্ডান, মিসর এবং কাতারও গাজা যুদ্ধে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছে। অন্যদিকে গাজা সংকট সমাধানে তুরস্ককে ওয়াশিংটনের দিক থেকে কোনো রকম সহযোগিতা করা হয়নি। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে গাজায় হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাইডেন অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলি নাগরিকদের উদ্ধারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সঙ্গে আলোচনা করলেও তা তেমন ফলপ্রসূ হবে বলে মনে হয় না। কারণ, গত এক দশকে নানা বিষয়ে মতানৈক্যের কারণে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে আঙ্কারার দূরত্ব অনেক গুণ বেড়ে গেছে।

তুরস্ক এখন অন্যদিকে জোর দিয়েছে। একটি সূত্র আমাকে বলেছে, ‘সম্প্রতি তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিদান আরব অঞ্চল সফর করে জর্ডান, মিসর, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে একটি বার্তাই দিতে চেয়েছেন। সেটি হলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে আরব দেশগুলোকে সমর্থন দিতে তুরস্ক প্রস্তুত আছে। নিজেদের মধ্যে ঝগড়াবিবাদ করে লাভ হবে না। আমরা আরবদের ঐক্যফ্রন্ট দেখতে চাই।’

আরও পড়ুন

ফিদান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের অবসানে আরবদের এক করার যে চেষ্টা চালাচ্ছেন, সেটিকে অনেক সমালোচক ইসরায়েলকে থামানোর যথেষ্ট উদ্যোগ নয় বলে মনে করছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ বলেছেন, ইসরায়েলকে থামাতে আঙ্কারার সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কিন্তু সেটি ঠিক নয়। কারণ, তুরস্ক কোনো সন্ত্রাসী দেশ নয়। এরদোয়ান প্রথম থেকে যে সংলাপের কথা বলে যাচ্ছেন, সেটি ধরে রাখা এবং পাশাপাশি ইসরায়েলের সমালোচনা করাই ঠিক আছে বলে মনে হচ্ছে।

মিডল ইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত আকারে অনূদিত

  • রাগিপ সোয়লু মিডল ইস্ট আইয়ের আঙ্কারাভিত্তিক তুর্কি ব্যুরো চিফ