বাংলাদেশে অনেকের কাছেই বিবিসি হচ্ছে বেস্ট ব্রডকাস্টিং করপোরেশন, অন্তত সেভাবেই একে বর্ণনা করে থাকেন একনিষ্ঠ শ্রোতাদের একজন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আসরার চৌধুরী। আর বিবিসিতে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের ভাষায় বিবিসি হচ্ছে সাংবাদিকতায় বিশ্বসেরা—যেমনটি বলেছেন বিবিসির সাবেক মহাপরিচালক ও নিউইয়র্ক টাইমস-এর নতুন সম্পাদক মার্ক থমসন। বস্তুনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার জন্য নন্দিত প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (বিবিসি) ঘোষিত নীতি হচ্ছে তার দর্শক-শ্রোতাদের আস্থা। কিন্তু সেই আস্থার সংকটের মুখে পড়ায় শুধু যে প্রতিষ্ঠানগতভাবে বিবিসি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা নয়, বরং স্বাধীন সাংবাদিকতা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। বিবিসির প্রধান সম্পাদক ও মহাপরিচালক জর্জ এন্টউইসেল এবং আরও কয়েকজন কর্মকর্তার বিদায়ে এই বিতর্কের অবসান হবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম। বরং, দল-মতনির্বিশেষে রাজনীতিকেরা যে বিবিসির জবাবদিহির জন্য আওয়াজ তুলেছেন, তা এখন অন্তত দুটি বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ নিয়ে আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে জনসেবামূলক (পাবলিক সার্ভিস) সম্প্রচারের ধারণা সম্পর্কে। বিবিসির সাংবাদিকতার মান নিয়ে যে প্রশ্ন উঠছে, সেটি এমন সময় ঘটল, যখন সবাই শঙ্কিত মনে অপেক্ষায় রয়েছেন যে, সংবাদপত্রগুলোর জন্য না জানি কী নিয়ন্ত্রণমূলক বিধিব্যবস্থা চালু হতে যাচ্ছে। রুপার্ট মারডকের নিউজ করপোরেশনের মালিকানাধীন ট্যাবলয়েড পত্রিকাগুলোর ফোন হ্যাকিং কেলেঙ্কারির পটভূমিতে সরকার সংবাদপত্রশিল্পের জন্য যে কমিশন গঠন করেছিল, সেই লর্ড লেভিসনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন এ মাসের শেষ নাগাদ তার রিপোর্ট পেশ করবে বলে কথা রয়েছে। সংবাদপত্রশিল্পের মালিক ও সাংবাদিকদের আশঙ্কা যে, লর্ড লেভিসন স্বেচ্ছানিয়ন্ত্রণের বিদ্যমান ব্যবস্থার সংস্কারের বদলে একটা ক্ষমতাধর নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করতে যাচ্ছেন। যদিও এ ধরনের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানকে সরকারের নির্বাহী বিভাগের সরাসরি নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখার কথা বলা হচ্ছে, তবু সম্পাদকদের প্রতিষ্ঠান এডিটরস গিল্ড তাদের উৎকণ্ঠার কথা আগাম জানিয়ে দিয়ে বলেছে যে, যেকোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা হবে গণতন্ত্রের মূল চেতনার পরিপন্থী। আর, ব্রিটেনে এ ধরনের পরিবর্তন সাধিত হলে তৃতীয় বিশ্বের যেসব দেশে একনায়কত্ব বা স্বৈরশাসন রয়েছে, সেসব দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দাবি করার নৈতিক অধিকার আমরা হারাব। স্পষ্টতই পেশা হিসেবে সাংবাদিকতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে লেভিসন কমিশনের সুপারিশমালায়। জনসেবামূলক সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি ভিন্ন রাজকীয় সনদে এবং তা যেহেতু লাইসেন্স ফিতে (প্রতিটি বাড়িতে টেলিভিশন রাখার জন্য প্রদেয় বার্ষিক ফি) পরিচালিত হয়, সেহেতু লাইসেন্স ফি প্রদানকারীদের স্বার্থরক্ষা অর্থাৎ জনগণের প্রতি অঙ্গীকার পালনের বিষয়টি তদারক করেন একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান—ট্রাস্টি বোর্ড। বিবিসির সম্পাদকীয় নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসৃত হচ্ছে কি না, সেটার জন্য বিবিসির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করতে হয় ওই ট্রাস্টের কাছে। ট্রাস্টি বোর্ডে রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তিত্বরা দু-একজন থাকলেও এই ট্রাস্টি বোর্ড সরকারের কাছে জবাবদিহি করে না, বরং পার্লামেন্টে তার বার্ষিক প্রতিবেদন এবং হিসাব পেশ করে থাকে। বিবিসির ব্যবস্থাপক এবং এই ট্রাস্টিদের কয়েক বছর পর পর রাজনীতিকদের সঙ্গে অবশ্য দর-কষাকষি করতে হয় লাইসেন্স ফির হার কত হবে সেটা নিয়ে। ডেভিড ক্যামেরনের সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে তাদের দর-কষাকষি হয় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে এবং ছয় বছরের জন্য তা ঠিক হয়ে আছে। কিন্তু ২০১৫ সালে যখন লাইসেন্স ফির হার ঠিক করার বিষয়ে রাজনীতিকদের কাছে বিবিসিকে আবার ধরনা দিতে হবে, তখন যে বিষয়টা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিবিসির সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালককে যে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, তা এই বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে। সোমবার হাউস অব কমন্সে সরকার এবং বিরোধী দলের সবাই সাবেক মহাপরিচালককে তাঁর আইনগত পাওনার দ্বিগুণ অর্থ দেওয়ার সমালোচনা করে বলেছেন যে, লাইসেন্স ফির এই অপচয় গ্রহণযোগ্য নয়। বিবিসি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান, টোরি পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান লর্ড ক্রিস প্যাটেনের সাবেক সতীর্থদেরই অনেকে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন। তাঁদের মুখপাত্ররা জানিয়েছেন যে, তাঁরা মনে করেন, বিবিসিকেই এই সংকট মোকাবিলা করে জনগণের আস্থা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।এমনিতেই প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, টোরি পার্টি যেহেতু ব্যক্তি উদ্যোগের পক্ষে এবং সরকারি ব্যয় সংকোচনের নীতিতে বিশ্বাসী, সেহেতু তারা চায় যে বিবিসির কার্যক্রম সংকুচিত হোক। রক্ষণশীল মতাদর্শের দল টোরি পার্টির অনেক নেতাই বলে থাকেন যে, বিবিসি ‘প্রয়োজনের চেয়ে’ অনেক বেশি বড় একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ নিয়েছে এবং এটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বামপন্থী। এই একই মূল্যায়ন বিবিসির প্রধান বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বী, স্কাই টিভির স্বত্বাধিকারী কোম্পানির প্রধান শরিক রুপার্ট মারডকের। স্বভাবতই বিবিসির সাম্প্রতিক সংকটে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের অনেকেই কিছুটা চাঙা হয়ে উঠেছে। আর, তার প্রতিফলন শোনা গেল মারডক সাম্রাজ্যের প্রধান প্রকাশনা ডেইলি সান-এর সাবেক রাজনৈতিক সম্পাদক, টোরি পার্টির নেতাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ট্রেভর ক্যাভানার বক্তব্যে। ট্রেভর ক্যাভানা মঙ্গলবার বিবিসি রেডিওর টুডে অনুষ্ঠানে টোরি পার্টির অভিযোগের পুনরুল্লেখ করে বলেন, বিবিসি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বামপন্থী। ওই একই অনুষ্ঠানে বিবিসির সাবেক সম্পাদকীয় পরিচালক ফিল হার্ডিং বলেন, তাঁর আশঙ্কা, চলমান বিতর্কের পটভূমিতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। একই ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম (বিআইজে)।বিবিসির যে অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এত বিতর্ক, সেই নিউজনাইট হচ্ছে টেলিভিশন সাংবাদিকতার সেরা মডেল। বিবিসির বিশেষ বৈশিষ্ট্যের পরিচয় বহন করে যে কটি সংবাদভিত্তিক অনুষ্ঠান, সেগুলো হচ্ছে টেলিভিশনের নিউজনাইট এবং প্যানোরামা আর রেডিওর দৈনিক প্রভাতি অনুষ্ঠান টুডে। ব্রিটেনের রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন একটা ধারণা চালু আছে যে, যিনি নিউজনাইটে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য আমন্ত্রিত হননি, রাজনীতিতে তাঁর স্নাতক পর্যায়ে উত্তরণ ঘটেনি।বিবিসির রেডিও ফোর-এর টুডে অনুষ্ঠানকে ঘিরেও একই ধরনের কাহিনি চালু আছে। বলা হয়, কোনো দিন ঘুম থেকে উঠে যদি টুডে অনুষ্ঠানটি শোনা না যায়, তাহলে বুঝতে হবে যে, এমন কিছু ঘটেছে, যাতে ব্রিটেনের সরকার বা প্রশাসন অকার্যকর হয়ে পড়েছে। আর এই টুডে অনুষ্ঠানেই উপস্থাপক জন হামফ্রিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সব প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই ওই অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিবিসির মহাপরিচালক জর্জ এন্টউইসেলকে পদত্যাগে বাধ্য হতে হয়। নিউজনাইটের অন্যতম উপস্থাপক, জেরেমি প্যাক্সম্যানের অন্তর্ভেদী সাক্ষাৎকারের কৌশল সাংবাদিকতার ছাত্রদের জন্য একটি অবশ্যপাঠ্য বিষয়। ১৯৯৭ সালে আমি যখন বিবিসিতে যোগ দিই, সে সময়ই আমাদের এক প্রশিক্ষণ শিবিরে জেরেমির একটি সাক্ষাৎকার দেখানো হয়েছিল, যাতে তিনি তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল হাওয়ার্ডকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একই প্রশ্ন করেছিলেন ১৭ বার। শেষ পর্যন্ত মি হাওয়ার্ড তাঁকে বলতে বাধ্য হয়েছিলেন যে, আপনি আপনার প্রশ্ন করেছেন আর আমার যা বলার তা আমি বলেছি—অন্য কিছু শুনতে চাইলেও আমি তা বলব না। কিন্তু, সেই নিউজনাইটেই ঘটল অবিশ্বাস্য রকম স্খলন। আরও দুর্ভাগ্যের বিষয়, নিউজনাইটের ওই রিপোর্টটি ছিল বিআইজের কাছ থেকে কেনা। লন্ডনের সিটি ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন এই প্রতিষ্ঠানটি বিবিসি ছাড়াও গার্ডিয়ান-এর মতো পত্রিকার জন্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কাজ করে থাকে এবং ইতিমধ্যে তারা অনেকগুলো মর্যাদাজনক পুরস্কারও পেয়েছে। কিন্তু এই বিআইজের জন্য তহবিল জোগান দেন যাঁরা, তাঁরা তাঁদের অর্থায়ন অব্যাহত রাখবেন কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিআইজের ব্যবস্থাপনা সম্পাদককেও পদত্যাগ করতে হয়েছে। বিবিসির সাবেক একজন পরিচালক যিনি আগে নিউজনাইটে উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন, সেই জন টুসা বলেছেন, সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াটি বিবিসির আর পাঁচটি অনুষ্ঠানের মতোই। মি টুসা বলেন, অনুষ্ঠানটি তৈরির সঙ্গে জড়িত টিমের সবাই, তার প্রযোজক, সম্পাদক—কারও কাছ থেকেই এমনটি আশা করা যায় না যে, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রচারের বিষয়টিতে তাঁরা সম্মত হবেন এবং কেউ কোনো প্রশ্ন করবেন না। নিউজনাইটের ওই অনুষ্ঠানে ওয়েলসের শিশু আশ্রমে সত্তরের দশকে ঘটা বালকদের যৌন পীড়নের বিষয়ে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির একজন প্রবীণ রাজনীতিকের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করা হয়, যার সমর্থনে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রিপোর্টটিতে ছিল না। পরে দেখা যায়, ভুল ব্যক্তির প্রতি আঙুল তোলা হয়েছে এবং এর ফলে যে বিতর্কের ঝড় ওঠে, তার প্রথম বলি হন মাত্র ৫৪ দিন দায়িত্ব পালন করা বিবিসির নতুন মহাপরিচালক জর্জ এন্টউইসেল।বিবিসির সাংবাদিকতার ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়ে এই বিতর্কটি ছিল কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ ধরনের দ্বিতীয় বিতর্ক। কেননা, এর আগেই অভিযোগ ওঠে যে, জিমি স্যাভিল নামের বিবিসির এক প্রয়াত তারকার বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে যৌন অপরাধের অভিযোগ আমলে না নেওয়ার বিষয়ে বিবিসি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। মাত্র বছর তিনেক আগে জিমি স্যাভিলের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধের বিষয়ে নিউজনাইট একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করলেও তা প্রচার না করে বরং সেই একই সময়ে বিবিসির আরেকটি চ্যানেলে জিমি স্যাভিলের বর্ণাঢ্য জীবনের ওপর একটি বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। এত দিন এসব বিষয়ে কারও মাথাব্যথা না দেখা গেলেও সম্প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বী একটি চ্যানেল আইটিভিতে জিমির যৌন অনাচারের বিষয়ে প্রচারিত হয় একই ধরনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, যাতে তাঁর নিপীড়নের শিকার বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ বিশদভাবে তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটি প্রচারের পর অন্যান্য ভুক্তভোগীও এগিয়ে আসেন এবং সর্বসাম্প্রতিক এক হিসাবে বলা হচ্ছে যে, জিমির যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন অন্তত ৩০০ জন। ব্রিটেনে ইতিমধ্যেই তাঁকে ইতিহাসের সর্বাধিক যৌন অপরাধের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।বিবিসিই জিমিকে তারকার আসনে বসিয়েছে—আর সেই বিবিসিতেই তারকার প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে তিনি অন্তত চার যুগ ধরে যৌন অনাচার চালিয়ে গেছেন। তাঁর যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা তরুণীরা। অভিযোগ উঠেছে যে, তারকাখ্যাতির কারণে ক্ষমতাধর রাজনীতিক ও আমলাদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে এবং সে কারণে অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস হারিয়ে ফেলেন। আর যাঁরা সাহস করে অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদের সেসব অভিযোগ হয় গুরুত্ব পায়নি, না-হয় তা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।বিবিসির মতো প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানির বিষয়ে কঠোর নীতিমালা চালু থাকার পরও একজন তারকার খ্যাতি ও প্রভাব যে কতটা সর্বগ্রাসী হতে পারে, জিমি স্যাভিল উপাখ্যান তারই একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কালে টেলিভিশনশিল্পের যে ব্যাপক প্রসার ঘটছে, সেখানে কাজের ক্ষেত্রে যৌন হয়রানির ঝুঁকির দিকটাতেও তাই নজর দেওয়ার সময় এসেছে। তা না হলে, কোনো একদিন হয়তো আমরাও বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো অঘটনের কথা শুনতে পাব।৪০ বছর আগের এক কেলেঙ্কারি এবং তার উপজাত (বাইপ্রোডাক্ট) আরেকটি কেলেঙ্কারির কারণে ব্রিটিশদের গর্বের প্রতিষ্ঠান বিবিসিকে আর কতটা মূল্য দিতে হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা ও সাংবাদিকের চাকরিচ্যুতি ছাড়াও প্রতিষ্ঠানে সম্পাদকীয় দায়বদ্ধতার বিষয়টিতে একটা বড় ধরনের পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু ব্রিটেনের বাইরে যেসব দেশে ওয়েস্টমিনস্টার ধাঁচের গণতন্ত্রের ধারা চর্চা করার কথা বলাটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে, সেসব দেশেও যে সাংবাদিকতার এই সংকটের প্রভাব পড়বে না, এ কথাটি কি কেউ জোর দিয়ে বলতে পারবেন? বিবিসির ধাঁচে রাষ্ট্রমালিকানাধীন রেডিও-টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসনের বিরুদ্ধে যাঁরা, তাঁরা তো এই খারাপ দৃষ্টান্তটিকেই বেছে নিতে চাইবেন। তাঁদের অবশ্য জানা দরকার যে, প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং বিরোধীদলীয় নেতা এড মিলিব্যান্ড—এঁরা কেউই বিবিসির আত্মশুদ্ধির প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতার ওপর আস্থা হারাননি। আরও একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, কোনো রাজনীতিকই এই অঘটন আর সংকটের কোনো রাজনৈতিক চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করেননি।কামাল আহমেদ: বিবিসির সাবেক একজন সম্পাদক ও ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক।