চীনকে টক্কর দিতে নৌশক্তি বাড়াচ্ছে ভারত

ভারতীয় নৌবাহিনীর রণতরি আইএনএএস বিক্রান্ত।

ভারত মহাসাগরে চীন নৌশক্তি বাড়িয়েই যাচ্ছে। চীনের এই সরব উপস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় ভারত একটি বিশাল নৌবাহিনী গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে। তবে ভারতের এই পরিকল্পনা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। 

গত মাসে একাধিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ভারতের নৌবাহিনী আইএনএস বিক্রান্তের মতো আরেকটি স্থানীয়ভাবে তৈরি বিমানবাহী রণতরি (ইনডিজেনাস এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার, সংক্ষেপে আইএসি) বানানোর পরিকল্পনা করছে।

খবরে বলা হচ্ছে, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল আর হরি কুমার এই পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছেন। এর বাইরে ভারতীয় নৌবাহিনী আরও যুদ্ধ সরঞ্জামের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে তিনটি পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন ও ছয়টি ডিজেল-বিদ্যুৎ চালিত সাবমেরিন। এগুলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘আত্মনির্ভর ভারত’ কার্যক্রমের অধীনে নির্মিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অবস্থাদৃষ্টে অনুমান করা যায়, ভারতীয় নৌবাহিনীর বহরে ২০২৩ সালের মধ্যে যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা ১৫৫ থেকে ১৬০টিতে পৌঁছাবে। দেশটি ২০৩৫ সালের মধ্যে কমপক্ষে ১৭৫টি যুদ্ধজাহাজের মালিক হওয়ার আশা করছে। বিমান, হেলিকপ্টার, ড্রোনসহ অন্যান্য যুদ্ধ সরঞ্জামও সামর্থ্য অনুযায়ী বাড়ানো হবে।

চীন যেহেতু তার নৌশক্তি দ্রুততায় বাড়াচ্ছে, যেহেতু তারা পরবর্তী পাঁচ-ছয় বছরে যুদ্ধজাহাজের সংখ্যা ৫৫৫টিতে উন্নীত করতে আটঘাট বেঁধে চেষ্টা করছে; সেহেতু ভারতীয় নৌবাহিনী চীনের চেয়ে মাত্রাতিরিক্ত পিছিয়ে না পড়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে।

তৃতীয় এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার নির্মাণের জন্য ভারতীয় নৌবাহিনী এখনো প্রাথমিক সরকারি অনুমোদন পায়নি। তবে ধারণা করা যায়, এ ধরনের একটি প্রকল্প শেষ হতে ১০ বছরের বেশি সময় লাগবে। ভারতীয় নৌবাহিনী তার জাহাজ নির্মাণ সক্ষমতার ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জন্য আইএনএস বিক্রান্তের মতো আরেকটি রণতরি বানানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের ২৪টি সাবমেরিনের মালিক হওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি প্রচলিত শক্তি চালিত এবং ছয়টি পারমাণবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন থাকবে। এর জন্য বিদেশি সহায়তা প্রয়োজন। কারণ, ভারত এর মাধ্যমে চীনসহ প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে লড়াই করতে চায়। বর্তমানে ভারতের কাছে ১৬টি সাবমেরিন রয়েছে, যার মধ্যে দুটি সক্রিয় পারমাণবিক ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিন (এসএসবিএন) রয়েছে।

ভারত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রথমবারের মতো রণতরি আইএনএস বিক্রান্ত বানিয়েছে। এই সময়টিতে তাদের একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই দেশীয়ভাবে অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ তৈরিতে ভারতকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। নতুন আরও একটি রণতরি বানানোর ক্ষেত্রে তারা সেই চ্যালেঞ্জগুলোর ওপর জোর দিচ্ছে।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে এশিয়া টাইমস–এর খবর অনুযায়ী, ভারত ১৩ বছর ধরে আড়াই শ কোটি ডলার ব্যয়ে আইএনএস বিক্রান্ত নামের রণতরিটি তৈরি করেছে। প্রযুক্তিগত অসুবিধা, তহবিলের অভাব ও দুর্নীতির কারণে রণতরিটি বানাতে এত বিলম্ব হয়েছে।

বর্তমানে ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে আইএনএস বিক্রান্ত ছাড়াও আইএনএস বিক্রমাদিত্য (এটি সাবেক সোভিয়েত আমলে রাশিয়ায় বানানো এয়ারক্র্যাফট) নামের আরেকটি রণতরি রয়েছে। এই দুটি রণতরির সঙ্গে তৃতীয় আরেকটি রণতরি যুক্ত করতে চাইছে ভারত। তৃতীয়টি ভারত নিজের দেশে বানাতে চাইছে। এই তিনটি রণতরিতেই সমন্বিত অ্যান্টি-এয়ার, অ্যান্টি-সারফেস এবং অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার ক্ষমতা থাকবে।

আরও পড়ুন

ভারত তার পারমাণবিক আক্রমণাত্মক সাবমেরিন (এসএসএন) কর্মসূচির অংশীদার হিসেবে ফ্রান্সের সাহায্য নিতে পারে। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে দ্য প্রিন্ট একটি প্রতিবেদনে বলেছে, ভারত ও ফ্রান্স যৌথভাবে এমন ছয়টি এসএসএন বানানোর পরিকল্পনা করেছে, যেগুলোতে পরমাণু অস্ত্র বহন করা হবে না। এ বিষয় দুই দেশের মধ্যে এক বছর ধরে আলোচনা চলছে, তবে এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা হয়নি।

২০৩০ সালের মধ্যে ভারতের ২৪টি সাবমেরিনের মালিক হওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি প্রচলিত শক্তি চালিত এবং ছয়টি পারমাণবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন থাকবে। এর জন্য বিদেশি সহায়তা প্রয়োজন। কারণ, ভারত এর মাধ্যমে চীনসহ প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে লড়াই করতে চায়। বর্তমানে ভারতের কাছে ১৬টি সাবমেরিন রয়েছে, যার মধ্যে দুটি সক্রিয় পারমাণবিক ব্যালিস্টিক মিসাইল সাবমেরিন (এসএসবিএন) রয়েছে।

আরও পড়ুন

এশিয়া টাইমস–এর ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত পাকিস্তানের ছোট আকারের স্থলভিত্তিক পারমাণবিক অস্ত্রাগারে হামলা চালালে যাতে পাল্টা হামলা চালানো যায়, সে জন্য পাকিস্তান তার সাগরসীমানায় অস্ত্রবহর বাড়াচ্ছে। পাকিস্তানের এই তৎপরতাও ভারতকে তার নৌবাহিনীকে অধিকতর উন্নত করতে উদ্বুদ্ধ করছে।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

  • গ্যাব্রিয়েল হনরাদা এশিয়া টাইমস–এর জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা সংবাদদাতা