আমাদের উন্নয়ন ভাবনা ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ফাইল ছবি
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ফাইল ছবি
বীর মুক্তিযোদ্ধা, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার মারা গেছেন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ওপর একটি অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ গবেষণা কাজ করেছিলেন রেজা সেলিম। তিনি সে গবেষণার অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০২০ সালে ১৩ জুন প্রথম আলোয় লিখেছিলেন। লেখাটি আবার পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।  

১৯৯০-৯১ সালে আমি ভলান্টারি হেলথ সার্ভিসেস সোসাইটির (ভিএইচএসএস) গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে সে সোসাইটির সদস্য সংস্থা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ওপর একটি অংশগ্রহণমূলক পর্যবেক্ষণ গবেষণা কাজ শুরু করি। সে গবেষণার অন্যতম অংশীদার ও দাতা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ড ফাউন্ডেশন। এই কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ আমার জীবনের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, আমি প্রায় এক বছর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সান্নিধ্য পাই। সে সুবাদে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্মের ইতিহাস আমি সবিস্তারে জানার সুযোগ পেয়েছিলাম, যার আদ্যোপান্ত আমার রচিত ‘অনুভব’ সিরিজের ১১তম প্রকাশনায় ১৯৯৩ সালে পুস্তকাকারে ছাপা হয়।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয় ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে। আমার তৎকালীন কর্মস্থল বিএভিএস-এ (পরিবার পরিকল্পনার ক্লিনিক্যাল সেবার একটি প্রতিষ্ঠান, আমি যার প্রশিক্ষণ সমন্বয়কারী হিসেবে নিযুক্ত ছিলাম) ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নিয়মিত যাতায়াত ছিল ও সেই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ডা. আজিজুর রহমান তাঁর বিশেষ ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সেই সুবাদেই তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয়।

১৯৯০ সালে আমি যখন ‘অনুভব’ সিরিজের জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করি ও জানাই যে এই সিরিজে বাংলাদেশের তৃণমূলে কর্মরত বেসরকারি সংস্থাগুলোর জন্মের ইতিহাস থেকে তাদের কাজের মিশন ও সমাজে প্রভাব নিয়ে বিশ্লেষণাত্মক রচনা পুস্তকাকারে প্রকাশিত হবে, তিনি সব শুনে আমাকে বললেন, ‘এটা একটা আমার প্রাণের কাজ তুমি করবে; কারণ এ রকম একটা ডকুমেন্টেশন আমাদের দরকার।’ আমার সঙ্গে সহায়তার জন্য কেন্দ্রের প্রথম সারির দুজন কর্মকর্তাকে তিনি পরামর্শ দিলেন, ডা. মোরশেদ চৌধুরী (বিচিত্রা সম্পাদক হিসেবে খ্যাত শাহাদাত চৌধুরীর ভাই) ও ডা. কাশেম চৌধুরী (বিশিষ্ট শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর ভাই)।

দুঃখজনক হলেও সত্যি যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাভার কার্যালয়ে সব কাগজপত্র পাওয়া যাবে বলে আমাকে যে স্টোরটি খুলে দেওয়া হয়, সেটি ছিল আমার অনুসন্ধানী গবেষণা কাজের জীবনে সবচেয়ে দুরূহ কাজ। ধুলাবালু ছাড়াও ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা প্রকাশনা, কাগজপত্র, ছেঁড়াখোড়া ছবি, দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা সারি সারি বই ও কাগজের বস্তা, ইত্যাদি মিলিয়ে এক অদ্ভুত পরিবেশে একটি এক পা ভাঙা টেবিলে বসে আমি কাজ শুরু করলাম। জাফর ভাই দু-এক দিন পরে আমার খোঁজ নিতে এসে খুব মর্মাহত হলেন, বিনয়ের সঙ্গে বললেন, ‘কখনো ভাবিনি এগুলো নিয়ে কাজ করা দরকার, তাই প্রচারের চিন্তা না থাকায় এই হাল হয়েছে।’ তিনি আমাকে পাশের আর একটি রুম থেকে এক জোড়া ভালো চেয়ার-টেবিল আনিয়ে দিলেন ও রুমে লাইট লাগাতে বললেন। যত দূর মনে পড়ে গণস্বাস্থ্য তখন পাট ও প্লাস্টিকের সমন্বয়ে ফার্নিচার বানানোর প্রকল্প শুরু করেছিল, চেয়ারটি সম্ভবত সে রকম জুটেক্স টাইপের ছিল।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাগজপত্র ঘেঁটে আমি যে প্রকাশনা পুস্তিকা তৈরি করেছিলাম, তাতে এর শুরুকালের ইতিহাস থেকে সে সময় পর্যন্ত যত কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, সেসবের বিস্তৃত বিবরণ উল্লেখ আছে। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল এর পটভূমি রচনা। জাফর ভাইয়ের সঙ্গে নিয়মিত বসে তাঁর মুখে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস শুনে শুনে, সেগুলোর সূত্র ধরে ধরে তথ্য যাচাই করা ছিল যথেষ্ট দুরূহ কাজ, কারণ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তারা প্রচারবিমুখ, বিধায় এই বিষয়ে খুবই উদাসীন ছিলেন।

দ্বিতীয়ত, এই কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জড়িয়ে আছে, যা যথেষ্ট যাচাই না করে লেখা একদিকে আমার জন্য যেমন ছিল স্পর্শকাতর বিষয়, অপর দিকে জাফর ভাই নিজেও তা চাইতেন না, ফলে আমাকে সেই সূত্রসমূহ নিশ্চিত হতে এর জন্মস্থান ত্রিপুরায় যেতে হয়েছিল। তৃতীয়ত, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রবর্তিত সমাজভিত্তিক স্বাস্থ্য কার্যক্রম ছিল আমাদের দেশের প্রচলিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সম্পূর্ণ বিপরীত একটি মডেল, যার তাত্ত্বিক আলোচনা অনুসন্ধান আমার জন্য যথেষ্ট সহায়ক ছিল না। বাইরের জগতে এই নিয়ে কথা বলতে গেলে আমি তেমন একটা সহযোগিতা পেতাম না। এই সব চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে আমাকে এগোতে হয়েছে ও একটানা দেড় বছরের কিছু বেশি সময় কাজ করে আমি একটি নির্ভরযোগ্য প্রকাশনা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলাম।

আমার সে গবেষণা কাজের মাধ্যমে ছয় বছরে (১৯৮৯-৯৫) মোট ১৮টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রকাশনা শেষে ১৯৯৬ সালে আমি ‘আমাদের গ্রাম’ প্রকল্প তৈরি করি, যার অন্যতম আদর্শ সমাজভিত্তিক স্বাস্থ্য কার্যক্রমও জাফর ভাই, এ কথা বলতে আমি সর্বদাই গর্ববোধ করি। ২০১০ সালে আমি যখন ধানমন্ডি নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অফিসে বসে দেশে আমার প্রকল্পের মাধ্যমে অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ ও ক্যানসার নিয়ে গ্রামভিত্তিক কাজের যুক্তি তুলে ধরেছিলাম, জাফর ভাই আমাকে উচ্ছ্বসিত উৎসাহ দিয়ে বলেছিলেন, ‘লড়াইটা কিন্তু শেষ পর্যন্ত করে যেতে হবে।’

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গণস্বাস্থ্যের ভিত তৈরি হয় রণাঙ্গনে আহত ও অসুস্থ হয়ে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দেওয়ার মাধ্যমে। ত্রিপুরার সোনামুড়া ডাক বাংলোতে (আগরতলা থেকে ৩০ মাইলের মতো দূরে) প্রথম চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করেন ক্যাপ্টেন আকতার আহমেদ, ডা. নাজিমউদ্দিন আহমেদ ও স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক কেরামত আলী। মে মাসে এই চিকিৎসা কেন্দ্র সোনামুড়ার দারোগাবাগিচায় স্থানান্তরিত হয়। সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ প্রত্যক্ষভাবে এই চিকিৎসা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধান করতেন। ২ নম্বর সেক্টরের হেড কোয়ার্টার মেলাঘরে স্থানান্তরিত হলে তাঁরই উৎসাহে ও উদ্যোগে কাছাকাছি বিশ্রামগঞ্জ গ্রামের হাবুল ব্যানার্জির আনারসবাগানের ছোট–বড় আটটি টিলায় একটি পূর্ণাঙ্গ ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপিত হয়। সম্পূর্ণ বাঁশ, বেত ও ছন দিয়ে তৈরি করা হয় এই হাসপাতাল। বিছানা, টেবিল, চেয়ার সবই বাঁশ কেটে কেটে তৈরি করা হয়েছিল। ছন বা শুকনা খড় বিছিয়ে বিছানার উপযোগী গদি বানানো হতো। অক্টোবর মাস নাগাদ এর শয্যা সংখ্যা হয় ৪৮০। এখানে মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশ আগত শরণার্থী ও স্থানীয় জনগণের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হতো। হাসপাতালে একটি সজ্জিত অপারেশন থিয়েটার ছিল, যেখানে সব ধরনের অপারেশনই করা যেত। নাম দেওয়া হয় ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’।

১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ডা. এম এ মোবিন লন্ডন থেকে যুদ্ধে চিকিৎসাসেবায় যোগ দিতে রণাঙ্গনে চলে আসেন। দুজনেই ছিলেন সার্জারিতে উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়নরত ও এই ফিল্ড হাসপাতালের মুখ্য সার্জনের কাজ করতেন। নভেম্বরে এঁদের আরও চার বন্ধু বিলেত থেকে এসে এই হাসপাতালের কাজ যোগ দেন। এঁরা ছিলেন ডা. বরকত চৌধুরী, ডা. আলতাফুর রহমান, ডা. কাজী কামরুজ্জামান (পরে ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা) ও ডা. মোশাররফ জোয়ারদার। প্রথম তিনজন বিভিন্ন ফ্রন্টে গিয়ে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবার কাজ করতেন ও ডা. মোশাররফ কাজ করতেন মুজিবনগর সরকারের স্বাস্থ্যসচিব ডা. টি হোসেনের সঙ্গে। এঁরা সবাই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও ডা. এম এ মোবিনের ত্যাগী প্রচেষ্টায় অনুপ্রাণিত হয়েই যুদ্ধকালীন চিকিৎসাসেবায় যোগ দিতে এসেছিলেন। আরও যাঁরা এই হাসপাতালের মূল প্রচেষ্টায় যুক্ত ছিলেন, যাঁদের নাম আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকার কথা, আমি যতটুকু তথ্য পেয়েছি ক্যাপ্টেন আকতার আহমেদ (২ নম্বর সেক্টরের মেডিকেল অফিসার), ক্যাপ্টেন সেতারা রহমান (বীর প্রতীক) ও ডা. মোরশেদ চৌধুরী (ক্র্যাক প্লাটুনের যোদ্ধা ফতেহ আলী চৌধুরী ও সাংবাদিক শাহাদাৎ চৌধুরীর ভাই) ও জানা-অজানা অনেকে।

স্বাধীনতার পরে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তাঁর কর্মী বাহিনী নিয়ে প্রথমে কুমিল্লা ও পরে ’৭২ সালের জানুয়ারিতে ঢাকায় এসে ১৩২ নম্বর ইস্কাটনের একটি বাড়িতে বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতালের অস্থায়ী কেন্দ্র করেন এই মানসে যে সদ্য স্বাধীন দেশের জন্য একটি নতুন কৌশলের সাশ্রয়ী সমাজভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গঠনে তাঁরা ভূমিকা রাখবেন। সে অনুসারে সাভারের পাথালিয়া গ্রামে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর চিকিৎসক বন্ধু ডা. মাহমুদুর রহমানের বাবা ডা. লুৎফর রহমান ও মা জোহরা রহমানের সহায়তায় ১১ বিঘা জমি পেয়ে সেখানে তাঁবু গেড়ে কাজ শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁদের পরামর্শ দেন পাইলট আকারে এই সমাজভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবার চিন্তা নিয়ে কাজ শুরু করতে ও বাংলাদেশ হাসপাতালের নাম ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’ নির্বাচন করে এর জন্য ২৩ একর জমি অধিগ্রহণ করে দান করেন। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু এই কেন্দ্রের আদর্শ গঠনেও পরামর্শ দেন এই বলে যে “এই হাসপাতালে শুধু চিকিৎসা হবে না। দেশটাকে গড়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা সবকিছু নিয়ে কাজ করতে হবে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে”। সে ঘটনার ১৮ বছর পরে আমি পর্যবেক্ষণ করেছি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী অক্ষরে অক্ষরে বঙ্গবন্ধুর পরামর্শ অনুসরণ করেছেন। আজকের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দিকে তাকালেই বোঝা যায় এই সব উন্নয়নের সফল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে এই প্রতিষ্ঠান।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। আছে স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়ন ইতিহাসও। দুর্ভাগ্যবশত এই দুটো ইতিহাসই আমরা ঠিকঠাকভাবে তৈরি করতে পারিনি। ’৭৫ পরের পট পরিবর্তন ও দেশের রাজনৈতিক বিভাজন এই ইতিহাস নির্মাণে বড় বাধা হয়েই ছিল, যদিও এখন ধীরে ধীরে তা কেটে যাচ্ছে। অনেকে বলে থাকেন ও যুক্তিসংগতভাবেই বলেন যে সামরিক শাসনের আমলে জাফরুল্লাহ চৌধুরী যেসব কাজ করছেন, সেগুলো সঠিক হয়নি। এই প্রশ্ন আমিও জাফর ভাইকে করেছিলাম, তিনি বলেছিলেন, ‘এরা ক্ষমতা জোর করে দখল করেছে কিন্তু আমাদের সে জোর নেই তাকে উৎখাত করার, যতক্ষণ না রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হয়। কিন্তু কিছু ভালো কাজ তো তাদের দিয়ে করিয়ে নিতে পারি, সে চেষ্টা যদিও খুব সহজ নয়।’

জীবনভর এই সমাজ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য লড়াই করেছেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বাংলাদেশের উন্নয়ন ইতিহাসে তিনি যেসব অঙ্গীকার স্থাপন করেছেন, সেসবের মূল্যায়ন তাঁকে অবশ্যই স্মরণীয় করে রাখবে। যাঁরা তাঁকে নিয়ে শুধুই বিতর্ক করতে পছন্দ করেন, তাঁদের অবশ্যই উচিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্যোগগুলোর সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত হওয়া। এ দেশের সমাজভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হচ্ছে, নিজ দেশের প্রাতিষ্ঠানিক অর্জনের, ওষুধশিল্পের বিকাশের, সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য অর্জন, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সম্মিলিত নেতৃত্ব ও চিকিৎসাসেবার গবেষণায় জাফরুল্লাহ চৌধুরী অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছেন, এ সত্য আমাদের অস্বীকার করে বালুতে মুখ গুঁজে রাখলে ইতিহাস তা কখনো সমর্থন করবে না।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এখন অসুস্থ এবং লড়াই করছেন আবার কাজে ফিরে আসতে। পত্রপত্রিকায় তাঁর এই দৃঢ় মনোবলের খবর পেয়ে আমরা আশ্বস্ত হই বটে কিন্তু তাঁর জন্য উদ্বেগ কমে না। অনেক দিন দেখা হোক বা না হোক, এ রকম একজন মানুষের ছায়া আমাদের কাজের জগতের সামনে না থাকলে আমরা কিছুটা অসহায় বোধ করি। যাদের দেখানো পথ ধরে গ্রাম উন্নয়নের স্বপ্নে নিজেদের ভাবনাকে সাজিয়েছি আমাদের জন্য এ রকম মানুষের কর্মচিন্তা ও অভিজ্ঞতাই প্রকৃত নির্দেশক, কারণ তা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শসঞ্জাত, আমরা তা থেকে বিচ্যুত হতে পারি না। এমনকি সংবিধানের অন্যতম মৌলিক অধিকার নাগরিকের স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে আমরা যে বিচ্যুত হয়েছি বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বাহুল্য আয়োজনের যে ভুল হয়েছে, তা আজকের এই করোনা পরিস্থিতিতে প্রমাণিত হয়েছে, এখন নিশ্চয়ই আমরা সারা দেশের জন্য গ্রামমুখী ‘সমাজভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ চূড়ান্ত নির্মাণের কথা ভাবতে পারি।


রেজা সেলিম, পরিচালক, আমাদের গ্রাম উন্নয়ন প্রকল্প
ই-মেইল: rezasalimag@gmail. com