শিক্ষিত বেকার বনাম প্রকৃত বেকারের সংখ্যা: ‘জাতীয় কর্মসংস্থান কৌশল’ আছে কি

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মতে, দেশে কোনো বেকারত্ব নেই, উল্টো দেশে এখন শ্রমিকই পাওয়া যাচ্ছে না। করোনা-পরবর্তী শিল্পশ্রমের সাময়িক সংকটের বিষয়টি আংশিক সত্য। শ্রম প্রাচুর্যের মধ্যেও শ্রম দক্ষতার সংকটও জানা। শিক্ষিত বেকারত্ব প্রায় ৩৩ শতাংশ এবং সার্বিক বেকারত্ব ৩৮ শতাংশের ওপর। সরকার ও পরিসংখ্যান ব্যুরো বরাবরই ব্যাপক বেকারত্বকে অস্বীকার করছে এবং অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, বিপরীতে ‘জাতীয় কর্মসংস্থান কৌশল’ প্রণয়ন গুরুত্ব পাচ্ছে না।

শিক্ষিত বেকারত্ব ও শ্রমবাজারে দক্ষতার সংকট প্রাতিষ্ঠানিক ও কৌশলগত ব্যর্থতা

২০১৮ সালের বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় যতগুলো পদ ছিল, আবেদনকারী ছিলেন ২০০ গুণের বেশি। মাত্র ছয়টি সরকারি ক্ষেত্রে চাকরি পেতে আবেদন করেন মোট আধা কোটির বেশি তরুণ (২৮ ডিসেম্বর’ ১৯, প্রথম আলো)। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে আবেদন ছিল পদের ৮৯৭ গুণ, খাদ্য অধিদপ্তরে পদের বিপরীতে আবেদন ছিল ১৩৬৪ গুণ। কয়েকটি বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি মেলেনি প্রায় ৩২ হাজার শিক্ষিতের, তাঁরা বিসিএস বেকার। বিআইডিএস জরিপ মতে, এসএসসি উত্তীর্ণদের পৌনে ২৭ শতাংশ, এইচএসসি উত্তীর্ণদের প্রায় ২৮ শতাংশ, স্নাতকদের ৩৬ শতাংশ, স্নাতকোত্তরদের ৩৪ শতাংশ অর্থাৎ সার্বিকভাবে শিক্ষিতদের ৩৩ দশমিক ১৯ শতাংশ বেকার।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা দেশে কোনো বেকারত্ব না দেখলেও বেকারত্বের চেয়ে দক্ষ শ্রমিকের ঘাটতি বেশি দেখেন, সেটা ভালো। তবে প্রশ্ন থাকে, অদক্ষতার কারণে লাখ লাখ শিক্ষিত-অশিক্ষিত বেকার থাকলেও তাকে বেকারত্ব বলা হবে না? এই হীনম্মন্যতার শেষ হবে কবে? বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা এবং শিক্ষা গবেষণা কেন দক্ষতা তৈরি করতে পারছে না, তার নীতিকৌশল প্রণয়ন তো এ উপদেষ্টাদেরই কাজ ছিল।

বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধিও কেন কর্মহীন থেকে গেছে? কেন শিক্ষিতরা দক্ষ নয়? কেন দক্ষ কর্মীর ঘাটতি অনেক বেশি, তা নির্ণয়ে আজও কোনো টাস্কফোর্স গঠিত হয়েছে কি? শিক্ষিতদের কর্মসংস্থান সংকটের সুলুক সন্ধান হয়েছে কি? উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশের আরএমজি শিল্প বেশি অর্ডার পাচ্ছে, কিন্তু তারা দক্ষ শ্রমিকের অভাবের কারণে ভুগছে। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশে শ্রমিক সরবরাহের সংকট হওয়ার বিষয় কি সরকারের শ্রমবাজার ও কর্মসংস্থান পরিকল্পনাহীনতারই প্রমাণ নয়?

উপদেষ্টা মহোদয় শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জনের আগে একটি সঠিক ক্যারিয়ার পরিকল্পনা তৈরি করতে উৎসাহিত করে বলেন, আপনি ডিগ্রি নেওয়ার আগে, কী ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন? পাল্টা প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের জনপ্রশাসন, শিক্ষা এবং শ্রম মন্ত্রণালয় কি শিক্ষার্থীদের ‘ক্যারিয়ার পরিকল্পনা’র কোনো কোর্স কিংবা ট্রেনিংয়ের আয়োজন করে, ফান্ড দেয়? ইউরোপে তো কাজটা স্কুল-কলেজেরই বিধিবদ্ধ কাজ! বাংলাদেশে ৬০টির মতো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রায় ৯০টির মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। রয়েছে বিশেষায়িত প্রকৌশল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ, টেক্সটাইল কলেজ এবং প্রায় অর্ধশত পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, আছে কয়েক হাজার মাদ্রাসা। এত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকতেও শ্রমবাজার উপযোগী দক্ষতা তৈরি হচ্ছে না কেন? এটা বলার সময় হয়নি যে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দক্ষতা উৎপাদনের মান অপর্যাপ্ত কিংবা একেবারেই মানহীন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার কোর্স, ল্যাব সুবিধা, যোগ্য শিক্ষকের সংকট ও সেকেলে শিক্ষাদান পদ্ধতি কে ঠিক করবে? বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা কি ব্যর্থ হয়ে যায়নি?

উপদেষ্টা মহোদয় কি বলবেন, কবে, কোন সালে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স ‘শ্রমবাজারের চাহিদা’ মোতাবেক পড়ানো হবে? দলীয় লেজুড়বৃত্তির বাইরে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগের কাঠামো এবং বাজেট আসবে? আসনসংখ্যা চাকরির বাজারের দক্ষতানির্ভর করে সাজানো হবে? কবে সাধারণ ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গৎবাঁধা বিষয়াদি সীমিত করে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী নতুন বিষয়, কারিগরি বিষয়, দেশে ও প্রবাসের শ্রমবাজার উপযোগী শিক্ষা কোর্সের জন্য সংস্কার পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন হবে? সাধারণ ও উচ্চশিক্ষার সংস্কার, মাদ্রাসা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষার প্রসারের মাস্টারপ্ল্যান কি উপদেষ্টারা করেছেন?

বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোতে দক্ষ ও অতি দক্ষ জনসংখ্যা ৫০ শতাংশের বেশি করার চেষ্টা থাকে। জার্মানিতে প্রায় ৭৩ শতাংশ জনসংখ্যা দক্ষ। জাপানে ৬৬, সিঙ্গাপুরে ৬৫, অস্ট্রেলিয়াতে ৬০, চীনে ৫৫, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫০, মালয়েশিয়ায় প্রায় ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী কারিগরি মাধ্যমে অধ্যয়ন করেন। বিপরীতে বাংলাদেশে সার্বিকভাবে স্বল্প দক্ষ ও দক্ষ জনশক্তি ৩৮ শতাংশ বলা হলেও কারিগরিভাবে দক্ষ, মধ্যমানে দক্ষ জনশক্তি মাত্র ১৪ শতাংশ। আন্তর্জাতিক কারিগরি শিক্ষার সংজ্ঞা ও বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি মূলত ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

আরও পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সরকারের দেওয়া (কারিগরি শিক্ষার্থীদের) হার সঠিক নয়। কারণ, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এক নয়। বৃত্তিমূলক শিক্ষার পরের ধাপ কারিগরি শিক্ষা। সরকার কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে এক করে হিসাব করছে, এতে কারিগরির প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না।’ বৈশ্বিক বাস্তবতায়, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চাহিদায় সাড়ে ৮ থেকে ১৪ শতাংশ কারিগরি শিক্ষার্থী একেবারেই অপ্রতুল। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) তথ্যমতে, দেশের ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে মাত্র ৬ দশমিক ৩ শতাংশের কোনো বিশেষ বিষয়ে দক্ষতা রয়েছে। আর ৫৩ শতাংশ স্বল্প দক্ষ এবং ৪০ দশমিক ৭ শতাংশ একেবারেই অদক্ষ। দক্ষতার এমন সংকট সমাধানে স্বল্প মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদে সরকার ও তার উপদেষ্টাদের কোনো মাস্টারপ্ল্যান আছে কি? নতুন যে শিক্ষাক্রম নিয়ে কাজ করছে সরকার, তা কি দক্ষতার সংকট সমাধান করবে? মানসম্পন্ন শিক্ষক ও শ্রেণি শিক্ষাদান পদ্ধতি তৈরি না করে শুধু সিলেবাস পরিবর্তন কোনো কাজে আসবে?

কর্মসংস্থান ও কর্মদক্ষতা তৈরির বাজেটীয় কৌশল গুরুত্বপূর্ণ। বেকারত্ব ডেটাবেইজ দরকার, সর্বজনীন বেকার ভাতা দরকার। আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসংস্থান ড্যাশবোর্ড তৈরি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সরকার বেকার ভাতা দিতে বাধ্য না হওয়া পর্যন্ত কি বেকারত্বের প্রকৃত সংখ্যা এবং ‘জাতীয় কর্মসংস্থান কৌশল’ নিয়ে ভাববে না? আগামী বছরের কোন মাসে কত কর্ম তৈরি করবে, কোন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে শিক্ষার বাজার উপযোগী কোর্স চালু করবে, তার রোডম্যাপ বানাতে হবে সরকারকে।

ব্যয় বৃদ্ধির বিভীষিকা, আয়সংকোচন, বাল্যবিবাহ এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে শিল্পশ্রম সংকট

স্বল্প দক্ষ শ্রমিকনির্ভর খাতে কিছুটা শ্রম সংকট রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ব্যবসায়ীরা। কোভিড-১৯ জনিত আয়সংকোচন, গ্রামে চলে যাওয়া, হঠাৎ এবং অদূরদর্শী বিধিনিষেধের কাজহীন মানুষকে শহর এবং শিল্পাঞ্চল ছেড়ে যেতে বাধ্য করেছে। গ্রামীণ এলাকার তুলনায় শহরাঞ্চলে ব্যয় বৃদ্ধি, আয়সংকোচনজনিত দারিদ্র্যের বৃদ্ধির হার বেশি। করোনাকালে শহরে জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় বৃদ্ধি, জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, অতিরিক্ত স্বাস্থ্য ব্যয় ও ঝুঁকি মানুষকে শহর থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে।

‘পভার্টি ডায়নামিকস অ্যান্ড হাউজহোল্ড রিয়্যালিটি’ নামের পিপিআরসি-বিআইজিডি সমীক্ষা বলছে, ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত, শহরাঞ্চলের কিছু এলাকায় নতুন দরিদ্রের সংখ্যা ৫৯ শতাংশ, যেখানে গ্রামীণ এলাকায় এটি সর্বোচ্চ ৪৪ শতাংশ। অর্থাৎ গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। বেঁচে থাকার তাগিদে নিম্ন আয়ের মানুষ গ্রামে চলে গেছে। জরিপ অনুসারে, ২০২০-২১ সালে ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ বস্তিবাসী শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে, তাদের মধ্যে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ শহরে ফিরে আসেনি। শহরে বাসাবাড়ি ভাড়ার বর্ধিত ‘টু লেট’ সংখ্যাতেও এর প্রমাণ মেলে। জরিপ অনুসারে, প্রাক্‌-কোভিড সময়ের তুলনায় শহরের বস্তিবাসীদের আয় কমেছে, কিন্তু খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় জুন-২০১৯-এর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বর্ধিত খাদ্য ব্যয়ের কারণেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রান্তিক মানুষকে গ্রামে যেতে হয়েছে। করোনায় শহরে শ্রমের জোগান কমেছিল, গ্রামে অলস শ্রম কিংবা ছদ্মবেকারত্ব ঘনীভূত হয়েছে। এখন সেটাকে ফেরানোর কার্যকর কৌশল নেওয়াটা মুখ্য।
স্কুল বন্ধের ৫৪৪ দিন পর, সবচেয়ে গুরুতর হচ্ছে বাল্যবিবাহের সমস্যা। তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী শিল্পের প্রধানতম শ্রমিক হচ্ছেন আমাদের স্বল্প বয়সী মেয়েরা। করোনার দেড় বছরে স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলেমেয়েদের ঝরে পড়া বেড়েছে এবং বেড়েছে বাল্যবিবাহ। গ্রামীণ অঞ্চলে বাল্যবিবাহে পড়া মেয়ের পক্ষে কর্মে ফেরার ওপর বহুবিধ সামাজিক বাধা আছে, ফলে শিল্পের নতুন শ্রমের জোগান কমেছে।

বাল্যবিবাহের কারণে কী পরিমাণ স্কুলছাত্রী ঝরে পড়েছে, তার প্রকৃত সংখ্যা আমরা জানি না। কারণ, বিবিএস এবং সরকার এ বিষয়ে সুস্পষ্ট জরিপ করেনি। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের গবেষণা বলছে, দেশে করোনার কারণে বাল্যবিবাহ শতকরা ১৩ ভাগ বেড়েছে, যা গত ২৫ বছরে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, দেশে প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে ঝরে পড়ার হার শতকরা ১৭, মাধ্যমিক পর্যায়ে শতকরা ৩৭ ভাগ। তবে করোনায় এ সংখ্যা বেড়েছে বলে আশঙ্কা করছে সরকার। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডও আগামী শিক্ষাবর্ষে ৭৭ লাখ বই কম ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে; স্পষ্টতই সরকার ব্যাপক স্কুল-ঝরে-পড়ার বিষয়ে অবগত, কিন্তু প্রকৃত সংখ্যার তথ্য প্রকাশে তার অনীহা।

সবশেষে, বর্তমানে দ্রব্যমূল্য, উচ্চ জ্বালানি মূল্য, উচ্চ মূল্যস্ফীতির সমস্যাটিও প্রকট। শহরে দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি ভয়াবহ। শহরের নিম্নবিত্ত মানেই টিসিবি ট্রাকের পেছনে দীর্ঘ কর্মঘণ্টা নষ্টের মিছিল, গ্রামের মোটামুটি জীবন ফেলে এই বিভীষিকাময় অনিশ্চিত জীবনে কে ফিরতে চায়? সানেম জরিপে সরকারের মূল্যস্ফীতিকে চ্যালেঞ্জ করে বলা হচ্ছে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি সরকারি হিসাবের দ্বিগুণ। পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন এবং বেসরকারি হিসেবে দেখা যাচ্ছে, মূল্যস্ফীতি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। এমন উচ্চ ব্যয়ের ভয় থেকে গ্রামীণ শ্রমিকের শহরে ফেরা অনিশ্চিত। সরকার সঠিক নীতি কৌশল না নিলে, গ্রামের শ্রমিক না ফেরাতে পারলে শিল্পশ্রমের তাৎক্ষণিক জোগান সহজ হবে না।

সালমান এফ রহমান প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য উপদেষ্টা। ওনার বরাতে কিঞ্চিৎ সত্য, কিছু ভ্রান্ত এবং গবেষণাহীন বক্তব্য সরকারের নীতি কৌশলকে ভুল পথে পরিচালিত করতে বাধ্য; বরং গ্রামে ফিরে যাওয়া স্বল্প দক্ষ কিন্তু অকৃষি শ্রমিককে কীভাবে আবারও শিল্প জোনে ফেরানো যায়, তার কৌশল বাজেটে উপস্থাপনা করতে হবে। কীভাবে শ্রমিকদের বাসাভাড়া, পরিবহন ব্যয় কমিয়ে তাঁদের শিল্পের শ্রম সরবরাহ চেইনে আনা যায়, রেশন দিয়ে শিল্পাঞ্চল ও শহরে জীবনযাত্রায় ব্যয় সহনীয় রাখা যায়—তার স্বল্প মেয়াদি কৌশল প্রণয়ন দরকার। পাশাপাশি প্রান্তিক ও ব্যক্তিপর্যায়ে কৃষিকে যান্ত্রিক করার কার্যকর এবং বোধগম্য উদ্যোগ নিয়ে গ্রামীণ ছদ্মবেকারত্ব কমানোর স্বল্প ও মধ্য মেয়াদি উপায় দরকার। বাজেটকে সমানে রেখে, বাল্যবিবাহে পড়া শিক্ষার্থীকে কীভাবে স্কুলে কিংবা কর্মে ফেরানো যায়, তার প্রণোদনা কৌশল নিয়ে ভাবতে হবে।

কর্মসংস্থান ও কর্মদক্ষতা তৈরির বাজেটীয় কৌশল গুরুত্বপূর্ণ। বেকারত্ব ডেটাবেইজ দরকার, সর্বজনীন বেকার ভাতা দরকার। আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসংস্থান ড্যাশবোর্ড তৈরি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সরকার বেকার ভাতা দিতে বাধ্য না হওয়া পর্যন্ত কি বেকারত্বের প্রকৃত সংখ্যা এবং ‘জাতীয় কর্মসংস্থান কৌশল’ নিয়ে ভাববে না? আগামী বছরের কোন মাসে কত কর্ম তৈরি করবে, কোন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে শিক্ষার বাজার উপযোগী কোর্স চালু করবে, তার রোডম্যাপ বানাতে হবে সরকারকে। দক্ষতা তৈরি এবং চাকরি তৈরির কাজ কীভাবে পাশাপাশি চলবে, তার মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন যদি না-ই হয়, প্রধানমন্ত্রীর এতগুলো উপদেষ্টা রাখার দরকার কি!

  • ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব টেকসই উন্নয়নবিষয়ক লেখক। গ্রন্থকার: চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও বাংলাদেশ, বাংলাদেশ: অর্থনীতির ৫০ বছর, অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবিত কথামালা, উন্নয়ন প্রশ্নে বাংলাদেশের কিছু সংকট ও সম্ভাবনা। [email protected]