চীনের নাগরিকেরা কেন রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দৃঢ় ব্যক্তিত্ব চীনে তার অনেক ভক্ত তৈরি করেছে, যা মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে চীনের সামাজিক বিরোধিতার বিষয়টিকে প্রতিনিধিত্ব করে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে বিরোধ চীনের নেটিজেনদের মধ্যে এক ধরনের সাইবার যুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করেছে। আমি চীনের বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইটের জরিপ পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পেয়েছি, চীনের নাগরিকদের প্রায় ৪০ শতাংশ এ বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছেন, প্রায় ৩০ শতাংশ রাশিয়াকে সমর্থন করেন এবং প্রায় ২০ শতাংশ জনগণ ইউক্রেনকে সমর্থন করেন। আর এই মনোভাবই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে চীন সরকারের পক্ষ থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাবে ভোট প্রদানে বিরত থাকার সামাজিক ভিত্তিকে প্রতিফলিত করে।                      

চীনের যেসব নাগরিক ইউক্রেনকে সমর্থন করেন এবং রাশিয়াকে আক্রমণকারী হিসেবে বিবেচনা করেন এর পেছনে তাঁদের যথাযথ কারণ রয়েছে। তাঁরা ইউক্রেনকে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং ন্যাটোতে যোগদান করা বা না করার সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের অধিকার হিসেবে বিবেচনা করে; যদি রাশিয়া ইউক্রেনের ‘পশ্চিমাপন্থী’ প্ররোচনা সহ্য না করে, তাতেও রাশিয়ার ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার নেই বলেও তারা মনে করেন।

তবে, চীনা জনগণের মধ্যে যারা রাশিয়াকে সমর্থন করেন, তারা এই ভিত্তির সমালোচনা করেছেন। তারা ইউক্রেনের প্রতি পক্ষপাতদুষ্টদের ‘মার্কিনপন্থী’ বলে উপহাস করেন এবং যুগোস্লাভিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া এবং সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপের সমালোচনা করেন। রাশিয়ার চীনা সমর্থকদের মতে, সব গুরুত্বপূর্ণ দেশেরই বৃহত্তর নিরাপত্তা সীমানার সুবিধা থাকা উচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন কিউবায় সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনকে মেনে নেয়নি, তেমনি ইউক্রেনকেও শিক্ষা দেওয়ার অধিকার রাশিয়ার আছে বলে তারা মনে করেন।

চীনের কিছু নাগরিকের রাশিয়াকে সমর্থনের যে কারণগুলো রয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পরাশক্তিসংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা। বিগত ২০ বছরে চীন ও রাশিয়ার মধ্যে যে কৌশলগত অংশীদারত্ব গড়ে উঠেছে, তা রাশিয়াকে সমর্থন করার জন্য তাদের কূটনৈতিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, চীন দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি দ্বারা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং রাশিয়ার প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য স্বাভাবিকভাবেই চীনের সহানুভূতি পেতে সাহায্য করেছে। তারা আরও বিশ্বাস করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমানের নিরাপত্তাবিষয়ক হুমকি ভবিষ্যতে চীনকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

এ ছাড়া, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দৃঢ় ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি চীনে তার অনেক ভক্ত তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে, যা মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে চীনের সামাজিক বিরোধিতার বিষয়টিকেও প্রতিনিধিত্ব করে। প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন আধিপত্যের বিরুদ্ধে সরব আওয়াজ সারা বিশ্বে এখন বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশ রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যার সবগুলোই মার্কিন প্রভাবের কারণে পশ্চিমা শিবিরে রয়েছে। ব্রাজিল এবং ভারত সহ বিপুলসংখ্যক উন্নয়নশীল দেশ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞায় নিজেদের যুক্ত করেনি। আমি মনে করি, রাশিয়ার সামরিক পদক্ষেপের বিষয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রচলিত মতামত সম্ভবত চীনের মতোই যুক্তিসাপেক্ষ।

অন্যদিকে, অনেক চীনা নাগরিকের রাশিয়াকে সমর্থন করার অর্থ এই নয় যে, চীনের পররাষ্ট্রনীতি সর্বাত্মকভাবে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকবে। চীনের অনেক নাগরিক এ বিষয়ে নিরপেক্ষ থাকতে চায়। তবে, এই দ্বন্দ্ব জ্বালানি মূল্যের ওপর কতটুকু নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নকে প্রভাবিত করবে; সেই সঙ্গে চীনের ভবিষ্যতের ওপর এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব কেমন হবে তা নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন। তবে, অনেক চীনা নাগরিক এই সংঘাতের বিষয়টি প্রত্যাশা করেননি। তবে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, চীনের বেশির ভাগ নাগরিক এখনো বুঝতে পারছেন না কেন রাশিয়া ১৫ দিনেরও বেশি সময় ধরে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারেনি? রাশিয়ার কি অন্য কোনো অভিসন্ধি আছে? রাশিয়া কী ধরনের কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করতে চায়?

চীনের বেশির ভাগ জনগণ মনে করেন, রাশিয়ানদের সামরিক পদক্ষেপ না নেওয়া বা জেলেনস্কির নেতৃত্বে ইউক্রেনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর আওতাধীন হয়ে যাওয়া একটি নিখুঁত সমাধান নয়।

এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে, তবে এটি শুধু এই কারণে নয় যে চীনারা রাশিয়ার নিরাপত্তার সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন বরং তারা বিশ্বাস করে রাশিয়া যত আগে এ সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারবে, তা সবার জন্যই ভালো হবে । চীনে তেলের দাম বাড়ছে এবং শেয়ারবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কেউ চায় না সংঘর্ষ চলতে থাকুক। কিছু মানুষ একটি বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন—তারা যদি রাশিয়াকে খুব বেশি সমর্থন করে, তবে তাদেরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। চীন মার্কিন আধিপত্যের বিরোধিতা করে, তবে চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক সংঘাত বা স্নায়ুযুদ্ধে লিপ্ত হতে চায় না। এর পরিবর্তে, ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের মতপার্থক্য মীমাংসা করবে এবং চৌকস পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ থেকে চীনের মূল স্বার্থকে রক্ষা করবে বলে তারা প্রত্যাশা করে।

চীনের বেশির ভাগ জনগণ মনে করেন, রাশিয়ানদের সামরিক পদক্ষেপ না নেওয়া বা জেলেনস্কির নেতৃত্বে ইউক্রেনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর আওতাধীন হয়ে যাওয়া একটি নিখুঁত সমাধান নয়। একজন চীনা বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে; একই সঙ্গে আমি ইউক্রেনের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছি। এর কারণ হলো, আমি রাশিয়া এবং ইউক্রেনের গতিপ্রকৃতি বোঝার চেষ্টা করছি।

আরও পড়ুন

গত কয়েক বছরে আমি দুই বার পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। ২০১৫ সালে প্রথমবার জি২০ নেতাদের নৈশভোজে তার সঙ্গে আমার প্রথমবারের মতো সাক্ষাৎ হয়। একজন থিংক ট্যাংক প্রতিনিধি হিসেবে আমাকে সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমি দেখতে পাই তিনি ঠিক আমার পেছনে দাঁড়িয়ে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে করমর্দন এবং গ্রুপ ছবি তোলার জন্য অপেক্ষা করছিলেন; দ্বিতীয়বার সোচিতে ভালদাই ক্লাবের বার্ষিক সভায় তার সঙ্গে আমার দেখা হয়; সেখানে তিনি স্কলারদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। পুতিন লম্বা নন, কিন্তু তার ভেতরে এক ধরনের প্রাণচাঞ্চল্য অনুভব করা যায়। তিনি কোন প্রশ্ন এড়িয়ে যান না, সরাসরি নির্দিষ্ট বিষয়ে কথা বলেন এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে কাজ করেন। তিনি ২১ শতকের শুরু থেকেই বিশ্ব ভূরাজনীতির কৌশল নির্ধারণের একজন সুনিপুণ খেলোয়াড়!

উত্তরের এই ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর সম্পর্কে চীনারা আসলে খুব কম জানে এবং যথেষ্ট পড়াশোনা করে না। অতীতে আগের প্রজন্মের স্কলারদের অনেকেই রাশিয়ান ভাষায় কথা বলতেন; এখন অল্প কিছু তরুণ স্কলার রাশিয়ান ভাষায় কথা বলতে পারেন এবং খুব কম চীনা প্রতিষ্ঠান রাশিয়ান থিংক ট্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। টানা চার বছর আমাকে ভালদাই ক্লাবের বার্ষিক সভায় যেখানে পুতিনও উপস্থিত ছিলেন যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং সেখানে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে আমার কথোপকথন হয়। সামগ্রিক অনুভূতি হলো যে দেশ হিসেবে রাশিয়ার কার্যপরিধি অনেক বিস্তৃত এবং বেশির ভাগ জাতিগোষ্ঠীর তুলনায় সম্পদ, ভূমি ও নিরাপত্তার প্রয়োজনের প্রতি তারা বেশি সংবেদনশীল। এটি সহজেই বোঝা যায় কেন পিটার দ্য গ্রেটের পর থেকে যে দেশগুলো রাশিয়ার সঙ্গে ঝামেলা করার চেষ্টা করেছে তারা ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই দেশকে ভয় পেয়ে আসছে। যার ফলে গত ৩০ বছরে চীন-রাশিয়া সম্পর্ককে সুসংহত করার প্রচেষ্টা ও চীনের উত্তর সীমান্তের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য চীনের কৌশলগত পরিবর্তন আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।

আমি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে ইউক্রেনের অনেক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও ইউক্রেনের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ইউশচেঙ্কোর সঙ্গে করমর্দন করেছি এবং কথা বলেছি। আমি সাবেক প্রধানমন্ত্রী টিমোশেঙ্কোকেও খুব কাছ থেকে দেখেছি। ইউরোপীয় অন্যান্য দেশের সাবেক গণ্যমান্য ব্যক্তিদের তুলনায় তাদের উপস্থিতি অনেক বেশি প্রাণচঞ্চল ছিল এবং তাদের আগেপিছে সব সময় তাদের সহকারীরা থাকতেন। এমন গতিবিধি ইউক্রেনের রাজনৈতিক দুর্নীতি ও জটিলতার প্রতিফলন। বিশ্বের ৪৫তম বৃহত্তম ভূমি এলাকা ও ৩৩তম বৃহত্তম জনসংখ্যা নিয়ে ইউক্রেন একটি সুন্দর দেশ হলেও বিভিন্ন কারণে এটি অসুখী একটি দেশ। ইউরোপে রাশিয়ার পরে সবচেয়ে বড় দেশ ইউক্রেন। শস্য রপ্তানিতে ইউক্রেন একসময় বিশ্বে তৃতীয় স্থানে ছিল এবং এর সম্পদের উৎস বিচারে বৈশ্বিকভাবে ভালো অবস্থানে ছিল। কিন্তু ইউক্রেন এগুলোর কিছুই কাজে লাগাতে পারেনি, ফলে এই দেশের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি।

ঐতিহাসিকভাবে ইউক্রেন সব সময় শক্তিশালী দেশগুলোর কাছাকাছি ছিল। দেশটি একসময় লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ডের গোল্ডেন হর্ডরা দখল করে এবং ১৬৫৪ সালে জারবাদী রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়। আধুনিক সময়ে এটি ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষ ও চেরনোবিল ঘটনার মতো ট্র্যাজেডির সম্মুখীন হয়। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায় এবং হাজার বছরের পুরোনো ইউক্রেনীয় সমাজ স্বাধীন হয়। কিন্তু এর জাতীয় সম্পদগুলো শাসকগোষ্ঠীরা ভোগ করেছে এবং মানুষের পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হলো এই দেশের জাতীয় নেতাদের মধ্যে স্বায়ত্তশাসন ও কৌশলগত দক্ষতার অভাব দেখা যায়, যার ফলে তাঁরা সব সময় ইউরোপ ও রাশিয়ার মধ্যে প্রাধান্য নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হন। তাঁদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদরা এতটাই ঠুনকো যে ২০১৯ সালে তারা একজন কৌতুক অভিনেতাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করেন, যা সত্যিই দুঃখজনক একটি পদক্ষেপ ছিল।

ন্যাটো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উৎসাহে ইউক্রেন নিরাপত্তা ইস্যুতে রাশিয়াকে ক্রমাগত উসকানি দিতে থাকে এবং অবশেষে পুতিন পাল্টা জবাব দেওয়া শুরু করেন। ইউক্রেন স্পষ্টতই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো দ্বারা প্রতারিত হয়েছিল এবং তাদের এজেন্টে পরিণত হয়েছিল। আমি চীনে বেশ কয়েকটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছি এবং কিছু চীনা নেটিজেনদের ইউক্রেন সম্পর্কে ব্যঙ্গাত্মক সুরে কথা বলার প্রবণতার তীব্র বিরোধিতা করেছি।

প্রকৃতপক্ষে, আমার মতে, এটি কেবল একটি ছোট পরিসরের ও নিয়মতান্ত্রিক সামরিক যুদ্ধ নয়; রাশিয়াকে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, আর্থিক, বাণিজ্যিকভাবে ও জনমতের ভিত্তিতে কোণঠাসা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি ত্রিমাত্রিক সামগ্রিক যুদ্ধও নয়; বরং সমগ্র সমাজের অংশগ্রহণে একটি চলমান যুদ্ধ, যেখানে অবাধ তথ্য প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়। প্রায় সকল নেটিজেনরা যুদ্ধের সঙ্গে একধরনের অতিরঞ্জিত সম্পৃক্ততা বোধ করেছে এবং পর্যবেক্ষণ করেছে। এর দ্বারা বোঝা যায় যে, এই যুদ্ধ বিস্তৃত হবে না এবং আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাবে না। কারণ, বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা একটি নতুন নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি হয়ে উঠেছে।

চীনের অনেক নাগরিকদের মতে পশ্চিমা মিডিয়ার মিথ্যা তথ্য প্রচার করার প্রবণতা এবং ইউক্রেনের মিডিয়ার পশ্চিমাপন্থী নীতির কারণে চীনের মিডিয়া রাশিয়ান মিডিয়াকে বিশ্বাস করতে বেশি আগ্রহী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও মেধাভিত্তিক যুদ্ধ থেকে শুরু করে বাইডেনের আদর্শিক আক্রমণ এবং শিনজিয়াং ও হংকং ইস্যুতে তার হস্তক্ষেপের কারণে বেশির ভাগ চীনা নাগরিক যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিডিয়া সম্পর্কে খুব নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে।

কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোকে এই সংঘাত থেকে দূরে রাখা যায়, এখন সেটাই সবার শীর্ষ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মতামত প্রকাশ্যে ও অবাধে প্রকাশ করার সুযোগ তৈরি করা উচিত এবং সবকিছু জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের অধীনে আলোচনার ভিত্তিতে সমাধানের চেষ্টা করা হোক। একজন শান্তিপ্রিয় চীনা স্কলার হিসেবে এটাই আমার প্রত্যাশা।

  • ড. ওয়েন ওয়্যাং চনগিয়াং ইনস্টিটিউট ফর ফাইন্যান্সিয়াল স্টাডিজের এক্সিকিউটিভ ডিন এবং রেনমিন ইউনিভার্সিটি অব চায়নার (আরইউসি) ভাইস প্রেসিডেন্ট।