নওয়াজ শরিফকে নীরবতা ভাঙতে হবে

নওয়াজ শরিফ
রয়টার্স ফাইল ছবি

আজিজিয়া স্টিল মিল দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ আত্মসমর্পণ করতে ব্যর্থ হওয়ার পর গত মঙ্গলবার ইসলামাবাদ হাইকোর্ট তাঁর বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। আদালত বলেছেন, ইংল্যান্ড থেকে পাকিস্তানে আসার মতো সুস্থতা নওয়াজের নেই মর্মে যে মেডিকেল সার্টিফিকেট আদালতে পেশ করা হয়েছে, তা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে আনা, সেটি কোনো হাসপাতালের নয়। ফলে সেই সার্টিফিকেট আদালত আমলে নিতে রাজি নয়।

আদালত নওয়াজকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ব্রিটেনে পাকিস্তানি হাইকমিশনের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন। এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়েছে। নওয়াজ সমর্থকেরা বলছেন, আদালত হুট করে এ রায় দিয়েছেন এবং নওয়াজ আবারও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হলেন। তবে ক্ষমতাসীন তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির সমর্থকেরা বলছেন, আদালত বরাবরই নওয়াজের প্রতি অনুকম্পা দেখিয়ে আসছেন এবং সর্বশেষ এ রায় খুবই যৌক্তিক হয়েছে।

আদালতের রায়ের পর নওয়াজ শরিফ প্রসঙ্গে আমি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিশেষ সহকারী আলি নওয়াজ আওয়ানের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তিনি এ বিষয়ে কোনো রাখঢাক না করে খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নওয়াজ শরিফ প্রথমে দাবি করেছিলেন, তাঁর দেহের রক্তের প্লাটিলেট অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় কমে যাওয়ার অসুখ হয়েছে। এরপর তিনি বলেছিলেন, তাঁর ক্রনিক হার্ট দুর্বলতার রোগ হয়েছে এবং এসব কারণে চিকিৎসার জন্য তাঁর দেশের বাইরে যাওয়া দরকার। সংকটাপন্ন রোগীর সময় নষ্ট না করে চিকিৎসা নেওয়ার কথা। কিন্তু নওয়াজ লন্ডনে যাওয়ার পর ১১ মাস কেটে গেলেও তিনি সেখানে কোনো চিকিৎসা নেননি।’

আওয়ান বলেছেন, ‘নওয়াজ শরিফ সব সময় বলে থাকেন, তিনি জনগণের পাশে থাকবেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, তিনি আদালত ও তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির রোষের শিকার। তিনি যদি এটিই বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে তাঁর পাকিস্তানে ফিরে আসা উচিত এবং আইনি লড়াই চালানো উচিত। আদালত যদি তাঁকে রেহাই দেন তাহলে আদালতকে বাহবা দেবেন আর দোষী সাব্যস্ত করলে আদালতকে দোষারোপ করবেন—এ নীতি তো চলতে পারে না।’ আওয়ান বলেছেন, ‘যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে আমাদের বন্দী বিনিময় চুক্তি আছে এবং নওয়াজ যেহেতু ব্রিটিশ নাগরিক নন, সেহেতু তাঁকে দেশে ফেরানো যাবে।’

পররাষ্ট্রনীতি প্রসঙ্গে আওয়ানের ভাষ্য হলো, নওয়াজ শরিফের অস্পষ্ট নীতির কারণে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক ভালো ছিল না। কিন্তু এখন সৌদি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত নয়, কাতারও পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেছেন, আগে ওয়াশিংটন প্রতিনিয়ত পাকিস্তানকে আরও ভালো কিছু করার জন্য চাপ দিত আর এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প ইমরান খানের সরকারকে ধন্যবাদ দেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের আলোচনা অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য পাকিস্তানের প্রশংসা করেন।

এ অবস্থায় নওয়াজ শরিফের আসলে নীরবতা ভাঙা উচিত। নিদেনপক্ষে সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁর হাজির হয়ে অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত। নওয়াজবিরোধীরা বলছেন, নওয়াজ পাকিস্তানের অদৃশ্য শক্তির সঙ্গে আপস করে লন্ডন চলে গেছেন এবং কখন পিটিআই সরকারের মাথার ওপর থেকে অদৃশ্য শক্তির আশীর্বাদের ছায়া সরে যাবে, সেই অপেক্ষা করছেন। নওয়াজ শরিফ নিজে মুখ না খুললে তাঁর সমর্থকদের পক্ষে এর জবাব দেওয়া কঠিন। এতে পিএমএলএনের মাঠপর্যায়ের কর্মী–সমর্থকদের মনোবল ভেঙে যাচ্ছে। অনেকে উপায় না দেখে সরকারের সঙ্গে আঁতাত গড়ে তুলছেন।

পিএমএলএন জনগণের স্বার্থ রক্ষায় কিংবা মানবাধিকার লঙ্ঘন ইস্যুতে কোনো গণ–আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে না। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে যে নওয়াজ জনগণের শক্তির ওপর নির্ভর না করে অদৃশ্য শক্তি কখন পৃষ্ঠপোষকতা দেবে, সেই আশায় রয়েছেন।

এ কারণে নওয়াজ যদি আপাতত দেশে ফিরতে না–ও চান, তাহলেও তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত। তিনি আসলে কী করতে চান, তা এখনই তাঁর খোলাসা করা উচিত।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

ইমাদ জাফর: পাকিস্তানের লেখক ও সাংবাদিক