বাল্টিক সাগর বাঁচাতে সুইডেন-ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোতে দরকার

ব্রাসেলসে ন্যাটোর সদর দপ্তর। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় নিরাপত্তাসংকট তৈরি করেছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের সবার সাধারণ নিরাপত্তায় ন্যাটোর ভূমিকা আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমরা ফিনল্যান্ডের ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার জন্য দ্রুত আবেদন করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আশা করি, সুইডেন এই সপ্তাহে একই সিদ্ধান্ত নেবে। ফিনল্যান্ড এবং সুইডেনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই এ কারণে যে এটি বাল্টিক সাগর অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বাড়াবে।

রাশিয়া হুমকি দিয়ে এবং সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ন্যাটোর সদস্য হতে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের জন্য দ্রুত বিশেষ ব্যবস্থা না নিলে একটি বড় ভুল হবে। সেই ভুল ভ্লাদিমির পুতিনের হাতে তুরুপের তাস তুলে দেবে। রাশিয়া ‘অস্থিতিশীলতা’র দোহাই দিয়ে যে ভাষ্য দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে, সেটিকে প্রতিষ্ঠিত হতে দিলে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়টি ঝুলে যেতে পারে।

মনে রাখা দরকার, পুতিন বারবার নতুন রুশ সাম্রাজ্য তৈরির কথা বলছেন। এটি ইউরোপের জন্য এবং বিশেষ করে বাল্টিক সাগর অঞ্চলের জন্য একটি গুরুতর হুমকি হবে। বাল্টিক সাগর আমাদের দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অঞ্চল। আমাদের সমুদ্রজুড়ে পারস্পরিক সহযোগিতা, বাণিজ্য এবং লেনদেনের দীর্ঘ ও গর্বিত ইতিহাস রয়েছে। আজ আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা, শক্তি, স্থায়িত্ব এবং স্বাস্থ্যসহ নানা খাতে পরস্পরকে সহযোগিতা করি। এই সহযোগিতা আমাদের সমৃদ্ধ করে। আর এ কারণেই এটি রক্ষা করা জরুরি।

সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ইতিমধ্যে ন্যাটোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা উপভোগ করছে। ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে তারা আলাদা করে দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ভোগ করছে। তবে ন্যাটোর সম্মিলিত প্রতিরক্ষার নিশ্চয়তা তারা পাচ্ছে না। কারণ, এ ধরনের নিশ্চয়তা শুধু জোটের সদস্যদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সোভিয়েত ইউনিয়নের খপ্পর থেকে বের হওয়ার পর এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়া স্বাধীনভাবে ইইউ এবং ট্রান্স আটলান্টিক সহযোগিতা উপভোগ করতে পারছে। ন্যাটোর সদস্যপদ এবং সমমনা দেশগুলোর সম্মিলিত সুরক্ষা নিশ্চয়তা এই দেশগুলোকে অব্যাহত স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিয়েছে।

নর্ডিক এবং বাল্টিক দেশগুলোর মধ্যে যৌথ সহযোগিতা আরও বাড়িয়ে এবং বাল্টিক সাগরের নিরাপত্তাকে ইউরোপীয় এবং ট্রান্স আটলান্টিক স্বার্থে পরিণত করে রাশিয়ার আগ্রাসনকে ভালোভাবে প্রতিহত করা যায়। এ বিষয়ে উদাসীন থাকার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, রাশিয়া আমাদের অঞ্চলের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে।

একই সুরক্ষা-নিশ্চয়তা সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে হবে। কারণ, আমরা কখনোই আমাদের দেশ, আমাদের অঞ্চল এবং আমাদের গণতান্ত্রিক সমাজের নিরাপত্তার বিষয়ে আপস করতে পারি না। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করার সময় এটি মনে রাখা দরকার যে বাল্টিক অঞ্চলে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা প্রসারিত এবং শক্তিশালী করা অপরিহার্য। ন্যাটোর মাধ্যমেই এটি করা সবচেয়ে ভালো বিকল্প।

সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়া বাল্টিক সাগর অঞ্চলে ন্যাটোর প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আরও জোরদার হয়েছে। রাশিয়া সম্পর্কে বাল্টিক দেশগুলোর অভিজ্ঞতা ও সম্যক ধারণা এবং সুইডিশ ও ফিনিশ সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা আমাদের এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বাড়াবে। সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দিলে তার অর্থ দাঁড়াবে, বাল্টিক সাগরতীরবর্তী নয়টি দেশের মধ্যে আটটিই ন্যাটো এবং ইইউ—উভয়ের সদস্য হবে। অর্থাৎ এই অঞ্চলে শুধুর রাশিয়া ছাড়া বাকি সবাই এই দুই জোটের সদস্য হবে। এটি পুতিনের কাছে খুব স্পষ্ট একটি বার্তা পাঠাবে। সেটি হলো: আমরা রাশিয়ার আগ্রাসন এবং অবৈধ আক্রমণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ।

আরও পড়ুন

নর্ডিক এবং বাল্টিক দেশগুলোর মধ্যে যৌথ সহযোগিতা আরও বাড়িয়ে এবং বাল্টিক সাগরের নিরাপত্তাকে ইউরোপীয় এবং ট্রান্স আটলান্টিক স্বার্থে পরিণত করে রাশিয়ার আগ্রাসনকে ভালোভাবে প্রতিহত করা যায়। এ বিষয়ে উদাসীন থাকার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, রাশিয়া আমাদের অঞ্চলের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে। ইউক্রেনে মস্কো হামলা চালানোর পর রাশিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান এবং বাল্টিক সাগরের গুরুত্ব আমাদের সামনে একটি নতুন বাস্তবতা এনে দিয়েছে।

সেই বাস্তবতার নিরিখেই বাল্টিক অঞ্চলের সুরক্ষায় সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোতে সর্বোচ্চ দ্রুততায় সদস্য করতে হবে।

ইউরো অবজারভার থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

●লেখকদের সবাই নর্ডিক ও বাল্টিক অঞ্চলের ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য।