চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের শুরুটা হোক

গত কয়েক দশকের মধ্যে আমেরিকা-চীন সম্পর্ক সবচেয়ে তলানিতে নেমেছে। জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো সম্প্রতি আলাস্কায় দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের একটি বৈঠক হয়েছে। নতুন মার্কিন প্রশাসন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, তা ওই বৈঠক থেকে স্পষ্ট হয়নি।

বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, চীনের সঙ্গে আমেরিকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কিছু ‘প্রতিকূলতা’ আছে; একই সঙ্গে কিছু ‘সহযোগিতামূলক দিকও’ আছে। কিন্তু সম্মেলনে শেষোক্ত দিকটির বড় অভাব দেখা গেছে এবং ব্লিনকেন ও মার্কিন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানকে প্রকাশ্যেই চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়াতে দেখা গেছে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, আমেরিকাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে ব্লিনকেনের দৃঢ় অবস্থানের জন্য গৌরব বোধ করেছেন। তবে তিনি এটিও স্বীকার করেছেন, চীনের সঙ্গে তাঁর প্রশাসনের সম্পর্ক উন্নয়নে এই বৈঠক খুব কার্যকর হয়নি। তবে এখন আশা জাগাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত (সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) জন কেরি। শিগগিরই তাঁর চীনের প্রেসিডেন্টের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূতের সঙ্গে দেখা করার কথা এবং আসন্ন ওই বৈঠকে দুই পক্ষই সহযোগিতামূলক মনোভাব প্রকাশ করবে।

তবে সত্যিকার অর্থে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে যা দরকার তা হলো আরও বড় পরিসরের সংলাপ।

২০১৬ সালে বেইজিংয়ে দুই দেশের যে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সংলাপ হয়েছিল, তাতে উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীরা যোগ দিয়েছিলেন। তাঁদের বাইরে জলবায়ু নীতি, সমুদ্রসীমা, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ, খাদ্যনিরাপত্তা এবং খনিজ সম্পদ সরবরাহব্যবস্থা–সংশ্লিষ্ট উভয় দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা সেখানে ছিলেন। উল্লিখিত প্রতিটি ক্ষেত্রে ওই সম্মেলনে আলাদা আলাদা চুক্তি হয়েছিল।

যদি আজ ঠিক একই ধরনের বৈঠক হয়, তাহলে কল্পনা করে দেখুন সেই সম্মেলনের টেবিলে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে কারা কারা উপবিষ্ট থাকবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন ও অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেনের পাশে বসা থাকবেন বাণিজ্যমন্ত্রী গিনা রিমোন্ডো, বাণিজ্য প্রতিনিধি ক্যাথরিন তাই, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান সিসিলিয়া রুজ, হোয়াইট হাউসের জাতীয় জলবায়ু উপদেষ্টা গিনা ম্যাককার্থি (যুক্তরাষ্ট্রে এই পদে তিনি প্রথম নারী) এবং ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট প্রশাসক সামান্থা পওয়ার। কল্পনায় দেখতে পাবেন সেখানে আরও যোগ দিয়েছেন মার্কিন পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার প্রশাসক মাইকেল রিগ্যান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেভিয়ার বেকেরা এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড।

চীনের সঙ্গে আমেরিকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কিছু ‘প্রতিকূলতা’ আছে; একই সঙ্গে কিছু ‘সহযোগিতামূলক দিকও’ আছে। কিন্তু সম্মেলনে শেষোক্ত দিকটির বড় অভাব দেখা গেছে এবং ব্লিনকেন ও মার্কিন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানকে প্রকাশ্যেই চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়াতে দেখা গেছে

এমন একটি সম্মেলন হলে সেটি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে একটি ভালো দ্বিপক্ষীয় সম্মেলনের ছবি হয়ে থাকবে, কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে যে কর্মকর্তাদের নাম বললাম, তাঁদের অর্ধেকের বেশি হলেন নারী। চীনের কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হয়ে এই নারীরা যখন বিভিন্ন বিষয়ে নীতিনির্ধারণী বক্তব্য দেবেন, তা সম্মেলনস্থলের পরিবেশকেই প্রশান্ত করে তুলবে। প্রকৃত সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ঠিক এই আদলের একটি বৃহৎ পরিসরের সম্মেলনের প্রস্তাব করা উচিত।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার মতো ইস্যুতে সম্মেলন আয়োজনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র সাইবার সিকিউরিটি ও ডেটা-প্রাইভেসি ইস্যুতেও দ্বিপক্ষীয় সম্মেলনে বসার প্রস্তাব দিতে পারে। সেখানেও আমেরিকান পক্ষের টেবিলে নারীদের প্রাধান্য থাকবে। তাঁদের মধ্যে থাকবেন অ্যানি নিউবার্জার (সাইবার অ্যান্ড ইমার্জিং টেকনোলজির জাতীয় প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপ-উপদেষ্টা), জেন ইস্টারলি (ন্যাশনাল সাইবার ডাইরেক্টর) এবং মিয়েকে ইয়োয়াং (সাইবার পলিসি–বিষয়ক উপসহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী)। তাঁরা ছাড়াও সেখানে শ্যানোন কো, জেনিফার ডেসক্যাল, মেলানি হার্ট এবং সিন্থিয়া ক্যারাস উপস্থিত থাকবেন।

চীনের সঙ্গে বৈঠকে এত মার্কিন নারী প্রতিনিধি একসঙ্গে যোগ দিলে সারা বিশ্বের সব নারীর জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা যাবে। এটি তখন শুধু একটি দ্বিপক্ষীয় সম্মেলন হিসেবে প্রকাশিত হবে না। বিশ্ববাসীর কাছে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে এবং চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার মনোভাব তুলনামূলক সুন্দর আদলে প্রকাশিত হবে।

ইংরেজি থেকে নেওয়া, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

­অ্যান মারি স্লটার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক পরিচালক ও যুক্তরাষ্ট্রের থিঙ্কট্যাংক নিউ আমেরিকার সিইও এবং স্যাম স্যাক্স নিউ আমেরিকার সাইবার পলিসি ফেলো