যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে বর্ণবাদসংক্রান্ত সংবাদ বারবার শিরোনাম হয়। এ সংবাদগুলোর বিষয়বস্তু বর্ণবাদী সহিংসতা কিংবা অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনি তৎপরতা। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের ওপর ভিত্তি করে বর্ণবাদ বিষয়ে আমেরিকানদের মনোযোগ ওঠানামা করে, কিন্তু নাগরিক কিংবা নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এ বিষয়ে করণীয় কী, সেটা একেবারেই অনুপস্থিত।
একটি পূর্ণাঙ্গ ও দীর্ঘস্থায়ী বর্ণ–অসমতার চিত্র পাওয়া যায় কালো ও সাদা আমেরিকানদের মধ্যকার আর্থসামাজিক অবস্থানের পার্থক্য থেকে। নাগরিক অধিকার আন্দোলনের ছয় দশক পর মধ্যবিত্ত কালো আমেরিকানদের পরিবারপ্রতি আয় সাদা আমেরিকানদের তুলনায় এখনো ৬০ শতাংশ কম। সাদা আমেরিকানদের তুলনায় দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী কালোদের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি। সাদা আমেরিকান পুরুষদের তুলনায় ও কালো আমেরিকান পুরুষদের গড় আয়ুসীমা সাড়ে চার বছর কম, নারীদের ক্ষেত্রে যেটা তিন বছর কম। ১৯৪০ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত আফ্রিকান আমেরিকানদের মধ্যে বাড়ির মালিকানা বেড়েছিল, কিন্তু সেটা এখন পর্যন্ত সাদাদের তুলনায় অর্ধেক। কোভিড-১৯ মহামারিতে বর্ণ–অসমতা আরও বেড়েছে।
এই অসমতা জরুরি রাজনৈতিক প্রশ্নকে সামনে নিয়ে আসছে। কিন্তু সাদা ও কালো আমেরিকানদের মধ্যে সুযোগ এবং প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে তফাতটা রয়েছে, আমেরিকার সাধারণ মানুষ সেটা কতটা বুঝতে পারে? এ বিষয়ে যে একটা কার্যকর নীতি প্রয়োজন, তাতে মানুষ কতটা সম্মত? আয় পুনর্বণ্টন কিংবা বর্ণ–অসমতা কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলে তারা তাতে কতটা সম্মত হবেন?
আমি ও আমার দুই সহকর্মী সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক অর্থনৈতিক ল্যাব থেকে এ বিষয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করি। আমরা বিপুলসংখ্যক সাদা ও কালো আমেরিকানের কাছ থেকে বর্ণ–অসমতার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করি। মোটেই বিস্ময়কর নয় যে নানা প্রশ্নে বিভিন্ন অংশের ভেতরে আমরা তাৎপর্যপূর্ণ মতপার্থক্য পেয়েছি। সবচেয়ে বড় মতপার্থক্যটা পেয়েছি বর্ণ–অসমতার কারণ কী এবং কীভাবে সেটা থেকে উত্তরণ ঘটানো যায়, সে প্রশ্নে। এই মতপার্থক্য শুধু সাদা কিংবা কালো আমেরিকানরা ভিন্ন বিষয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করছেন, তেমনটা নয়। রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ওপর ভিত্তি করেও মতপার্থক্যটা হচ্ছে।
১৩-১৭ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যেও আমরা বর্ণবাদী মানসিকতা খুঁজে পেয়েছি। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে তাদের মা–বাবার রাজনৈতিক চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এ দৃষ্টিভঙ্গি তাদের মধ্যে আরও বেশি মেরুকরণ হয়েছে। এখান থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে আমেরিকার শিশুরা বয়ঃপ্রাপ্তি সময় তাদের মা–বাবার পক্ষপাতদুষ্ট বিশ্বাস আত্মস্থ করে।
দৃষ্টান্ত হিসেবে সাদা ডেমোক্র্যাটরা সাদা রিপাবলিকানদের তুলনায় কালো ডেমোক্র্যাটদের বেশি সমর্থন দেন। সাদা ও কালো ডেমোক্র্যাটরা আমেরিকার সমাজের এই অটল বর্ণ–অসমতাকে কাঠামোগত কারণ বলে মনে করেন। দাসপ্রথা, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বৈষম্য ও বর্ণবাদকে তারা এ জন্য দায়ী করেছেন। এই দুই অংশই আয়ের পুনর্বণ্টন এবং বর্ণ–অসমতা দূর করার নীতি সমর্থন করেছেন। বিপরীতে রিপাবলিকানরা মনে করেন, বর্ণ–অসমতা প্রধানত ব্যক্তির কর্মকাণ্ড ও সিদ্ধান্তের ফলাফল।
১৩-১৭ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যেও আমরা বর্ণবাদী মানসিকতা খুঁজে পেয়েছি। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে তাদের মা–বাবার রাজনৈতিক চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এ দৃষ্টিভঙ্গি তাদের মধ্যে আরও বেশি মেরুকরণ হয়েছে। এখান থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে আমেরিকার শিশুরা বয়ঃপ্রাপ্তি সময় তাদের মা–বাবার পক্ষপাতদুষ্ট বিশ্বাস আত্মস্থ করে।
সাদা ও কালো আমেরিকানদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিতে আপাত আরও পার্থক্য আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কালো ও সাদা কিশোর বয়সীরা ক্ষতিপূরণের ইস্যুতে গভীরভাবে বিভক্ত। সাদা কিশোরেরা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে কলেজ ভর্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নীতির বেশি বিরোধিতা করে। কেননা, তারা মনে করে, এই নীতি তাদের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। জরিপ থেকে আমরা পেয়েছি, যেসব এলাকায় কালো অধিবাসীর সংখ্যা বেশি এবং যেখানে বড় ধরনের বর্ণ–অসমতা রয়েছে, সেখানকার প্রাপ্তবয়স্ক সাদারা বর্ণ–অসমতার কারণ হিসেবে প্রতিকূল পরিস্থিতি, দাসপ্রথা, বর্ণবাদ ও বৈষম্যকে চিহ্নিত করেছে। তারা বর্ণ–অসমতা দূর করতে হস্তক্ষেপমূলক নীতির সমর্থন করেছেন।
বর্ণ–অসমতা নিয়ে আমেরিকানদের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকগুলো বাস্তবতা, যেমন জ্ঞান, কোন উৎস থেকে সংবাদ আসছে ও সমাজে গেড়ে বসা বয়ানের ওপর নির্ভর করে। অনেক মানুষ, যাঁরা এই অসমতা সম্পর্কে কিছু মাত্রায় সচেতন, তাঁরাও এর কারণ, এ সমস্যা কীভাবে দেখতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের কোন নীতি নেওয়া উচিত—এসব প্রশ্নে বড় ধরনের ভিন্নমত পোষণ করেন। বর্ণ–অসমতা নিয়ে বড় মাত্রার কিংবা গুরুতর তথ্য মানুষের মন থেকে তাদের বয়ঃসন্ধির সময়ে গেড়ে বসা ধারণা বদলাবে না। বরং এর পেছনে কারণ কী, সেটার ব্যাখ্যা বর্ণ–অসমতা দূর করতে বেশি কার্যকর। কিন্তু এ রকম মেরুকরণ হয়ে যাওয়া নীতি বদল করা খুব কঠিন।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
স্টেফানি স্টানচেভা হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক