মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে বাইডেনকে সমস্যায় ফেলেছেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোটের ফল এবং তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের বিজয়ের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেশটির গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তির ভয়ানক ক্ষতি করেছেন। তিনি ভোটের ফল মেনে নিতে রাজি না হওয়ায় শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতি হয়নি; এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে নির্বাচিত সরকারের হাতে মসৃণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করার বিষয়ে যে নসিহত করে থাকে, সেই নীতি প্রচারের জায়গাটিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

গত চার বছরে ট্রাম্প যে নীতি অনুসরণ করে এসেছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে নজিরবিহীন পরিবর্তন এনেছে। এটি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বেকায়দায় ফেলবে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে জো বাইডেনকে সবচেয়ে বেশি বেগ পেতে হবে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসনকে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে সবচেয়ে বেশি তৎপর হতে দেখা যাচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও, ইরান ও ভেনেজুয়েলাবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি এলিয়ট অ্যাবরামস, রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর ক্লার্ক কুপার এবং হোয়াইট হাউসের বিশেষ দূতসহ বেশ কয়েকজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ইসরায়েল এবং মধ্যপ্রাচ্যভুক্ত কয়েকটি মিত্র দেশ সফর করেছেন।

অধিকৃত পশ্চিম তীরে নতুন করে ইহুদি বসতি স্থাপন করার বিষয়ে ট্রাম্প ইসরায়েলকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এই বসতি স্থাপন যদি জো বাইডেনের সরকার বন্ধ করার চেষ্টা করে, তাহলে বাইডেন প্রভাবশালী ইসরায়েলি লবির প্রচণ্ড বাধার মুখে পড়বেন। আবার ইসরায়েলকে ইচ্ছেমতো বসতি স্থাপনে মৌন সমর্থন দিয়ে গেলেও তাঁকে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হবে

ট্রাম্প ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপকে ত্বরান্বিত করেছেন এবং ইরানের পরমাণুবিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যার বিষয়ে ইসরায়েলকে তিনি মদদ দিয়েছেন বলেও মনে করা হচ্ছে। পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম রণতরি ইউএসএস নিমিটজের নেতৃত্বে একঝাঁক বিমানবাহী রণতরি উপসাগরীয় এলাকায় পাঠানো হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে যারা ট্রাম্পের মিত্র তারা জো বাইডেনকে যদিও অভিনন্দন জানিয়েছে, তথাপি মনে করা হচ্ছে তারা ট্রাম্পের অনুসৃত নীতির দিকেই ঝুঁকে থাকবে।

সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মাদ বিন সালমান সৌদির সঙ্গে কাতারের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলার বিষয়ে আগ্রহী হচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। তুরস্কের সঙ্গেও তিনি ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে চান বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়ে আগের চেয়ে সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। মোহাম্মাদ বিন সালমানের এসব পদক্ষেপ নেওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে অনেকে বলছেন, তিনি জো বাইডেনের সঙ্গে যাতে তাল মিলিয়ে পা ফেলতে পারেন তার প্রেক্ষাপট আগেভাগে তৈরি করে রাখছেন।

ইরান ও মিসরও জো বাইডেনের সরকারের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন করবে বলে আশা করছে।

মধ্যপ্রাচ্যের নেতারা ভাবছেন, জো বাইডেন ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতি থেকে সরে এসে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নীতিকে অনুসরণ করবেন। কিন্তু জো বাইডেনের পক্ষে তা করা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে বিশ্লেষকদের মনে যথেষ্ট সন্দেহ রয়ে গেছে।

অধিকৃত পশ্চিম তীরে নতুন করে ইহুদি বসতি স্থাপন করার বিষয়ে ট্রাম্প ইসরায়েলকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এই বসতি স্থাপন যদি জো বাইডেনের সরকার বন্ধ করার চেষ্টা করে, তাহলে বাইডেন প্রভাবশালী ইসরায়েলি লবির প্রচণ্ড বাধার মুখে পড়বেন।

ট্রাম্প পেন্টাগন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিশ্বাস করতেন না এবং একক সিদ্ধান্তে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যে কর্মকর্তা তাঁর কাজকে চ্যালেঞ্জ করতে গেছেন, তাঁকেই তিনি বরখাস্ত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসকে তেল আবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে নেওয়ার মতো গুরুতর সিদ্ধান্তও তিনি বলা যায় এককভাবে নিয়েছেন।

এ ধরনের সিদ্ধান্ত জো বাইডেনের পক্ষে উল্টে দেওয়া খুবই কঠিন হবে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তাঁর কাছে ডেমোক্রেটিক পার্টির গণতন্ত্রসুলভ আচরণ আশা করছে। সেই আশা পূরণ করতে হলে জেরুজালেম থেকে মার্কিন দূতাবাস ফের তেল আবিবে নিতে হবে। সেটি করা সাংঘাতিক দুরূহ হবে। সেটি করতে গেলে ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেক নেতাই এর বিরোধিতা করবেন।

অধিকৃত পশ্চিম তীরে নতুন করে ইহুদি বসতি স্থাপন করার বিষয়ে ট্রাম্প ইসরায়েলকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছেন। এই বসতি স্থাপন যদি জো বাইডেনের সরকার বন্ধ করার চেষ্টা করে, তাহলে বাইডেন প্রভাবশালী ইসরায়েলি লবির প্রচণ্ড বাধার মুখে পড়বেন। আবার ইসরায়েলকে ইচ্ছেমতো বসতি স্থাপনে মৌন সমর্থন দিয়ে গেলেও তাঁকে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হবে।

এ কারণে বাইডেনকে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে যথাসম্ভব সতর্ক হয়ে পা ফেলতে হবে।

আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

জো ম্যাকরোন ওয়াশিংটন ডিসির আরব সেন্টারের একজন ফেলো