বাইডেনের ইউক্রেন নীতি ঠিক করছেন নব্য রক্ষণশীলেরা

ইউক্রেনকে অস্ত্র জোগানো এবং শান্তি আলোচনাকে পদদলিত করার ব্যর্থ নীতিতে এখনো বেপরোয়া বাইডেন প্রশাসনছবি : রয়টার্স

ওয়াশিংটনে স্বঘোষিত জাতীয় নিরাপত্তা ‘বিশেষজ্ঞ সম্প্রদায়’-এর উদ্ভব হয়েছে। জো বাইডেনের ইউক্রেন নীতি ঠিক করার ক্ষেত্রে তাঁরাই এখন চালকের আসনে। ১ জুন ওয়াশিংটনভিত্তিক দ্য হিল ট্যাবলয়েড পত্রিকায় এ রকম কয়েকজন বিশেষজ্ঞের একটা খোলা চিঠি প্রকাশিত হয়েছে। এ চিঠির যে বক্তব্য, তাতে জনগণের সতর্ক হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। চিঠির স্বাক্ষরদাতাদের মধ্যে ওয়াশিংটনের প্রভাবশালী থিঙ্কট্যাংক হিসেবে পরিচিত ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের কর্তাব্যক্তিরা রয়েছেন। চিঠির একটি অংশ এ রকম, ‘রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে যেতে হয়—কিয়েভের পক্ষ থেকে নেওয়া এমন যেকোনো পদক্ষেপকে অবশ্যই নিরুৎসাহিত করতে হবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে। এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ ইউক্রেনকে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে বাধা তৈরি করবে। এর ফলে ইউক্রেনের লাখ লাখ মানুষ রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে।’

খোলা চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা বাইডেন প্রশাসনকে বর্তমান নীতিতে চলতে পরামর্শ দিয়েছেন। ইউক্রেনকে অস্ত্র জোগান দেওয়া অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। এ চিঠিতে অন্য যাঁরা স্বাক্ষর করেছেন, তাঁদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যাঁরা, তাঁদের প্রত্যেকেই নব্য রক্ষণশীল (যাঁরা মনে করেন গণতন্ত্রসহ যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো প্রয়োজনে সামরিক শক্তির সহায়তা নিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে হবে) বলে পরিচিত।

চলমান যুদ্ধে রাশিয়ার যে ক্ষয়ক্ষতি, সেটা সম্ভবত পাহাড়সম। ইউক্রেনীয়রাও অপূরণীয় ক্ষতি ও ধ্বংসের মুখোমুখি হয়েছে। যুদ্ধে এত ক্ষয়ক্ষতিও ওয়াশিংটনের হিসাব বদলাতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধে সহায়তার জন্য নতুন করে আরও ৪০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং সরকারনিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম ও থিঙ্কট্যাংক বিরতিহীনভাবে এবং সুসংগঠিত উপায়ে এ সিদ্ধান্তের সপক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

দৃষ্টান্ত হিসেবে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট–এ প্রকাশিত লেখক ও সাংবাদিক ডেভিড ইগনাতিউসের কলামটির দিকে নজর দেওয়া যাক। ১৪ জুন প্রকাশিত কলামে তিনি লেখেন, ‘এ মাসে পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর যে অগ্রযাত্রা, তাতে পশ্চিমাদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। তারা মনে করতে শুরু করেছে, যুদ্ধের ভারসাম্য মস্কোর দিকে ঝুঁকে পড়ল কি না। কিন্তু বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনে করেন, এ ধরনের উদ্বেগ অমূলক। এই কুৎসিত জয়-পরাজয় নির্ধারক যুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এখনো সমানভাবেই দৃঢ় রয়েছে।’

ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছে আমেরিকার এজেন্সিগুলোর এই আত্মসমর্পণ সর্বোচ্চ মাত্রার দায়িত্বহীনতার পরিচয়। ইউক্রেনকে অস্ত্র জোগানো এবং শান্তি আলোচনাকে পদদলিত করার ব্যর্থ নীতিতে এখনো বেপরোয়া বাইডেন প্রশাসন। আমেরিকার শুভবোধসম্পন্ন নাগরিকদের এখন অবশ্যই প্রশ্ন করতে হবে, কেন?

১৪ জুন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষানীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি কলিন কাহল দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘ইউক্রেনীয়রা কীভাবে, কখন ও কী বিষয়ে শান্তি আলোচনা করবে, তা আমরা তাদের বলে দিতে যাচ্ছি না। ...এ বিষয়ে তাদের নিজেদের করণীয় নিজেদের বের করতে হবে।’ এর তিন দিন পর দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় মিসি রায়ানের (সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের বাস্তব ভিত্তি প্রস্তুতিতে তাঁর অনেকখানি অবদান ছিল) প্রতিবেদনে উঠে আসে, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্ররা ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ যে দীর্ঘস্থায়ী হতে যাচ্ছে, সেই প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। এ যুদ্ধ যে বৈশ্বিক ক্ষুধা এবং অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছে, তার মধ্যেই বাইডেন প্রশাসন রাশিয়ার বিজয়ের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে কিয়েভকে সামরিক সহায়তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

আরও পড়ুন

ন্যাটোয় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত, বর্তমানে শিকাগো কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের প্রধান ইভো ডালডার বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখন কঠিন এক পরীক্ষার মুখে পড়েছে। দুটি বিকল্পের যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হবে। প্রথমটা হলো, ইউক্রেনকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা। এতে ইউক্রেনে প্রচুর রক্তক্ষয় এবং বাকি বিশ্বে ধ্বংসাত্মক পরিণতি হলেও টেকসই স্থিতাবস্থা প্রতিষ্ঠা হবে। দ্বিতীয় বিকল্পটা হলো, ইউক্রেনকে সহযোগিতা করা এখনই বন্ধ করে দেওয়া এবং মস্কোকে জিততে দেওয়া। দ্বিতীয় বিকল্পের অর্থ হচ্ছে, ক্ষুধার্ত নেকড়ের সামনে ইউক্রেনীয়দের ছেড়ে দেওয়া।’

ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছে আমেরিকার এজেন্সিগুলোর এই আত্মসমর্পণ সর্বোচ্চ মাত্রার দায়িত্বহীনতার পরিচয়। ইউক্রেনকে অস্ত্র জোগানো এবং শান্তি আলোচনাকে পদদলিত করার ব্যর্থ নীতিতে এখনো বেপরোয়া বাইডেন প্রশাসন। আমেরিকার শুভবোধসম্পন্ন নাগরিকদের এখন অবশ্যই প্রশ্ন করতে হবে, কেন?

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

জেমস কার্ডেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপদেষ্টা