সুন্দর আচরণ ও উত্তম ব্যবহার ইবাদত
অন্যের সঙ্গে চলাফেরা ও আচার-আচরণ কেমন হবে, সে বিষয়ে ইসলামে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনা প্রতিপালন করলে সমাজের অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সুন্দর হবে। পরকালে অশেষ সওয়াব হবে।
মন্দ আচরণের কারণে সমাজে যেমন অপাঙ্ক্তেয়ও হতে হবে, পরকালেও গুনাহগার হতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা মানুষের সঙ্গে উত্তম ও সুন্দর কথা বলো।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৮৩)
সুন্দর ব্যবহার, সুন্দরভাবে কথা বলা সুন্দর মনের পরিচায়ক। আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবীজি (সা.)–কে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি উত্তম নৈতিক চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত।’ (সুরা-৬৮ কলাম, আয়াত: ৪)। ‘আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয়ের অধিকারী হয়েছেন, পক্ষান্তরে আপনি যদি রূঢ় ও কঠিনহৃদয় হতেন, তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যেত। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করুন।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১৫৯)
‘মুমিনদের জন্য আপনি আপনার ডানা অবনমিত করুন (কোমল আচরণ করুন)।’ (সুরা-১৫ হিজর, আয়াত: ৮৮)। ‘কেউ যখন তোমাদের সৌজন্যমূলক সম্ভাষণ জানাবে, প্রত্যুত্তরে তোমরা তাকে তার চেয়ে সুন্দরভাবে সম্ভাষণ জানাও কিংবা অন্তত ততটুকুই জানাও।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৮৬)। ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না, পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম ও দরিদ্রদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার (সুন্দর আচরণ) করবে এবং মানুষের সঙ্গে সুন্দর কথা বলবে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ৮৩)। ‘তোমরা তোমাদের পিতা-মাতা, নিকটাত্মীয়, এতিম, দরিদ্র, প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথি, পথিক এবং যারা তোমাদের অধিকারে এসেছে, সবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করো।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৩৬)। ‘পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূপৃষ্ঠকে কখনোই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বতসমান হতে পারবে না। এসবের মধ্যে যেগুলো মন্দ কাজ, সেগুলো তোমার পালনকর্তার কাছে অপছন্দনীয়।’ (সুরা-১৭ ইসরা, আয়াত: ৩৭-৩৮)
সুন্দর আচরণকারীকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন। তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ কোমল ব্যবহার করেন, তাই সব ব্যাপারে তিনি কোমল আচরণ পছন্দ করেন’
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মুমিনের আমলনামায় সুন্দর আচরণের চেয়ে অধিক ভারী আমল আর কিছুই হবে না। যে ব্যক্তি অশ্লীল ও কটুকথা বলে বা অশোভন আচরণ করে, তাকে আল্লাহ তাআলা ঘৃণা করেন। আর যার ব্যবহার সুন্দর, সে তার ব্যবহারের কারণে নফল রোজা ও তাহাজ্জুদের সওয়াব লাভ করবে।’ (তিরমিজি)
‘সবচেয়ে বেশি যা মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে, তা হলো আল্লাহ তাআলার ভয় ও সুন্দর আচরণ।’ (তিরমিজি)। ‘সুন্দর আচরণই নেক আমল।’ (মুসলিম)।
উত্তম আচরণের বিনিময় জান্নাত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার আচার-ব্যবহার সুন্দর, আমি তার জন্য সর্বোচ্চ জান্নাতে একটি বাড়ির নিশ্চয়তা প্রদান করছি।’ (আবু দাউদ)। ‘যদি কেউ বিনম্রতা ও নম্র আচরণ লাভ করে, তাহলে সে দুনিয়া ও আখিরাতের সব কল্যাণই লাভ করল। আর রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং সুন্দর আচরণ বাড়িঘর ও জনপদে বরকত দেয় এবং আয়ু বৃদ্ধি করে।’ (মুসনাদে আহমাদ)
উত্তম আচরণ সদকা। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘উত্তম আচরণ ও ভালো কথাও একটি সদকা।’ (বুখারি ও মুসলিম)। প্রিয় নবী রাসুল (সা.) বলেন, ‘সদকা বা দান-খয়রাত মানুষকে শোচনীয় মৃত্যু হতে রক্ষা করে আর সুন্দর আচরণ আয়ু বৃদ্ধি করে। সুন্দর আচরণকারীকে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ কোমল ব্যবহার করেন, তাই সব ব্যাপারে তিনি কোমল আচরণ পছন্দ করেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)। ‘যে ব্যক্তি সুন্দর আচরণ থেকে বঞ্চিত, সে সমুদয় কল্যাণ থেকেই সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত।’ (মুসলিম)। ‘তোমার ভাইয়ের সঙ্গে মুচকি হাসির বিনিময় করাও সদকার সওয়াব হয়ে যায়।’ (তিরমিজি)। ‘সর্বোত্তম ইমানদার হচ্ছে ওই লোক, যার আচরণ সর্বোত্তম।’ (তিরমিজি ও মুসনাদে আহমাদ)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম