ইসলামের আলোকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও রোগীর অধিকার

ইসলাম মানবতার ধর্ম। সব মানুষের অধিকার ইসলামে সংরক্ষিত। ইসলামি বিশ্বাসে আল্লাহ জীবন ও মৃত্যুর স্রষ্টা, তিনি রোগ ও আরোগ্যের অধিকর্তা। মানুষ নানা প্রাকৃতিক প্রভাবে বা অর্জিত কারণে রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে। এ সময় তার করণীয় ও তার প্রতি অন্যদের কর্তব্য ইসলাম নির্ধারণ করেছে যৌক্তিকভাবে। তা আমাদের জানতে ও মানতে হবে। এ যুগের একটি স্পর্শকাতর দুরারোগ্য রোগ হলো এইচআইভি-এইডস। এখন পর্যন্ত এ রোগের পূর্ণাঙ্গ কার্যকর চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। তাই আমাদের উচিত এ সম্পর্কে জানা ও অন্যদের জানানো এবং এর থেকে সুরক্ষা বিষয়ে তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা। এ সম্পর্কে সাধারণে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে, যা একদিকে সমাজকে অনিরাপদ করে, অন্যদিকে চিকিৎসা ও রোগীর সেবায় অবহেলা এবং অহেতুক ভীতি তৈরি করে।

যেকোনো রোগের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কখনো একজন নিরপরাধ মানুষও কঠিন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারেন। নবী-রাসুলরা অনেক দুরারোগ্য রোগে ভুগেছেন। হজরত আইয়ুব (আ.) ১৮ বছর কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। নবী-রাসুলরা রোগীদের চিকিৎসাসেবাসহ বিভিন্ন সেবা দিয়েছেন। হজরত ঈসা (আ.) কুষ্ঠ রোগ ও চক্ষু রোগসহ নানা জটিল রোগ আরোগ্য করতেন।

পবিত্রতা জীবনকে সুন্দর ও গ্লানিমুক্ত করে। বিশ্বাসের পবিত্রতা মুক্তি দান করে, কর্মের পবিত্রতা সমৃদ্ধি ঘটায়, শারীরিক পবিত্রতা সুস্থতা আনে, মানসিক পবিত্রতা সাধুতা আনে, আর্থিক পবিত্রতা পরিতৃপ্তি দান করে, বাহ্যিক পবিত্রতা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা জীবনকে পরিশীলিত করে, ভাষার পবিত্রতা ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায়, রুচির পবিত্রতা শ্রেষ্ঠত্ব দান করে, দৃষ্টি ও দৃষ্টিভঙ্গির পবিত্রতা জীবনকে সুন্দর করে, পরিবেশ ও প্রতিবেশের পবিত্রতা মহানুভব করে

ইসলামের দৃষ্টিতে রোগ হওয়া কোনো অপরাধ নয় এবং রোগীর সেবা করা প্রত্যেকের কর্তব্য। হাদিসে কুদসিতে আছে, হাশরের দিনে বিচারের সময় আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমার সেবা করোনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আল্লাহ! আপনি তো অসুস্থ হন না! কীভাবে আপনার সেবা করব?’ আল্লাহ বলবেন, ‘আমার অসুস্থ বান্দারা তোমার পাশে ছিল, তাদের সেবা করলে আমার সেবা করা হতো।’ (মুসলিম)।

কাউকে ঘৃণা করা পাপ, অহেতুক সন্দেহ করা অতি জঘন্য মহাপাপ। সঠিক তথ্য না জেনে কথা বলা মিথ্যার শামিল, মিথ্যা হলো পাপের জননী। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, উহার অনুসরণ কোরো না; কর্ণ, চক্ষু, হৃদয়, উহাদের প্রতিটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ (সুরা-১৭ বনি–ইসরাইল, আয়াত: ৩৬)। সুতরাং কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি অমূলক কুধারণা পোষণ করা যাবে না।

এইচআইভি–এইডস ছোঁয়াচে নয়, শুধু শরীর থেকে নির্গত কিছু তরলের মাধ্যমে তা বাহিত হয়। এইচআইভি মানবশরীরের বাইরে বেশিক্ষণ বাঁচে না। এ কারণে সরাসরি রক্ত, দুগ্ধ, লালা ও যৌন নিঃসরণ শরীরে প্রবেশ না করলে এইচআইভি সংক্রমণের আশঙ্কা নেই।
একসঙ্গে খাওয়া, একসঙ্গে শোয়া, একই জামাকাপড় পরা ও একই থালাবাটি-প্লেট ব্যবহার করা এবং মশার কামড় দ্বারাও এইচআইভি ছড়ায় না। বায়ু, পানি, খাদ্য ও ছোঁয়া বা স্পর্শ এইচআইভির বাহক নয়। তাই স্বাভাবিক জীবনযাপন এইচআইভি-আক্রান্ত ব্যক্তির অধিকার। যেমন ধর্মীয় ও সামাজিক আচার–অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া, মসজিদে গিয়ে এক কাতারে দাঁড়িয়ে জামাতে নামাজ পড়া, ক্লাসে বা পাঠে অংশগ্রহণ করা, পাঠদান বা শিক্ষকতা করা, প্রয়োজনীয় কাজকর্ম, চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য করা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা ও নামাজে ইমামতি করা ইত্যাদি।

এইচআইভি মানবদেহের রক্ত, কামরস, বীর্য, বুকের দুধ, লালা ইত্যাদির মাধ্যমে ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে বা তার ব্যবহৃত ইনজেকশনের সিরিঞ্জ বা সুই-সুচ ব্যবহার করলে, তার কোনো অঙ্গ অন্য ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করলে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। এইচআইভিতে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের শিশুও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা গর্ভধারণের শেষ দিকে বা প্রসবের সময় হতে পারে। এইচআইভিতে আক্রান্ত কারও সঙ্গে অনিরাপদ দৈহিক মিলন বা অসংরক্ষিত যৌনসংসর্গে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।

পবিত্রতা জীবনকে সুন্দর ও গ্লানিমুক্ত করে। বিশ্বাসের পবিত্রতা মুক্তি দান করে, কর্মের পবিত্রতা সমৃদ্ধি ঘটায়, শারীরিক পবিত্রতা সুস্থতা আনে, মানসিক পবিত্রতা সাধুতা আনে, আর্থিক পবিত্রতা পরিতৃপ্তি দান করে, বাহ্যিক পবিত্রতা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা জীবনকে পরিশীলিত করে, ভাষার পবিত্রতা ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায়, রুচির পবিত্রতা শ্রেষ্ঠত্ব দান করে, দৃষ্টি ও দৃষ্টিভঙ্গির পবিত্রতা জীবনকে সুন্দর করে, পরিবেশ ও প্রতিবেশের পবিত্রতা মহানুভব করে।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি;

সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]