রোজ দুটো কৌতুক শুনলে কোভিড হয় না

আমরা সাধারণত বলি, গরিব মানুষ মারা গেলে আমাদের টনক নড়ে না। বড়লোক, মধ্যবিত্ত কিংবা ক্ষমতাবানেরা মারা গেলে হইচই হয়।

এবার তো দেখি বড়লোক, মধ্যবিত্ত আর ক্ষমতাবানেরাই মারা যাচ্ছেন বেশি।

বস্তিবাসীর নাকি কোভিডে মৃত্যু নেই! কথাটা কি ঠিক? আমি দুটো ইংরেজি দৈনিকে এই নিয়ে প্রতিবেদন দেখেছি। বস্তিতে বস্তিতে গেছেন সাংবাদিকেরা, গিয়ে দেখেছেন, ওরা হাত ধোয় না, মাস্ক পরে না, গাদাগাদি, ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকে। কিন্তু ওদের এলাকায় কেউ কোভিডে মারা গেছে বলে কেউ শোনেনি। ডাক্তার বলছেন, ওদেরও হয়, ওরা টের পায় না। পরশুরামের ভাষায় বলতে হয়—হয়, হয়, জানতি পারো না।

তাই বলে মানুষ মারা গেলেও ওরা জানতে পারবে না যে একটা মানুষ মারা গেছে! ইংরেজি দৈনিক থেকে উদ্ধৃতি দিই, বস্তিবাসীরা বলেছেন, ‘ইট’স আ রিচম্যান’স ডিজিজ।’ এইটা বড়লোকগো অসুখ। কথাটা কি ঠিক?

আমি শুনেছি, কোভিডে কোটিপতিরা মারা যাচ্ছেন শুনে এক কোটি কোটিপতি নাকি আরও ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, আমি দেউলিয়া। আমার পাঁচটা বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ, পোরশে, আউডি, হামারের মালিক আমি না, মালিক আমার কোম্পানি। কোম্পানি ঋণখেলাপি। আমি ফকির। হে করোনা, আমি করোনা প্যাকেজ থেকে সাহায্য পাচ্ছি, ব্যাংকগুলো আমার ঋণ রিশিডিউল করেছে, এমনকি আমি পরম করুণাময়ের করুণা পেয়েছি, জাকাত মাফ নিয়ে নিয়েছি, তুমি কি আমাকে করুণা করবে না? করোনাভাইরাসকে দেখাবেন বলে তিনি নাকি ব্যাংক থেকে ঋণখেলাপির সার্টিফিকেট এনে দরজায় ঝুলিয়ে রেখেছেন।

ইন্টারনেটে বিনা পয়সায় পাওয়া কিছু কৌতুক পরিবেশন করি।

এক ভদ্রলোকের গাড়ি পার্কিং থেকে চুরি হয়ে গেল। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও গাড়ির হদিস পেলেন না।

তবে দুই দিন পর হারানো গাড়িটাকে আগের জায়গায় দেখে অবাক। হারানো বাহন ফিরে পেয়ে ভীষণ আনন্দিত হয়ে দৌড়ে গাড়ির কাছে গেলেন। ড্রাইভিং সিটে একটা মুখবদ্ধ খাম। খুলে দেখলেন ভেতরে দেওয়া চিরকুটে লেখা, ‘মায়ের শরীর হঠাৎ খারাপ হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালে নেওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু একে তো রাত, তার ওপর ছুটির কারণে কোনো গাড়ি না পাওয়ায় আপনার গাড়ি ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছিলাম।’

বিনীত ভঙ্গিতে আরও লেখা রয়েছে, ‘আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য দুঃখিত। গাড়িতে যত পেট্রল ছিল, সব আগের মতো আছে। তা ছাড়া আপনার গাড়ির খারাপ তালাটাও ঠিক করে দিয়েছি। গাড়ি ব্যবহারের বিনিময়ে আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য ১০টা সিনেমার টিকিট দিলাম। এই চিঠির খামের মধ্যেই সেগুলো পাবেন। টিকিটগুলো আগামীকালের, নাইট শো। আমি জানি, আপনার বাসার কাজের মেয়েসহ আপনারা ১০ জন। আপনাদের খাবারের জন্য রাখা আছে সিনেমা হলের ফুড কোর্টের ভাউচারও (বিল পরিশোধিত)। সিনেমা দেখার পর যা ইচ্ছা খেয়ে নেবেন।’

সব শেষে আবারও বিনীত অনুরোধ, ‘আমার অনন্যোপায় অপরাধের জন্য ক্ষমা করে দেবেন!’

১৫ লাখ টাকা দামের গাড়িটা ফেরত পাওয়ায় পরিবারের সবাই ভীষণ খুশি। পরদিন উপহার পাওয়া টিকিট নিয়ে সবাই চলে গেল সিনেমা দেখতে। ছবি দেখা শেষ করে মনের মতো স্পেশাল চিকেন-রাইস-কফি-আইসক্রিম খেয়ে বের হলো সবাই; কিন্তু গাড়ি তো নেই পার্কিংয়ে।

আবারও চুরি হলো গাড়িটা!?

উপায় না পেয়ে ট্যাক্সি ডেকে বাড়ি ফিরে তারা দেখল, ফ্ল্যাটের দরজা ভাঙা। ঘরের সব দামি জিনিস, আসবাবপত্র, টাকা, গয়না চুরি হয়ে গেছে। ক্ষতি প্রায় কোটি টাকা।

বাইরে টেবিলে একটি খাম পড়ে আছে।

তাতে লেখা, ‘সিনেমা কেমন দেখলেন? গাড়িটা আবার চুরি করে নিয়ে গেলাম। আপনি কেন গাড়ির লক আর চাবি বদলাতে ভুলে গেলেন? ওদিকে বাসা একেবারে ফাঁকা রেখে কেউ সিনেমা দেখতে যায়? দেখলেন তো, এতটুকু বোকামির জন্য কত বড় ক্ষতি হয়ে গেল?’

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর বানানোর জন্য টেন্ডার ডাকলেন। এতে টপ তিন বিডার দেশ হলো চীন, জাপান আর বাংলাদেশ। চীন বলছে ৩ বিলিয়ন ডলার, জাপান বলছে ৭ বিলিয়ন ডলার আর বাংলাদেশ বলছে ১০ বিলিয়ন ডলার খরচ লাগবে।

ট্রাম্প চীনের প্রতিনিধি লিকে বললেন, তোমাদের খরচের হিসাবটা বুঝিয়ে বলো।

লি বলল, ১ বিলিয়ন ইট, বালু, সিমেন্টের জন্য, ১ বিলিয়ন লেবার খরচ, আর ১ বিলিয়ন আমার লাভ।

জাপানের আকিও বলল, ৩ বিলিয়ন ইট, বালু, সিমেন্টের জন্য, ৩ বিলিয়ন শ্রমিক আর ১ বিলিয়ন আমার লাভ।

বাংলাদেশের আবদুল কুদ্দুস বলল, স্যার, ৪ বিলিয়ন আপনার, ৩ বিলিয়ন আমার আর বাকি ৩ বিলিয়ন ডলার চীনরে দিমু, চীন কাজ করবো। এইবার কন, কাজ কারে দিবেন।

আগে সবাই বলত, থিংক পজিটিভ। পজিটিভ মানুষ ভালো। সবকিছু পজিটিভলি দেখতে হয়। এখন আবার নেগেটিভ হওয়া ভালো। সরকার করোনা টেস্ট কমিয়ে দিয়েছে। অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, আমরা করোনাকে গুরুত্ব দিচ্ছি না, কিন্তু করোনা আমাদের ঠিকই গুরুত্ব দিচ্ছে।

তো, থিংক পজিটিভ।

১. গলা ব্যথা ব্যথা। থিংক পজিটিভ।

২. শুকনো কাশি। থিংক পজিটিভ।

৩. গা ব্যথা। থিংক পজিটিভ।

৪. জ্বর জ্বর। থিংক পজিটিভ।

৫. পেট খারাপ। থিংক পজিটিভ।

৬. মন খারাপ। থিংক পজিটিভ।

৭. করোনার টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে? থিংক পজিটিভ।

আপনার কোভিড হয়েছে ধরে নিয়েই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। থিংক পজিটিভ। আপনার কিছু হবে না। কিন্তু ডাক্তারের কথা একটাও অমান্য করবেন না।

হাসুন। গবেষণায় বেরিয়েছে, রোজ দুটো করে কৌতুক শুনতে হবে এবং হাসি না পেলেও হাসতে হবে। তাহলে আপনাকে আর কোভিড কাবু করতে পারবে না। এই গবেষণা করতে খরচ হয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। ১৩৮ কোটি টাকা আপনার, আর ২ কোটি এই কৌতুকবিদের। হাসুন।

আনিসুল হক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক ও সাহিত্যিক