দেশে বিরোধী দল বা রাজনৈতিক শক্তি কে

বাংলাদেশে এখন প্রধান বিরোধী দল কোনটি? মানে সরকারের কোনো কর্মকাণ্ড বা নীতি-আদর্শের বিরোধিতায় কারা সবচেয়ে সক্রিয়? হুট করে এমন প্রশ্ন করা হলে অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়ে যাবেন। ‘জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল’—এমন আনুষ্ঠানিক মর্যাদার বিষয়টি অনেকের মাথায় না–ও আসতে পারে। তবে বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদের বিষয়টি বিবেচনায় নিলে উত্তরটি হবে, জাতীয় পার্টি। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরোধী দলের নাম ‘জাতীয় পার্টি’—এমন একটি জবাব পেয়ে আপনি সন্তুষ্ট?

আগের ও বর্তমান (দশম ও একাদশ) সংসদের আসনের দিক দিয়ে বিবেচনা করলে সরকারি দল আওয়ামী লীগের পর সংসদে যে দলের আসন সবচেয়ে বেশি, সেটি জাতীয় পার্টি। এই দুটি সংসদের ‘প্রধান বিরোধী দল’ হিসেবে কেমন ‘ভূমিকা’ রেখেছে বা রাখছে জাতীয় পার্টি? দশম সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘আমরা যখন বাইরে যাই, তখন সবাই বলে তুমি কোথায় আছ, সরকারে না বিরোধী দলে? আমরা তো বলতে পারি না।’

এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আমরা সংবাদপত্রে শিরোনাম দেখেছি, ‘সরকারে না বিরোধী দলে, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত চায় জাতীয় পার্টি’। অর্থাৎ জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত আসবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে! ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের সেই নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির নেতাদের মুখে শোনা গেছে, সরকারে থেকে বিরোধী দল নয়, ‘সত্যিকারের বিরোধী দল’ হতে চায় জাতীয় পার্টি। সেটা তারা কতটুকু হতে পেরেছে, তা পাঠক নিশ্চয়ই বিবেচনা করে দেখবেন।

বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে জাতীয় পার্টির আসন ২২ আর বিএনপির ৭—এমন অবস্থায় বাংলাদেশে আসলে ‘বিরোধী দল’ বলে এখন কিছু নেই। সংসদে আসনের দিক থেকেও নেই, ভূমিকার দিক থেকেও নেই। ভূমিকার দিক থেকে বিএনপি নিশ্চয়ই তা হতে চায়, কিন্তু দলটির সেই ক্ষমতা নেই। বিএনপিকে পুরোপুরি অক্ষম ও অকার্যকর করে ফেলার কৌশলে আওয়ামী লীগ বলা যায় শতভাগ সফল হয়েছে। অনেকেই বলেন, বিএনপির বড় কর্মী-সমর্থক গোষ্ঠী আছে, কিন্তু সরকারের দমন-পীড়নের কারণে তারা কিছু করতে পারছে না। এর নিশ্চয়ই সত্যতা আছে, কিন্তু সরকারের জবরদস্তি বা কৌশল উপেক্ষা করে দল যদি সমর্থকদের কাজে লাগাতে না পারে, রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে এর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।

দেশে তাহলে এখন বিরোধী দল বা রাজনৈতিক শক্তি কে?

নির্বাচনগুলো কীভাবে হচ্ছে, তাতে জনগণ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ কেমন, যারা নির্বাচন আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত, তারা কী ভূমিকা পালন করছে, জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারছে কি না, সেগুলো যেন আর বিবেচনারই বিষয় নয়।

এমন একটি প্রশ্নের আগে অবশ্য আমাদের মনে রাখতে হবে যে একটি দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দল বা শক্তির অস্তিত্বের সঙ্গে গণতন্ত্রের সম্পর্ক রয়েছে। সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি-ডেম ইনস্টিটিউটের বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা–সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে। ‘অটোক্র্যাটাইজেশন গোজ ভাইরাল’ এই শিরোনামের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে গণতন্ত্রের পরীক্ষায় বাংলাদেশের নম্বর ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০২১ সালের স্কোর শূন্য দশমিক ১। গতবারের চেয়ে স্কোর কমেছে শূন্য দশমিক ০১৯। বাংলাদেশের জায়গা হয়েছে ‘নির্বাচনভিত্তিক স্বৈরতন্ত্র’ বিভাগে। এর ইঙ্গিতটা হচ্ছে, গণতন্ত্রের অবস্থা খারাপ হচ্ছে এবং স্বৈরতন্ত্রের ঝুঁকি রয়েছে।

বাংলাদেশের মতো দেশ বা এর সরকার এসব পর্যবেক্ষণকে বিবেচনায় নিতে চাইবে না, কারণ তারা নিজেদের গণতান্ত্রিক মনে করে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর পেছনের প্রধান যুক্তি হচ্ছে হচ্ছে, এখানে সময় মেনে নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু সেই নির্বাচনগুলো কীভাবে হচ্ছে, তাতে জনগণ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ কেমন, যারা নির্বাচন আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত, তারা কী ভূমিকা পালন করছে, জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারছে কি না, সেগুলো যেন আর বিবেচনারই বিষয় নয়।

আলী রীয়াজ সম্প্রতি নিখোঁজ গণতন্ত্র নামে একটি বই লিখেছেন। সেই বইয়ের আলোচনার সূত্রে, প্রথম আলোতে তিনি তিন পর্বের একটি ধারাবাহিক লেখা লিখেছেন। সেখানে তিনি গণতান্ত্রিক শাসনের মূল উপাদানগুলো কী হতে পারে, সেই সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করেছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও পণ্ডিতদের নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ বিবেচনায় নিয়ে তিনি তিনটি উপাদানকে অপরিহার্য হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছেন। প্রথমত, সর্বজনীন ভোটাধিকার, দ্বিতীয়ত আইনসভা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদের জন্য নিয়মিত অবাধ, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক, বহুদলীয় নির্বাচন এবং তৃতীয়ত, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা, যার মধ্যে মতপ্রকাশ, সমাবেশ ও সংগঠন তৈরির স্বাধীনতা অন্তর্ভুক্ত। তিনি মনে করেন, গণতন্ত্রের পরীক্ষায় এই তিনটি মানদণ্ডেই উতরাতে হবে। এর যেকোনো একটির অভাব থাকলে অন্যগুলোও কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে।

একটি দেশে সরকার আছে, ক্ষমতাসীন দল আছে এবং তারা প্রায় ১২ বছর ধরে টানা ক্ষমতায়, তাদের কোনো বিরোধী পক্ষ থাকবে না? স্বাভাবিক বিরোধী দল, বিরোধী রাজনীতি বা মাঠে তাদের কর্মকাণ্ড না থাকলে যা হওয়ার তা–ই সম্ভবত আমরা দেখতে পাচ্ছি।

আমরা বুঝতে পারি, বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন হচ্ছে, কিন্তু এরপরও দেশের গণতন্ত্রের মান নামছে কেন? বাংলাদেশ কেন নির্বাচনভিত্তিক ‘স্বৈরতন্ত্রের’ পথে এগোনো একটি দেশের তকমা পাচ্ছে? কারণ, শুধু সংবিধানের বাধ্যবাধকতা মেনে আর নির্ধারিত মেয়াদের পর নির্বাচন হলেই গণতন্ত্র বাঁচছে না। এসব নির্বাচনে যদি সব দলের অংশগ্রহণ বা তার পরিবেশ না থাকে, যদি তা অবাধে হতে না পারে, দিনের ভোট যদি রাতে হয়ে যায়, তখন এসব নির্বাচনে বিজয়ী দলের কাজ হয়ে দাঁড়ায় ক্ষমতাকে আরও পাকাপোক্ত করা। বিরোধী দল বা রাজনৈতিক শক্তিকে এই মাত্রায় কোণঠাসা করা, যাতে তাঁদের পুরোপুরি অকার্যকর ও নিষ্ক্রিয় করে ফেলা যায়। এখন সেই অবস্থাই চলছে।

দেশে ‘বিরোধী দল’ বলে কিছু নেই—এমন একটি সিদ্ধান্তে সম্ভবত আমরা আসতে পারি। কিন্তু একটি দেশে সরকার আছে, ক্ষমতাসীন দল আছে এবং তারা প্রায় ১২ বছর ধরে টানা ক্ষমতায়, তাদের কোনো বিরোধী পক্ষ থাকবে না? স্বাভাবিক বিরোধী দল, বিরোধী রাজনীতি বা মাঠে তাদের কর্মকাণ্ড না থাকলে যা হওয়ার তা–ই সম্ভবত আমরা দেখতে পাচ্ছি।

হেফাজতে ইসলামের পরিচয় কী? তারা নিজেদের রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে পরিচয় দিতে চায় না। কিন্তু এ পর্যন্ত তারা যেসব ইস্যুতে মাঠে নেমেছে এবং নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছে বা জানান দিয়েছে, সেগুলো সবই রাজনৈতিক। কিন্তু রাজনৈতিক দল হতে গেলে যে সুনির্দিষ্ট নেতৃত্ব ও নেতা লাগে, রাজনৈতিক অবস্থান ও কৌশল লাগে, তা হেফাজতের নেই। তাদের যা আছে তা হচ্ছে ধর্মকে ব্যবহার করার সামর্থ্য, বড়সড় জমায়েত করার ক্ষমতা, আর তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে বুঝে-না বুঝের জীবন দেওয়ার মতো লাখ লাখ তরুণ মাদ্রাসাছাত্র।

এমন একটি শক্তিকে রাজনৈতিক ক্ষমতাকাঠামো (সরকারি বা বিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠী) তাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। হেফাজতের উত্থান ও এর ঘটনাপ্রবাহ বিবেচনায় নিলে আমরা দেখব যে ২০১৩ সাল থেকে তারা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কখনো এদিক থেকে, কখনো ওদিক থেকে।

হেফাজতের উত্থান হয়েছে আওয়ামী লীগের শাসনামলে এবং এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তারাই ক্ষমতায়। ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত তাদের সরকারের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিল। এই গোষ্ঠী তখন সুবিধা করতে পারেনি। অথবা বলা যায়, যারা (বিএনপি-জামায়াত) তাদের কাজে লাগাতে চেয়েছিল, তারা ব্যর্থ হয়েছে। কিংবা যাদের (সরকারের) বিরুদ্ধে তাদের ব্যবহারের চেষ্টা হয়েছিল, তারা যথেষ্ট সাফল্যের সঙ্গে তা সামাল দিতে পেরেছে।

কিন্তু হেফাজত যে একটি ‘শক্তি’ হিসেবে হাজির আছে, সেটা সরকার বা সরকারি দল আওয়ামী লীগ ভালোভাবেই টের পেয়েছে। এবং এটা বুঝতে পেরে তাদের যেকোনোভাবেই হোক নিজেদের কবজায় রাখার পথ ধরেছে। হেফাজতের ঘাঁটি ও শফী হুজুরের আস্তানা হাটহাজারীতে সরকারি দলের লোকজনের নিয়মিত আনাগোনা হয়েছে।

এসব ক্ষেত্রে সাধারণত বেচাকেনা চলে, অর্থ ঢালার ব্যাপার থাকে, সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে। হেফাজত-সরকার সম্পর্কের মধ্যে মাঝখানে যে সমঝোতার পরিস্থিতি বজায় ছিল, তার পেছনে এসবই কাজ করেছে বলে বিভিন্ন মহলে আলোচনা আছে। এই সুযোগে হেফাজতের নেতাদের কেউ কেউ ভালো অর্থকড়ি কামিয়ে নিয়েছেন—এমন কথাই শোনা যায়। একই সঙ্গে হেফাজতের আপত্তিতে বা তাদের দাবি মেনে সরকার পাঠ্যক্রম বদল করেছে, কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমমান দেওয়া হয়েছে।

সংগঠন হিসেবে হেফাজতের যে কাঠামো, তাতে কিছু নেতাকে খুশি করে বা কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের ওপর পুরো নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা কঠিন। কারণ, এই সংগঠনে এমন অনেক নেতা রয়েছেন, যাঁদের সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান এবং নিজেদের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। সমঝোতার কৌশল নিয়ে কট্টর ইসলামি ভাবধারার এই বড় শক্তিকে যে সরকার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি, তার প্রমাণ সাম্প্রতিক সহিংসতা।

আওয়ামী লীগ সমর্থক বা সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেকের মুখেই এখন বলতে শুনছি, ‘দুধ-কলা দিয়ে সাপ পুষলে লাভ হয় না।’ তার মানে তাঁরা বিশ্বাস করেন যে সরকার তাদের দুধ-কলা খাইয়েছে, কিন্তু এরপরও হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালিয়ে হেফাজত সরকারের প্রতি ‘ছোবল’ হেনেছে।

আওয়ামী লীগ সমর্থক বা সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেকের মুখেই এখন বলতে শুনছি, ‘দুধ-কলা দিয়ে সাপ পুষলে লাভ হয় না।’ তার মানে তাঁরা বিশ্বাস করেন যে সরকার তাদের দুধ-কলা খাইয়েছে, কিন্তু এরপরও হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালিয়ে হেফাজত সরকারের প্রতি ‘ছোবল’ হেনেছে।

আমরা দেখছি, হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় ধরে নিষ্ক্রিয় থাকা মামলাগুলো আবার সচল হচ্ছে, তাঁদের অনেকে আটক হচ্ছেন। মানে ‘দুধ–কলা’ দিয়ে পোষার বদলে এখন চাপ দিয়ে তাঁদের বশে রাখার কৌশল নেওয়া হচ্ছে। এই কৌশল কতটা কাজে দেবে, তা ভবিষ্যৎই বলবে। কিন্তু এ ধরনের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কোনোভাবেই সুস্থ বা স্বাভাবিক বলা যাবে না। কোনো দেশে রাজনৈতিক বিরোধিতার স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলে, গণতান্ত্রিক ধ্যানধারণার প্রতি ন্যূনতম আস্থা আছে, এমন বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলো মাঠে সক্রিয় থাকলে এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কথা নয়।

রাজনীতিকে বিরোধী দলবিহীন করে দেওয়া হলে হেফাজতের মতো শক্তিগুলো সেই জায়গা দখল করে নিতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। আর সুযোগ বুঝে সবাই এই শক্তিকে ব্যবহার করার পথও খুঁজবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বা হাটহাজারীর ঘটনার পেছনে সুযোগসন্ধানী তেমন কোনো গোষ্ঠীর ইন্ধন থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

সরকার কাকে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দেখতে চায়, সেই সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে।

l এ কে এম জাকারিয়া প্রথম আলোর উপসম্পাদক

[email protected]