জাদুঘরে রাখার উপযোগী তেলচালিত রেল এখনো কেন?

রেল আধুনিকায়ন যেন এক সোনার হরিণ। ইলেকট্রনিক ট্র্যাকশন নেই। শত বছরের পুরোনো মান্ধাতার আমলের সিস্টেমে চলছে রেল। কম্পিউটারাইজড সিগন্যাল ব্যবস্থাই সব স্টেশনে আসেনি। ১৯৯৪ সালে কম্পিউটারাইজড আসন সংরক্ষণ ও টিকিটিং ব্যবস্থা উদ্বোধন করা হলেও ৪৫৮টি স্টেশন ও জংশনের মধ্যে বর্তমানে এ সুবিধা পৌঁছেছে মাত্র ৬২টিতে। ৬৭ শতাংশ ইঞ্জিনই জ্বালানি অদক্ষ এবং ইকোনমিক লাইফটাইম পেরিয়ে গেছে। কম আরপিএমের অত্যধিক ওজনের বিলুপ্তপ্রায় ডিজেল ইঞ্জিনের রেলপথ ও সেতুগুলোর এক্সেল লোড সক্ষমতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

টিকিটে যাত্রীর নাম-পরিচয় থাকে না, ফলে টিকিটনৈরাজ্য নিত্যদিনের চিত্র। যে মানের খাবার ক্যাটারিং সার্ভিস আছে, তার চেয়ে বরং না থাকাই ভালো। স্টেশনমাস্টারদের যোগসাজশে কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য জারি রাখতে টিকিট বিক্রি শতভাগ অনলাইন কিংবা স্বয়ংক্রিয় করা হয়নি। অনলাইনে টিকিট কাটা, তারিখ পরিবর্তন, অনলাইনেই বাতিল ও রিফান্ড যাত্রীর ডিজিটাল অধিকার হলেও এসব সুবিধা বিশেষ মহলের স্বার্থের কাছে বন্দী। কথা ছিল, যাত্রী, স্টেশনের বুকার কিংবা তৃতীয় কোনো এজেন্ট একই সফটওয়্যারে আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে টিকিটিং করবেন। ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ নামক একটা উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হলেও বিশেষ মহলের চাপে তা বাতিল করা হয়েছে।

৩ হাজার ১৪৩টি কালভার্ট ব্রিজের ৯০ শতাংশ স্বাধীনতা-পূর্বকাল, অর্থাৎ ১৯৩৫ সালের মধ্যে তৈরি। রেল কর্তৃপক্ষের বছরভিত্তিক জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৪০০ ব্রিজ-কালভার্ট এখন চলাচলের অনুপযোগী বা ঝুঁকিপূর্ণ। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত দেশে রেলপথ নির্মিত হয় ২ হাজার ৮৫৮ কিলোমিটার। স্বাধীনতার পর নির্মাণ করা হয় মাত্র ১০০ কিলোমিটারের কিছু বেশি। তিন হাজার কিলোমিটার লাইনের মধ্যে অন্তত এক-তৃতীয়াংশ রেলপথ মেয়াদোত্তীর্ণ, কোথাও কোথাও রেলপথের নিচে পর্যাপ্ত পাথর তো দূরের কথা, অতি পুরোনো কাঠের স্লিপারও অবশিষ্ট নেই। কিছু কিছু জায়গায় নাটবল্টুও নেই। কোথাও কোথাও বাঁশ ও তার ব্যবহারের নজিরও আছে। স্বাভাবিক নিয়মে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৭০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন পরিচালনার কথা থাকলেও ৮০-১০০ বছরের পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোতে, পুরোনো পথে চালকেরা ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার গতিতে রেল চালানোর নির্দেশ পান। ঢাকা-চট্টগ্রাম ৩২৫ কিলোমিটার রেলপথকে ডাবল লাইনে পরিণত করতে ২০০০ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। অন্তত ৮৫ শতাংশ রেলপথ এখনো এক লাইনের। মোট রেলপথের ৭৭ শতাংশ লাইন বিলুপ্তপ্রায় মিটারগেজ, যা উচ্চগতির প্রতিবন্ধক।

সম্পদ হিসেবে রেলের রয়েছে প্রচুর জমি, যা থেকে আয় তৈরির কোনো টেকসই ব্যবস্থা রেল কর্তৃপক্ষ করতে পারেনি। বরং এসব জমিজমা ঘিরে গড়ে উঠেছে চাঁদাবাজির বহু চক্র। রেলে পাথর নিক্ষেপ এখনো ঠেকানো যায়নি। টিকিটবিহীন যাত্রীদের হয়রানি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো যাত্রীনিরাপত্তার বিষয়গুলো রেল পরিবহন বিকাশের এক একটি বড় বাধা হয়ে রয়েছে, এর সঙ্গে রেলের ভেতরের লোকদের দুর্নীতির সাক্ষাৎ-সংযোগ আছে।

জাদুঘরে রাখার মতো জরাজীর্ণ লোকোমোটিভ ইঞ্জিনে চলছে ট্রেন
রেলওয়ের ২৬৩টি লোকোমোটিভের ৬৭ শতাংশই পুরোনো, যার ৭৮টি আবার অর্ধশতকের বেশি পুরোনো। রেলওয়ের বগি টানার কাজে ব্যবহারের চেয়ে এসব বরং জাদুঘরে পাঠানোর সময় হয়েছে, তাতে দর্শনার্থী থেকে কিছু আয় আসবে!
দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম থেকে প্রায় ৭০০ কোটি টাকায় কেনা ২০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভের মধ্যে ১০টি গত জুনে দেশে পৌঁছেছে। বাকি ১০টি করোনার কারণে শিপমেন্টের অপেক্ষায়। ২০১৮ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৩২০ কোটি টাকায় ১০টি লোকোমোটিভ কেনা হয়। তবে ক্রয় দুর্নীতি ও কারিগরিভাবে ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় এক বছরেও রেলবহরে যুক্ত হয়নি এসব ইঞ্জিন। এক বছর ধরে নতুন ইঞ্জিন পড়ে আছে গাছতলায়।

সারা বিশ্বের রেল যোগাযোগব্যবস্থা বিদ্যুতায়িত হলেও বাংলাদেশ রেলওয়ে এখনো মান্ধাতার তেলচালিত ব্যবস্থাতেই চলছে, যার সঙ্গে সরাসরি যোগ আছে তেল চুরির কাঠামোগত চক্রের। তেল চুরি ও দুর্নীতি জারি রাখতে আধুনিক প্রযুক্তির পরিবর্তে পুরোনো মডেলের ইঞ্জিনেই হাঁটছে রেলওয়ে। মাত্র ৯৫০ আরপিএমের (প্রতি মিনিটে ঘূর্ণনের গতি) ইঞ্জিন তৈরি করে বিশ্বে হাতে গোনা দু-তিনটি কোম্পানি। বিশ্বের বেশির ভাগ ইঞ্জিন সরবরাহকারী কোম্পানি ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ উৎপাদনে চলে যাওয়ায় তারা দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে পারে না। কম ঘূর্ণনগতি বা আরপিএমের ভারী ইঞ্জিনের কারণে রেললাইনও দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। ফলে নতুন লাইন নির্মাণ ও পুরোনো লাইন রক্ষণাবেক্ষণে অর্থ ব্যয় বেশি হয়। ওজন বেশি হওয়ায় এক হাজার কোটি টাকায় কেনা সবশেষ ৩০টি ইঞ্জিন চালানো যাবে না পুরোনো রেলপথে।

সারা বিশ্বের রেল যোগাযোগব্যবস্থা বিদ্যুতায়িত হলেও বাংলাদেশ রেলওয়ে এখনো মান্ধাতার তেলচালিত ব্যবস্থাতেই চলছে, যার সঙ্গে সরাসরি যোগ আছে তেল চুরির কাঠামোগত চক্রের। তেল চুরি ও দুর্নীতি জারি রাখতে আধুনিক প্রযুক্তির পরিবর্তে পুরোনো মডেলের ইঞ্জিনেই হাঁটছে রেলওয়ে।

ঢাকা-জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জামালপুর, ঢাকা-আখাউড়া-সিলেট রুটসহ সংস্কার না হওয়া প্রায় এক হাজার কিলোমিটার রেললাইনে নতুন ইঞ্জিন চালানো সম্ভব নয়। এসব রুটের ভারবাহন এক্সেল লোড ১০-১১ টন, যেখানে নতুন ইঞ্জিনগুলোর ভার ১৫ টন।

রেলকে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান করার পরিকল্পনা নেই

প্রথম দিকে শুধু অর্থনৈতিক কাজের জন্য ইস্ট বেঙ্গল রেল চালু করা হলেও রেল এখন যাত্রীনির্ভর। শুধু যাত্রী পরিবহন দিয়ে রেলে লোকসান কমানো প্রায় অসম্ভব। ডাবল লাইন ও ডিজিটাল সিগন্যালিং ব্যবস্থা না থাকায়, মিটারগেজ-ব্রডগেজ বৈষম্য থাকায়—ঢাকা-চট্টগ্রামের বাইরে রেলে পণ্য পরিবহন সক্ষমতা এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটেও মধ্যগতির কার্গো পরিবহন সক্ষমতা নিয়ে পরিকল্পনা নেই। মালবাহী পণ্যে ঘুষ ও পণ্যনিরাপত্তা এ খাত বিকাশের বড় বাধা।

চীনা অর্থনৈতিক পলিসিমেকার লিকি কুয়াং একটি দেশের বা অঞ্চলের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির প্রকৃত অবস্থা বোঝার জন্য যে তিনটি সূচক ব্যবহার করেছেন (লিকি কুয়াং ইনডেক্স) তার দ্বিতীয়টি হচ্ছে ‘অভ্যন্তরীণ রেলওয়ে ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পণ্য পরিবহনের প্রবৃদ্ধি’। বাংলাদেশের দেশজ প্রবৃদ্ধির সঙ্গে রেলের পণ্য পরিবহন প্রবৃদ্ধির সম্পর্ক মিলে না।

বৈদ্যুতিক রেল নিয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই
ওভারহেড বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও সিগন্যালিং অবকাঠামো করা গেলে ইলেকট্রিক ট্রেনের ইঞ্জিন-কোচ কেনার বিনিয়োগ তুলনামূলক কম হয়, কারণ, বৈদ্যুতিক রেল টেকনোলজি ম্যাচিউর ও প্রতিযোগিতামূলক। নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে হাইস্পিড ট্রেন চালুর প্রভিশন রাখার বিষয়টি আলাপেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। রেলপথকে ঢেলে সাজাতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, পৃথক রেল মন্ত্রণালয়, বিদেশি ঋণের বর্ধিত বিনিয়োগেও রেলের সেবার মানও যেমন বাড়েনি, তেমনি লোকসানও থামেনি। বরং গত দুই বছরে দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত রেলের লোকসান দ্বিগুণ হয়েছে, বছরে গড়ে দুই হাজার কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে রেল।

একটা সময় রেলের ইঞ্জিন না কিনে বগি কেনার তোড়জোড় ছিল। সময় পেরিয়ে ইঞ্জিন কেনায় মনোযোগ এসেছে। কিন্তু লোকোমোটিভ কেনার প্রক্রিয়া কারিগরি ত্রুটি এবং দুর্নীতির ভাঁজে আটকে গেছে। নতুন স্থাপিত রেলপথগুলোকে শুরু থেকে বৈদ্যুতিক করা ও পুরোনো প্রধান প্রধান রুটকে ধীরে ধীরে বৈদ্যুতিক রেলে রূপান্তরের পরিকল্পনাটা অনুপস্থিত। ফলে আজকের বর্ধিত বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ রিটার্ন অজানা। ৩০ বছরের কথা বলে ৬৪৫ কোটি টাকায় কেনা ডেমো ট্রেন, মাত্র ছয় বছরেই সম্পূর্ণ বিকল হয়েছে।

নতুন রেললাইনের ক্ষেত্রে আমরা দেখছি, প্রথমে মিটারগেজ ট্র্যাক করা হচ্ছে। পরে নতুন টেন্ডারে তাকে ব্রডগেজে উন্নীত করার নামে রাষ্ট্রীয় তহবিলের নিদারুণ অপচয় হচ্ছে। ব্রডগেজ উপযোগী স্লিপার কেনার কথা বলে মিটারগেজের স্লিপারই বসানো হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল লাইনের দুটি প্রকল্পে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরও রেলপথটি রয়ে গেছে মান্ধাতার আমলের মিটারগেজই। ব্রডগেজ তথা ডুয়েলগেজে রূপান্তরের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি বলে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের আন্তর্জাতিক রুটে যুক্ত হওয়া যাচ্ছে না। দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সরাসরি ট্রেনও এতে অসম্ভব। ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডর উন্নয়নেও উদ্দেশ্যহীন পরিকল্পনা এবং রেল ও সেতু বিভাগের টানাটানি দেখা গেছে। এক্সপ্রেসওয়ের পেছনে শতকোটি টাকা গচ্চার পর এখন সেটা বাদ দিয়ে শুধু হাইস্পিড ট্রেনের কথা বলা হচ্ছে। এসব সিদ্ধান্ত যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ডাইমেনশনিং এবং ভবিষ্যৎ ফোরকাস্টিং আমলে নিয়ে হচ্ছে না।

রেলের কমিউটার ট্রেনের ধারণা অনুপস্থিত। রাজধানীর পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে দ্রুতগামী ট্রেনে চড়ে কর্মের খাতিরে কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার রাজধানী ঢাকায় গিয়ে দিন শেষে নিজ আবাসস্থলে ফিরে আসার উপযোগী রেল নেটওয়ার্ক এখনো উন্নয়ন দর্শনে স্থান পায়নি। পরিকল্পনা নেই রাজধানীর ১০টি প্রবেশপথকে আন্তসংযোগেরও। একের পর এক ভুল ও অদূরদর্শী বিনিয়োগ, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মিলে যাত্রীসেবা এবং পণ্য পরিবহনকে অলাভজনক করে তুলছে।

দেখলে মনে হয় না আমাদের রেলও দেড় শ বছরের পুরোনো
১৮৬৬ সালে ওয়ার্নার ভন সিমেন্সের বৈদ্যুতিক ডায়নামো নীতি আবিষ্কারের পর পরিবহনে বৈদ্যুতিক মোটর ব্যবহারের চেষ্টা শুরু হয়েছিল। এতে অনুপ্রাণিত হয়ে ৩১ মে ১৮৭৯ সাফল্যের সঙ্গে সিমেন্স ও হালস্কে বিশ্বের প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেন উপস্থাপন করেছিলেন। খুব দূরে যেতে হচ্ছে না, এ উপমহাদেশেরই গল্প বলি। ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯২৫ সালে বোম্বে ভিটি ও কুর্লা হারবারের সাবেক জিআইপি রেলওয়ে পদ্ধতির বৈদ্যুতিক রূপান্তরিত রেল উদ্বোধনের সঙ্গে ভারতে প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়। দেশভাগ ও স্বাধীনতার আগে আমাদের তখন একই দেশ!
মাত্র সাড়ে তিন বছর পর ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত যখন বৈদ্যুতিক রেলের গৌরবময় শতবর্ষ উদ্‌যাপন করবে, ঠিক তখনই চীন বিশ্বকে তাক লাগিয়ে ঘণ্টায় ৬০০ কিলোমিটার গতিবেগের তড়িৎ-চৌম্বকীয় লেভিটেশন বা সবশেষ প্রযুক্তির ম্যাগলেভ ট্রেনের ঘোষণা দিয়েছে। ইতিমধ্যেই সাংহাই ম্যাগলেভ বিশ্বের প্রথম উচ্চগতির বাণিজ্যিক ম্যাগলেভ লাইন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, যার ট্রেনগুলো ঘণ্টায় ৪৩০ কিলোমিটার সর্বোচ্চ গতিতে পৌঁছাতে সক্ষম।

১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর যশোরের দর্শনা থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনের মাধ্যমে পূর্ব বাংলা রেল যুগে প্রবেশ করে। বয়স ১৫৯ বছর হলেও বাংলাদেশ রেলওয়ে এখনো ১০০ কিলোমিটার গতির মাইলস্টোন ছুঁতে পারেনি। আফসোসের কথা কী আর বলব, ভারতে বৈদ্যুতিক রেল চালুর ১০০ বছর পর ২০২৫ সালেও বাংলাদেশ রেলওয়ে বৈদ্যুতিক রেল যুগে প্রবেশ করতে পারছে না। পারবে কি? বাংলাদেশে যে বৈদ্যুতিক রেলের বিষয়টা নিয়ে কোনো পরিকল্পনাই শুরু হয়নি। উল্লেখ্য, জাইকার অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় নির্মীয়মাণ ঢাকা মেট্রো বাংলাদেশ রেলওয়ের কোনো প্রকল্প নয়। কারিগরি প্রকল্প বাস্তবায়নের যে স্বল্প সক্ষমতা, তাতে আজ পরিকল্পনা শুরু করলেও তা বাস্তবে আলোর মুখ দেখতে যে আরও অন্তত এক যুগ লাগাবে, এর শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়া যায়। জাদুঘরে রাখার উপযোগী ডিজেল ইঞ্জিন ঘিরেই রেলওয়ের যত পরিকল্পনা। যদিও এ ১০০ বছরে বৈদ্যুতিক ট্রেন নিজেই ৪ থেকে ৬টি জেনারেশন পার করেছে। প্রবেশ করেছে ম্যাগনেটিক ট্রেন ম্যাগলেভ প্রজন্মে, কিংবা ইলন মাস্কের হাইপার লুপ প্রজন্মে।

রেলে টেকনোলজি প্রয়োগের অক্ষমতা কারিগরি পশ্চাৎপদতার অন্যতম এক দর্পণ। ভুল পরিকল্পনা, অদূরদর্শী বিনিয়োগ, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও যাত্রী অবান্ধব অপেশাদার জনবল সব মিলে বাংলাদেশের রেল বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ রিটার্ন শূন্য অথবা ঋণাত্মক। ডিজেলচালিত রেলের পেছনে বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ জাত অর্থ খরচ করে বাংলাদেশ আদতে রেলের আধুনিকায়নকে আরও বেশি জঞ্জালপূর্ণ করে তুলছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদের এমন নিদারুণ অপচয় অর্থহীন এবং খুবই হতাশার। অর্থের অভাব নয়, বরং দুর্নীতি, অযোগ্যতা ও অদূরদর্শিতাই বেঁধে রেখেছে রেলের আধুনিকায়নকে।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশ, বাংলাদেশ অর্থনীতির ৫০ বছর গ্রন্থের রচয়িতা। [email protected]