বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন যে কারণে যৌক্তিক

করোনা শুরুর দিকে ২০২০ সালের মার্চ থেকে এ দেশে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সে সময় জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বিবেচনায় গণদাবি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পক্ষেই ছিল। করোনার ভয়াল থাবা দীর্ঘায়িত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের জুলাই মাস থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। যদিও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এর কিছুদিন আগে থেকেই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু ছিল।

অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হওয়ার পর আমাদের আর্থসামাজিক ও ডিজিটাল অবকাঠামোর অনেক দৈন্যদশা উন্মোচিত হয়ে যায়। বিশেষ করে শহর ও গ্রামকেন্দ্রিক ডিজিটাল অবকাঠামোর মধ্যে আকাশ-পাতাল বৈষম্য আর গোপন থাকেনি।

অনলাইনে ঢাকাসহ বড় কিছু শহরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ক্লাস করা সম্ভব হলেও গ্রাম ও মফস্বলের ছাত্রছাত্রীরা সে ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হয়। সরকারি উদ্যোগে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ক্লাসও খুব বেশি জনপ্রিয়তা পায়নি এবং একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায়।

ওই সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ বন্ধ থাকায় এবং শহর অঞ্চলে করোনার ঝুঁকি বেশি থাকায় অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী এমনকি এক কাপড়ে নিজ নিজ বাড়িতে চলে যান। ২০২০ সালের জুলাই মাসে যখন অনলাইন ক্লাসের ঘোষণা আসে, সে সময় লকডাউন বলবৎ থাকায় অনেক ছেলেমেয়ে ক্যাম্পাসে রেখে যাওয়া বইপত্র, ডেস্কটপ কম্পিউটার, ল্যাপটপ ইত্যাদি সংগ্রহ করতে পারেননি। আবার এ–ও দেখা গেল, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া, কিন্তু আর্থসামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া অনেক ছাত্রছাত্রীর একটি স্মার্টফোনও নেই, যা দিয়ে তাঁরা অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হবেন। কারও একটি স্মার্টফোন থাকলেও ইন্টারনেটে ডেটা কেনার সামর্থ্য ছিল না।

শহরে বা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা অনেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি টিউশনি, পার্টটাইম চাকরি ইত্যাদির মাধ্যমে খরচ চালাত। ক্যাম্পাস ও শহর ছাড়তে বাধ্য হওয়া সেই ছেলেমেয়েরা অনেকেই ধারাবাহিকভাবে অনলাইন ক্লাস করতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারিভাবে ডিজিটাল যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা হবে অথবা সেসব কেনার জন্য আর্থিক অনুদানের কথা বলা হলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি। হতাশায় নিমজ্জিত হাজার হাজার ছেলেমেয়ে অনলাইন পড়াশোনা, অ্যাসাইনমেন্ট ইত্যাদি পর্বে অংশ নিতে পারেননি।

একপর্যায়ে অনলাইনে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি পরীক্ষা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা যায়। শুধু ক্লাস করিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন ব্যতিরেকে ওপরের শ্রেণিতে প্রমোশন অথবা ডিগ্রি কোনোটাই দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে করোনার প্রকোপ কম থাকায় নানামুখী বিবেচনায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীর সীমিত পরিসরে পরীক্ষা গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে সম্মান চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরীক্ষা আয়োজনের কথা বলা হলেও ছাত্রছাত্রীদের আবাসন বিষয়টির সুরাহা হয়নি।

ছাত্রছাত্রীদের নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় আবাসনের ব্যবস্থা করতে বলা হয়। প্রথম দিকে কিছুটা অনীহা থাকলেও পরবর্তী সময়ে নিজ নিজ আবাসন ব্যবস্থাপনাতেই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেন। অনেকের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে এবং তাঁরা কিছুটা হলেও ভালো অবস্থানে থেকে চাকরি বা পেশাগত জীবনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সবকিছু এলোমেলো করে দেয়। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব পরীক্ষায় স্থগিতাদেশ দেয়। বাস্তবতার নিরিখে এখনো অনেক ব্যাচ ও শ্রেণিতে পরীক্ষা হয়নি। এ কারণেই বর্তমান সময়ে এসে ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খুলে দিয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করার দাবি নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করছেন।

আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা প্রথম দিকে সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি, কিছু প্রেস কনফারেন্স করলেও এখন মিছিল–মিটিং এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের বক্তৃতা–বিবৃতি ভাইরাল হচ্ছে। একজন যেমন বলছিলেন, করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ জন ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন, যার মধ্যে ১১ জনই একটি নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের। অনেকে মাদকাসক্ত হয়ে আত্মহত্যা করছেন, কেউবা ছন্নছাড়া জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। কোনো কোনো গবেষণা বলছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলেও ১৯ থেকে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী আর হয়তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরবেন না। তাঁদের অনেকেই ইচ্ছা থাকলেও আর্থসামাজিক বাস্তবতায় ফিরতে পারবেন না। আন্দোলনে নামা হতাশ এই শিক্ষার্থীরা এমনও বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যদি না খোলা যায়, তাহলে তাঁদের রাস্তাঘাটে, বাজার, দোকান বা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে নিয়ে ক্লাস করানো হোক।

কারণ, সেগুলো তো অবাধে চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একজন শিক্ষক তাঁর অভিজ্ঞতা শেয়ার করে লিখেছেন, শুরুর দিকে তাঁর ৬৫ জনের ক্লাসে ৬২ থেকে ৬৩ জন অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত হতেন। পুকুরপাড়, গাছতলা, সড়কের পাশে, যেখানেই একটু নেটওয়ার্ক পাওয়া যেত, সেখানেই বসে ক্লাস করার চেষ্টা করেছেন অনেকই। শুরুর সে সংখ্যা এখন অর্ধেকের কমে এসে ঠেকেছে। যাঁরাই–বা উপস্থিত হচ্ছেন, তাঁদের আবার অধিকাংশই মেয়ে। ওই শিক্ষক প্রশ্ন রেখেছেন, তাহলে ছেলেরা গেল কই? তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, সেই ছেলেশিক্ষার্থীদের অনেকেই হয়তো গ্রামে ধান কাটার শ্রমিক, রাজমিস্ত্রি, হোটেল–রেস্টুরেন্টে অর্ডারি অথবা গার্মেন্টসে কাজ শুরু করেছেন এবং আর কখনোই হয়তো ক্লাসে ফিরতে পারবেন না। মেয়েদেরও অনেকের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে এবং তাঁরা সংসার করাটাকেই নিয়তি হিসেবে নিয়ে পড়াশোনাকে বিদায় বলে দিয়েছেন।

প্রশ্ন হলো, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া এবং সশরীর পরীক্ষা গ্রহণের দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের মাঠে নামার কারণ কী? এখানে বেশ কিছু কারণ যৌক্তিক বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রথমত, ছাত্রছাত্রীরা দেখতে পাচ্ছেন যে তাঁদের পড়াশোনা, পরীক্ষা গ্রহণ ও সেশনজট নিরসনে শিক্ষা প্রশাসনের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই এবং থাকলেও তা পরিষ্কার নয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছয় মাসের স্থলে চার মাসের ট্রাইমিস্টার পদ্ধতিতে বছরে তিনটা সেশন করে সেশনজট নিরসনের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এ পদ্ধতিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি কিছুটা পোষানো যেতে পারে। কিন্তু চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সে এ পদ্ধতি কোনো কাজেই আসবে না। কারণ, তাঁদের শুধু পরীক্ষা গ্রহণই বাকি। তাই এরূপ ঘোষণা প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছুটা আশার বাণী শোনালেও শেষ বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের কাছে হতাশার নামান্তর।

দ্বিতীয়ত, সময়ে সময়ে একেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একেক রকম ঘোষণা দেওয়ার কারণে ছাত্রছাত্রীদের কাছে তা তুলনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় দিনক্ষণ উল্লেখ করে সশরীর পরীক্ষা, আবার কেউবা অনলাইনে পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছে। এ রকম অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে একেক বিশ্ববিদ্যালয়ের একেক অবস্থানের কারণে ছাত্রছাত্রীরা কিছুটা হলেও বিভ্রান্ত। তাঁরা তুলনা করছেন যে অমুক বিশ্ববিদ্যালয় যদি একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে অমুক সময় থেকে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দেয়, তবে অন্যরা কী করছে।

তৃতীয়ত, অবাধ তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বিশেষত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা দেখছেন যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তাঁদের সহপাঠীরা তুলনামূলক কম জটিলতার সম্মুখীন। যেমন অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়, পাঠ ও পদ্ধতি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে রয়েছে। অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন লার্নিং মডিউল তৈরি করেছে এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে ট্রেনিংয়ের আওতায় এনেছে। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো অনলাইনে পরীক্ষাপদ্ধতি কী হবে, কী সফটওয়্যার ব্যবহৃত হবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মাত্র আলোচনা চলছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ সেশনজট ছাত্রছাত্রীদের শঙ্কায় ফেলেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়ে ক্লাস–পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের উল্লিখিত নানা কারণের পাশাপাশি তাঁদের বর্তমান আর্থসামাজিক বাস্তবতাও তাড়িত করেছে। তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন, অর্থনীতির নানা পরিকাঠামো যেন স্বাভাবিকভাবেই চলছে। এ কারণে তাঁরা তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। হতাশায় নিমজ্জিত। টিউশনি, পার্টটাইম চাকরি, ক্যাম্পাসের চিরচেনা পরিবেশ হারিয়ে তাঁদের জীবনমান নিম্নমুখী।

কথা হলো, এ সমস্যার সমাধানই–বা কী? সত্যি বলতে, এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া করোনা টিকার কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চললে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত হয়তো এত কঠিন হতো না। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে ছাত্র–শিক্ষক সবাইকে টিকা দিয়ে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এত দিনে সম্ভবপর হতে পারত। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, টিকার দুষ্প্রাপ্যতা সে লক্ষ্য অর্জনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। নানা দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সম্প্রতি পরিপত্রে জানিয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে অনলাইনের পাশাপাশি সশরীর পরীক্ষা নিতে পারবে। অবশ্য অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা এমন কিছু পূর্বশর্ত আরোপ করেছে, যা প্রতিপালন অসম্ভবের পর্যায়ে।

যেমন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, ইন্টারনেটের গতি, ডিজিটাল যন্ত্রাংশের নিশ্চয়তা ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কীভাবে পূরণ করবে, তা বোধগম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করলেও তা পূরণ অনিশ্চিত। যেমন সারা দেশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা ছাত্রছাত্রীদের জন্য ইন্টারনেটের সমগতি ইত্যাদি। বর্তমান বাস্তবতায় যেখানে ছাত্রছাত্রীরা অনলাইনে ঠিকমতো ক্লাসেই যোগদান করতে পারছেন না, সেখানে অনলাইনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ তাঁদের অনেকের জন্যই কষ্টসাধ্য হবে। এ কথা ঠিক যে বিশ্বের অনেক দেশে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম মূল্যায়ন হচ্ছে, কিন্তু তাঁদের ডিজিটাল অবকাঠামো এবং ব্যবহারকারীর দক্ষতা যে অনেক উন্নত, তা ভুলে গেলে চলবে না।

সে অর্থে সশরীর পরীক্ষা গ্রহণই সর্বোত্তম বিকল্প মনে হয়। সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক নিরাপত্তা ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি এসে যায়। জীবন–জীবিকার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত শিল্পকারখানা, দোকান, শপিং মল, পরিবহন সরকার খুলে দিলেও শিক্ষাক্ষেত্রে সরকার ঝুঁকি নিতে চাইবে না। বিশেষ করে করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা শহরাঞ্চলে, এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলে দিলেও অভিভাবকমহল তাঁদের শিশু ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না–ও করতে পারেন। কিন্তু উচ্চশিক্ষা, বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ে, অন্তত পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি ভিন্নভাবে দেখা যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞমহলের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গভাবে খুলে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু মেগাসিটি এবং করোনার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা এলাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় সীমিত পরিসরে ছাত্রছাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বেশ কিছু ধাপ অনুসরণ করা যেতে পারে। যেমন প্রথমেই মাস্টার্সের ছাত্রছাত্রীদের জন্য দুই থেকে তিন সপ্তাহের জন্য আবাসিক হল খুলে দেওয়া যেতে পারে। এ সময়ের মধ্যে তাঁদের সশরীর পরীক্ষা নিয়ে কিছুদিনের ছুটি দিয়ে হল ত্যাগের জন্য নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে। পরবর্তী ধাপে চতুর্থ বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের জন্য অনুরূপ হল খুলে তাঁদের বাকি পরীক্ষাগুলো নেওয়া যেতে পারে। মধ্যবর্তী সময়ে ছাত্রছাত্রীদের টিকা প্রদানে অগ্রাধিকার এবং তা নিশ্চিত করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে ক্লাসের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম চালু রাখার পাশাপাশি ভাইভা, প্রেজেন্টেশন ইত্যাদি মূল্যায়ন পর্বও অনলাইনেই নেওয়া যেতে পারে।

সশরীর নেওয়া পরীক্ষার ফলাফল দ্রুত সময়ে প্রকাশ করে ছাত্রছাত্রীদের জীবনে নেমে আসা দুর্বিষহ যন্ত্রণা লাঘবের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিমধ্যে অনলাইনে পাঠ ও পরীক্ষা গ্রহণের মডিউল তৈরি করে ব্যাপকভাবে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারে, যাতে করোনা আরও দীর্ঘায়িত হলে, অবস্থার আরও অবনতি হলে অথবা সশরীর পরীক্ষা গ্রহণ বিঘ্নিত হলে পরে কাজে লাগানো যায়। সে পরিস্থিতিতে অনলাইন পরীক্ষার ত্রুটি, ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যবহারসংক্রান্ত ভয়ভীতি এবং অন্যান্য কারিগরি জটিলতা সহজেই সমাধান করা যাবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ছাত্রছাত্রীদের দ্রুত সক্ষমতা অর্জনের জন্য সরকারের সার্বিক সহায়তা করা উচিত।

বর্তমান বাস্তবতায় সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীর পরীক্ষা গ্রহণই যথার্থ বিকল্প মনে হয়। এ বিষয়ে কালক্ষেপণ না করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সময়ের দাবি।


ড. শহীদুল জাহীদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষক