ইসলামিক স্টেট এখনো হুমকি

জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি। ছবি: এএফপি
জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি। ছবি: এএফপি

এই সপ্তাহান্তে প্রকাশিত খবরটি হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের অভিযান চলার সময় সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে ইসলামিক স্টেটের আমির আবু বকর আল-বাগদাদি আত্মঘাতী হয়েছেন। মার্কিন বাহিনীর নাগাল এড়াতে বাগদাদি আত্মঘাতী জ্যাকেটের বোতাম টিপে নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছেন। এ ঘটনা নিঃসন্দেহে বিশ্বের সবচেয়ে কুখ্যাত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি বড় মাইলফলক। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের রাজনৈতিক জয়কেও তুলে ধরেছে, যে প্রশাসন সিরিয়ায় মার্কিন সেনাদের উপস্থিতি হ্রাস করার সিদ্ধান্তের কারণে দেশে–বিদেশে ক্ষোভের মুখে পড়েছিল। বাগদাদির মৃত্যুকে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর লড়াইয়ের একটি সফলতা হিসেবে ধরা যায়। তাঁর মৃত্যুতে আইএস বেশ ভালোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু গোষ্ঠীটির এখনো রয়েছে শক্তিশালী কৌশলগত ক্ষমতা এবং সম্পদ, যা মার্কিন স্বার্থের পাশাপাশি এর আঞ্চলিক মিত্রদের জন্য স্থায়ী হুমকিস্বরূপ। আইএসের যে বিষয়টিকে সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে অনুমান করা হয়েছিল, সেটা হচ্ছে এর সদস্যসংখ্যা। রাশিয়া, তিউনিসিয়া, সৌদি আরবসহ বহু দেশ থেকে প্রায় ৪০ হাজার বিদেশি যোদ্ধা এর সদস্য। আইএসের খেলাফত পতনের পরও এই গোষ্ঠীর বেশির ভাগ সদস্যই এখনো সক্রিয় রয়েছে। এ বছরের গোড়ার দিকে মার্কিন সরকার অনুমান করেছিল যে এই গোষ্ঠীর এখনো ২০ থেকে ৩০ হাজার সক্রিয় যোদ্ধা রয়েছে। এই বিশাল বাহিনী সামনের বছরগুলোতে আরও শক্তিশালী হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, সিরিয়ার কুখ্যাত আল-হাওল শরণার্থীশিবিরের মতো বিভিন্ন ছিটমহলে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা নতুন প্রজন্মের র‍্যাডিক্যালরা তখন আইএসে যোগ দেবে। 

আইএসের উপস্থিতি আসলেই বিশ্বব্যাপী। প্রকৃতপক্ষে, গত এক বছরে যেমন এর মধ্যপ্রাচ্যের খিলাফত হ্রাস পেয়েছে, তেমনি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীটি অশুভ ফলাফল নিয়ে অন্য বৈশ্বিক মঞ্চে নিজেকে প্রতিস্থাপন করতে সফল হয়েছে। আইএসের শাখা এবং সহযোগী সংগঠনগুলো আজ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে সক্রিয় রয়েছে, যেখানে তারা নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের মতো দেশগুলোর স্থিতিশীলতার জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতপক্ষে গোষ্ঠীটি এমনকি মধ্যপ্রাচ্যে ফিরে আসার জন্য প্রস্তুতিও নিতে পারে। 

ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযান–সম্পর্কিত প্রতিবেদনে পেন্টাগনের অফিস ইন্সপেক্টর জেনারেল উল্লেখ করেছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই গোষ্ঠীর ওপর ক্রমাগত সামরিক চাপের অভাবে আইএস পুনরায় এটা ঘোষণা করতে সক্ষম হয়েছে, আগামী ছয় থেকে এক বছরের মধ্যেই তারা সিরিয়ার হারিয়ে ফেলা ভূখণ্ডগুলো পুনরুদ্ধার করতে পারবে। আর্থিক দিক থেকেও আইএসের অবস্থান বেশ শক্ত। ক্ষমতার শীর্ষে থাকা অবস্থায় ইসলামিক স্টেট ইতিহাসে সেরা আর্থিকভাবে পুষ্ট হিসেবে স্থান পেয়েছে। গোষ্ঠীটি এর নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে তেল বিক্রি, কর আদায় ও লুটতরাজ থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে তাদের সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সিরিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পতন সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেছেন যে আইএস এখনো বিভিন্ন উৎস থেকে কোটি কোটি মার্কিন ডলার আয় করছে এবং তারা অনানুষ্ঠানিক নেটওয়ার্ক এবং অবৈধ কার্যকলাপের মাধ্যমে অবিচ্ছিন্নভাবে রাজস্ব অর্জন করে চলেছে। এ তহবিলগুলো চলমান বৈশ্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় অর্থ জোগানো অব্যাহত রাখতে আইএসকে সক্ষম করেছে। 

সর্বোপরি, ইসলামিক স্টেটের ক্ষয়িষ্ণু আদর্শিক বার্তা বরাবরের মতো স্থায়ী এবং আবেদনময়। সন্ত্রাসবাদবিরোধী বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তারা সাবধান করে দিয়েছেন যে বিগত এক বছরে মুসলিম বিশ্বে নিয়োগ ও র‍্যাডিকালাইজেশনের ধরনগুলোতে কোনো স্পষ্টত পরিবর্তন হয়নি। তঁারা আরও উল্লেখ করেন যে এই গোষ্ঠীর প্রচার এমন অত্যাধুনিক উপায়ে পরিচালিত হয়েছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন প্রচার এবং নতুন প্রযুক্তিকে দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগিয়েছে, এর অর্থ হলো যে গুরুত্বপূর্ণ সব অঙ্গনে একটি দুর্ধর্ষ শক্তি হিসেবে রয়ে গেছে: মুসলিম বিশ্বের ‘হৃদয় ও মনে’ স্থান পাওয়ার জন্য গোষ্ঠীটি সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। 

আল-বাগদাদির মৃত্যুর আগেও যুক্তরাষ্ট্র এমন ইঙ্গিত দিয়েছিল যে আইএস খেলাফতকে সাফল্যের সঙ্গে ধ্বংস করে দিয়ে তারা ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’র পৃষ্ঠাটি ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য আগ্রহী। আইএসের আমিরের মৃত্যুর ঘটনায় ট্রাম্প প্রশাসনের মনে হচ্ছে তাদের সন্ত্রাসবিরোধী মিশনটি আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী এবং ভবিষ্যতে তারা এ ধরনের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে সফলতা পাবে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনকে আইএসের শক্তি সম্পর্কে আরও সচেতন থাকতে হবে। বাগদাদির মৃত্যুতে তারা দুর্বল হয়ে পড়েছে, এমনটা ভাবার সময় এখনো আসেনি। আল-বাগদাদি একসময় যে গোষ্ঠীটির প্রধান ছিলেন, সেই গোষ্ঠীর আগের অবস্থায় ফিরে আসার বিষয়টি ঠিকভাবে অনুধাবন করতে না পারাটা হবে বিপজ্জনক একটি ব্যাপার। 

ইউএসএ টুডে থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
ইয়ান বারম্যান আমেরিকান ফরেন পলিসি কাউন্সিলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট