৭৫ বছরের আওয়ামী লীগ কোন পথে

গতকাল ২৩ জুন ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দীর্ঘ এই পরিক্রমায় নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে দলটি। আওয়ামী লীগ এখন কোন পথে চলছে, তা নিয়ে লিখেছেন কাদির কল্লোল

‘পাঁচ বছর আমরা চালাতে পারতাম। কেউ চ্যালেঞ্জ করলে বাংলার মানুষের কাছে গণভোটে গিয়ে প্রমাণ করে দিতাম যে বাংলার মানুষ কাদের ভালোবাসে। কিন্তু আমরা তা চাইনি, চেয়েছি মানুষের অধিকার। আওয়ামী লীগ যে লোভী নয়, তার আর একটি প্রমাণ, আজ তারা শাসনতন্ত্র দিয়েছে এবং তারা নির্বাচনে যাবে।’ 

এই বক্তব্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ গণপরিষদে স্বাধীন দেশের নতুন সংবিধান নিয়ে বিতর্কের সমাপনী ভাষণে ওই কথাগুলো বলেছিলেন তিনি। 

১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২ আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন পেয়েছিল। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রতি মানুষের একচেটিয়া সমর্থন প্রকাশ পেয়েছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ একই রকমভাবে জয়ী হয়েছিল।

৭৫ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ এখন লম্বা সময় ধরে ক্ষমতায় আছে। টানা দেড় দশকের এই শাসনে দলটির বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ হচ্ছে, নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েই তারা ক্ষমতা ধরে রেখেছে। দেশে গণতন্ত্রের সংকট, ‘কর্তৃত্ববাদী শাসন’ চলছে—এ আলোচনা রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। 

রোজ গার্ডেন থেকে যাত্রা শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগের আদর্শের মূল ভিত্তি ছিল গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি। দলটি অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির জায়গা থেকেও সরে এসেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এবার তাদের দীর্ঘ শাসনে বড় ব্যর্থতা হচ্ছে দুর্নীতি দমন করতে না পারা। সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সাবেক দুই প্রধানের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরেই অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। 

আওয়ামী লীগের উত্থান নিয়ে বই লিখেছেন লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি মনে করেন, যেহেতু গণতন্ত্রকে দুর্বল করে কর্তৃত্ববাদী শাসন চালানো হচ্ছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের আদর্শের জায়গায় নেই। সে কারণে জনগণের ভোটের বদলে তাদের শাসনে আমলা-পুলিশসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। এ কারণে দুর্নীতি চলছে পাল্লা দিয়ে। 

■ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া আওয়ামী লীগের আদর্শের মূল ভিত্তি ছিল গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি।

■ আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি থেকে সরে এসেছে বলে অভিযোগ উঠেছে বেশ কয়েক বছর ধরে।

■ দেশে গণতন্ত্রের সংকট, ‘কর্তৃত্ববাদী শাসন’ চলছে—এ আলোচনা রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। 

এমন বক্তব্য মানতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের দল ও সরকার গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়নি। তবে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কারণে কখনো কখনো কিছু ঘাটতি হতে পারে, পর্যালোচনা করে সেই ঘাটতি দূর করার ব্যাপারেও তাঁরা পিছপা হন না। 

যেভাবে গঠিত হয় আওয়ামী লীগ

মুসলিম লীগ থেকেই প্রগতিশীল একটি অংশ বেরিয়ে এসে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামের নতুন দল গঠন করেছিল ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। এর এক বছর আগে গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ। 

লেখক মহিউদ্দিন আহমদ আওয়ামী লীগের উত্থান নিয়ে লেখা তাঁর বইয়ে লিখেছেন, পাকিস্তান হওয়ার পর সেই ১৯৪৮ সালেই মুসলিম লীগে সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের অনুসারী নেতারা দলের ভেতরে নিজেদের অবহেলিত মনে করেছিলেন। কারণ, সে সময় মওলানা আকরম খাঁ ও খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকায় মুসলিম লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। তখন সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিমের অনুসারী নেতারা নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা করেছিলেন। কলকাতা থেকে ঢাকায় এসে সেই উদ্যোগে যুক্ত হয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। 

 সে সময় মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও শামসুল হকও মুসলিম লীগের একটা অংশের নতুন দল গঠনের ওই উদ্যোগে যোগ দেওয়ার চিন্তা করেন। সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশিম জোট সমর্থক মুসলিম লীগের তরুণ ও ছাত্রকর্মীরা কলকাতা ও অন্যান্য স্থান থেকে ঢাকায় একত্র হতে থাকেন।

এ প্রক্রিয়ায় তখন কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে সভা ডাকা হয়। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন বিকেলে রোজ গার্ডেনের সভায় ৩০০ জনের মতো উপস্থিত ছিলেন। আর সেই সভায় মাওলানা ভাসানীর প্রস্তাব অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামের নতুন দল গঠন করা হয়। 

নেতৃত্বে এলেন যাঁরা

নতুন দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের ৪০ সদস্যের কমিটিতে সভাপতি হন মাওলানা ভাসানী। শামসুল হককে করা হয় সাধারণ সম্পাদক। আর শেখ মুজিবুর রহমান সে সময় কারাগারে থাকলেও তাঁকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সহসভাপতি করা হয় পাঁচজনকে। তাঁরা হলেন আতাউর রহমান খান, আলী আমজাদ খান, আহমেদ আলী খান, শাখাওয়াত হোসেন ও আবদুস সালাম খান। দল গঠনের পরদিনই ২৪ জুন ঢাকার আরমানিটোলা ময়দানে একটি জনসভা ডাকা হয়েছিল। তৎকালীন মুসলিম লীগের কর্মীরা সেই সভায় হামলা করেছিলেন।

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক অসুস্থ হলে ১৯৫২ সালে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান শেখ মুজিবুর রহমান। পরের বছর ঢাকার মুকুল সিনেমা হলে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্মেলনে শেখ মুজিব সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে দলটির নাম দেওয়া হয়েছিল নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। এর সভাপতি করা হয় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে। 

দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ বাদ

আত্মপ্রকাশের ছয় বছরের মাথায় ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে দলের নাম দেওয়া হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে এ কে ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট বিজয়ী হয়। এতে আওয়ামী মুসলিম লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়। এর পরের বছর দলটির কাউন্সিলে মুসলিম শব্দ বাদ দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল দলে সব ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠা করা। 

একের পর এক ইতিহাস

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে সংগঠিত করে একের পর এক ইতিহাস গড়তে থাকে আওয়ামী লীগ। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। দলটির পক্ষ থেকে ১৯৬৬ সালে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে যে ছয় দফা দাবি তুলে ধরা হয়, সেই ছয় দফাকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ মনে করা হয়।

১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের ভূমিকা দলটিকে এ অঞ্চলের একক বৃহৎ রাজনৈতিক দলে পরিণত করে। আর শেখ মুজিবুর রহমান পরিণত হন দলের অবিসংবাদিত নেতা। এর সঙ্গে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা যুক্ত হওয়ায় শেখ মুজিব আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। বলা হয়, সেই জনপ্রিয়তাই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিপুল বিজয় এনে দেয়। আর সেই বিজয়কে ভিত্তি করে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়, যার ধারাবাহিকতায় এখন স্বাধীন বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ শব্দ দুটি বাদ দিয়ে হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার পর সংকটে পড়েছিল আওয়ামী লীগ। দলটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। একপর্যায়ে ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বিদেশে নির্বাসনের জীবন থেকে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। সেই থেকে ৪৩ বছর ধরে তিনি সভাপতি হিসেবে দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এরপর ২০০৯ সাল থেকে টানা চার দফায় তাঁর সরকারই রয়েছে। 

অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও বর্তমান আওয়ামী লীগ

আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি থেকে সরে এসেছে বলে অভিযোগ উঠেছে বেশ কয়েক বছর ধরে। দলটির মিত্ররাও এমন অভিযোগ করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠনের দুই বছর পর ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানের মৌলিক কিছু বিষয় ফিরিয়ে আনা হয়। রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়। তবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখা হয়। 

হেফাজতে ইসলাম এবং অন্যান্য ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সখ্য নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা আলোচনা হয়েছে। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম নারীর অধিকার-সম্পর্কিত নীতির বিরোধিতা করাসহ ১৩ দফা দাবি নিয়ে ঢাকার শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল ২০১৩ সালের ৫ মে। সেই কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা হয়। ৫ মে রাতে তাদের শাপলা চত্বর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে। 

এরপর হেফাজতের তৎকালীন আমির আল্লামা আহমদ শফীর সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠেছিল আওয়ামী লীগের। সেই সম্পর্কের জেরে হেফাজতের অনেক দাবি মেনে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এমনকি স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে বিভিন্ন বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়। এ নিয়ে এখনো সমালোচনা শুনতে হয় আওয়ামী লীগকে।

এর আগে ২০০৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ছিল, সে বছর খেলাফত মজলিস নামের ইসলামি দলের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেছিল। ‘ফতোয়া চুক্তি’ নামে পরিচিত সেই চুক্তি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিল দলটি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সেই চুক্তি বাতিল করেছিল।

এসব ঘটনায় সমালোচনা থাকলেও আওয়ামী লীগ নেতারা তা আমলে নিতে রাজি নন। দলটির অন্যতম নেতা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সব ধর্মের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে তাঁরা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির অবস্থানে রয়েছেন। 

বড় অভিযোগ, গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এরপর সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার। পরে নিজেদের সরকারের অধীনেই তিনটি জাতীয় নির্বাচন করে টানা ক্ষমতায় রয়েছে দলটি।

২০১৪ সালে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের ভোট বর্জন ও আন্দোলনের মুখে একতরফা নির্বাচন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি এবং সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো আগের রাতের ভোটের অভিযোগ তুলে ভোটের দিনে মাঝপথে সেই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে। সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী অধিকাংশ দল অংশ নেয়নি। 

এ রকম পরিপ্রেক্ষিতে পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচন এমনকি স্থানীয় সরকারব্যবস্থার নির্বাচনগুলো হয়েছে ‘একতরফা’। নির্বাচন নিয়ে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় নির্বাচনগুলোয় ভোটারের নগণ্য উপস্থিতিতে।

আওয়ামী লীগের নেতাদের কেউ কেউ বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে তাঁদেরও মানুষের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, নির্বাচনী ব্যবস্থা ধ্বংস করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রেখে ‘কর্তৃত্ববাদী’ শাসন চালাচ্ছে। যেখানে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করা হচ্ছে। রাজনৈতিক অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা—সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত। 

অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতা ধরে রাখতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ব্যবসায়ী, আমলা, পুলিশসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। সে কারণে দুর্নীতি বেড়েছে। এরই মধ্যে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সাবেক দুই প্রধান বেনজীর আহমেদ ও আজিজ আহমেদের দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ হওয়ার পর তা আওয়ামী লীগকে অস্বস্তিতে ফেলেছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতাও প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগ নেই—এমন কথাও তাঁদের শুনতে হচ্ছে। তবে দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করেন ভিন্নভাবে। তাঁরা বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাসহ তাঁদের দলের নেতৃত্বকেই নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই ঘটনা রাজনীতিতে বিভক্তিকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গেছে।