আমাদের শিশুরা ‘খুনি–ধর্ষক’ হয়ে উঠছে কেন?

১৩ আগস্ট প্রথম আলোর একটি খবর দেখে চমকে উঠেছি। করোনার নানা বীভৎসতার মধ্যেও খবরটি আলাদাভাবে চোখে পড়ার মতো। করোনাকালে যখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, তখন দেখা গেল, সেই সময় নানা অপরাধে আটক শিশুদের (১৮ বছরের কম বয়সীরা) প্রায় অর্ধেকের বিরুদ্ধে হত্যা ও ধর্ষণের মতো বীভৎস অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া চুরি–ছিনতাই–মাদকের মতো অপরাধ তো আছেই। এ–সংক্রান্ত প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বর্তমানে দেশের তিনটি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে মোট নিবাসীর সংখ্যা ১ হাজার ৮৩। গত বছরের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পরই এই শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে উন্নয়ন কেন্দ্রে এসেছে। তাদের ২৬৩ জনের (২৪ দশমিক ১ শতাংশ) নামে হত্যা মামলা রয়েছে। দুটি বালক কেন্দ্রের ৯৮৫ নিবাসীর মধ্যে ২৫৩ জনের (২৫ দশমিক ৬ শতাংশ) নামে ধর্ষণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা রয়েছে। শতাংশের হিসাবে ভয় পাওয়ার মতো বৈকি।

পারিবারিক পরিবেশ, শিক্ষা ও সামাজিক পরিবেশ

শিশুদের ওপর ঘটা নানা বীভৎসতার কথা আমরা প্রায়ই গণমাধ্যমে দেখতে পাই। কিন্তু শিশুরা কী ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে, কেন হচ্ছে, মূল দায় কার, এর পরিসংখ্যানই–বা কী, এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত শিশুদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তাদের সংশোধনে কোনো ব্যবস্থা আদৌ আছে কি না, ‘অপরাধী’ শিশুরা পরবর্তী সময়ে সমাজের মূলধারায় কতটা যুক্ত হতে পারে—এসব প্রশ্ন চলেই আসে। পরিবারের দাবি, এসব মামলার বেশির ভাগই মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তর্কের খাতিরে এ তথ্যের সত্যতা যদি ধরেও নিই, তারপরও প্রশ্ন থাকে, এ ধরনের বীভৎস অপরাধের সঙ্গে একটি শিশু জড়ায় কী করে?

শিশুদের অপরাধের সঙ্গে জড়ানো নিয়ে আলোচিত সেই প্রতিবেদনে আইনজীবী, কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তা এবং এসব শিশুকে নিয়ে গবেষণা করা ব্যক্তিরা প্রথম ও প্রধান কারণ হিসেবে শিশুদের পারিবারিক শিক্ষা ও পারিবারিক বন্ধনের অভাবকে দায়ী করেছেন। তাঁদের যুক্তিতে একটি শিশু পরিবারের সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়ে, পরিবারের হাত ধরে সামাজিকীকরণের মাধ্যমে সমাজে সুষ্ঠুভাবে পথ চলতে না শেখার কারণেই নানাভাবে হোঁচট খায়।

এ আলোচনা শুধু এ ক্ষেত্রেই হয়েছে, এমনটা নয়; শুধু শিশু অপরাধই নয়, সমাজের প্রাপ্তবয়স্কদের অপরাধ নিয়েও যখন সমাজবিজ্ঞানী ও অপরাধবিজ্ঞানীরা আলোচনা করেন, তখনো তাঁদের আলোচনা আবর্তিত হয় মূলত পরিবারকে কেন্দ্র করেই। মনোবিজ্ঞান বলে, একজন মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে তার জন্মগত কিছু বৈশিষ্ট্য (জিন, নানা হরমোনের মাত্রা-অনুপাত) এবং তার বেড়ে ওঠার পরিবেশ। একটা শিশুর বেড়ে ওঠার পরিবেশের মধ্যে আছে পরিবার, যে সমাজ ও রাষ্ট্রে সে বেড়ে ওঠে, সেটা। শিশুর মনোজগৎ ও চরিত্র গঠনে পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেটাই কি প্রধান? পারিবারিক পরিবেশ এবং শিক্ষা কি সত্যিই রাষ্ট্র ও সামাজিক পরিবেশের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক?

একটা শিশুর বেড়ে ওঠার পরিবেশের মধ্যে আছে পরিবার, যে সমাজ ও রাষ্ট্রে সে বেড়ে ওঠে, সেটা। শিশুর মনোজগৎ ও চরিত্র গঠনে পরিবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেটাই কি প্রধান? পারিবারিক পরিবেশ এবং শিক্ষা কি সত্যিই রাষ্ট্র ও সামাজিক পরিবেশের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক?

বিল গেটস ও কার্লোস স্লিম নিয়ে কেস স্টাডি কী বলে
একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝা যাক। পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধনী হয়েছিলেন—এমন দুজন হলেন আমেরিকার বিল গেটস এবং মেক্সিকোর কার্লোস স্লিম। বিল গেটস ধনী হয়েছেন যুগান্তকারী কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজের আবিষ্কারের মাধ্যমে আর কার্লোস মূলত টেলিকম ব্যবসায়ী। বিল গেটস ছিলেন সাধারণ পরিবারের সন্তান। তাঁর আজকের এই অতিধনী হয়ে ওঠার পেছনে ছিল তাঁর প্রতিভা, মেধা, দক্ষতা, চিন্তার উৎকর্ষ আর সর্বোপরি পরিশ্রম। উল্টো দিকে কার্লোস স্লিম পৃথিবীর শীর্ষ ধনীদের একজন হতে পেরেছিলেন মেক্সিকোর ক্ষমতাসীন সরকারের সরাসরি ছত্রচ্ছায়ায় রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজের অনুকূলে যখন যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যবহার করার মাধ্যমে। মেক্সিকো সরকার যদি সরাসরি কার্লোস স্লিমকে মদদ না দিত, তাঁকে যদি মোটামুটি সুস্থ, প্রতিযোগিতামূলক একটি বাজারের মুখোমুখি হতে হতো, তাহলে শীর্ষ ধনী হওয়া দূরেই থাকুক, তিনি হয়তো মোটামুটি মানের ব্যবসাও দাঁড় করাতে পারতেন কি না সন্দেহ। মেক্সিকোর সরকার ব্যক্তি কার্লোসকে এতটাই পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল যে কেবল তাঁকে অন্যায় সুযোগ-সুবিধা দিতে গিয়ে ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল—এই চার বছরে মেক্সিকোর জাতীয় আয় কম হয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১ লাখ কোটি টাকারও বেশি।

পাঠক প্রশ্ন করতেই পারেন, দুনিয়াজুড়ে এত ব্যবসায়ী থাকতে এই দুজনকে কেন আলাদাভাবে তুলে আনা হলো? হলো এ কারণেই যে তাঁদের দুজনের উল্টো পথে হেঁটে একই লক্ষ্যে পৌঁছানোর দুটি ঘটনা কেস স্টাডি হিসেবে উঠে এসেছে ড্যারন এসেমাগ্লু এবং জেমস এ রবিনসন লিখিত হোয়াই নেশনস ফেল: দ্য অরিজিনস অব পাওয়ার, প্রসপারিটি অ্যান্ড পভার্টি বইটিতে।

এখানে নানান তথ্য-উপাত্ত-উদাহরণ দিয়ে লেখক দেখিয়েছেন কখন, কেন এবং কীভাবে একটি দেশ ধনী, সমৃদ্ধিশালী, জ্ঞান-বিজ্ঞান-গবেষণায় উন্নত হয়, আবার কেনইবা একটি দেশ যুগের পর যুগ জ্ঞান-বিজ্ঞান-অর্থ-উন্নয়ন-সমৃদ্ধিতে পিছিয়ে থাকে অনেক দূর। বিশ্বের কোনো কোনো দেশকে আমরা মোড়ল রাষ্ট্র বলি, তারা বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়। এই রাষ্ট্রগুলো কেবল যে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়, তা–ই না; বরং গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার, সুশাসন, আইনের শাসন কায়েমসহ অন্যান্য দিকেও অসাধারণ সাফল্য দেখিয়ে চলে। এই বইয়ে উদাহরণ হিসেবে উঠে আসা আমেরিকা তেমনই একটি রাষ্ট্র। অন্যদিকে, এসব ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা মেক্সিকোর একটি বিরাট অংশের মানুষের জীবনের মূল লক্ষ্য থাকে, যে করেই হোক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় ঢুকে যাওয়া। শুধু মেক্সিকো বললে ভুল হবে, বাংলাদেশসহ অনুন্নত বিশ্বের জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশের জীবনের মূল লক্ষ্যই থাকে যেকোনো প্রকারেই হোক উন্নত কোনো দেশের নাগরিক হয়ে যাওয়া।

আলোচ্য বইয়ের কেস স্টাডি থেকে দেখা যায়, আমেরিকায় জন্মে বেড়ে ওঠা একটি শিশু তার পরিবেশ থেকে অতি শৈশবেই বুঝে যায় তার জন্ম যে পরিবারেই হোক না কেন, তার যদি মেধা, যোগ্যতা, উদ্ভাবনী শক্তি এবং সর্বোপরি পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকে, তাহলে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে কোনো কিছুই বাধা হতে পারে না। যোগ্যতা অনুযায়ী সে হতে পারে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী-গবেষক, অথবা সৎ পথে ব্যবসা করে বিশ্বের সর্বোচ্চ ধনকুবেরদের একজন। তার সব যোগ্যতা যদি কমও থাকে, তবুও সে তার যোগ্যতা অনুযায়ী লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে। তাই জীবনের প্রাথমিক স্তর থেকেই তার চেষ্টা থাকে মেধার চর্চা করা, পরিশ্রম করা।

উল্টো দিকে মেক্সিকোর মতো দেশগুলোয় জন্মে বেড়ে ওঠা একজন শিশু তার আদর্শ হিসেবে পায় কার্লোস স্লিমের মতো সরকারের অন্যায় পৃষ্ঠপোষকতায় ফুলেফেঁপে ওঠা একজন ধনীকে। সেই শিশু দেখে, সমাজে তাকে যদি সফল কিংবা ধনী হতে হয়, তবে সরকারের সঙ্গে একধরনের অশুভ যোগসাজশ বা আনহোলি নেক্সাস তৈরি করতে হবে। তার মেধা, উদ্ভাবনী শক্তি কিংবা পরিশ্রমের তেমন কোনো মূল্যায়ন ওই দেশে হবে না। তাই বেড়ে ওঠার সময় অনেক মেক্সিকানের জীবনের লক্ষ্যই হয়ে দাঁড়ায় কীভাবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার ওই চক্রের মধ্যে ঢোকা যায়। একটা রাষ্ট্রের বিপুল জনগোষ্ঠী যখন তার মেধা, শ্রম ও উদ্ভাবনী কাজ বাদ দিয়ে সরকারের নেক্সাসের অংশ হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে, তখন সেই জাতির অর্থনীতি এবং অন্য সবকিছু ধাপে ধাপে ভেঙে পড়তে বাধ্য। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও ঠিক একই পরিস্থিতি বিরাজমান।

বাংলাদেশে যেভাবে গড়ে ওঠে শিশুর মনস্তত্ত্ব
আমরা যারা মনে করি পরিবার সঠিক শিক্ষা আর মূল্যবোধে সন্তানদের সমৃদ্ধ করে দিলেই আর কোনো সমস্যা থাকবে না, তারা এটা ভাবি না পরিবার থেকে বেরিয়ে একটি শিশু যখন এক ভয়ংকর পরিবেশের সংস্পর্শে আসে, তখন পরিবারের শিক্ষা তার কাছে অনেক ক্ষেত্রেই অর্থহীন হয়ে ওঠে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই পরিবারের শিক্ষাকে ছাপিয়ে যায় পরিবেশের প্রভাব। পরিবার থেকে বেরিয়ে শিশুটি যখন দেখে, যেকোনো উপায়ে অর্থ উপার্জন এবং ভোগই সমাজে একমাত্র সমাদৃত এবং সেটির স্বাদ পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো যেকোনো পন্থায় ক্ষমতাসীন কোনো রাজনৈতিক দল বা ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত থাকা, অনিয়ম, দুর্নীতি, অপকর্মের সাহায্য নেওয়া, তখন মেধা, প্রজ্ঞা বা জ্ঞানের উৎকর্ষের চেয়ে তার কাছে অনেক বেশি লোভনীয় হয়ে ওঠে যেকোনোভাবে, যেকোনো উপায়ে ক্ষমতার কাছাকাছি যাওয়া, যার বলয় প্রান্ত থেকে কেন্দ্র—সর্বত্রই দেখা যায়। এ ধরনের সংস্কৃতি তাকে মেধার চর্চা বা পরিশ্রম থেকে দূরে সরিয়ে অন্যদিকে নিয়ে যায়।

এই করোনাকালেই শুধু নয়, তার আগেই গত কয়েক বছর ‘কিশোর গ্যাং’–এর অপরাধপ্রবণতা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। মারামারি, মাদক সেবন/ব্যবসা, এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া থেকে শুরু করে হত্যা, ধর্ষণের মতো সব অপরাধের সঙ্গে এদের জড়িত থাকতে দেখা গেছে। বলা বাহুল্য, এসব গ্যাং তৈরি হয় ক্ষমতাসীন দলের নানা সংগঠনের ছত্রচ্ছায়ায়। এ দেশে যে কিশোর বেড়ে উঠছে, সে দেখে তার স্কুলের এক ভালো ছাত্র পড়াশোনা শেষে চাকরি পাচ্ছে না, বছরের পর বছর বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয়ে বয়স পেরিয়ে যাওয়ার পরে তার সামনে অপেক্ষা করছে চরম হতাশাপূর্ণ জীবন। একই সঙ্গে কিশোরটি দেখে, তাদের পাড়ার কোনো বড় ভাই, নামকাওয়াস্তে লেখাপড়া করে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনে যুক্ত হয়ে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই গাড়ি-বাড়ি করে ফেলতে পারে। সে দেখতে পায়, এই যাত্রাপথে তাকে খুব বেশি উঁচু পর্যায়েও যেতে হয় না, এমনকি অঙ্গসংগঠনের তৃতীয়/চতুর্থ পর্যায়ের নেতা হতে পারলেও তার সামনে শত শত কোটি টাকা বানানোর হাতছানি। শিশুরা দেখে, তার এলাকার রাজনীতি করা মানুষ নানা অপরাধ করে, কিন্তু ‘আইনের হাত’ পৌঁছায় না তাদের পর্যন্ত। ঘর থেকে বাইরে পা ফেলে যে শিশু এমন পরিবেশ দেখে, তার মাথায় পারিবারিক শিক্ষা/মূল্যবোধ টিকে থাকবে, এটা কি খুব ইউটপিয়ান চিন্তা হয়ে যাচ্ছে না?

গত এক যুগে ক্ষমতাসীনদের দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি আমাদের সমাজকে যেখানে নিয়ে গেছে, সেখানে প্রাপ্তবয়স্ক তো বটেই, শিশুদের ওপরও কি এর প্রভাব পড়ে না? আমরা যারা এটাকে এড়িয়ে শুধু পরিবারকে দায়ী করি, তারা কি আসলে বিদ্যমান রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সর্বগ্রাসী প্রভাবকে আড়াল করার চেষ্টা করছি না?

এই যে সামাজিক পরিবেশের কথা বলছি, সেটাও একই দেশের মধ্যে তারতম্য ঘটে। একটি মধ্যবিত্ত এবং তদূর্ধ্ব আর্থিক শ্রেণির পরিবারের সন্তান যে পরিবেশে বেড়ে ওঠে, নিম্নবিত্ত পরিবারের একটি শিশু বেড়ে ওঠে তার চেয়ে একেবারে ভিন্ন পরিবেশে, যার বিশাল প্রভাব পড়ে সেই শিশুর মননে, চিন্তায়, চরিত্রে। এমনকি এসব পরিবেশে বসবাসকারী শিশুরা যে সব মা–বাবার কাছ থেকে সঠিক পারিবারিক শিক্ষা/মূল্যবোধ পায় না, সেটাও ঘটে তাদের বাবা-মায়ের একই ধরনের পরিবেশে বেড়ে ওঠার কারণেই। আমেরিকার কালো–অধ্যুষিত এলাকার পরিবেশ-পরিস্থিতি কালো শিশুদের কীভাবে অপরাধপ্রবণ করে তোলে, সেটা নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা আছে। আবার কেবল সমাজ বা পরিবেশই নয়, রাষ্ট্র, তার নীতি, ধরন, পরিচালন—সবকিছুই শিশুর মনোজগতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।

গত এক যুগে ক্ষমতাসীনদের চরম দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি আমাদের সমাজকে যেখানে নিয়ে গেছে, সেখানে প্রাপ্তবয়স্ক তো বটেই, শিশুদের ওপরও কি এর প্রভাব পড়ে না? আমরা যারা এটাকে এড়িয়ে শুধু পরিবারকে দায়ী করি, তারা কি আসলে বিদ্যমান রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সর্বগ্রাসী প্রভাবকে আড়াল করার চেষ্টা করছি না? বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা বহাল রেখে আমাদের শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার কথা ভাবা কি একেবারেই বাস্তবতাবিবর্জিত নয়?

একটা গল্প দিয়ে শেষ করি। এক বয়স্ক ভদ্রলোক সদ্য পরিচিত আরেকজনকে তাঁর সন্তান সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলছিলেন, বড় ছেলে ডাক্তার, মেজটা প্রকৌশলী, সেজটা আইনজীবী আর সবচেয়ে ছোটটা ক্ষমতাসীন দল করা পাড়ার মাস্তান। যাঁকে বলছিলেন, তিনি বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন তুললেন, তাহলে ছোট ছেলেটিকে তিনি ঘরে রাখছেন কেন? বয়স্ক ভদ্রলোক উত্তরে জানান, সেটার প্রশ্নই আসে না, কারণ সেই ছেলেই সংসারের বড় সব খরচ সামলায়, এমনকি বাকি সব ঝামেলাও সে-ই তদবির আর ক্ষমতা দিয়ে সামালে দেয়।

রুমিন ফারহানা বিএনপিদলীয় সাংসদ ও হুইপ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী