চীনকে চাপে রাখতে ভারতকে হাতে রাখবে যুক্তরাষ্ট্র

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিকে ভারতীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অতি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে ভাবা হয়ে থাকে। কারণ, এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব দুই দেশের স্বার্থের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামনিয়াম জয়শঙ্করের দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। এ অঞ্চলের যাবতীয় ইস্যুতে কাজ করার বিষয়ে এ দুই নেতা দুই দেশের বিদ্যমান পারস্পরিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে জোরদার করতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলাপ–আলোচনায় মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল করার বিষয়টির সমালোচনা করেছেন। সেনাশাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন তাঁরা।

নিজেদের মধ্যকার বৈঠকের আলোচ্য বিষয় নিয়ে টুইটারে অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, ‘আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিবেশে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে আমাদের অংশীদারি সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারের পরিস্থিতিসহ এ অঞ্চলের ঘটনাপরিক্রমা নিয়ে জয়শঙ্কর এবং আমার মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।’

মিয়ানমারের অভ্যুত্থান ছাড়াও এ দুই পক্ষ এ অঞ্চলে আন্তর্জাতিক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয় নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন। এ অঞ্চলের নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার উদ্দেশে্য ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার যে জোট (যা সংক্ষেপে ‘কোয়াড’ নামে পরিচিত) হয়েছে, তার কার্যক্রম আরও গতিশীল করতেও তাঁরা আলোচনা করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস এ কোয়াডকে ভারতীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে অবাধ ও মুক্ত রাখার জোট বলে উল্লেখ করেছেন। জয়শঙ্কর এবং ব্লিংকেনের আলোচনায় এ অঞ্চলের নিরাপত্তা বাড়াতে আরও কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর বাইরে এ অঞ্চলে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়।

এ অঞ্চলে ভারত কোভিড-১৯–এর ভ্যাকসিন সরবরাহকারী শীর্ষস্থানীয় দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভারত সরকার বিশ্বের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ডোজ ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এসআইআই) সঙ্গে ভ্যাকসিন সরবরাহে কাজ করছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের অংশীদারিমূলক সম্পর্কের বিষয়ে হতাশাবাদীরা বলে থাকেন, এ অঞ্চলে চীনের উত্থান ও আধিপত্য ঠেকাতেই দিল্লি ও ওয়াশিংটনের মৈত্রী হয়েছে। চীনের শক্তির সামনে বিশেষত ভারতের একার পক্ষে খুব কমই ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে। কিন্তু অবশ্যই ভুলে গেলে চলবে না, ভারত তার কৌশলগত স্বনির্ভরতাকে অনেকখানি জোরালো অবস্থানে নিয়ে এসেছে। অর্থনৈতিক ও সামরিক—উভয় দিক থেকে ভারত তাৎপর্যপূর্ণ মাত্রায় অগ্রগতি অর্জন করছে। অন্যদিকে, বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গী হয়েছে।

নেড প্রাইস আরও বলেছেন, ‘ভারতীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বলে মনে করে। আমরা বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে ভারতের উত্থান এবং এ অঞ্চলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার প্রধান অভিভাবকসুলভ ভূমিকাকে স্বাগত জানাই।’

মূলত এ দুই দেশের মৈত্রী ভারতকে চীনের চাপ মোকাবিলায় বড় ধরনের সহায়তা করবে। চীন এ অঞ্চলে চীনের খবরদারি বেড়ে যাওয়া ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়েরই স্বার্থের জন্য ক্ষতির কারণ। সে কারণে ওয়াশিংটন ও দিল্লি আগের চেয়ে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চাইছে। এ মাসের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফোনে কথা বলেছেন। তাঁদের আলাপের প্রধান বিষয়বস্তুই ছিল চীনের আধিপত্যের রাশ টেনে ধরা। চীনকে যদি এ অঞ্চলে চাপে রাখা যায়, তাহলে উভয়েরই লাভ। এ কাজে অস্ট্রেলিয়া এবং জাপান তাদের সঙ্গে আছে।

তবে সবার আগে যুক্তরাষ্ট্রের মাথায় রাখা দরকার, এ অঞ্চলে চীনকে যদি চাপে রাখতে হয়, তাহলে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে সদ্ভাব বজায় রাখতেই হবে। সম্প্রতি এ অঞ্চলে কোয়াড বিভিন্ন সামরিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। মূলত সামরিক তৎপরতার মধ্য দিয়ে তারা চীনকে সতর্ক করার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে ভারত বড় ভূমিকা রাখছে। চীন যাতে বেপরোয়া না হয়ে উঠতে পারে, সে জন্য ভারতের এ ভূমিকাকে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

ডন ম্যাককেইন জিল: ফিলিপাইনভিত্তিক সাংবাদিক ও লেখক