করোনার কৌতুকগুচ্ছ

ইন্টারনেটে বিনি পয়সায় পাওয়া কিছু কৌতুক আপনাদের শোনাই। কৌতুক শুনলে আপনার মন ভালো থাকবে। বাসন মাজার সময় কৌতুকগুলো মনে করবেন আর হাসবেন। হাসুন। রোগ প্রতিরোধশক্তি বাড়ান। সুস্থ থাকুন।

১.

ল্যুভর মিউজিয়াম খুলে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য মোনালিসার মুখে পরানো হয়েছে এন–৯৫ মাস্ক।

২.

একটা করোনার টিকার দাম নাকি পড়বে দশ হাজার টাকা। ভাবছি, বাংলাদেশের আট কোটি লোককে করোনার টিকা দিয়ে দেব!

এত টাকা পাবি কই?

আরে, ভাবতে টাকা লাগে নাকি?

৩.

চীনের প্রেসিডেন্ট তঁার দেশের বিজ্ঞানীদের ডেকে বললেন, তোমরা কী করো? রাশিয়ার বিজ্ঞানীরা আট মাসে টিকা বের করে ফেলল। আর তোমরা ২০ বছর ধরে চেষ্টা করেও পারলে না?

৪.

নিউ নরমালই যদি নরমাল হয়ে যায়, তাহলে নতুন প্রজন্ম ভাববে, নাক–মুখ–থুতনি হলো এমন অঙ্গ, যা লোকসমক্ষে ঢেকে রাখতে হয়।

৫.

নানা দেশে ঘুরে বাংলাদেশে এল ইট টি বা ভিন গ্রহের আগন্তুক। তারা বলল, বাংলাদেশ সারা পৃথিবীর থেকে আলাদা। সারা পৃথিবীতে করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে নাক–মুখ–চোখ দিয়ে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ঢোকে থুতনি দিয়ে। তাই এখানে সবাই মাস্ক দিয়ে চিবুক ঢেকে রাখে।

৬.

বাংলাদেশে নভেল করোনাভাইরাস বেশি দিন থাকবে না। কারণ, আমাদের কথাসাহিত্যিকেরা দূরদর্শী ছিলেন। তাঁরা সব সময়ই গল্প লিখে নভেল বলে চালিয়েছেন। আমাদের বিখ্যাত নভেলগুলো ৬৪ থেকে ৮০ পৃষ্ঠার বেশি হয় না। রাশিয়ানদের খবরই আছে। একটা নভেল ১ হাজার ৪০০ পৃষ্ঠা।

৭.

আমার কাছ থেকে করোনাভাইরাস কৌতুক শুনতে চান? দয়া করে নিজের পেটে রাখবেন। ছড়াবেন না।

৮.

বাবা: শোনো, সাবান–পানি দিয়ে হাত ধোয়ার পর ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ’ গানটা দুবার গাইতে হবে।

এই গুড্ডুবুড়া, আবার হাত ধুচ্ছ কেন? এতক্ষণ না ধুলে?

গুড্ডুবুড়া: বাবা, আমি হাত ধুয়েছি ঠিকঠাক। কিন্তু গান গাইতে ভুলে গিয়েছিলাম।

৯.

এটা নিউ ইয়র্কার পত্রিকা থেকে নেওয়া। ‘কেন আমরা সবাই ই-মেইল শুরু করি এই বাক্য দিয়ে যে আশা করি এই করোনাকালে এই মেইল আপনাকে পাবে সুস্থ, যখন আমরা জানি, এই করোনাকালে কেউই আসলে ভালো নেই!’

১০.

টিচার, একটা কথা বলতে পারি?

জি গুড্ডুবুড়া, বলো!

আপনারা বলতেন, স্কুলে মোবাইল আনবে না।

হ্যাঁ, বলতাম।

তাহলে এখন যে পুরা স্কুলকেই মোবাইলে ঢুকিয়ে ফেলেছেন?

১১.

খবর: ভারতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধক টিকার বেলায় অগ্রাধিকার পাবে বাংলাদেশ।

খবর: চীনের করোনাভাইরাস টিকা বাংলাদেশে প্রয়োগে অনুমতি।

খবর: রাশিয়ার টিকা দেশে আনার ব্যাপারে চেষ্টা চলছে।

গুলিস্তান, জিঞ্জিরা, ফকিরাপুলের পাইকারি ওষুধ সরবরাহকারীরা মুশকিলে পড়েছে। বুড়িগঙ্গার পানি দিয়ে ভ্যাকসিন বানানো সারা। টিকার গায়ের লেবেলটা তারা কি চীনা ভাষায় ছাপাবে, নাকি হিন্দি ভাষায় ছাপাবে, নাকি রুশ ভাষায় ছাপাবে?

এক বিবৃতিতে জিঞ্জিরা পাইকারি ওষুধ সরবরাহ সমিতি ভাষার ব্যাপারটা আশু নিরসনের জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।

আমাকে এখানেই থামতে হচ্ছে। কারণ, মার্চের এই খবরটা আমার দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়েছিল:

‘করোনাভাইরাস নিয়ে কৌতুক করে ফেঁসে গেছেন এক ব্যক্তি। এ ছাড়া তাঁর ওই কৌতুকের কারণে ফেঁসে গেছেন একটি ফ্লাইটের যাত্রীরা। কারণ, তাঁর কারণেই আমেরিকান এয়ারলাইনসের ডালাস থেকে নাশভিলের ফ্লাইটটি নির্ধারিত সময়ের প্রায় আট ঘণ্টা পর ছেড়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছিলেন ওই ফ্লাইটের যাত্রীরা।

নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজ–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তি আমেরিকান এয়ারলাইনসের ডালাস থেকে নাশভিলের ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন। ফ্লাইটটি ছাড়ার নির্ধারিত সময় ছিল ১৪ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায়। কিন্তু ফ্লাইট ছাড়ার ঠিক আগমুহূর্তে ওই যাত্রী দাবি করেন, তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এ কথা শুনে ফ্লাইটের যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ফ্লাইটের একজন যাত্রী বলেন, ওই যাত্রী যখন বললেন তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, তখন সবার মধ্যেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কারণ, কেউ জানে না এ ঘটনার পর কী হতে চলেছে। যাত্রীরা এটাও জানতেন না যে ওই ব্যক্তি প্রকৃত অর্থেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, নাকি এটা নিছক কৌতুক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ঘটনার পর বিশৃঙ্খলা এড়াতে ওই ফ্লাইটে পুলিশ উপস্থিত হয়ে অভিযুক্ত যাত্রীকে নামিয়ে নেয়। পরে তাঁর সঙ্গে কথা বলে ও পরীক্ষা করে দেখা যায়, ওই যাত্রী আসলে মিথ্যা বলেছেন। তিনি মূলত করোনাভাইরাস নিয়ে একধরনের কৌতুক করেছেন। আর এতেই সবাই ভয়ে অস্থির।

ওই ফ্লাইটের আরেকজন যাত্রী বলেন, এ ঘটনার পর অভিযুক্ত যাত্রীকে পুলিশ নামিয়ে নিয়ে যায়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন সদস্য এসে ঘটনার ব্যাখ্যা করে বলেন, ওই যাত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন। তিনি আসলে করোনাভাইরাস নিয়ে কৌতুক করে মজা দেখতে চেয়েছিলেন। তাই এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

তবে এ ঘটনার পর ওই ফ্লাইটের কয়েকজন ক্রু ও যাত্রী যেতে অস্বীকৃতি জানান। কয়েকজন ক্রু ও যাত্রীকে ছাড়াই নির্ধারিত সময়ের প্রায় আট ঘণ্টা পর ওই ফ্লাইট যাত্রা শুরু করে।’ (প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা, ১৬ মার্চ ২০২০)

থামি। কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!

আনিসুল হক: প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক