বিবর্তনের মুখে তুরস্ক

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান

গত ১৫ জুলাই এক রাতে, তুরস্কের দক্ষিণের মারামিস থেকে সেখানে অবকাশ যাপনরত প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান তাঁর মুঠোফোনের বলে একটি সামরিক অভ্যুত্থান নস্যাৎ করে দিলেন। টেলিভিশন কেন্দ্রের সহযোগিতায় তিনি মুঠোফোনে তাঁর দেশবাসীকে আহ্বান জানালেন, তাঁরা যেন শহরে শহরে, দলে দলে বেরিয়ে এসে এই অভ্যুত্থান প্রতিহত করেন। আর তাঁরা তা-ই করলেন। প্রায় তিন শ প্রাণ আর হাজারো আহত হওয়ার বিনিময়ে সামরিক অভ্যুত্থানটি ব্যর্থ হলো। এরদোয়ানের জন্য এটি ছিল জীবনমরণ পরীক্ষা। তাতে তিনি অক্ষত অবস্থায় উত্তীর্ণ হলেন।
এ বিষয়ে লিখতে গিয়ে প্রথম আলোর পাতায় ২৩ জুলাই আমি দুটি কথা বলেছিলাম। প্রথমটি হলো যে আগামীর দিনগুলো তুরস্কের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে এবং দ্বিতীয়ত, আশা ছিল এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের কুশীলবদের বিচার করার প্রয়োজনীয়তার আলোকে তুরস্ক সরকার আমাদের দেশের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যৌক্তিকতা উপলব্ধি করবে। প্রথমে আমার দ্বিতীয় বক্তব্যটির আলোচনা করছি। মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর তুরস্ক অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে ঢাকা থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করল। তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের প্রায় চার সপ্তাহ পরই প্রত্যাহৃত তুর্কি রাষ্ট্রদূত দেউরিম ওজতুর্ক ফিরে এলেন। কূটনীতিক রীতি অনুযায়ী, পাল্টা ব্যবস্থায় দেশে ফিরিয়ে আনা আমাদের রাষ্ট্রদূত আল্লামা সিদ্দিকিও আঙ্কারায় ফিরে গেছেন। অর্থাৎ, নিজামীর ফাঁসির পর আমাদের দুই দেশের মধ্যে যে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়েছিল, তার অবসান হয়েছে।
১৬ আগস্ট তুরস্কের রাষ্ট্রদূত দেউরিম ওজতুর্ক ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার অবশ্যই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, আর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর কোনো ইচ্ছাই আমাদের নেই।’ তিনি তাঁর সংবাদ সম্মেলনে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যার নিন্দা জানালেন এবং তাঁর দেশে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের কাছে পাঠানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বার্তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। তাহলে বলা যেতেই পারে যে বাংলাদেশ-তুরস্ক সম্পর্কের আকাশে মেঘটি ছিল ক্ষণস্থায়ী এবং তা কেটে গেছে। তুরস্কের সঙ্গে বিভিন্ন খাতে আমাদের সম্পর্ক সন্তোষজনক এবং আগামী দিনগুলোতে তার উন্নতি না হওয়ার কোনো কারণ নেই।
এখন আমার দ্বিতীয় বক্তব্য, আগামীর দিনগুলো তুরস্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে, সেই আলোচনায় আসা যাক। আমরা দেখেছি যে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান-উত্তর সরকারি প্রতিক্রিয়া ও পদক্ষেপ ব্যাপক অর্থবহ ও তাৎক্ষণিক হয়েছে। দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে, এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছায় অবস্থানকারী ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লা গুলেনকে দায়ী করা হয়েছে এবং তাঁর প্রত্যর্পণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করা হয়েছে। এদিকে সারা দেশ তোলপাড় করে সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশ, সংবাদমাধ্যম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ৮০ হাজার কর্মীকে চাকরিচ্যুত, গ্রেপ্তার অথবা দুই-ই করা হয়েছে। এঁদের মধ্যে অপরাধীদের বিচার হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
৭ আগস্ট ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের তিন সপ্তাহের মাথায় ইস্তাম্বুলে বসফরাসের তীরে অনুষ্ঠিত হলো তুরস্কের রাজনৈতিক ইতিহাসের বৃহত্তম জনসভা। সরকার আয়োজিত এই অভূতপূর্ব জনসভায় উপস্থিত ছিলেন হাজার হাজার লাল তুর্কি পতাকা হাতে নিয়ে লাখ লাখ মানুষ। যেদিন বসফরাসের তীর যেন পরিণত হয়েছিল লাল পতাকা হাতে মানুষের তরঙ্গায়িত একটি লোহিত সাগরে। বড় বড় টেলিভিশনের পর্দায়, তুরস্কের নগরে-বন্দরে, সেই দেশের ৮১টি প্রদেশে লাখ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ করল যে একমাত্র কুর্দি রাজনৈতিক দলটি ছাড়া দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতা সেখানে, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও তাঁর হিজাব পরিহিত স্ত্রীর সমভিব্যহারে উপস্থিত। সেখানে উপস্থিত তুরস্কের সেনাপ্রধান জেনারেল হুলুসি আকার। তাঁরা একে একে সেই ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের তীব্র নিন্দা জানালেন। অনেকে ফেতুল্লা গুলেনকে এর জন্য দায়ী করলেন এবং মৃত্যুদণ্ড রহিত (১৯৮৪ থেকে) সেই দেশে অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড কামনা করলেন।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বললেন, এই অভ্যুত্থান সফল হলে তুরস্কের ইতিহাস পাল্টে যেত। সভায় বারবার উচ্চারিত মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে তিনি বলেন, দেশের পার্লামেন্ট চাইলে তিনি তাতে সম্মতি দেবেন। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ভালো করেই জানেন যে মৃত্যুদণ্ড পুনর্বহাল হলে তুরস্কের ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের সম্ভাবনা চিরতরে তিরোহিত হবে। কারণ ইউরোপ মৃত্যুদণ্ডের ঘোর বিরোধী। কিন্তু সেই জনসভায় এরদোয়ান সর্বাগ্রে ছিলেন একজন সফল রাজনীতিবিদ। তাঁর প্রেসিডেন্ট পরিচয়টি ছিল নেহাতই আনুষঙ্গিক। যখন অন্যান্য রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল হুলুসি আকার ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানালেন, তখন তো মনেই হয়েছিল যে তুরস্কের সেনা অভ্যুত্থানক্লিষ্ট রাজনীতি থেকে সেনাবাহিনীকে হয়তোবা অবশেষে নিতে হচ্ছে চিরবিদায়।
অথচ তুরস্কে একটি কথা চালু ছিল। তা হলো ইসলাম আর গণতন্ত্রের মিলনে সেই দেশে জন্ম হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতার। সেই ধর্মনিরপেক্ষতা যখনই রোগাক্রান্ত হয়, নিরাময়কারী হিসেবে আবির্ভাব ঘটে সেনাবাহিনীর, যাদের চিকিৎসায় আরোগ্য লাভ করে ধর্মনিরপেক্ষতা। তুরস্ক গণতন্ত্রের ইতিহাসে তা ঘটেছে পাঁচবার—তিনবার সরাসরি সামরিক শাসনে এবং দুবার পরোক্ষভাবে সশস্ত্র বাহিনীর চাপে। পঞ্চমবারে, ১৯৯৭ সালে সেনাবাহিনীর চাপে, ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি লঙ্ঘনের জন্য, দেশটির সাংবিধানিক আদালত ক্ষমতাসীন ওয়েলফেয়ার পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন এবং প্রধানমন্ত্রী নেকমেতিন এবরাকানকে গদিচ্যুত করা হয়। সেই প্রেক্ষাপটে সেই সময়কার ইস্তাম্বুলের মেয়র রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান প্রকাশ্যে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন, যার কটি পঙ্ক্তি ছিল: ‘মসজিদ আমার ছাউনি, মিনার আমার বেয়নেট আর গম্বুজ আমার হেলমেট’। ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি লঙ্ঘনের জন্য এরদোয়ানকে চার মাসের জন্য জেলে যেতে হয়, তাঁকে ছাড়তে হয় মেয়রের গদি।
সেনাবাহিনী প্রভাবিত ধর্মনিরপেক্ষতার এই আতিশয্যের মুখে এরদোয়ান ২০০১ সালে তাঁর রাজনৈতিক দল একেপি (জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি) গঠন করেন। ধর্মনিরপেক্ষতার বাড়াবাড়ির ব্যাকল্যাশ (backlash) ঘটল, যখন ২০০২ সালের নির্বাচনে এরদোয়ানের একেপি পার্টি তুরস্কের পার্লামেন্টের ৫৫০ আসনের মধ্যে ৩৬৩টি আসন দখল করল। তারপর রাজনৈতিকভাবে আর ফিরে তাকাননি এরদোয়ান। তাঁর দল একেপি পরপর ২০০২, ২০০৭, ২০০৯ এবং ২০১৫-এর নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে।
২০০৩ সালে এরদোয়ান তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি সেই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
সেই বছর সরাসরি ভোটে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেয়ে এরদোয়ান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। বর্তমানে ৫৫০ আসনের অ্যাসেম্বলিতে একেপির আসনসংখ্যা ৩১৭ এবং ১৩৪ আসন দখল করে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে রয়েছে কামাল আতাতুর্কের আদর্শের অনুসারি সিএইচপি, অর্থাৎ রিপাবলিকান পার্টি। তুরস্কের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন বিনালি ইলড্রিম।
আদর্শগতভাবে অবশ্য এরদোয়ান এখন বলছেন যে দেশের সংবিধানে যদি প্রতিটি ধর্মবিশ্বাসকে গ্যারান্টি দেওয়া হয়, তাহলে ইসলামকে প্রাধান্য দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। যদি খ্রিষ্টান, ইহুদি, নাস্তিক—সবাই নিজ নিজ বিশ্বাস নিয়ে বাস করতে পারেন, তাহলে তো কোনো সমস্যাই থাকে না। তুরস্কের বর্তমান সংবিধান ১৯৬১ সালে প্রণীত হয়েছিল। তারপর ২০০৭ ও ২০১০ সালে দুটি গণভোট ও অ্যাসেম্বলির ভোটে দেশটির সংবিধান ১৭ বার সংশোধিত হয়েছে। সংশোধিত হয়েছে সংবিধানের ১৭৭ অধ্যায়ের মধ্যে ১১৩টি। অতএব দেশের জন্য সেই সংশোধনে জর্জরিত সংবিধান প্রণয়ন করতে চান এরদোয়ান। দেখার বিষয় হবে, সেই নতুন সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে তাঁর দলের ইসলামঘেঁষা আদর্শের সঙ্গে কীভাবে তিনি খাপ খাওয়াবেন এবং দ্বিতীয়ত, প্রবর্তিত প্রেসিডেন্সিয়াল কাঠামোতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা কতটুকু ব্যাপক হবে। বলাই বাহুল্য যে ব্যর্থ অভ্যুত্থানটি না ঘটলেও তিনি এই রাজনৈতিক পদক্ষেপটি নিতেন। বোধ করি ব্যর্থ অভ্যুত্থানটি সেই বিবর্তন ত্বরান্বিতই করবে।
আগের সময়ের মতো কিন্তু এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের লক্ষ্য ধর্মনিরপেক্ষতাকে রক্ষা করা ছিল না। এরদোয়ান সরকারের মতে, তা ছিল স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী ফেতুল্লা গুলেনের ধ্যানধারণা দ্বারা প্রভাবিত। দৃশ্যত গুলেন একটি বহুজাতিক সুফি ধ্যানধারণা প্রভাবিত আন্তর্জাতিক সামাজিক আর ধর্মীয় আন্দোলনের নেতা, যার শাখা-প্রশাখা পৃথিবীর অনেক দেশে রয়েছে। সেই সব দেশের প্রায় দুই হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলেনের আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত। কিন্তু বিদেশে বসেও ২০১৩ সাল থেকে গুলেন তাঁর দেশ তুরস্কের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রশ্নে হস্তক্ষেপ শুরু করেন। তিনি তা করেন গত দশকগুলোতে লালিত সরকারের বিভিন্ন অঙ্গনে সামরিক, পুলিশ, বিচার বিভাগ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মিডিয়ায় তাঁর হাজার হাজার সমর্থকের মাধ্যমে। এ জন্যই এরদোয়ান সরকার এর আগেই তাঁকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যায়িত করেছিল। অথচ এই গুলেনই নব্বইয়ের দশকে তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষতা আর ‘ইসলাম পছন্দ’দের দ্বন্দ্বে শেষোক্ত ব্যক্তিদের পক্ষে এরদোয়ানের সঙ্গেই অবস্থান নিয়েছিলেন। অতএব, আসলে এরদোয়ান-গুলেন দ্বন্দ্ব ততটা ধর্মীয় নয়, যতটা তার রাজনৈতিক। গুলেনের প্রভাব তুরস্কের প্রশাসনে এতই ব্যাপক হয়ে উঠেছিল যে তাঁর সমর্থক সন্দেহে বিদেশ থেকে প্রায় ৩৮০ জন কূটনীতিককে প্রত্যাহার করা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে ঢাকার তুর্কি দূতাবাসের তিনজন কূটনীতিক রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকার গুলেনকে প্রত্যর্পণ করুক আর না-ই করুক, প্রশাসনের বিভিন্ন অঙ্গন থেকে তাঁর প্রায় ৮০ হাজার সমর্থক এখন এরদোয়ান সরকারের দৃষ্টিসীমায় রয়েছেন।
১৫ জুলাইয়ের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর থেকেই প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তাঁর দেশের পররাষ্ট্র সম্পর্কে খুবই তৎপর হয়ে উঠেছেন। রাশিয়া সফর করে তিনি পুতিনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ককে আবার উজ্জীবিত করেছেন। সম্পর্ক দৃঢ়তর করেছেন নিকটের ইরান ও ইসরায়েলের (ইসরায়েলের অথবা তুরস্কের কূটনৈতিক সম্পর্ক বহু বছরের) সঙ্গে। অবস্থা বেগতিক দেখে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের দেড় মাস পর হলেও যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছুটে গেছেন আঙ্কারায়। ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বন্ধু তুরস্কের ক্ষুব্ধ প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে মন ভোলাতে সেখানে ভালো ভালো কথা বলেছেন তিনি, বুঝিয়েছেন যে গুলেনকে প্রত্যর্পণের বিষয়টি প্রশাসনিক নয়, সময়সাপেক্ষ আইনি প্রক্রিয়ার আওতায়। তবে বাস্তবতা তো এই যে গুলেনের অনুপস্থিতিতেই তুরস্কে তাঁর সমর্থকদের ডান্ডা মেরে ঠান্ডা করার কাজটি সেরে নিচ্ছেন এরদোয়ান। নতুন আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়েই যেন এখন তিনি সিরিয়ার যুদ্ধে তাঁর সেনা আর ট্যাংক পাঠিয়ে একটি ত্রিমুখী সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে পড়েছেন। তুরস্কের সিরিয়ায় গোলমেলে এই যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করার প্রধান কারণ হচ্ছে সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তে কুর্দি শক্তিকে মাথা তুলতে না দেওয়া, যাতে তুরস্কে কুর্দিদের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন পালে হাওয়া না পায়। অবশ্য আইএসের বিরুদ্ধেও সিরিয়ায় তুরস্কের অভিযান জারি থাকবে। অবশ্য সময়ই বলে দেবে সিরিয়ার ভূখণ্ডে তুরস্কের সরাসরি জড়িয়ে পড়া তাঁর জন্য কতটা লাভ হবে। ইতিমধ্যে অন্তত একজন তুর্কি সেনা সিরিয়ায় কুর্দিদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে প্রাণ দিয়েছেন। কয়েকজন আহত হয়েছেন।
অতএব, দেশ-বিদেশে এরদোয়ান তুরস্কের স্বার্থে বহুমুখী উদ্যোগ নিচ্ছেন। আমার মতে, তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের ঢাকায় ফিরে আসা সেই উদ্যোগেরই একটি ক্ষুদ্র অংশ।
ফারুক চৌধুরী: সাবেক পররাষ্ট্রসচিব। কলাম লেখক।
[email protected]