ইরান-রাশিয়া-চীন যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি

রাশিয়া, চীন ও ইরান এখন পর্যন্ত ঘোষণা দিয়ে বা আনুষ্ঠানিকভাবে জোটবদ্ধ হয়নি। কিন্তু নিজেদের সীমানায় এবং আশপাশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব খর্ব করতে তারা বেশ কিছুদিন ধরে যোগাযোগ, সহযোগিতা এবং সমন্বয় বাড়িয়ে চলেছে। এই তিন দেশের ভূমিকা কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য হুমকি হতে পারে তা নিয়ে লিখেছেন শাকিল আনোয়ার

হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুর পর রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের আবেগ, উদ্বেগ, অস্থিরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। আপাতভাবলেশহীন চরিত্রের পুতিন শোক প্রকাশ করতে গিয়ে যে আবেগ নিয়ে প্রয়াত রাইসির গুণগান গেয়েছেন, যেভাবে বারবার ইরানকে ভরসা দিয়েছেন, তার নজির বিরল। ১৯ মে রাতে দুর্ঘটনার দিন গভীর রাতে ইরানের রাষ্ট্রদূতকে ক্রেমলিনে ডেকে নিয়ে দুর্ঘটনার বিস্তারিত জানতে চান পুতিন। আয়াতুল্লাহ খামেনির কাছে বার্তা পাঠিয়ে বলেছেন, ইরান চাইলে ওই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে যা লাগে তা দিয়ে সহযোগিতা করবে রাশিয়া। এসব ঘটনায় স্পষ্ট, পুতিনের রাশিয়ার কাছে এখন ইরানের গুরুত্ব আর মর্যাদা কতটা!

একসময় মধ্য এশিয়ায় বাণিজ্যপথের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২০০ বছর ধরে এই দুই দেশের মধ্যে রেষারেষি ছিল। ইরানে ইসলামি বিপ্লবের নেতা রুহুল্লাহ খোমেনির ‘দুই চোখের বিষ’ ছিল কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়ন। যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নকে তিনি প্রায় এককাতারে ফেলতেন। কিন্তু এক দশক ধরে নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার জেরে এই দুই দেশ এখন ঘনিষ্ঠ কৌশলগত মিত্র। বিশেষ করে ২০২২ সালে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অর্থনীতি, কূটনীতি ছাপিয়ে এখন রাশিয়া-ইরান সম্পর্কের প্রধান ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে সামরিক সহযোগিতা। এটাকে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র শিবির, বিশেষ করে ইসরায়েলের জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

পশ্চিমাদের চক্ষুশূল এই দুই দেশের সঙ্গে ভূরাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ১ নম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের উত্তরোত্তর ঘনিষ্ঠতায় সেই উদ্বেগের পারদ আরও ওপরে উঠতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি অগ্রাহ্য করে এক দশক ধরে প্রকাশ্যে ও গোপনে দুই হাতে ইরানের জ্বালানি তেল কিনেছে চীন। ২০২১ সালে এই দুই দেশ কৌশলগত সহযোগিতার চুক্তি করেছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের তোপ থেকে ইরানকে আড়াল করতে কূটনীতির ছাতা তুলে ধরছে। রাইসির মৃত্যুর পর পুতিনের মতোই চীনা প্রেসিডেন্ট শি এবং তাঁর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং বলেছেন, ইরানের সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও পোক্ত হবে।

পরিস্থিতি দেখে অনেক মার্কিন বিশ্লেষক হালে নানাভাবে বলার চেষ্টা করছেন চীন, রাশিয়া ও ইরানের সমন্বয়ে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী একটি ত্রিদেশীয় অক্ষশক্তি জন্ম নিচ্ছে। কারও লেখায় ত্রিদেশীয় এই সহযোগিতাকে বর্ণনা করা হচ্ছে ‘অ্যাক্সিস অব ইভিল টু’ অর্থাৎ ‘শয়তানের অক্ষশক্তি নম্বর ২’। কেউ লিখেছেন, ‘অ্যাক্সিস অব ডিজরাপশন’ অর্থাৎ ‘ঘোঁট পাকানোর অক্ষশক্তি’। কেউ কেউ বলেছেন, ‘অ্যাক্সিস অব অটোক্র্যাসি’ বা ‘স্বৈরতন্ত্রের অক্ষশক্তি’। মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অনেক গবেষক-বিশ্লেষক সরকারকে সাবধান করছেন, পাল্টা কৌশল নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

কূটনীতিবিষয়ক সাময়িকী ফরেন অ্যাফেয়ার্সের এপ্রিল সংস্করণে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর আ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির দুজন সিনিয়র গবেষক অ্যান্ড্রিয়া কেনডাল টেইলর এবং রিচার্ড ফনটেইন রাশিয়া, ইরান ও চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে বর্ণনা করেছেন ‘অ্যাক্সিস অব আপহিভল’ অর্থাৎ এমন এক অক্ষশক্তি, যা বড় ধরনের আলোড়ন বা বিপর্যয় তৈরি করতে পারে। তাঁরা সাবধান করেছেন এই গোষ্ঠীর শক্তি এবং আকৃতি যদি বাড়ে এবং তাদের মধ্যে সমন্বয় যদি আরও পোক্ত হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা তাদের নির্মিত এত দিনের বিশ্বব্যবস্থার একচেটিয়া প্রাধান্য ধরে রাখতে কঠিন সমস্যায় পড়বে।

এটা ঠিক যে রাশিয়া, চীন ও ইরান এখন পর্যন্ত ঘোষণা দিয়ে বা আনুষ্ঠানিকভাবে জোটবদ্ধ হয়নি। কিন্তু নিজেদের সীমানায় এবং আশপাশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব খর্ব করতে তারা বেশ কিছুদিন ধরে যোগাযোগ, সহযোগিতা এবং সমন্বয় বাড়িয়ে চলেছে। দেশ তিনটি একদিকে যেমন নিজেদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয়ভাবে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক ইস্যুতে একসুরে কথা বলছে এবং একে অন্যের পেছনে দাঁড়াচ্ছে, নীতির সমন্বয় করছে।

ইসলামি ইরান আর অর্থোডক্স রাশিয়ার নৈকট্য

আদর্শগত তফাত এবং ইতিহাস বিবেচনা করলে ইরান ও রাশিয়ার বর্তমান ঘনিষ্ঠতা কিছুটা বিস্ময়কর। যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা ইরান ও রাশিয়াকে কাছাকাছি এনেছে। ইরানের ওপর সেই নিষেধাজ্ঞা চলছে ৪৫ বছর ধরে। রাশিয়ার ওপর তা চেপেছে মূলত ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর থেকে। বছর দশেক আগে সিরিয়ায় আসাদ সরকারকে রক্ষা করতে গিয়ে ২০১৫ সালে প্রথম রাশিয়া ও ইরানের মধ্যে সখ্য হয়। কিন্তু ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর সেই সহযোগিতা ভিন্নমাত্রা পেয়েছে।

রাশিয়া প্রথম কোনো অমুসলিম দেশ, যারা ইরানের কাছ থেকে অস্ত্র পাচ্ছে। ২০২২ সালে রাশিয়াকে সামরিক ড্রোন দেওয়ার কথা ইরান স্বীকার করেছে। গত ডিসেম্বরে ইউক্রেনের সরকার দাবি করে, রাশিয়া ইরানের তৈরি শাহেদ ড্রোন ব্যবহার করেছে। মার্কিন কংগ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার ভেতরে বসে ইরান এখন ড্রোন তৈরি করছে। দুই দেশের মধ্যে অস্ত্র সহযোগিতা আরও এক ধাপ এগিয়েছে। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানায়, ইরান রাশিয়াকে ৪০০ শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৩০০ থেকে ৭০০ কিলোমিটার।

দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ধীরে ধীরে বেচাকেনা ছাপিয়ে কৌশলগত সহযোগিতার রূপ নিচ্ছে। সম্প্রতি দুই দেশ ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডর (আইএনএসটিসি) নিয়ে নতুন করে কথা শুরু করেছে। ৭২০০ কিলোমিটারে এই রুট মধ্য এশিয়া হয়ে ইরানের ভেতর দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতকে যুক্ত করবে। বাকি ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক পুরোপুরি হিমাগারে ঢুকে যাওয়ায় রাশিয়া এই এশিয়ামুখী এই বাণিজ্যপথ নিয়ে নতুন করে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। গত ডিসেম্বরে ইরান রুশ নেতৃত্বের ইউরেশিয়ান ইকোনমিক ঐক্যজোটের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই করেছে। ইরানের একটি স্যাটেলাইটকে মহাকাশে পাঠিয়েছে রাশিয়া।

ইরান-চীন সমীকরণ

২০২১ সালে দুই দেশ কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি করেছে ইরান ও চীন। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থ করে দিতে যে দেশটির ওপর ইরান সবচেয়ে বেশি নির্ভর করছে সেটি চীন। ২০২৩ সালে ইরানের জ্বালানি তেল রপ্তানির ৯০ শতাংশ গেছে চীনে। এই প্রবণতা ঠেকানোর লক্ষ্যে গত মাসে মার্কিন কংগ্রেসে ‘ইরান-চীন এনার্জি স্যাংশন অ্যাক্ট’ নামে একটি বিল পাস করেছে। এতে ইরান থেকে তেল আমদানি করেছে, এমন চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনার প্রস্তাব রয়েছে।

যে বিষয়টি এখন সবচেয়ে লক্ষণীয়, তা হলো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ইস্যুতে এই তিন দেশ একসুরে কথা বলছে, একে অন্যকে সমর্থন করছে। ১৩ এপ্রিল রাতে ইসরায়েলে ইরানের নজিরবিহীন হামলার পর চীন ইরানকে সমর্থন করেছে। ঘটনার পর বেইজিংয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান ইরানের হামলাকে ‘আত্মরক্ষা’ বলে মন্তব্য করেন। সে সময় চীনা মুখপাত্র সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসে ইসরায়েলি হামলার তীব্র সমালোচনা করেন।

চীন-রাশিয়া-ইরানের এক সুর

ইরানকে যত বেশি একঘরে করার চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়া ইরানকে তত বেশি করে সমর্থন দিচ্ছে, তাদের নেতৃত্বের সহযোগিতা জোটগুলোয় জায়গা করে দিচ্ছে। গত বছর জুলাইয়ে চীনের নেতৃত্বাধীন সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন বা এসসিও জোটে স্থায়ী সদস্যপদ পায় ইরান। সম্প্রতি ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সহযোগিতা জোট ব্রিকসে জায়গা পেয়েছে ইরান। এই দুই জোটকে চীন ও রাশিয়ার নেতৃত্বে পশ্চিমা জোটগুলোর বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সামরিক ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা শুরু হয়েছে ২০১৯ সালে যৌথ একটি নৌমহড়া দিয়ে। এ বছর মার্চে পরপর চতুর্থ বছরের মতো ভারত মহাসাগরের উত্তরাঞ্চলে ওমান উপসাগরে ১১ মার্চ থেকে চার দিনের এক নৌমহড়া চালিয়েছে এই তিন দেশ। এই মহড়া এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন লোহিত সাগরে হুতিদের আক্রমণ এবং হামাস-ইসরায়েলে যুদ্ধের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে নজিরবিহীন সংখ্যায় পশ্চিমা নৌশক্তি অবস্থান করছে। ইরানের নৌবাহিনীর একজন অ্যাডমিরাল মুস্তাফা তাজ আলদিন ওই মহড়া নিয়ে বলেন, ‘এই মহড়া প্রমাণ করে ভারত মহাসাগরের উত্তরাঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন এক জোটের উদয় হচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল নেভিগেশন স্যাটেলাইট অর্থাৎ জিপিএস ব্যবস্থার ওপর বেশ কিছুদিন ধরে নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে চীন ও রাশিয়া। ইরানকে সেই চেষ্টায় শামিল করা হয়েছে। ২০২১ সালে চীন ইরানের সেনাবাহিনীকে তাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট নেভিগেশন ব্যবস্থা বেইডুতে ঢোকার অনুমতি দিয়েছে। এর আগে এই সুবিধা ছিল শুধু পাকিস্তানের। রাশিয়া ও চীন তাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট নেভিগেশন ব্যবস্থা বেইডু এবং গোলনাসের মধ্যে সমন্বয় নিয়ে কথা বলছে। স্যাটেলাইট নেভিগেশন নিয়ে তিন দেশের মধ্যে এই সমন্বয়ের তথ্য উঠে এসেছে মার্কিন এক গবেষণা প্রতিবেদনেও।

যুক্তরাষ্ট্রে এখন ইরান, রাশিয়া ও চীনের মধ্যে এই সহযোগিতার বা সম্পর্কের উদ্দেশ্য, সম্ভাবনা এবং সীমাবদ্ধতা নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এই তিন দেশের নিজস্ব এমন সব অ্যাজেন্ডা এবং অগ্রাধিকার রয়েছে, যাতে তাদের পক্ষে পশ্চিমা নিরাপত্তা জোটগুলোর মতো কার্যকরী কোনো জোট গঠন প্রায় অসম্ভব। সবচেয়ে বড় কথা, তাদের মতে যে দেশটি সত্যিকার অর্থে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখে, সেই চীন এখনো পশ্চিমের বাজার থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হতে চায় না। সে কারণেই হয়তো কৌশলগত চুক্তিতে ইরানে চীনা বিনিয়োগের যে টার্গেট ধরা হয়েছিল, প্রকৃত বিনিয়োগ তার আশপাশেও নেই।

রাশিয়া-ইরান সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। নভেম্বরে ইরান ঘোষণা দেয়, রাশিয়ার কাছ থেকে তারা এসইউ-৩৪ যুদ্ধবিমান এবং এমআই-২৮ সাঁজোয়া হেলিকপ্টার পাচ্ছে। বোঝাপড়া নাকি চূড়ান্ত। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে ইরানের সাহায্য পেতে প্রতিদান না দিয়ে রাশিয়ার হয়তো উপায় থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পক্ষে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসের মতো পরিকল্পনা করতে তখন দশবার ভাবতে হবে। এখনো চীন বা রাশিয়া কেউই চায় না ইরান পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হয়ে উঠুক। কিন্তু সেই অবস্থান কখনো যদি তারা সরে আসে এবং ইরানকে পারমাণবিক শক্তি অর্জনে ইন্ধন জোগায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলসহ মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মিত্রদের জন্য তা হবে দুঃস্বপ্ন।

চীন-রাশিয়া-ইরানের সহযোগিতার ভবিষ্যৎ কী? মার্কিন সেনাবাহিনীর তিন গবেষক লুকাস উইন্টার, জেমাইমা বার এবং জেসন ওয়ার্নার মনে করেন, একটি ত্রিপক্ষীয় নিরাপত্তা জোটের ভিত্তি শুধু তৈরি হয়েছে। এর পেছনে প্রধান তাড়না হচ্ছে নিরাপত্তা এবং তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব খর্ব করা।

সেই তাড়না অদূর ভবিষ্যতে যে অকার্যকর হয়ে পড়বে, তা বলা কঠিন। কারণ, এই তিন দেশই সামনে যুদ্ধের আশঙ্কা করছে। রাশিয়া মনে করছে, ইউরোপে তাদের দীর্ঘ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হবে। ইরান সব সময় ভয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল তাদের ওপর হামলা চালাতে তক্কে তক্কে রয়েছে। আর চীন মনে করে, তাইওয়ান নিয়ে আজ হোক কাল হোক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাত অবধারিত।

বশ্যতা আদায়ে নিষেধাজ্ঞার মতো যুক্তরাষ্ট্রের ‘আগ্রাসী’ বৈদেশিক নীতি নিয়ে অনেক দেশই ক্ষুব্ধ। তারা যদি এই চীন-রাশিয়া-ইরানের প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হতে শুরু করে, মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থা সত্যিকারের চাপে পড়ে যেতে পারে।

  • শাকিল আনোয়ার সাংবাদিক