নাড়ির টানে, বিপদ টানে

বাড়ি যাওয়া মানুষের ঢল বইছে এখন। আপাতত মানুষের এই ঢল রুখবার তেমন কোনো বাধা নেই। কে ফেরায় তাঁদের! নাড়ির টানে বাড়ি তাঁদের যেতেই হবে। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মহাবিপদও যে টানতে পারে, তা তাঁদের মাথায় নেই।
যে যেখানে আছেন সেখানেই ঈদ করুন—এই সতর্কবাণী ঘর ফেরাদের আবেগের কাছে ম্লান হয়ে গেছে। ঈদে মানুষ তাঁদের ভিটেমাটিতে ফিরতে চান, স্বজন-পরিজন নিয়ে উৎসব পালন করতে চান—এটা বাঙালিদের একটি বড় বৈশিষ্ট্য এবং গুরুত্বপূর্ণও বটে। অন্যদিকে আবেগাক্রান্ত অসচেতনতা চরম হুমকির।

ফেরিতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। মুখে মাস্ক নেই। করোনাকে স্বাগত জানানোর জন্য অনেকে মাস্ক পকেটে ভরে রাখেন। এই যখন অবস্থা, তখন সীমান্ত পার হয়ে এসেছে ভারতীয় ভেরিয়েন্ট। বিপদের ওপর আরেক বিপদ। এই ভেরিয়েন্ট মানুষকে ঘায়েল করার ক্ষেত্রে আরও অনেক গুণ শক্তিশালী।

মানুষ কিলবিল করছে রাস্তাঘাটে। পাশাপাশি কিলবিল করছে অদৃশ্য কোভিড-১৯। উৎসব যেখানে সারা দেশে আনন্দের বার্তা ছড়িয়ে দিত, এবার উৎসব ছড়িয়ে দিয়েছে বিপদের বার্তা।
আক্রান্ত না হওয়ার ক্ষেত্রে যেখানে পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখার কথা আছে, সেখানে ঈদের জামাতে ধর্মপ্রাণ মানুষ যে কোলাকুলি থেকে নিজেদের বিরত রাখবেন, সে গ্যারান্টিই-বা কে দেবে। উৎসবের আবেগের কাছে সব আতঙ্ক-ভয় পরাজিত হচ্ছে বলেই মনে হয়।

তবে মানুষকে অনেকভাবেই সচেতন করা যায়। প্রতিটি ঈদের জামাতের আগে বা পরে মসজিদের মাইক থেকে সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া যায়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন মাইকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসে। করোনা প্রতিরোধে নিয়মিত আমরা মসজিদগুলোর মাধ্যমে এটি করতে পারতাম বা পারি। যদিও কোথাও কোথাও মসজিদ থেকে এমন প্রচার চালানো হয়েছে। কিন্তু আমার জানামতে তা যৎকিঞ্চিৎ।
গ্রাম-মফস্বলের মেম্বার-চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে জনপ্রশাসন বড় ভূমিকা পালন করতে পারে সচেতনতার ক্ষেত্রে। এখন যেটা অত্যন্ত জরুরি। সরকারের নির্দেশনা কেন সফল হলো না, সেটা তলিয়ে দেখা দরকার। কেন মানুষ পিলপিল করে ছুটতে পারলেন বাড়ির দিকে। কেনই বা তাঁদের পড়তে হলো দুর্ভোগের মধ্যে!
একই ঘটনা কি আবার ঘটবে যখন তাঁরা ঈদ শেষে রাজধানীতে ফিরবেন? সে প্রশ্ন থেকেই যায়। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সেটাই কাম্য।


সাইদুজ্জামান রওশন প্রথম আলোর বিশেষ কার্যক্রম সমন্বয়ক।