বিজয়ের মালিক আল্লাহ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় হাবিব (সা.)–কে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করব এবং আল্লাহ আপনাকে প্রবল সাহায্য করবেন।’ (সুরা: ৪৮ ফাতহ, আয়াত: ১ ও ৩)
আল্লাহর সাহায্যেই বিজয় আসে। কোরআন কারিমে রয়েছে, ‘যখন আসে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়। তখন মানুষকে দেখবেন দলে দলে আল্লাহর দ্বীন ইসলামে দাখিল হচ্ছেন। তখন আপনি তাসবিহ পাঠ করুন, আপনার রবের হামদ (গুণগান) করুন এবং তাঁর নিকট ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করুন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বাধিক তওবা গ্রহণকারী।’ (সুরা: ১১০ নাসর, আয়াত: ১-৫)
দেশপ্রেম ইমানদারের বৈশিষ্ট্য। স্বদেশ ও মাতৃভূমিকে ভালোবাসা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব। প্রিয় নবীজি (সা.) যখন স্বীয় মাতৃভূমি মক্কা শরিফ থেকে হিজরত করে মদিনায় যাত্রা করেন, তখন তাঁর চোখ থেকে অশ্রু ঝরছিল
বিজয়–পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে আল্লাহর নবী (সা.)–এর আদর্শ ও করণীয় আমল আমাদের জন্য পালনীয়। আল্লাহর নবী (সা.) একটি উষ্ট্রীর ওপর আরোহণ অবস্থায় ছিলেন, তাঁর চেহারা ছিল নিম্নমুখী। অর্থাৎ বিনয়ের সঙ্গে তিনি মক্কায় প্রবেশ করেন। তিনি উম্মে হানি (রা.)–এর ঘরে প্রবেশ করেন, সেখানে আট রাকাত নামাজ আদায় করেন। এই নামাজকে বলা হয় ‘সলাতুল ফাতহ’ বা বিজয়ের নামাজ।
এরপর নবীজি (সা.) হারাম শরিফে এসে সমবেত জনতার উদ্দেশে বক্তব্য দেন। বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘হে মক্কাবাসী! ২১ বছর ধরে তোমরা আমার ওপর, আমার পরিবারের ওপর, আমার সাহাবিদের ওপর তোমরা যে নির্যাতন চালিয়েছ, আজ আমি তার কোনো প্রতিশোধ গ্রহণ করব না।’ নবী (সা.) আরও বলেন, ‘আজ আমি তোমাদের সবার জন্য হজরত ইউসুফ (আ.)–এর মতো সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজ কোনো প্রতিশোধ নয়।’ (বায়হাকি, খণ্ড: ৯, পৃষ্ঠা: ১১৮)
ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব, মহত্ত্ব, অনন্যতা এখানেই। শান্তিপূর্ণভাবে মক্কা বিজয় করে মহানবী (সা.) পুরো বিশ্বকে এই বার্তা দিলেন, ‘আমরা শান্তির পক্ষে, অন্যায়–অত্যাচার–প্রতিহিংসা ও জুলুমের বিপক্ষে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘আমি তাদের পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, জাকাত প্রদান করবে এবং সৎকর্মের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কর্ম নিষেধ করবে। আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারে।’ (সুরা-২২ হজ, আয়াত: ৪১)
পবিত্র কোরআনে বিজয়সংক্রান্ত বিষয়ে দুটি সুরা রয়েছে, তার একটি হলো সুরা ফাতহ। বিজয় কীভাবে অর্জিত হবে, বিজয়ের জন্য করণীয় কী, স্বাধীনতা ও বিজয় অর্জনের কর্মপন্থা কেমন হবে—এসব বিষয় এই সুরায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
‘তিনি মহান সত্তা, যিনি পাঠিয়েছেন তাঁর রাসুলকে (সা.) হিদায়াতের পথ নির্দেশ ও সত্য ধর্ম সহকারে, যাতে তিনি তাঁকে সব ধর্ম ও মতবাদের ওপর বিজয়ীরূপে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। আর সাক্ষী ও সাহায্যকারী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর সঙ্গে যাঁরা অনুগামী, তাঁরা অবিশ্বাসী ও অকৃতজ্ঞদের প্রতি কঠোর এবং তাঁদের নিজেদের মধ্যে অতীব দয়াশীল। আপনি তাঁদের দেখবেন রুকু ও সিজদা অবনত; তাঁরা আল্লাহর তরফ থেকে করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করেন; তাঁদের কপালে সিজদার চিহ্ন শোভা পায়। তাওরাত ও ইঞ্জিল কিতাবেও তাঁদের এই উদাহরণ রয়েছে।’ (সুরা: ৪৮ ফাতহ, আয়াত: ২৯)
বিজয়সংক্রান্ত দ্বিতীয় সুরাটি হলো সুরা নাসর। এই সুরায় বিজয়–পরবর্তী করণীয় বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে। বলা হয়েছে, বিজয় আসে আল্লাহর সাহায্যে। বিজয় এলে বিনয়ের সঙ্গে আল্লাহর হামদ, তাসবিহ ও তওবা ইস্তিগফার করতে হবে। (সুরা: ১১০ নাসর, আয়াত: ১-৫)
দেশপ্রেম ইমানদারের বৈশিষ্ট্য। স্বদেশ ও মাতৃভূমিকে ভালোবাসা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব। প্রিয় নবীজি (সা.) যখন স্বীয় মাতৃভূমি মক্কা শরিফ থেকে হিজরত করে মদিনায় যাত্রা করেন, তখন তাঁর চোখ থেকে অশ্রু ঝরছিল এবং বলেছিলেন, ‘হে মক্কা! আমি তোমাকে ভালোবাসি। কাফিররা নির্যাতন করে যদি আমাকে বের করে না দিত, আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যেতাম না।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৪০৪)
নবীজি (সা.) মদিনা শরিফকেও খুব ভালোবাসতেন। কোনো সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকালে মদিনার সীমান্ত ওহুদ পাহাড় চোখে পড়লে নবীজি (সা.)–এর চেহারায় আনন্দের আভা ফুটে উঠত এবং তিনি বলতেন, ‘এই ওহুদ পাহাড় আমাদের ভালোবাসে, আমরাও ওহুদ পাহাড়কে ভালোবাসি।’ (বুখারি, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৫৩৯, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ১০২৮; মুসলিম, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৯৯৩)
● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম