রোগটির সঙ্গে লড়াইয়ে প্রধান অস্ত্র প্রস্তুতি

ঠিক এ মুহূর্তে বিশ্ব এক জটিল পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে। ইবোলা নামের এক ভাইরাসের সংক্রমণে জনস্বাস্থ্য খাতে জারি হয়েছে জরুরি অবস্থা। এ যুদ্ধে আমাদের প্রধান অস্ত্র প্রস্তুতি, সতর্ক নজরদারি এবং সর্বস্তরে সচেতনতা। জাতীয় পর্যায়ে কার্যকর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এ রোগ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিকভাবে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাতে সমর্থন জোগানো সম্ভব হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোয় ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে জনস্বাস্থ্য খাতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে। জরুরি অবস্থা জারির উদ্দেশ্য হলো, সংক্রমণটি যেন আর ছড়িয়ে পড়তে না পারে। আর সংক্রমণ ঠেকাতে প্রয়োজন সব দেশের যৌথ প্রচেষ্টা। আরও যে বিষয়টি মাথায় রেখে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তা হলো, দেশগুলো যেন যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকে। এই সময় জোরদার প্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই। একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা, সতর্ক নজরদারি, সংক্রমণ প্রতিরোধে জরুরি ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখা এবং জনগণকে পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হলে বলা যাবে, জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে সফলভাবে সাড়া দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
১৯৭৬ সালে আফ্রিকায় প্রথম ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। আফ্রিকার বেশ কিছু দেশের মানুষ আক্রান্ত হয়েছিল। বন্য প্রাণীর দেহ থেকে রোগটি মানুষের দেহে ছড়ায়। এ রোগে মৃত্যুহার অনেক বেশি। এ রোগের কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি।
এ দফায় রোগটির উৎপত্তি ও বিস্তার ঘটে পশ্চিম আফ্রিকার চারটি দেশ গিনি, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়া ও সিয়েরা লিওনে। রোগটি ছড়াচ্ছে কয়েক মাস ধরে। এবার এ রোগে আক্রান্ত, মৃতের হার ও ভৌগোলিক সীমা পেরোনোর হার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। পরিস্থিতি জটিল। পাশাপাশি দেশগুলো, যেখানে সীমান্ত দিয়ে মানুষের নিয়মিত যাতায়াত আছে এমন দেশগুলো ঝুঁকিতে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ঘটেছে আধা-শহুরে ও গ্রামীণ অঞ্চলগুলোয়।
সব দেশকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিধি (দি ইন্টারন্যাশনাল হেলথ রেগুলেশনস—আইএইচআর) অনুসরণ করতে। দেশগুলোকে বলা হচ্ছে, এ রোগ সম্পর্কে সব ধরনের তথ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে অন্য সব দেশের সঙ্গে বিনিময় করতে হবে। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধে নজরদারি, গবেষণাগার, মানবসম্পদ, যোগাযোগ এবং রোগের উপসর্গ ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগনির্ণয় ও দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে দেশগুলোর সক্ষমতা কতটুকু, সে সম্পর্কেও তথ্য জানানো কর্তব্য বলে বলা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইবোলা মোকাবিলা করার লক্ষ্যে এই রোগ দেখা দিয়েছে এমন দেশগুলোতে শতাধিক কর্মী নিয়োগ করেছে। সেসব কর্মী ওই দেশগুলোর স্বাস্থ্যব্যবস্থার অধীনে কাজ করছেন। এ ক্ষেত্রে শতাধিক বিশেষজ্ঞও কাজ করছেন। পশ্চিম আফ্রিকায় এ–সংক্রান্ত কাজ চলছে একটি বিশদ পরিকল্পনার আওতায়। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১০১ মিলিয়ন ডলার সহায়তা চেয়েছে।
সাধারণ মানুষকে সঠিক তথ্য দেওয়া না গেলে এবং তাদের ক্ষমতায়িত করা না হলে কোনো রোগের সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হয় না। প্রতিটি দেশকে জনগণের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য পৌঁছে দিতে হবে। জানিয়ে দিতে হবে কী করলে ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে।
আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের তরল পদার্থের সংস্পর্শে এলে রোগটি ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের সময় এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। যেকোনো ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধের কিছু নির্দেশনা আছে, সেগুলো মেনে চলতে হবে। বারবার হাত ধোয়ার মতো সাধারণ কিছু অভ্যাস এই রোগ থেকে দূরে থাকতে সহায়তা করে।
জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আক্রান্ত দেশগুলোতে বা সেখান থেকে যাওয়া-আসার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আক্রান্ত দেশগুলোর ওপর অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আইএইচআরের অন্যতম প্রধান নীতি হলো, জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও বাণিজ্যকেÿ ক্ষতিগ্রস্ত না করে। যাতায়াতকারীদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম। কারণ, রোগটি ছড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে নিবিড় ব্যক্তিগত যোগাযোগ আছে এমন ব্যক্তির মধ্যে। কেবল উপসর্গগুলো দৃশ্যমান হলেই কেউ আক্রান্ত হয়েছেন এমনটি বলা যাবে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের কোথাও যাতায়াত না করা এবং উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
প্রতিটি দেশকে সতর্ক থাকতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে সুচিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে সব সময়। এটাই এখন সময়ের দাবি।

ইংরেজি থেকে অনূদিত
পুনম ক্ষেত্রপাল সিং: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের পরিচালক।