২০ রাকাত তারাবিহ নামাজে কোরআন খতম

নামাজ ও রোজা ইসলামের অন্যতম প্রধান দুটি ইবাদত। ধনী–গরিবনির্বিশেষে সবার জন্য এ দুটি ইবাদত ফরজে আইন হিসেবে অবশ্যপালনীয়।

রোজার সঙ্গে তারাবিহ নামাজের সম্পর্ক অত্যন্ত সুনিবিড়। রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য তারাবিহ নামাজকে সুন্নত করেছি; যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমাদান মাসে দিনের বেলায় সাওম বা রোজা পালন করবে এবং রাতে তারাবিহ সালাত আদায় করবে, সে গুনাহ থেকে এরূপ পবিত্র হয়ে যাবে, যেরূপ নবজাতক শিশু মাতৃগর্ভ থেকে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়।’ (নাসায়ি, পৃষ্ঠা: ২৩৯)

রমজান সিয়াম সাধনার মাস। রমজান মাসের বিশেষ ইবাদত হলো ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ। প্রিয় নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমাদান মাসে তারাবিহ নামাজ আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, খণ্ড: ১, হাদিস: ৩৬)

রমজানের চাঁদ দেখা গেলে সাওম বা রোজা পালন শুরুর আগেই তারাবিহ সালাত আদায় করা সুন্নত। এমনকি যাঁরা শরিয়তসম্মত কোনো গ্রহণযোগ্য ওজরের কারণে রোজা পালনে অক্ষম, তাঁরাও সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলে তারাবিহ নামাজ পড়বেন।

পুরুষদের তারাবিহ নামাজ মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নত। জামাতে শরিক হতে না পারলে একা হলেও পড়বেন। নারীরা তারাবিহ সালাত নিজ গৃহে আদায় করবেন। শিশুরাও সামর্থ্যমতো বড়দের সঙ্গে যতটুকু সম্ভব তারাবিহ নামাজ পড়বে।

‘তারাবিহ’ অর্থ বিশ্রাম নেওয়া ও স্বস্তি লাভ করা। পরিভাষায় রমজান মাসে এশার নামাজের পরে আদায়কৃত সুন্নত নামাজকে তারাবিহ নামাজ বলে। (কামুসুল ফিকহ)

তারাবিহ নামাজে চার রাকাত পরপর বিরতির মাধ্যমে বিশ্রাম নেওয়া হয় বলে এর নাম তারাবিহ। তারাবিহ নামাজে দেহ–মনে প্রশান্তি ও স্বস্তি আসে বলে এর নাম তারাবিহ বা শান্তির নামাজ। ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ সুন্নতে মুআক্কাদাহ।

রমজান মাস কোরআন নাজিলের মাস। তারাবিহ নামাজের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ কোরআন তিলাওয়াত করা ও শোনা। তারাবিহ নামাজে পূর্ণ কোরআন মজিদ একবার পাঠ করা সুন্নত। একে খতম তারাবিহ বলা হয়।

তারাবিহ নামাজে পূর্ণ কোরআন মজিদ না পড়ে বিভিন্ন সুরা বা আয়াত দিয়ে তারাবিহ নামাজ পড়াকে সুরা তারাবিহ বলা হয়। সুরা তারাবিহ পড়লেও ২০ রাকাত পড়া সুন্নত। একা পড়লেও ২০ রাকাতই পড়া সুন্নত। নারীর জন্যও ২০ রাকাত তারাবিহ সুন্নত।

এশার নামাজের পর থেকে ফজরের ওয়াক্তের পূর্ব পর্যন্ত তথা সাহ্‌রির শেষ সময় পর্যন্ত তারাবিহ নামাজ পড়া যায়। একসঙ্গে একই সময় ২০ রাকাত পড়তে না পারলে আলাদাভাবেও পড়া যাবে। যেহেতু এটি সুন্নত নামাজ, তাই কোনো কারণে পড়তে না পারলে অসুবিধা নেই, এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে রোজাদারের উচিত তারাবিহ নামাজ পড়তে সর্বাত্মক চেষ্টা করা।

দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ফারুক (রা.)–এর নির্দেশে সাহাবিদের শ্রেষ্ঠ কারি হজরত উবায় ইবনে কাআবের ইমামতিতে ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ জামাতের সঙ্গে প্রচলন হয়। যা মক্কা শরিফ, মদিনা শরিফসহ সারা বিশ্বে আজ অবধি চলমান।

উমরে সানি ষষ্ঠ খলিফায়ে রাশেদ হজরত উমার ইবনে আবদুল আজিজ (র.)–এর খিলাফতকালে বিখ্যাত তাবেয়ি ও প্রথম মুহাদ্দিস হজরত আবদুল ইবনে মোবারক (র.)–এর তত্ত্বাবধানে তারাবিহ সালাতে প্রতি রাকাতে ১ রুকু করে তিলাওয়াতের প্রচলন হয়।

২৭ রমজানে খতম তারাবিহ শেষ করা হয় এবং নিয়মিত ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন ২০ রাকাত করে তারাবিহ নামাজ পড়া হয় বলে কোরআন মজিদে (২৭ x ২০) ৫৪০ রুকু হয়েছে।

● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]