উন্নয়নশীল দেশে উঠছি, সামনে কঠিন পথ

স্বল্পোন্নত দেশ বা এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশে উত্তরণ করতে হলে কিছু নির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে হয়। এগুলো হলো—মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ও জলবায়ু ভঙ্গুরতা।
২০১৮ সালে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) প্রথম দফায় তাদের পর্যালোচনায় জানায়, বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হওয়ার প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করেছে। এলডিসি থেকে বের হতে সিডিপির পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি পেতে হয়। সেই অনুযায়ী চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি সিডিপি তাদের সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা করে এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশকে চূড়ান্তভাবে সুপারিশ করেছে। নির্ধারিত তিনটি মানদণ্ডেই বাংলাদেশ যোগ্য বলে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিক্রমায় নিঃসন্দেহে এটি একটি মাইলফলক।

স্বাধীনতার পরে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশ থেকে আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে অনেক চড়াই-উতরাই পাড়ি দিতে হয়েছে। অর্থনীতির অনেক সূচকেই বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে ভালো করেছে। দারিদ্র্য, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হ্রাস পেয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। নারীর ক্ষমতায়নেও এগিয়েছে ব্যাপকভাবে। মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও শিক্ষা ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। এমন আরও অনেক সূচকেই বাংলাদেশ ক্রমাগতভাবে ভালো করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় এলডিসি থেকে উত্তরণের এই জায়গায় আজকের বাংলাদেশ। উত্তরণের ফলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। বৃহৎ পরিসরে বিনিয়োগ আকর্ষণের সুযোগ তৈরি হবে।

২০০৫ সালে মাল্টি ফাইবার অ্যাগ্রিমেন্ট বিলুপ্ত হওয়ায় ধারণা করা হয়েছিল, আমাদের পোশাকশিল্প হুমকির মুখে পড়বে। তা কিন্তু হয়নি। এমন সংকটকাল কাটিয়ে ওঠার স্বাক্ষর বাংলাদেশ রেখেছে। করোনাকালেও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের অর্থনীতি তুলনামূলক সহজেই ধকল কাটিয়ে উঠতে পারছে। তবে এলডিসি থেকে উত্তরণজনিত চ্যালেঞ্জগুলো ভিন্ন বটে। এই উত্তরণকালে নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির একটা সোপান হতে পারে।

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর বিদেশি উন্নয়ন সহায়তার (ওডিএ) প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ২০১৫ সাল থেকে কনসেশনাল লোনের জন্য বাংলাদেশকে ইতিমধ্যেই আগের চেয়ে কিছুটা বেশি হারে সুদ দিতে হচ্ছে, যা ক্ষেত্রবিশেষে মাত্র ১-২ শতাংশের মধ্যে। এটি অবশ্য এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য নয়, বরং বিশ্বব্যাংকের সংজ্ঞা অনুযায়ী নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার কারণে। যদিও বাংলাদেশকে অভ্যন্তরীণ উৎস হতে ঋণ সংগ্রহের জন্য অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি হারে সুদ দিতে হয়।

উত্তরণকালীন প্রস্তুতির জন্য পাঁচ বছর সময় পাওয়া যাবে—২০২৬ সাল পর্যন্ত। এই সময়টুকু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড এসে পুরো পৃথিবীর হিসেব-নিকেশ পাল্টে দিয়েছে। মহামারির আগেই বিশ্ব বাণিজ্য ছিল মন্থর।

করোনার সংকট মোকাবিলায় সরকার এখন পর্যন্ত ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে, যা প্রশংসার দাবিদার। বৃহৎ শিল্পগুলো এই প্রণোদনা থেকে লাভবান হলেও এর সুফল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কতটুকু কাজে এসেছে, তা এখনো জানা নেই। বাংলাদেশ বিগত দশকগুলোতে দারিদ্র্যের হার ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনলেও করোনার প্রভাবে তা আবার সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্য থাকলেও আয়-বৈষম্য ক্রমাগতই বাড়ছে। বিশ্লেষকদের মতে, বিগত ১০ বছরে আয়-বৈষম্য বেড়েছে ১০ থেকে ১৬ শতাংশ। বাংলাদেশে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হলেও এর সুফল পেয়েছে কমসংখ্যক মানুষ।

উন্নয়ন মানেই শুধু জিডিপির বেড়ে চলা নয়। উন্নয়নের পথচলায় সবাইকে নিয়েই এগোতে হবে। উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে দুর্দশা থেকে বের করে আনতে হবে। কমিয়ে আনতে হবে আয়-বৈষম্য। প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে করের জাল বাড়িয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করতে হবে, যদিও বাংলাদেশের জিডিপিতে করের অবদান অত্যন্ত কম (প্রায় ১০ শতাংশ)। নিশ্চিত করতে হবে নাগরিক অধিকার, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং সুশাসন। আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক ও দেশীয় বিভিন্ন নিয়ামক মাথায় রেখেই এখন নিতে হবে সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তুতি।

উত্তরণকালীন কর্মপন্থা
এলডিসির উত্তরণের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের জন্য সরকার ২০১৮ সালে একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করেছে। প্রস্তুতিকালের এই টাস্কফোর্সের নেতৃত্বে সুসংহতভাবে সক্ষমতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা, পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়ন কাঠামো আছে। অনুরূপভাবে এই প্রস্তুতিকালের পাঁচ বছরের জন্য সু-সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং সে অনুযায়ী যথাযথ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এতে করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের নির্ধারিত অঙ্গগুলো দায়বদ্ধ থাকবে। তথ্য-উপাত্ত ও গবেষণালব্ধ বিশ্লেষণের মাধ্যমে যথাযথ নীতিকাঠামো প্রণয়নে বিবিএসকে কাজে লাগাতে হবে। দ্রুত বাস্তবায়নে পরিকল্পনা কমিশন ও সংশ্লিষ্ট সব সরকারি-বেসরকারি স্টেকহোল্ডারকেই এগিয়ে আসতে হবে। উত্তরণকালের কর্মপরিকল্পনাকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, এসডিজি পরিকল্পনাসহ অন্যান্য জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সংহত করে অগ্রসর হতে হবে।

রপ্তানি ঝুঁকি হ্রাসে কৌশলগত পন্থা অবলম্বন
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেই শীর্ষ বাজারগুলোয় পণ্য রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ, বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৭০ শতাংশই বর্তমানে বাণিজ্যসুবিধার আওতায় শীর্ষ ১২টি বাজারে হচ্ছে। গবেষণায় দেখা যায়, যদি রপ্তানিঝুঁকি সামলানো যায়, তবে এই উত্তরণের প্রভাব হবে সীমিত। তার জন্য উল্লেখযোগ্য সব বাণিজ্য অংশীদার দেশের সঙ্গেই আলোচনায় গিয়ে দর-কষাকষি করে নিজেদের সুবিধা আদায় করে নিতে হবে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছে এবং আরও প্রায় ১১টি দেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির আলোচনা চলছে। আমাদের অত্যন্ত সতর্কভাবে বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে অগ্রসর হতে হবে। বাণিজ্যসুবিধা নিশ্চিত করতে চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপানের মতো অর্থনীতির জন্য পৃথক পৃথক কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে কীভাবে আমরা বিদ্যমান বাণিজ্যসুবিধা এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও বর্ধিত করতে পারি। যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়ায় উত্তরণ-পরবর্তী সময়েও অন্তত তিন বছরের জন্য যেন বাণিজ্যসুবিধা পাওয়া যায়, তার জন্য চেষ্টা করতে হবে। একবারে শুল্ক বৃদ্ধি না করে পর্যায়ক্রমে শুল্কহার বৃদ্ধির ব্যাপারে আলোচনা করা যেতে পারে।

চীন পলিনেশীয় দ্বীপরাষ্ট্র সামোয়াকে এলডিসি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরও বাণিজ্যসুবিধা দিয়েছে। সাফটা চুক্তির আর্টিকেল ১২ অনুসরণ করে মালদ্বীপ ভারতের কাছ থেকে বাণিজ্যসুবিধা আদায় করে নিয়েছে। এই দুটি উদাহরণ কাজে লাগিয়ে ভারত ও চীনে উত্তরণ-পরবর্তী সময়েও বাণিজ্যসুবিধা প্রাপ্তির অবকাশ রয়েছে। এটা হাতছাড়া করা উচিত হবে না। লক্ষ রাখতে হবে, প্রতিটি দেশই তাদের ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক স্বার্থ দেখবে। আমাদের তাই বাণিজ্য আলোচনায় অধিক জোর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিদেশে অবস্থানরত মিশনগুলোকেও দক্ষ করতে তুলতে হবে।
রপ্তানি ভর্তুকি হিসেবে বাংলাদেশ এখন প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার নগদ সহায়তা দিয়ে থাকে। এলডিসি থেকে বের হয়ে গেলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী রপ্তানি ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব হবে না। অতএব ডব্লিউটিওর নিয়মনীতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ ব্যবস্থার মাধ্যমে কীভাবে রপ্তানিমুখী উদ্যোক্তাদের সহায়তা দেওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে অন্য দেশগুলোর অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে লাগাতে হবে।

আমরা এখনো তৈরি পোশাক রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। এ ক্ষেত্রে এখনো হাই ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য আমরা তেমন একটা রপ্তানি করি না বললেই চলে। এর পেছনে অন্যতম কারণ দক্ষতার অভাব। এই অভাব প্রায় সব শিল্পেই বিরাজমান। ফলে রপ্তানি বহুমুখীকরণের চেষ্টা বারবারই হোঁচট খেয়েছে। রপ্তানি সম্প্রসারণ এবং বহুমুখীকরণের জন্য তাই একটা কার্যকর কৌশল হতে পারে সেক্টরভিত্তিক জনশক্তি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা। এ ক্ষেত্রে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এবং ক্রমপরিবর্তনশীল বাজার চাহিদার সঙ্গে মিল রেখেই বাড়াতে হবে দক্ষতা।

এ ছাড়া পোশাকশিল্পের পাশাপাশি চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রভৃতি শিল্পের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে হাই ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য রপ্তানি করার মাধ্যমে রপ্তানি আয়ের সুযোগ আছে। এ ছাড়া দেশের ওষুধশিল্প এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি খাতেও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে গেলেও ডব্লিউটিওর বাণিজ্য সম্পর্কিত মেধাসম্পদ অধিকার (ট্রিপস) চুক্তি পরিপালনের বাধ্যবাধকতা থেকে অন্যান্য এলডিসির মতো যেন ২০৩৩ সাল পর্যন্ত অব্যাহতি পেতে পারে, সে বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি মেধাস্বত্বের ব্যাপারেও আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক ও জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে।

বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি
বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রেও সেক্টর-ভিত্তিক কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের উদাহরণের কথা একটু মনে করিয়ে দিই। আজ থেকে বছর দশেক আগেও ভিয়েতনাম স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক হিসেবে এতটা নামডাক পায়নি। বর্তমানে ভিয়েতনাম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন রপ্তানিকারক। স্যামসাংয়ের বৈশ্বিক মোবাইল ফোনের ৪০ শতাংশ উৎপাদন করে ভিয়েতনাম এবং প্রতিষ্ঠানটির বৈশ্বিক জনবলের প্রায় ৩৫ ভাগই ভিয়েতনামে। ভিয়েতনামের স্থিতিশীল বিনিয়োগ পরিস্থিতি, সস্তা জনশক্তির প্রাচুর্য, আমদানি অংশীদার দেশের সঙ্গে ভৌগোলিক নৈকট্য প্রভৃতি কারণকে ভিয়েতনামের এই সাফল্যের চালিকা শক্তি হিসেবে দেখা হয়।

স্যামসাংয়ের সর্ববৃহৎ স্মার্টফোন কারখানা এখন ভিয়েতনামে। সঙ্গে আছে গবেষণা, উন্নয়ন কার্যক্রমসহ আরও অনেক আনুষঙ্গিক প্রতিষ্ঠান। স্যামসাংয়ের উপস্থিতির মাধ্যমে উপকৃত হয়েছে ভিয়েতনামের নিজস্ব জনশক্তি। স্যামসাংয়ের পাশাপাশি এলজি, ক্যানন, প্যানাসনিক এবং কন্ট্রাক্ট ম্যানুফ্যাকচারার ফক্সকন ও জাবিল-ও রয়েছে।

এ ছাড়া মাইক্রোসফট এবং ইন্টেলের মতো প্রতিষ্ঠানও এখন ভিয়েতনামে বিদ্যমান। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণে কর রেয়াত এবং অন্যান্য প্রণোদনা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে এসব প্রতিষ্ঠানকে ভিয়েতনামে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য। বিখ্যাত বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আকৃষ্ট করলে আমাদের জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধি এবং একই সঙ্গে প্রযুক্তি স্থানান্তরের কার্যক্রমও ত্বরান্বিত হবে। এ ছাড়া বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন পণ্যে গ্লোবাল ভ্যালু চেইনে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনাও উন্মোচিত হবে।

বাংলাদেশে সম্প্রতি বেশ কিছু সংস্কার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে কেন্দ্র করে আরও ব্যাপকভাবে সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন। সহজে ব্যবসা সূচক বা ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে আমাদের অবস্থান উন্নত করতে হবে। বাংলাদেশে করপোরেট ট্যাক্সের হার অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বেশি। অবকাঠামোগত দুর্বলতা তো আছেই। সব মিলিয়ে সার্বিক বিনিয়োগ পরিস্থিতি উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে কর-কাঠামো পুনর্বিন্যাস করতে হবে, উন্নত করতে হবে অবকাঠামো। গড়তে তুলতে হবে ব্যবসায়বান্ধব পরিস্থিতি, কমাতে হবে ব্যবসার ব্যয়। উত্তরণকালীন কার্যকর কৌশল প্রণয়নে এটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যেন প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন ও জনশক্তির উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং নতুন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে আমরা যথাযথ সক্ষমতা অর্জন করতে পারি।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল ক্রমেই কর্মিবান্ধব কর্মপরিবেশের দিকে জোর দিচ্ছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের ঝুঁকি ব্যাপক। সঙ্গে রয়েছে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের চাপ। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন তখনই সম্ভব হবে যখন নিম্ন আয়ের কর্মী, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে সবাই উন্নয়নের সুফল পাবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই উত্তরণকালে আমাদের কৌশল হওয়া উচিত সক্রিয়ভাবে বাণিজ্যসুবিধা নিশ্চিত করার ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া, প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন, জনশক্তি দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং পরিবেশ ও কর্মিবান্ধব শিল্পায়নে সচেষ্ট হওয়া। প্রস্তুতিকালে আমাদের কার্যক্রমই নির্ধারণ করবে কতটুকু শক্তিমত্তার সঙ্গে আমরা একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছি। অবশ্য এর জন্য প্রয়োজন উত্তরণকালে উদ্ভাবনী ও কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং তার সফল বাস্তবায়ন।


ড. এম আবু ইউসুফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার অন বাজেট অ্যান্ড পলিসির পরিচালক এবং রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‍্যাপিড) নির্বাহী পরিচালক।