মহাশূন্যে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে যুক্তরাষ্ট্রকে যা বোঝাল রাশিয়া

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গৃহযুদ্ধে নিহত রুশ সেনাদের স্মরণে ক্রিমিয়ার সিভাস্তুপলে এক অনুষ্ঠানে ৪ নভেম্বর যোগ দেন
ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন দুই সপ্তাহ আগে ইউক্রেনে রাশিয়ার সম্ভাব্য অভিযান সম্পর্কে ন্যাটো সদস্যদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ২০১৪ সালে ইউক্রেনভুক্ত ছোট্ট উপদ্বীপ ক্রিমিয়াকে রাশিয়া দখল করে নেওয়ার পর ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক চলে আসছে। সেই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি আবার বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে—যুক্তরাষ্ট্র তার ইউরোপীয় মিত্রদের এমন হুঁশিয়ারি দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই রাশিয়া একটি স্যাটেলাইট বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। এটি কক্ষপথে এত ভয়ানক মাত্রায় ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছিল যে মহাশূন্যে স্থাপিত আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে (আইএসএস) অবস্থানরত মহাকাশচারীদের প্রাণভয়ে স্পেসএক্স ক্যাপসুলে ঢুকতে হয়েছিল। (উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রের রাশিয়ান অংশে অবস্থানরত রুশ মহাকাশচারীরাও ভয় পেয়ে তঁাদের সয়ুজ ক্যাপসুলে জরুরি আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।)

আফগানিস্তানে পশ্চিমারা যে পরিমাণ আর্থিক, নৈতিক ও কূটনৈতিক পুঁজি বিনিয়োগ করছিল, তার অতি ক্ষুদ্র অংশ তারা ইউক্রেনে ব্যয় করেছে। রাশিয়ার সর্বশেষ উসকানির জবাব দিতে পশ্চিমাদের ব্যর্থতা রাশিয়াকে সবখানেই আগের চেয়ে বেশি সাহসী করে তুলবে।

পশ্চিমা গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা চালাতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্র তার ইউরোপীয় মিত্রদের যে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তার সঙ্গে মহাশূন্যে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কোনো যোগসাজশ নেই। এ দুটি সম্পূর্ণ আলাদা ঘটনা। কিন্তু ভালো করে খেয়াল করলে বোঝা যাবে এ দুই ঘটনা মোটেও আলাদা কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার তার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে একটা ঝামেলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়ার নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের এ দুর্বলতার বিষয়টি ভালোভাবে টের পাচ্ছেন এবং সেটিকেই তঁারা কাজে লাগাতে চাইছেন। ট্রাম্পের বাজে নেতৃত্বের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে যে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা চলছে, তা দেশটির শক্তি প্রদর্শন করার ক্ষমতা খর্ব করে ফেলেছে। এ সুযোগে রাশিয়া পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে কড়া আঘাত হেনে ইউরোপিয়ান অঞ্চলে নিজের উপস্থিতিকে হয়তো আরও সংহত করার চেষ্টা করছে।

ইউক্রেনের সঙ্গে ন্যাটোর কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু সেখানে রাশিয়া আবার হামলা চালায় কি না, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা সার্বক্ষণিক নজরদারি বজায় রাখছে। ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় নিয়োজিত সামরিক বাহিনীকে রুশ আগ্রাসন প্রতিরোধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র উন্নত অস্ত্র দিয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেনের কাছে জলসীমায় নিজেদের অবস্থান বিস্তার করবে বলে ঘোষণা দেওয়ার পর ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো ইউক্রেনকে আত্মরক্ষায় অধিকতর উন্নত সমরাস্ত্র দিয়েছে।

ন্যাটোবহির্ভূত দেশ ইউক্রেনের জন্য পশ্চিমা দেশগুলো সরাসরি রাশিয়ার মুখোমুখি হবে কি না, তা হয়তো এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে ইউক্রেনকে ঘিরে ন্যাটোভুক্ত শক্তিগুলোর সার্বক্ষণিক উপস্থিতির কারণে সে সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কক্ষপথে স্যাটেলাইট ধ্বংস করতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মস্কো আসলে ওয়াশিংটন, ব্রাসেলস ও লন্ডনকে বোঝাতে চেয়েছে রাশিয়া মহাশূন্যেও আগ্রাসী। সে চাইলে তার ‘নিকটবর্তী ভিনদেশে’ (ইউক্রেনে) সহজেই অভিযান চালাতে পারে। ক্রেমলিন পশ্চিমাদের সামনে এ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে যে তারা কি ইউক্রেনের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে চিন্তিত, নাকি নিজেদের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিয়ে বেশি চিন্তিত।

কক্ষপথে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পাল্টা জবাব হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রও যদি একই ধরনের পরীক্ষা চালাত, তাহলে হয়তো বিষয়টি সবার কাছে স্বাভাবিক মনে হতো। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে একেবারেই চুপ থাকতে দেখা গেছে। এ চুপ থাকায় রাশিয়ার নেতাদের মনে হতে পারে, এখন ইউক্রেনে অভিযান চালালে তা যুক্তরাষ্ট্র ঠেকাতে আসবে না। এ ছাড়া রাশিয়া এবং চীন প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্র একেবারে পতনের কানায় চলে এসেছে বলে যে দাবি করে থাকে তা এ চুপ থাকায় বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

আফগানিস্তানে পশ্চিমারা যে পরিমাণ আর্থিক, নৈতিক ও কূটনৈতিক পুঁজি বিনিয়োগ করছিল, তার অতি ক্ষুদ্র অংশ তারা ইউক্রেনে ব্যয় করেছে। রাশিয়ার এ সর্বশেষ উসকানির জবাব দিতে পশ্চিমাদের ব্যর্থতা রাশিয়াকে সবখানেই আগের চেয়ে বেশি সাহসী করে তুলবে।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

ব্র্যান্ডন জে উইচার্ট উইনিং স্পেস: হাউ আমেরিকা রিমেইন্স এ সুপারপাওয়ার বইয়ের লেখক