গণভোটের আইনি ভিত্তি এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়

বর্তমান সময়ের বিশেষ সাংবিধানিক পরিস্থিতিতে জুলাই সনদে বর্ণিত এসব সংস্কার যা বেশ ব্যাপক, তা বাস্তবায়নের জন্য গণভোটটি গুরুত্বপূর্ণ। গণভোটের আইনি ভিত্তি ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে লিখেছেন শরীফ ভূঁইয়া

গণভোটের সাংবিধানিক ভিত্তি বোঝার জন্য অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সাংবিধানিক ভিত্তিও বুঝতে হবে। কারণ, উভয়েরই সাংবিধানিক ভিত্তি একই রকম। এটা বলা যাবে না যে বর্তমান সরকার লিখিত সংবিধানের ভিত্তিতে গঠিত হয়েছিল। তা সত্ত্বেও বর্তমান সরকার সাংবিধানিক ও বৈধ।

প্রধানমন্ত্রী দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর লিখিত সংবিধান প্রয়োগ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। কারণ, সংবিধান এ ধরনের পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে প্রণয়নই হয়নি। অতএব বর্তমান সরকারের সাংবিধানিকতা ও বৈধতার ভিত্তি লিখিত সংবিধানের বাইরের নীতিগুলোর মধ্যে খুঁজতে হবে।

যে নীতিগুলোর ওপর নির্ভর করা যেতে পারে, তার মধ্যে একটি ‘প্রয়োজনীয়তার নীতি’ (ডকট্রিন অব নেসেসিটি)। দেশ যাতে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত না হয়, তার জন্য সাংবিধানিক প্রয়োজনীয়তার নীতিটি একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করাকে অপরিহার্য করে তুলেছিল এবং এটি কোনো সাধারণ প্রয়োজনীয়তার ধারণা নয়, এটি একটি সাংবিধানিক প্রয়োজনীয়তার নীতি।

বিপ্লবোত্তর সময়ে, যখন সংবিধান কাজ করে না, ‘বিপ্লবী সাংবিধানিকতাবাদ’ লিখিত সংবিধানের স্থান নিতে পারে। সহজভাবে বললে, বিপ্লবী সাংবিধানিকতাবাদ বিপ্লবোত্তর সরকারের জনগণের কাছে দায়বদ্ধতার সঙ্গে সম্পর্কিত। বিপ্লবোত্তর সরকার তার বৈধতা ও কর্তৃত্ব বিপ্লব ও বিপ্লবের ত্যাগের মধ্য থেকে অর্জন করে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, রাষ্ট্রের সব বিভাগ—রাষ্ট্রপতিসহ নির্বাহী বিভাগ (কেননা রাষ্ট্রপতি কেবল প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে কাজ করার কথা), আইনসভা ও সুপ্রিম কোর্ট—অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। কারণ, এসব বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন, অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিলেন, অথবা অন্য কোনো কারণে তাঁদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের জন্য অপারগ হয়ে পড়েছিলেন। রাষ্ট্রের কোনো বিভাগই আর লিখিত সংবিধান অনুযায়ী কাজ করতে পারছিল না।

তাহলে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগ এখন কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে? এগুলো ‘প্রয়োজনীয়তার নীতি’ ও বিপ্লবোত্তর প্রেক্ষাপটে জনগণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্মতির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এ সম্মতিতে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যাকে জনগণ সুনির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব অর্পণ করেছে। এটি হলো জনগণের সরাসরি ক্ষমতা প্রয়োগ।

জনগণ সবকিছুর ওপরে। তারা সংবিধানেরও ওপরে। এর স্বীকৃতি সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে পাওয়া যায়, যেখানে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ।’

জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে সরকারের সব অংশ বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যতটা সম্ভব লিখিত সংবিধান অনুসরণ করছে। উদাহরণস্বরূপ, সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদের উল্লেখ করা যেতে পারে, যেখানে বলা হয়েছে, যদি সংসদের অধিবেশন না থাকে, তবে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি গত বছরের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ৯২টি অধ্যাদেশ জারি করেছেন, যদিও দেশে কোনো প্রধানমন্ত্রী নেই এবং রাষ্ট্রপতি কেবল প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে অধ্যাদেশ জারি করার কথা।

সুতরাং বর্তমান সাংবিধানিক পরিস্থিতিকে একধরনের ‘গ্লাস আধা ভরা বা আধা খালি’ অবস্থার মতো বর্ণনা করা যেতে পারে। কেউ হয়তো খালি অংশের দিকে লক্ষ করে বলতে পারেন যে লিখিত সংবিধান আক্ষরিক অর্থে কার্যকর নেই। আবার কেউ হয়তো ভরা অংশের দিকে লক্ষ রেখে বলতে পারেন যে জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে যতটা সম্ভব লিখিত সংবিধান অনুসরণ করা হচ্ছে।

► জনগণের মতামত গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গণভোট অনুষ্ঠানের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু জনগণের ওপর কিছু চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। ► গণভোটের অভিপ্রায় বাস্তবায়ন করার জন্য তাদের বাধ্য করার কোনো আইনি উপায় নেই। এটি একটি নৈতিক, নীতিগত ও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা।

যেহেতু বর্তমান সরকারের কর্তৃত্ব একটি বিপ্লব থেকে উদ্ভূত, তাই তাদের কর্তৃত্বের ধরন নিয়মিত নির্বাচিত সরকারের কর্তৃত্বের ধরন থেকে আলাদা। এই কর্তৃত্বের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কারের জন্য অন্ততপক্ষে কিছু প্রয়োজনীয় কাজ করা বা কাজ শুরু করার ক্ষমতা অন্তর্ভুক্ত আছে।

এ সরকার নিজে সংবিধান সংশোধন করতে পারে না। কিন্তু এটা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে অন্ততপক্ষে পরিবর্তন শুরু করার জন্য যতটুকু কর্তৃত্ব প্রয়োজন, তা এই সরকারের রয়েছে। পরিবর্তন শুরু করার জন্য গণভোট আয়োজন করার কর্তৃত্বও নিশ্চিতভাবে এর মধ্যে পড়ে।

১৩ নভেম্বরে জারি করা জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ (‘সংস্কার আদেশ’) বিবেচনা করলে দেখা যায়, সেই আদেশে যে গণভোটের কথা বলা হয়েছে, তার লক্ষ্য হলো সংস্কার কর্মসূচির বিষয়ে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত যাচাই করা। এটার উদ্দেশ্য নিশ্চিতভাবেই দেশের শাসনকাঠামোর প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত।

গণভোটের সময়

গণভোট জনগণের মতামত গ্রহণের জন্য প্রয়োজন। আমি আগেই যেমন উল্লেখ করেছি, সরকারের কিছু কর্তৃত্ব আছে। কিন্তু তাদের সংবিধান সংস্কার চাপিয়ে দেওয়ার কোনো কর্তৃত্ব নেই। এ কারণেই জনগণের সম্মতি প্রয়োজন। জনগণের সম্মতি গ্রহণের জন্যই গণভোটের প্রয়োজন। বর্তমান সময়ের বিশেষ সাংবিধানিক পরিস্থিতিতে জুলাই সনদে বর্ণিত এসব সংস্কার যা বেশ ব্যাপক, তার বাস্তবায়নের জন্য গণভোটটি গুরুত্বপূর্ণ।

সরকার ও নির্বাচন কমিশনের জন্য দুই মাসের মধ্যে দুটি নির্বাচন পরিচালনা করার চাপ হয়তো বাস্তবসম্মত বা সম্ভবপর নয়। সরকার ও নির্বাচন কমিশন যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে জড়িত, তারা সম্ভবত ভেবেছিলেন যে দুটি নির্বাচন একসঙ্গে করাই সহজ হবে।

সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট সম্পন্ন করার একটি যুক্তি হলো, এর ফলে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে যাওয়ার আগেই জনগণ প্রস্তাবিত সংস্কারগুলো পর্যালোচনা করতে পারবে। অন্যদিকে গণভোট আগে সম্পন্ন না করার পক্ষে যুক্তিটি হলো সময়ের স্বল্পতাজনিত বাস্তব প্রতিবন্ধকতা।

একসঙ্গে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠান করার পক্ষে যুক্তি হলো যে এটি করা সহজ। তবে যদি এগুলো একসঙ্গে করা হয়, সে ক্ষেত্রে এমন হতে পারে যে কিছু লোক কেবল তাঁদের পছন্দের প্রার্থীর জন্য ভোট দেবেন, কিন্তু অন্য ভোটটি হয়তো দেবেন না। সুতরাং উভয় সময়সূচির পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি দেওয়া যায়। আইনগতভাবে গণভোটের সময়সূচি গণভোটের আইনি ফলাফলের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।

গণভোটের প্রশ্ন

সংস্কার আদেশে মোট পাঁচটি প্রশ্ন রয়েছে। প্রথম প্রশ্নটি হলো জনগণ সংস্কার আদেশটিকে সমর্থন করে কি না। অন্য চারটি প্রশ্ন জুলাই সনদের সংস্কার বাস্তবায়নের বিষয়ে। আমি মনে করি না যে সংস্কারবিষয়ক চারটি প্রশ্ন অপ্রয়োজনীয়ভাবে জটিল। কারণ, প্রশ্নগুলোর দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, সেগুলো বেশ সহজভাবে প্রণীত হয়েছে।

সংস্কার কর্মসূচির পরিধি বেশ ব্যাপক। সংস্কারবিষয়ক চারটি প্রশ্ন রাজনৈতিক দলগুলো যা আলোচনা করেছে, তার সবই অন্তর্ভুক্ত। সাধারণ জনগণ এগুলো বুঝবে কি না, এ নিয়ে কেউ তর্ক করতে পারেন। আমি বলব যে এ বিষয়ে জনগণকে অবহিত করার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর এবং সেই সঙ্গে সরকারেরও। আমাদের জনগণ রাজনৈতিকভাবে অনেক সচেতন, তাদের বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা সম্ভব।

আমরা বাংলাদেশিরা রাজনীতি ভালোবাসি। অন্যান্য অনেক দেশে রাজনীতির এত আলোচনা হয় না, যেমনটি বাংলাদেশে হয়। আমাদের জনগণ বিষয়গুলো বোঝে। কারণ, তারা সচেতন রাজনৈতিক নাগরিক এবং আমি মনে করি, জনগণ বোঝে না—এমন কথা বলা সম্পূর্ণ অশোভন।

আরও পড়ুন

যদি একজন ভোটার চারটি বিষয়ের মধ্যে দুটির পক্ষে থাকেন এবং অন্য দুটির বিপক্ষে থাকেন, তবে তাঁর কী করা উচিত? গণভোটের পরিধি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার দায়িত্ব সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর। গণভোট প্রকৃতপক্ষে সংস্কারের বিষয়ে। এটি হলো শাসনকাঠামো পরিবর্তনের বিষয়। যেহেতু আমরা চাই না যে আমরা যেমন ছিলাম, সেভাবে চলতে থাকি। আমরা একটি ভিন্ন দেশ চাই, যা হবে আরও মানবিক, আরও জনমুখী, আরও গণতান্ত্রিক, আরও অধিকারভিত্তিক, নিয়মভিত্তিক এবং যা কোনো স্বৈরশাসক দ্বারা শাসিত হবে না, বরং আইনের শাসন দ্বারা পরিচালিত হবে।

সংস্কার আদেশের চারটি প্রশ্ন বিবেচনা করলে এটা বোঝা সম্ভব যে সেগুলোর সামগ্রিক উদ্দেশ্য হলো সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনা। জনগণের ক্ষমতায়ন করা। তবু এমন মানুষ থাকাটা স্বাভাবিক, যাঁরা হয়তো চারটি প্রশ্নের অন্তর্ভুক্ত সম্পূর্ণ সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে একমত হবেন না।

‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দেওয়ার পদ্ধতির প্রশ্নে, আমি বলতে পারি যে যাঁরা চারটি প্রশ্নই সমর্থন করেন না, তাঁদের কমপক্ষে তিনটি বিকল্প থাকবে। এ ধরনের মানুষের জন্য প্রথম বিকল্প হবে এই যে যদিও তাঁরা কিছু সংস্কার অপছন্দ করেন, তবু পুরো সংস্কার কর্মসূচিটি তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সেই কারণে তাঁরা ‘হ্যাঁ’ ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

দ্বিতীয় বিকল্প হবে ‘না’ ভোট দেওয়া। কারণ, যদিও তাঁরা সামগ্রিক সংস্কারের বিষয়ে সম্মত, তবু কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয়ে তাঁদের এত দৃঢ় আপত্তি রয়েছে যে তাঁরা মনে করেন, ‘না’ ভোট দেওয়াই যথার্থ। তৃতীয় বিকল্প হবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকা। কারণ, তাঁরা অনিশ্চিত। তবু দ্বিধার সম্মুখীন হওয়া ব্যক্তিরা ব্যতীত যাঁরা ভোটদান করবেন, তাঁদের কাছ থেকে এই সংস্কারগুলো সম্পর্কে দেশের নাগরিকেরা কী ভাবছেন, সে বিষয়ে একটি ব্যাপকভিত্তিক জনমত পাওয়া সম্ভব হবে।

ভোটাররা কি বুঝতে পারবেন

সবার সনদটি আক্ষরিকভাবে পড়ার প্রয়োজন নেই, যদি কেউ এর মূল বিষয় বুঝতে পারেন, তবে সেটাই যথেষ্ট হওয়া উচিত। যেমনটি আমি বলেছি, এটি হলো সংস্কার এবং দেশকে আরও জনমুখী করার বিষয়।

সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব হলো জনগণের কাছে ব্যাখ্যা করা, যাতে পুরো সনদটি কাউকে আদ্যোপান্ত পড়তে না হয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো জনগণ যেন মোটামুটিভাবে এর মূল বিষয়গুলো বুঝতে পারে।

দীর্ঘ সনদটিকে খুব সহজ চারটি প্রশ্নে রূপান্তর করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো, আপনি উচ্চকক্ষ চান কি না। দ্বিতীয়টি হলো, আপনি চান কি না যে নির্বাচন কমিশনের মতো কিছু সাংবিধানিক সংস্থা স্বাধীন ব্যক্তিদের দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত হোক।

উদাহরণস্বরূপ, একজন কৃষক বা শ্রমিক বুঝতে পারবেন যে আমাদের দেশে ভালো নির্বাচন হয়নি। কারণ, আমাদের নির্বাচন কমিশন কেবল প্রধানমন্ত্রী যা বলতেন, তা-ই করত। সুতরাং যদি জনগণ নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন চান কি না—এই প্রশ্ন করা হয়, তবে তাঁরা সহজেই এটি বুঝতে পারবেন।

প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচন কমিশনে তাঁর নিজস্ব লোক নিয়োগ করার ক্ষমতা থাকা উচিত নয়—আমি নিশ্চিত, প্রত্যেক সাধারণ মানুষই তা বুঝতে পারবেন। আমি মনে করি, জনগণের না বোঝার বিষয়ে যে আলোচনা, তা একপ্রকার আমাদের জনগণের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। গণভোটের প্রশ্নগুলো যেভাবে প্রণীত হয়েছে, তা জনগণের বোঝার জন্য যথেষ্ট সহজ। এগুলো বোঝার জন্য জুলাই সনদ পড়ার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজনীয় সচেতনতা সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো তৈরি করতে পারে।

আসন্ন সংসদ কী করতে পারবে

জনগণের মতামত গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গণভোট অনুষ্ঠানের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু জনগণের ওপর কিছু চাপিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। এ কারণেই সংস্কারের শেষ অংশটি জনগণের প্রতিনিধি, অর্থাৎ সংসদের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংস্কার আদেশ অনুযায়ী জনপ্রতিনিধিরা সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে।

গণভোটের অভিপ্রায় বাস্তবায়ন করার জন্য তাদের বাধ্য করার কোনো আইনি উপায় নেই। এটি একটি নৈতিক, নীতিগত ও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। যদি আসন্ন সংসদ জনগণের ইচ্ছাকে অগ্রাহ্য করে, তবে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল বা দলগুলোকে রাজনৈতিকভাবে মূল্য দিতে হতে পারে। যেমন তারা পরবর্তী নির্বাচনে হয়তো খারাপ ফল করবে এবং রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

আবার তারা কোনো রাজনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন না–ও হতে পারে; সংসদ গণভোটকে অগ্রাহ্য করলে জনগণ তাতে পুরোপুরি অসন্তুষ্ট না–ও হতে পারে। আবার এমনও হতে পারে যে সংস্কারের দাবি যত দিন না পূরণ হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত মানুষের এ–সংক্রান্ত দাবি রয়েই যাবে।

অন্যান্য পক্ষ কী করে, তার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করবে। যদি অন্যান্য পক্ষ এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয় করে তুলতে পারে, তবে যারা সংস্কারের বিরোধিতা করবে, তাদের রাজনৈতিক মূল্য দিতে হতে পারে; আবার না–ও হতে পারে। এই মুহূর্তে আমরা ভবিষ্যৎ জানি না। তবে এর কোনো আইনি ফলাফল থাকবে না।

ড. শরীফ ভূঁইয়া বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। তিনি সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আইনবিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন।

*মতামত লেখকের নিজস্ব