শান্তি ও নিরাপত্তায় সুন্নাত অনুসরণের বিকল্প নেই

সুন্নাত মানে আদর্শ। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুমহান আদর্শই সুন্নাত নামে পরিচিত। তিনি সর্বকালের সব মানুষের সর্বোত্তম আদর্শ। আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘অবশ্যই আপনি মহান চরিত্রে সর্বোচ্চ পর্যায়ে অধিষ্ঠিত।’ (সুরা-৬৮ কলম, আয়াত: ৪)।

শিষ্টাচার, শুদ্ধাচার, নীতি-আদর্শ ও নৈতিক আচরণই নবীজি (সা.)-এর সুন্নাত। জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে নবীজি (সা.)–এর সুন্নাত আদর্শ অনুকরণ ও অনুসরণ করা হলো ইসলাম।

কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রাসুল (সা.) তোমাদের যা দিয়েছেন তোমরা তা ধারণ করো আর তিনি যা বারণ করেছেন তা হতে বিরত থাক।’ (সুরা-৫৯ হাশর, আয়াত: ৭)।

নবী-রাসুল জগতের শ্রেষ্ঠ মানুষ। তাঁদের জীবনাদর্শও শ্রেষ্ঠ। রহমাতুল লিল আলামিন, বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত, মানবজাতির সর্বোত্তম আদর্শ, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের জীবনের প্রতিটি কাজই সবার অনুকরণীয়। তাঁর অনুপম আদর্শ এবং তাঁর জীবনের ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক দিকগুলো সমাজ ও সভ্যতার জন্য পরম উপকারী এবং মানুষের ইহকালে ও পরকালে মুক্তির দিশারি।

কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা-৩৩ আহযাব, আয়াত: ২১)।

‘তোমাদের জন্য ইবরাহিম ও তঁার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ। তোমরা যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রত্যাশা করো নিশ্চয় তাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ তাঁদের মধ্যে।’ (সুরা-৬০ মুমতাহিনা, আয়াত: ৪ ও ৬)।

নবী করিম (সা.) যে অবস্থায় যে কাজ যতটুকু গুরুত্বসহকারে করেছেন বা বিরত রয়েছেন, সে অবস্থায় সে কাজ ততটুকু গুরুত্বসহকারে করা বা বিরত থাকা হলো সুন্নাত। চিন্তায়, মননে বিশ্বাস ও কর্মে সব ক্ষেত্রেই এর পরিধি বিস্তৃত। শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও সামাজিক সব পর্যায়ে এটি পরিব্যাপ্ত।

ইসলাম ইহজাগতিক ও পরকালীন জীবনের কল্যাণ ও মুক্তির শিক্ষা দেয়। কল্যাণ রাষ্ট্র ও সুখী–সমৃদ্ধিশালী সমাজ বিনির্মাণে প্রয়োজন মহামানবের মহান আদর্শ সুন্নাতের অনুশীলন। সমাজের সর্বস্তরে এই সুন্নাত বাস্তবায়নে প্রয়োজন সৃজনশীল ভাবনা।

নবীজি (সা.)–এর ভালোবাসা মুমিনের ইমান; সুন্নাতের অনুসরণই ভালোবাসার প্রমাণ। কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হে রাসুল!) আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার অনুসরণ করো; ফলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন, তোমাদের পাপরাশি মাফ করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ৩১)।

হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আমার সুন্নাতকে ভালোবাসে, সে অবশ্যই আমাকে ভালোবাসে; আর যে আমাকে ভালোবাসে সে জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে।’ (তিরমিজি: ২৭২৬)। ‘যে আমার সুন্নাতকে জিন্দা করবে সে আমাকে ভালোবাসে, যে আমাকে ভালোবাসে সে জান্নাতে আমার সাথেই থাকবে।’ (মুসলিম জামে সহিহ)।

তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের কেহ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মুমিন হবে না, যতক্ষণ না আমি (নবীজি সা.) তার নিকট তার সন্তান অপেক্ষা, তার পিতা অপেক্ষা এবং সকল মানুষ অপেক্ষা বেশি প্রিয় না হই।’ (বুখারি: ১৩-১৪)। ‘যে যাকে ভালোবাসবে, তার সঙ্গে তার হাশর নশর হবে।’ (বুখারি: ৬১৬৯ ৩৬৮৮, মুসলিম: ২৬৩৯)। হাদিসে আরও রয়েছে, ‘সর্বোত্তম আমল হলো আল্লাহর জন্য ভালোবাসা।’ (জামে সহিহ: ২৫৩৯)। রাসুলে আকরাম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মহব্বত করে ও আল্লাহর জন্য ঘৃণা করে এবং আল্লাহর জন্য দান করে ও আল্লাহর জন্য বিরত থাকে; অবশ্যই তার ইমান পূর্ণ হলো।’ (আবু দাউদ: ৪০৬৪)।

সুন্নাতের কথা যখন আসে, ফরজ ও ওয়াজিব তার আগেই থাকে। ফরজ ও ওয়াজিব পরিত্যাগ করে সুন্নাত পালনের দাবি অসার। সৎ উপার্জন, হালাল খাবার ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত। নবীজি (সা.)–এর জীবন, দর্শন ও কর্ম যে যতটুকু অনুসরণ করবে, সে ততটুকু সফলতা ও কল্যাণ লাভ করবে। শান্তি ও নিরাপত্তায় সুন্নাত অনুসরণের বিকল্প নেই।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব

[email protected]