আদার ব্যাপারী পরিবেশিত জাহাজের খবর

রনবীর টোকাইকে একজন বলল, ‘দেখতে দেখতে রমজান এল। দেখতে দেখতে চলে গেল।’ টোকাই জবাব দিল, ‘দেখতে দেখতে জিনিসের দাম বাড়ল, দেখতে দেখতে কমল না!’

ইন্দোনেশিয়া ভোজ্যতেল রপ্তানি এক মাসের জন্য বন্ধ করবে—এই খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে তেলের দাম গেল বেড়ে। অথচ তখনো জাহাজভর্তি তেল ইন্দোনেশিয়ার বন্দর থেকে বাংলাদেশের বন্দরে রওনা দিচ্ছে, কারণ ওই তেল নিষেধাজ্ঞার আগেই জাহাজে উঠে গেছে। এখন ইন্দোনেশিয়া তাদের ভোজ্যতেল রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। খবরটা সাত দিন আগের, এখন তাহলে কি বাংলাদেশের তেলের দাম কমে গেছে? না, কমেনি। কারওয়ান বাজারে ১ লিটারের দাম ১৯৮ টাকা! হ্যালো, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিতে পারলেন, এবার কমানোর সিদ্ধান্তটা কই?

এখন চলছে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ব্যাপক কথাবার্তা। প্রথম আলো ডটকমে অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ বিরূপাক্ষ পাল লিখেছেন, টাকার মান কমলে জাতির মান কমে না। তিনি ডলারের দাম বাড়িয়ে টাকার মান কমিয়ে দিতে বলেছেন। ব্যাংক আর বাজারে ডলার-টাকার বিনিময় মূল্যে বেশ বড় তফাত আছে। এটাকে ঠিকঠাক করার পরামর্শ দিয়ে বিরূপাক্ষ বলেছেন, ‘টাকার মান কমলে জাতির মান কমে না; বরং উন্নয়নশীল একটা জাতির ক্ষমতা বাড়ে। কারণ, এতে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়ে, আমদানি কমে, চলতি হিসাবে ঘাটতি কমে, বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল আরও মোটাতাজা হয়। অর্থনীতির এ শিক্ষা অনেক রাজনীতিক মহলে নেই।’

এদিকে ভারতে জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে কি জ্বালানি তেলের দাম কমানো হবে? নাকি বাড়ানো হবে, কারণ ডলারের দাম বেড়ে গেছে। কাগজে দেখলাম, রাশিয়া বাংলাদেশকে তেল দিতে চেয়েছে। নানা দেশই তো নানাভাবে বাংলাদেশকে তেল দিতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে বাংলাদেশকে তাদের নতুন অর্থনৈতিক জোটে, যার নাম ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সমৃদ্ধির জন্য অর্থনৈতিক কাঠামো (আইপিইএফ)।

সবাই কেন বাংলাদেশকেই চায়? যেমন কোভিডের টিকা দিতে চাইল চীন, সঙ্গে ভারতের মন্ত্রী ছুটে এলেন বাংলাদেশে, না না, আমরা দেব, আমাদেরটা নাও, ওদেরটা নিয়ো না। তা কি ‘গরিবের বউ সবার ভাবি’ বলে, নাকি ‘আপনা মাঁসে হরিণা বৈরী’ বলে!

যাহোক, ছুটির দিনের সকালে আপনারা এই কলামটা পড়বেন, এতে ভারী ভারী কথা বলতে চাই না। কৌতুকই বলতে চাই। সরদারজির কৌতুক।

এক লোক এক সরদারজির কাছে ২৫০ রুপি ধার নিলেন। কয়েক দিন পর আরও ২৫০ রুপি ধার নিলেন। কয়েক দিন পরে সরদারজি বললেন, তুমি আমার কাছ থেকে ৪১০০ টাকা নিয়েছ। শোধ দাও?

৪১০০ টাকা? কী করে? ঋণগ্রহীতা বললেন।

এইভাবে—সরদারজি জবাব দিলেন—

২ ৫ ০

+ ২ ৫ ০

৪১০০

ভদ্রলোক তখন সরদারজিকে ১০০ টাকা ফেরত দিলেন। বললেন, আর কত পাবেন?

সরদারজি বিয়োগ অঙ্ক কষছেন

৪১০০

- ১০০

৪ টাকা পাব—সরদারজি বললেন।

হিসাব মিলে গেছে।

আমরা যারা গণিত পারি না, তাদের আপনারা নানাভাবে বুঝ দিতে পারবেন। বিশেষ করে অর্থনীতিবিদেরা। পরিসংখ্যানবিদেরা। প্রবৃদ্ধি কত হচ্ছে, মাথাপিছু আয় কত বাড়ছে। কিন্তু যাঁরা চাকরি করেন, বাঁধা বেতন পান, তাঁরা জানেন, মাছের টুকরা চিকন হয়ে যাচ্ছে, মাংস চোখেও দেখা যায় না; রিকশাওয়ালা ভাড়া বেশি চান। ভাড়া বেশি চাইছেন কেন? এই তো এখান থেকে ওখানে। দেখা যাচ্ছে।

আপা, জায়গা দেখা গেলেই কাছে হয় না। আকাশের চান্দও তো দেখা যায়।

তা হোক। কিন্তু গতকালই তো ২০ টাকায় গেলাম।

ডলারের দাম বাইড়া গেছে আপা, কী করুম?

আপনি কি ডলার দিয়া রিকশা চালান?

না আপা। কিন্তু চাউল, ডাইল, ত্যালের দাম বাড়ছে না? ঘরে বউ, পোলা, মাইয়া আছে না!

আপনি না হয় আপনার রিকশাভাড়া বাড়ালেন। আমার বেতন তো বাড়বে না। এদিকে বাসাওয়ালা বাসাভাড়া বাড়ানোর হুমকি দিচ্ছে!

আপনিও হুমকি দেন। বেতন না বাড়াইলে কাজ ছাইড়া দিবেন।

কাজ ছাড়লে তো আমি আর অফিস যাব না। তখন আপনার রিকশায় কে উঠবে?

আরেকজন ওই চাকরি লইয়া লইব। এই দেশে যে বেকার মানুষ বেশি। আমারে নিয়া আপনে চিন্তা কইরেন না। কিন্তু আপনারে লইয়া আমি ফাঁপরে পড়ছি আপা। বেতন না বাড়লে আপনার তো সমস্যা আছে।

আমি সমাধান পেয়ে গেছি। কাল থেকে হেঁটে অফিস যাব।

না আপা। সেইটা পারবেন না। আপনারা মধ্যবিত্ত। আপনাগো সম্মানটা হইল আসল। লন। আপনেরে ২০ টাকাতেই লইয়া যাইতাছি।

এদিকে সরকার পি কে হালদারদের মাধ্যমে বা কানাডার বেগমপাড়ায় পাচার হয়ে যাওয়া ডলারগুলো ফেরত আনতে চায়। এ জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হচ্ছে। এতে যদি ডলার ফেরত আসে, আমাদের খুশি হওয়াই উচিত। আসবে কি? কিন্তু একটা পদ্ধতি আছে, যেটা প্রয়োগ করলে রাস্তায় হামার গাড়ি বা টাকার বস্তাও পড়ে থাকে। ওটা হলো বাঁশডলা পদ্ধতি। ডলা দিন, ডলার আসবে। কে কে কত হাজার কোটি টাকার ডলার পাচার করেছে, আপনাদের তা অজানা থাকার কথা নয়। কয়েকজনকে ধরে বলুন, বস, ডলারগুলো আনুন! না হলে বাঁশডলার জন্য তৈরি হোন।

বলতে পারবেন!

আনিসুল হক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক