ঘূর্ণিঝড় আসে ঘূর্ণিঝড় যায়, থেকে যায় যেসব ক্ষত

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভদ্রা নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি এলাকা। সুপেয় পানি সংগ্রহ করে বাড়ি ফিরছেন এক পরিবারের সদস্যরা। গতকাল দুপুরে।ছবি: প্রথম আলো

ঘূর্ণিঝর রিমালের আঘাতের দুদিন পর বৃহস্পতিবার সকালে মৃত হরিণের সংখ্যা ছিল ৫৪। বিকেলেই সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৬ তে। আরও কতো প্রাণীর খবর অজানা রয়েছে! প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কখনো সেই মুহূর্তের বিবেচনায় মাপা যায় না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের করা ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ৪৮টি জেলার কৃষিতে রিমালের প্রভাব পড়েছে। ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ১০৯ হেক্টর ফসলি জমির। তবে কৃষি মন্ত্রণালয় এও জানিয়েছে, প্রকৃত ক্ষতি বোঝা যাবে সাত থেকে আটদিন পরে।

দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উপকূলীয় বাসিন্দাদের  দুর্ভোগ দেখার অভিজ্ঞতা থেকে মনে করি, আদতে ঝড়ের ক্ষতির প্রকৃত মাপটা কোনোদিনই নির্ধারণ করা যায় না। আবার সবরকম ক্ষতিকে ক্ষতি হিসেবে স্বীকৃতি দিতেও সক্ষম হইনি আমরা।

একইসঙ্গে  আমাদের মানবিক স্মৃতির স্থায়িত্ব কমছে। ফলে সেদিন আঘাত করা ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের খবর এরই মধ্যে পুরানো হতে শুরু করেছে অন্য সংবাদের কাছে। কিন্তু এ কথা তো সত্যি যে দুর্যোগপ্রবণ এলাকা দীর্ঘদিন ধরে  ভয়ংকর অবস্থায় থাকে। যা আর গণমাধ্যমে  গুরুত্ব পায় না।

ব্যতিক্রম অভিজ্ঞতা হয়েছিল খুলনার কয়রার উত্তর বেদকাশী গ্রামের বেড়িবাঁধের বাস্তুহীন মানুষদের দেখতে গিয়ে। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কয়েক মাস পর এই বাঁধে গিয়ে দেখা মিলল চকচকে রঙিন শাড়ি পরা নারীদের। বাঁধের ওপর এখানে-সেখানে বসে আছেন তাঁরা দলগতভাবে। কেউ অন্যজনের চুলের বেণি বাঁধছেন, কেউ রান্নার জোগাড় করছেন। ঝড়-পরবর্তী বিপর্যয় নিয়ে আমাদের পূর্ববর্তী ধারণার একেবারে বিপরীত দৃশ্য এটি। তবে তাঁদের সবার মিল, তাঁরা উদ্বাস্তু হয়ে তখনো  বাঁধে আশ্রিত।

আরও পড়ুন

আমাদের বিস্ময় বুঝতে পেরেই সেদিন বাঁধে আশ্রিত সদ্য বিবাহিত বিনোদিনী সরকার বলেছিলেন, ‘রিলিফের কাপড় তো। এখন চকচকেই দেখতি পাবেন। কটা দিন পর যখন আপনারা সব ভুইলে যাবেন, তখন আর কাপড়ের রং থাকবি না। হাঁড়ির চাল থাকবি না। বাঁধের মানুষগুলো হারায় যাবে আপনেরাও খবর রাখবেন না।’

স্থানীয় সংবাদকর্মীরা বলেছিলেন, ‘এই যে মানুষদের বাঁধে আশ্রিত দেখছেন, তাঁদের অনেকেরই আর বাড়ি ফেরা হবে না। এরপর ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে চলে যাবেন কাজের সন্ধানে। যে মাটিতে তাঁর জন্ম, সেখানে আর তাঁর সংযোগ থাকবে না। আর দীর্ঘদিন উদ্বাস্তু হয়ে বাঁধে থাকা মানুষের রয়েছে আরও হাজারটা সমস্যা।’

মৌলিক চাহিদার পাশাপাশি বড় সংকট শুরু হয় সামাজিক নিরাপত্তার। যে মেয়েটি ঝড়ের আগে স্কুলে যেত, তার পড়ালেখা বন্ধ হয়, বাল্যবিবাহ হয় অথবা শুরু হয় উপকূলের লোনাপানিতে মাছের পোনা সংগ্রহের জীবন। বাঁধে অনিরাপদ বসতিতে কারও কারও জীবনযাপনেও সামাজিক অবক্ষয়ের ঘটনা ঘটে। এর বেশি আর কথা এগোননি ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলের সেই মানুষেরা। এবার ঘূর্ণিঝড় রিমালের জন্য দেশের উপকূলীয় এলাকায় বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। তাঁদের জীবনে ঠিক তা-ই ঘটবে, যা আগের দুর্যোগগুলোয় ঘটেছে।

নদীর গতিপথই বদলে দিয়েছিল যে ঝড়

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর যশোর জেলায় অবস্থিত বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা জানিয়েছিল, বেনাপোলসহ ওই অঞ্চলের সঙ্গে ভারতের স্থলসীমান্ত যোগাযোগ নিকটবর্তী থাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর মানব পাচারের ঘটনা বাড়ে। এ বিষয়ে তাদের কাছে নির্দিষ্ট তথ্য নেই। কারণ, এ নিয়ে গবেষণা হয়নি। তবে ভারতে পাচার হওয়ার পর ফিরিয়ে আনা মেয়ে, নারীদের অভিজ্ঞতা জেনে তারা এই মন্তব্য করেছিল। ধারণা করা যায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মানব পাচারের হার বৃদ্ধির সম্পর্ক অমূলক নয়।

জলোচ্ছ্বাসের ফলে ফসলি জমিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া, সুপেয় পানির অভাব—এসব সংকট বহুকালের। আম্পান ঝড়ের আট মাস পর নৌকায় করে কয়রা থেকে সাতক্ষীরার প্রতাপনগর গ্রামে পৌঁছে আমরা দেখেছিলাম, একটি গ্রাম পুরো জনশূন্য হয়ে গেছে। ঝড়ে সে গ্রামের কেউ প্রাণ হারায়নি। কিন্তু তাদের বাস্তুতন্ত্র পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। ঘরবাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামে মানুষের চিহ্ন নেই। কয়েকটি কুকুর দৌড়ে যাচ্ছে নদীর পাশ দিয়ে।

কপোতাক্ষ নদের গতিপথ বদলে গিয়েছিল সে ঝড়ে। এখানকার একজন নারী জানিয়েছিলেন, ঝড়ের পর নদীপথ আরও বেড়েছে। তাঁর সন্তানসম্ভবা মেয়েকে নিয়ে ওই পথ অতিক্রম করে সদরের হাসপাতালে যাওয়ার সুযোগ পাননি। বাড়িতে সন্তান প্রসবের সময় জোয়ারের পানি প্রবেশ করে তলিয়ে গেছে চৌকির পায়া। ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় কতজন সন্তান সম্ভবা নারী আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে পেরেছিলেন আর ঝড় পরবর্তী সময়ে তাঁরা এখন কেমন আছেন আমরা জানি না।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর সাতক্ষীরায় বুকসমান পানিতে নেমে স্থায়ী বাঁধের দাবিতে আন্দোলনরত মানুষেরা বলেছিলেন, ত্রাণ চাই না, বাঁধ চাই। এ আন্দোলন ছড়িয়েছিল উপকূলজুড়ে। চার বছর পর তেমন বড় ঝড় রিমালের আঘাতের পরও আমরা আবারও সে ঘটনারই পুনরাবৃত্তি দেখছি।

প্রতিবারই দুর্যোগের ঘোষণা এলে বাঁধের খবর শুরু হয়। এরপর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের কোথাও কোথাও সংস্কার হয়, কোথাও হয় না। যতক্ষণ স্থানীয় মানুষদের আন্দোলন আর গণমাধ্যমের নজর থাকে, তত দিন থাকে কিছু তৎপরতা। এবারের ঘূর্ণিঝড় রিমালে উপকূলের অসংখ্য স্থানে বাঁধ ভেঙে গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার খবর তাই আর বিস্মিত করেনি নতুন করে।

রিমালের ঘা শুকাবে কত দিনে

রিমাল যখন আঘাত আনছে তখন সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ভোলা ও বরগুনার তুলনায় কিছুটা নিরাপদে ছিল খুলনার দাকোপের ঢাংমারী এলাকা। নদীপথ ও বন এখানে বেঁকে যাওয়ায় বাতাসের ঝাপটা তুলনামূলক কম ছিল এ এলাকায়।

মোংলার পশুর নদের বড় নৌকাগুলো ঝড় থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছিল ঢাংমারী খালের ভেতর। ঘূর্ণিঝড় রিমাল শুরুর মাত্র ছয় দিন আগে এখান থেকে ফিরে এসেছি ঢাকায়। তিন দিনের অবস্থানে এ অঞ্চলের লোনাপানির যে অসহনীয় অভিজ্ঞতা হয়েছে, এতে আশঙ্কা করছি, এখন সেখানকার নদীর পানির লবণাক্ততা সহ্যের বাইরে।

২৭ মে ঝড়ের পরপরই মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় ঢাংমারীর স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। তাঁদের একজন তপন রায় বলেন, জলোচ্ছ্বাসে মিঠাপানির পুকুর আর নদীর পানি সব একাকার হয়ে গেছে। খাওয়ার পানি নেই। এ এলাকার জোবায়ের হিরা বললেন আরেকটি ভয়ের কথা।

কিছুদিন আগে করমজলের কুমির প্রজননকেন্দ্রের বাচ্চা কুমিরদের অবমুক্ত করা হয়েছে ঢাংমারী খালে। রিমালের জলোচ্ছ্বাসে বাণীসান্তা ইউনিয়নের অনেক সুপেয় পানির জলাধারের সঙ্গে মিশে গেছে ঢাংমারীর সংযোগ। এতে গ্রামের ভেতরের মিঠাপানির পুকুরে যদি কুমিরের বাচ্চা, বিষধর সাপ বা মাছ পাওয়া যায়, এতে অবাক হওয়া যাবে না। ভয়টা হচ্ছে কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই তা বোঝা যাবে কি না।

একটি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর এই ঘটনাগুলো চাপা পড়ে যায় বড় ক্ষতির কাছে। মূলত রাজধানীতে থেকে সংবাদমাধ্যম বা সরকারি তথ্যবিবরণীতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ও তথ্য জানা আর উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর বাস্তবতা বিবেচনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেহারা বোঝার মধ্যে অনেক ব্যবধান। উপকূলের মানুষের কাছে ঘূর্ণিঝড় মানে জীবন ও সম্পদ দিয়ে দুর্যোগ ও ঝুঁকি মোকাবিলা।

সুতারখালীর কালাবগির ফকিরকোনা সুন্দরবনঘেঁষা প্রত্যন্ত জনপদের একটি। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখে এটি ছেঁড়া দ্বীপ নামেও পরিচিত। রিমালের আঘাতের পরদিন ২৮ মে দুপুরে কথা হলো পাশের সুতারখালী গ্রামের শারাফত হোসেনের সঙ্গে। মঙ্গলবার দুপুরে তখন মাত্র নৌকায় করে ফকিরকোনোর পরিস্থিতি দেখে ফিরেছেন তিনি।

শারাফত বললেন, ‘শিবসা আর সুতারখালী এখন লবণের নদী। ফকিরকোনা ভাঙতে ভাঙতে এখন বড়জোর ৫০টি পরিবার আছে। তাদের সবার ঘর বিধ্বস্ত। এরই মধ্যে কোনোমতে টিকে থাকার লড়াই চলছে। পাটনাচ (জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচতে উঁচু করে বাঁধা কাঠের পাটাতন) উঁচু করতে করতে ঘরের সিলিংয়ের কাছে তুলে ফেলতে হচ্ছে।

খাওয়ার পানির অভাব তো আছেই। এমনিতেও এখানকার মানুষ বারো মাস বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু ঝড়ে তাদের সে ব্যবস্থাও নষ্ট হয়েছে। বেশি সমস্যা হচ্ছে শিশুদের নিয়ে। নদীর সঙ্গে ঘরের জমির ব্যবধান কমে যাওয়ায় শিশুরা যখন-তখন নদীতে নেমে যাচ্ছে। রয়েছে রাতে গড়িয়ে পানিতে পড়ার ভয়। দিনে চারবার জোয়ার-ভাটায় প্লাবিত হওয়া একেবারে প্রত্যন্ত এই গ্রাম শুধু টিকে আছে সুন্দরবনের আশ্রয়ে।’

এই গ্রামের পল্লিচিকিৎসক কৈলাস বাওয়ালির বাসন্তী নামের মিষ্টির দোকান  টেনে নিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় আম্পান। কৈলাস বাওয়ালি সেই দোকানের রমরমা দিনের স্মৃতিচারণা করে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘গুমগুম শব্দে এগিয়ে এল গ্রামের বাজারের দিকে নদী। যা পথে পেল, উপড়ে নিল, আছড়ে ফেলল। সেসব ভগ্নাংশ সঙ্গে নিয়ে রওনা হলো সাগরে। যেন নিজের কুকর্মের চিহ্ন রাখতে নারাজ নদী। আসলে কি জানেন দিদি, নদীর পাশে যাদের বাস, তাদের ভাবনা বারো মাস।' এ পরিবারটির এত বছরেও আর নতুন করে একটি দোকান দেওয়ার সামর্থ্য হয়নি।

সন্তানের ছবি দেখেন না মায়েরা

আসলে ক্ষত যাঁর, তাঁর ভাবনা বারো মাস নয়, বারো বছরেও হয়তো যায় না। ২০০৭ সালের শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সিডরের সময় বাগেরহাটের শরণখোলার খুড়িয়াখালী গ্রামে ছিল অপু আর নিপু নামের দুই ভাই-বোন। ১১ বছরের নিপু পড়ত সুন্দরবন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সেদিনের ঝড় থেকে বাঁচতে মা রানী বেগম দুই সন্তানের হাত ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চেয়েছিলেন। ঘর থেকে বের হতেই নিভে যায় সঙ্গের হারিকেন। ততক্ষণে তাদের বাড়ির উঠান তলিয়ে গেছে ভোলা আর বলেশ্বর নদের পানিতে। নিপুর শেষ আকুতি ছিল, ‘মা আমার হাত ছাইড়ো না।’

সন্তানকে আশ্বস্ত করেছিলেন রানী বেগম। দুই সন্তানের হাত ধরে সাঁতার কেটে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন আশ্রয়কেন্দ্রে। ছেলেকে ধরে রেখেছিলেন বুকের সঙ্গে। মায়ের বুকে লেপটে থাকা অবস্থাতেই প্রাণ হারায় অপু।

দুই সন্তানকে একসঙ্গে হারিয়ে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন মা রানী বেগম। বহুদিন পর তাঁর ধীরে ধীরে মনে হয়েছে মেয়েটা তলিয়ে যাওয়ার সময় নিজের গায়ের সঙ্গে শেষ স্পর্শের স্মৃতি। মেয়েটা তাঁর হাত না ছাড়তে বলেছিল। ঘূর্ণিঝড় সিডরের ১৪ বছর পর ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর কথা হয়েছিল খুড়িয়াখালী গ্রামের রানী বেগমের সঙ্গে।

প্রথম আলোকে বলেছিলেন, মেয়ের ছবিটা স্কুল থেকে এনে বাঁধিয়ে কাপড়ে মুড়ে ঢেকে রেখেছেন। তিনি আর কোনো দিন ছেলেমেয়ের ছবি দেখেননি। ছবিতে সন্তানদের মুখের দিকে এত বছর পরও তাকাতে পারেন না তিনি।

২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশিত ‘সন্তানের ছবি দেখেন না মায়েরা’ শিরোনামের সংবাদে উঠে এসেছিল ঘূর্ণিঝড়ে সন্তান হারানো মায়েদের সেই কথা। ঘূর্ণিঝড় সিডর এখন ইতিহাস। কিন্তু যে পরিবার সন্তান হারিয়েছে, তাদের ক্ষত দেড় যুগ পরও একই রকম যন্ত্রণার।

যে ঘটনাগুলো চাপা পড়ে যায়

একটি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর এই ঘটনাগুলো চাপা পড়ে যায় বড় ক্ষতির কাছে। মূলত রাজধানীতে থেকে সংবাদমাধ্যম বা সরকারি তথ্যবিবরণীতে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ও তথ্য জানা আর উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর বাস্তবতা বিবেচনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেহারা বোঝার মধ্যে অনেক ব্যবধান। উপকূলের মানুষের কাছে ঘূর্ণিঝড় মানে জীবন ও সম্পদ দিয়ে দুর্যোগ ও ঝুঁকি মোকাবিলা।

অন্যান্য ঘূর্ণিঝড়ের মতো রিমালও ভাসিয়ে নিয়ে গেছে উপকূলীয় জীবন-জীবিকা। ঘূর্ণিঝড় চলে যাওয়ার পর জলাবদ্ধতা ও পানিবাহিত রোগ মোকাবিলা করতে হবে  দুর্যোগাক্রান্ত মানুষকে; যেসব অসুস্থতার খবর কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সম্পর্কিত হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে অনেক শিক্ষার্থীর, গাছ মরবে, ফসল হবে না, গৃহপালিত পশুপাখি খাবার পাবে না, ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবনে আরও পর্যটক প্রবেশ করে আরও ক্ষতি বাড়াবেন বনের। আর আপনজন হারানো স্বজনেরা দীর্ঘদিন বয়ে যাবেন সেই ভয়াবহ ক্ষতির স্মৃতি।

  • সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক