কৌতুকের ছলে বলে যাই!

কতগুলো কৌতুক আগে পরপর বলে নিই। রিডার্স ডাইজেস্টের কতগুলো কপি হাতে নিয়ে বসেছি। সেখান থেকে ভাবানুবাদ করে দেব কিছু কৌতুক।

১.

প্রশ্ন: ছয়টা চোখ আছে, কিন্তু কিছুই দেখতে পারছে না—জিনিসটা কী?

উত্তর: তিনজন পুরুষ আছে একটা বাড়িতে, থালাবাসন হাঁড়িকুড়ি পড়ে আছে নোংরা, কাপড়চোপড় ভাঁজ করে গুছিয়ে রাখতে হবে, বাচ্চাগুলোর ডায়াপার বদলাতে হবে।

২.

একজন কিপটে লোক মৃত্যুশয্যায়। ডাক্তার বলে দিয়েছেন, বড়জোর তিন মিনিট, তারপরেই তাঁর মৃত্যু হবে। মৃত্যুপথযাত্রীর চোখে ছানি, ভালো করে দেখতে পান না। তিনি শুধোলেন, ‘আমার স্ত্রী কি আমার পাশে আছে?’

‘হ্যাঁ গো, এই তো আমি এখানে।’ স্ত্রী বললেন।

‘আমার ছেলেমেয়েরা?’

‘আছি বাবা। এই যে আমি, এই যে আমি...’ ছেলেমেয়েরা চোখে দেখতে না পাওয়া পিতাকে নিজেদের অবস্থান জানাল।

‘আমাদের গৃহপরিচারক?’

‘স্যার। আমি আছি, স্যার।’

‘সবাই আছ তাহলে আমার পাশে?’

‘জি। আমরা সবাই আছি।’

‘সবাই এখানে থাকলে তো রান্নাঘরে কেউ কাজ করছে না। তাহলে রান্নাঘরের বাতিটা জ্বলছে কেন?’

৩.

একজন আমেরিকান পর্যটক গেছেন ইংল্যান্ডে। তাঁকে একটা পুরোনো দুর্গ ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছেন একজন গাইড। বাড়িটা বেশ পুরোনো, শেওলা-ধরা, দুর্গন্ধযুক্ত, ভেতরে চামচিকা ওড়াউড়ি করছে, বহু জায়গা বেশ অন্ধকার।

গাইড বললেন, ‘কেমন দেখছ দুর্গটাকে?’

পর্যটক বললেন, ‘বেশ গা ছমছম করা! মনে হচ্ছে এটা একটা ভূতের বাড়ি। আচ্ছা কেমন হবে যদি আমাদের সামনে এখন একটা ভূত এসে হাজির হয়!’

গাইড বললেন, ‘আমি এত দিন ধরে এই কাজ করছি। কোনো দিনও তো ভূত আসেনি।’

‘আপনি কত দিন হলো এই গাইডের কাজ করছেন?’

‘তা প্রায় সাড়ে চার শ বছর তো হবেই!’

৪.

আয়রনম্যান আরাফাতের কাহিনি পড়ার পর ও কাহিনিচিত্র দেখার পর এই কৌতুকটা পরিবেশন করা যায়। ট্রায়াথলন–বিষয়ক। ট্রায়াথলনে দৌড়াতে হয়, সাঁতার কাটতে হয় এবং সাইকেল চালাতে হয়।

‘হাঙর আমার চেয়ে অনেক দ্রুত সাঁতার কাটতে পারে। আমি হাঙরের চেয়ে জোরে দৌড়াতে পারি। এখন বাকি থাকল সাইকেল চালানো। সাইকেলের পাল্লায় যে জিতবে, সেই হবে ট্রায়াথলন বিজয়ী। দেখা যাক, হাঙরটা কী করে?’

৫.

ডাক্তার: আপনি কি জানেন, আপনি একদম ঠিক সময়ে আমার কাছে এসেছেন?

রোগী: ডাক্তার সাহেব, অবস্থা কি সিরিয়াস?

ডাক্তার: আপনি জানেন না এক দিন পর এলে কী হতো।

রোগী: কী হতো ডাক্তার সাহেব?

ডাক্তার: আপনি আগামীকাল আপনা–আপনিই সুস্থ হয়ে যেতেন।

৬.

দুই বন্ধু হাঁটছে একটা নির্জন রাস্তা দিয়ে। এই সময় একজন ছিনতাইকারীর আবির্ভাব। অস্ত্র উঁচিয়ে ছিনতাইকারী বলল, ‘তোমাদের পকেটে যা আছে, তা দিয়ে দাও ঝটপট।’

দুজনেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিরসবদনে মানিব্যাগ বের করল।

এক বন্ধু সেখান থেকে এক হাজার টাকার একটা নোট বের করে দ্বিতীয়জনের হাতে দিয়ে বলল, দোস্ত, তুই আমার কাছে এক হাজার টাকা পাস। ধার নিয়েছিলাম। এই যে শোধ করে দিলাম।

৭.

একটা গ্রামে ছিলেন একজন মাত্র কামার। তাঁর কাছে এল একজন নবীন শাগরেদ। বলল, ‘ওস্তাদ, আমাকে লোহার কাজ শেখান। কেমন করে দা-ছুরি বানাতে হয় আমি শিখতে চাই।’

প্রবীণ কামার শাগরেদকে শেখাতে লাগলেন। বললেন, ‘এই যে দেখছ লোহার টুকরা। এটাকে আমি আগুনে দিলাম। এটা যখন টকটকে লাল হয়ে যাবে, এটাকে চিমটা দিয়ে ধরে আমি এই পাটাতনে রাখব। তারপর যেই এটা ঠিকঠাকমতো রাখা হবে, আমি মাথা নাড়ব, অমনি তুমি হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি দেবে।’

শাগরেদ ওস্তাদের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করল।

শাগরেদ এখন ওই গ্রামের একমাত্র কামার।

দুদিন ধরেই মনটা বেশ খারাপ, ভাইরাল হয়ে যাওয়া একটা টেলিফোনালাপ শুনে! মনের মধ্যে প্রশ্ন, এই রকম রুচির একজন মানুষ আমাদের নেতা? মন্ত্রী? আর গতকাল ৯ ডিসেম্বর ২০২১ প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় অন্য নেতাদের দুশ্চিন্তার খবরও প্রকাশিত হয়েছে, টেলিফোনালাপ ফাঁস হতে শুরু করলে অন্য নেতাদের কী হবে? আমাদের দেশে আইনানুগ কর্তৃপক্ষ আইনানুগ অনুমতি নিয়ে কারও কারও ফোন রেকর্ড করতে পারেন, সেই আইন হওয়ার কথা আমরা জানি! কিন্তু সেটা অনলাইনে প্রকাশ করে দেওয়ার আইন আছে বলে তো শুনিনি! এ নিয়ে উচ্চ আদালতের আদেশ আছে। ‘আনুষ্ঠানিক লিখিত চাহিদা ছাড়া ও গ্রাহককে অবহিত না করে সরকারি-বেসরকারি মুঠোফোন অপারেটর কোম্পানি থেকে কললিস্ট বা কল রেকর্ড (কথোপকথন) সংগ্রহ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত। তিন বিচারপতির সমন্বয়ে
গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চের দেওয়া এক রায়ে ওই অভিমত এসেছে।

রায়ে আদালত বলেছেন, ‘অডিও-ভিডিওসহ নাগরিকদের মধ্যে ব্যক্তিগত যোগাযোগ প্রায়ই ফাঁস হয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে এসব প্রকাশিত হয়, যা এখনকার সাধারণ অভিজ্ঞতা। অথচ এটি ভুলে গেলে চলবে না যে সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদে নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও অন্যান্য যোগাযোগের অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এটি কোনো আগ্রহী গোষ্ঠীর জন্য সহজেই লঙ্ঘন করা যাবে না। যোগাযোগের গোপনীয়তা রক্ষায় সাংবিধানিক অঙ্গীকার (ম্যান্ডেট) যথাযথ বাস্তবায়নে বিটিআরসি ও ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর একটি বড় দায়িত্ব রয়েছে।’ (প্রথম আলো, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০)

এত দিন সরকারবিরোধীদের ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এবার হলো একজন নিম্ন রুচির প্রতিমন্ত্রীর। কৌতুক নম্বর ১ স্মর্তব্য। ২০২০-এর ফোনালাপের এত দিন পরও তিনি প্রতিমন্ত্রী থাকলেন কী করে? ছয়টা চোখ আছে, কিন্তু কর্তব্যগুলো কেউই দেখতে পাচ্ছে না।­

আনিসুল হক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক