সব সিন্ডিকেটের বড় সিন্ডিকেট সরকার

ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অঘোষিতভাবে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে জনগণকে জিম্মি করে ফেলা হয়েছিল
ছবি : প্রথম আলো

জিনকে দিয়ে প্রচুর টাকা তৈরি করে রাতারাতি বড়লোক বানিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখায় ‘জিনের বাদশা’ পরিচয় দেওয়া কেউ কেউ। কেউবা স্বপ্ন দেখায় তক্ষক, সাপের বিষ কিংবা সীমান্ত পিলারের ভেতরের অমূল্য ‘চুম্বক’-এর ব্যবসার মাধ্যমে দ্রুত কোটিপতি করে দেওয়ার। কিছু প্রতারক ব্যবসার নামে প্রতারণা করে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ, কোটি কোটি টাকা। এগুলো গোপন প্রতারণা, ঘটতেই পারে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর নজরদারির অন্তরালে, যদিও এসব ক্ষেত্রে প্রতারিতদের পক্ষ হয়ে প্রতারকদের ধরে শাস্তির আওতায় আনা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু এ কথা বলা যায় না সাম্প্রতিককালের আলোচিত কিছু তথাকথিত ই-কমার্স সাইটের ক্ষেত্রে।

ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, আলেশা মার্টের মতো গোটা বিশেক প্রতিষ্ঠান বহু মানুষের সর্বস্ব লুট করল। অনেকে এগুলোকে ই-কমার্স বলেন, এটা ভুল। একেবারে শুরু থেকেই এগুলো ছিল পঞ্জি স্কিম—কোনোভাবেই ব্যবসা নয়, ডাহা প্রতারণা। কিন্তু এগুলো তক্ষক কিংবা সীমান্ত পিলারের মতো গোপন প্রতারণা ছিল না, ছিল প্রকাশ্য। বড় বড় তারকাদের পণ্যদূত হিসেবে ব্যবহার করে, সরকারের মন্ত্রীদের অনুষ্ঠানে ডেকে এনে তাদের প্রশংসা জনগণকে শুনিয়ে, জাতীয় ক্রিকেট দলের স্পনসর বানিয়ে ভীষণ ঢাকঢোল পিটিয়ে ব্যবসার নামে এ প্রতারণাগুলো করা হয়েছে।

কোম্পানিগুলো যখন লাটে উঠল, তখন এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে পারার কারণ হিসেবে অনলাইন ব্যবসার সুনির্দিষ্ট আইন ও নীতিমালা না থাকার কথা বলা হয়েছে। এটা মিথ্যা। কারণ দুটি রাষ্ট্রীয় সংস্থার হাতে আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে এসব প্রতারণা বন্ধ করার ক্ষমতা ছিল। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন এবং বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ)। কিন্তু জনগণ রক্ষা পেল না, পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রের চোখের সামনে নাগরিকেরা হারাল কয়েক হাজার কোটি টাকা। সঙ্গে অন্যায়ভাবে যুক্ত হলো ‘লোভী’ তকমা। এ ঘটনাগুলো ধামাচাপা পড়েছে অনেকটা, কিন্তু আবার মনে পড়ল ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির জেরে পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য দেখে। সেটা কেন, সেই প্রসঙ্গে আসছি পরে।

শহর এলাকায় সিটিং সার্ভিস বলে কোনো কিছুর অফিশিয়াল অস্তিত্ব ছিল না কোনোকালে। কিন্তু এ নামেই মানুষের পকেট কাটা হয়েছে বছরের পর বছর। কোনো নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। ভাড়া বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে মানুষের কিছু শোরগোলের ফলে আজ যখন সরকার এসব সার্ভিসের বিরুদ্ধে লোক দেখানো পদক্ষেপের কথা বলেছে, তখনই সংকট শুরু।

ঢাকার রাস্তায় এখন পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে যাত্রীদের তুমুল সমস্যা হচ্ছে। গণপরিবহনে চড়ার সময় আমরা শ্রমিকদের সামনে পাই। তাই তাদের ওপরে উগরে দেই আমাদের যাবতীয় ক্ষোভ। কিন্তু এ ক্ষোভের পেছনে মূল দায়ী যাঁরা, পরিবহন মালিক, তাঁদের তো আমরা দেখি না, কাছাকাছি পাই না, তাই তাঁরা থাকেন নিরাপদে।

শহর এলাকায় সিটিং সার্ভিস বলে কোনো কিছুর অফিশিয়াল অস্তিত্ব ছিল না কোনোকালে। কিন্তু এ নামেই মানুষের পকেট কাটা হয়েছে বছরের পর বছর। কোনো নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। ভাড়া বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে মানুষের কিছু শোরগোলের ফলে আজ যখন সরকার এসব সার্ভিসের বিরুদ্ধে লোক দেখানো পদক্ষেপের কথা বলেছে, তখনই সংকট শুরু। পরিবহন শ্রমিকেরা বলছেন, মালিকের কাছে তাঁদের টাকা বুঝিয়ে দিতে হয় তথাকথিত সিটিং সার্ভিসের ভাড়া হিসাব করে, তাই রাস্তায় সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিলে তাদের কোনোভাবেই চলবে না—কথাটা যৌক্তিক। পরিবহন শ্রমিকেরা আর্থসামাজিকভাবে প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ। অনেক ক্ষেত্রেই তারা বিপদে পড়েন মালিকের প্রচণ্ড স্বৈরাচারী আচরণের কারণে।

সাম্প্রতিক সংকটের শুরু হয়েছিল ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে পরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর কারণে। একটা পরিবহন পরিচালনায় তার বিনিয়োগ এবং পরিচলন ব্যয়ের ক্ষেত্রে জ্বালানির অনুপাত বিবেচনায় নিলে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি কারণে পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির কথা ছিল ৫ বা ৬ শতাংশ। কিন্তু ভাড়া বাড়ল পরিবহনের ক্ষেত্রে ২৭ আর লঞ্চের ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ। কিন্তু কার্যত এটা গিয়ে ঠেকেছে ৫০ বা তার চেয়ে বেশি শতাংশে।

ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আইনি সমস্যা এড়ানোর জন্য অঘোষিতভাবে পরিবহন ধর্মঘট ডেকে জনগণকে জিম্মি করে ফেলা হয়েছিল এবং এই ‘পাতানো খেলা’য় সরকার যে সিদ্ধান্ত নিল, সেটা স্রেফ মালিকপক্ষের সুবিধাই নিশ্চিত করল।এ ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা জোরেশোরে বললাম সিন্ডিকেটের কথা। সরকারের কাছে দাবি জানালাম এ সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে, তাহলেই মুক্তি মিলবে জনগণের।

এখানে সড়ক সম্পর্কিত খুবই প্রাসঙ্গিক আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কয়েকটা কথা বলে রাখি। ঢাকার রাস্তায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে ঢাকার রাস্তায় নেমে এসেছিল। এ অরাজনৈতিক, স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনটি (অরগানিক মুভমেন্ট) এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস হয়ে থাকবে অনাগত দিনেও।

তারপর সেই চাপের মুখে সংসদে পাস করা হয় ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’। কিন্তু আইনটি নিয়ে শুরু থেকেই ঘটে তুঘলকি কাণ্ড। আইনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ ধারার (৭৪, ৮৪, ৯৮ ও ১০৫) প্রয়োগ স্থগিত রাখে সরকার। এসব ধারায় পুলিশ কোনো মামলা করেনি। সংসদে পাস হওয়া একটি আইন সংসদে সংশোধিত হওয়া ছাড়া তার কিছু অংশ প্রয়োগ না করার এ চর্চা পৃথিবীতেই নজিরবিহীন।

এ দেশে জনগণ যখনই তার দৈনন্দিন জীবনযাপনে সমস্যা-সংকটে পড়ে, তখনই আলাপ করে ‘সিন্ডিকেট’ নিয়ে। রমজানে বা অন্য সময় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে, আমরা বলি সিন্ডিকেট এটা করেছে। ধানের মৌসুমে ধানের দাম পড়ে গিয়ে কৃষক ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হয়, আমরা সেখানেও সিন্ডিকেটের কথা বলি।

এখন পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী পাল্টে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে গোটা আইনটি। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে জামিন অযোগ্য প্রতিটি ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। অপরাধের শাস্তি কমানো হয়েছে প্রায় সর্বক্ষেত্রে। বিশেষ করে আর্থিক জরিমানা কমেছে। আর্থিক জরিমানা কমানোই ছিল মূল দাবি মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর। মালিকেরা যা চেয়েছেন ঠিক সেটাই হয়েছে; নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ক্ষমতাসীন দলের ‘হেলমেট বাহিনীর’ হাতে রাস্তায় মার খাওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এটা এক ভয়ংকর প্রতারণা।

এখানেও নিশ্চয়ই প্রমাণিত হয়েছে ‘পরিবহন সিন্ডিকেট’ কতটা ভয়ংকর, কতটা ক্ষমতাধর। এ সিন্ডিকেটের হাতে জনগণ কীভাবে জিম্মি হয়ে আছে, সেই আলাপ হয় নাগরিকদের মধ্যে, উপসম্পাদকীয় লেখা হয় পত্রিকায়, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আলোচনা হয়।

আসলে এ দেশে জনগণ যখনই তার দৈনন্দিন জীবনযাপনে সমস্যা-সংকটে পড়ে, তখনই আলাপ করে ‘সিন্ডিকেট’ নিয়ে। রমজানে বা অন্য সময় জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ে, আমরা বলি সিন্ডিকেট এটা করেছে। ধানের মৌসুমে ধানের দাম পড়ে গিয়ে কৃষক ন্যায্যমূল্য বঞ্চিত হয়, আমরা সেখানেও সিন্ডিকেটের কথা বলি। উৎপাদনস্থলে ‘পানির দামে’ বিক্রি হওয়া সবজি ৭ থেকে ১০ গুণ দামে আমরা ঢাকায় কিনি, এখানেও ‘মধ্যস্বত্বভোগী’ অর্থাৎ সিন্ডিকেট।

পেঁয়াজের কেজি ঠেকে ৩০০ টাকায়, আমরা বলি সিন্ডিকেটের কথা। কয়েক বছর ধরে যখন ‘গরিবের হক’ চামড়া পানির দামেও বিক্রি করা যায়নি, তখনো আমরা অনেকেই সিন্ডিকেট দেখেছি। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ে, কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখি কুইকরেন্টাল সিন্ডিকেট। এমন সিন্ডিকেট আছে আরও অনেক। প্রশ্ন হলো, কীভাবে এতগুলো ছোট-বড় সিন্ডিকেট টিকে থাকে? শুধু টিকে থাকে না, কেন ক্রমাগত আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং জনগণকে শোষণ-নিপীড়ন করে ক্রমাগতভাবে?

একটা সরকার কত বড় হবে, তার ক্ষমতার চৌহদ্দিতে কী কী থাকবে এগুলো নিয়ে আধুনিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শুরুর সময় থেকেই বিতর্ক চলেছে, চলছে এখনো। সমাজতান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মধ্যে সরকারের ভূমিকা নিয়ে একেবারে উল্টো অবস্থান আছে। কিন্তু এমনকি পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যেও সরকারের ভূমিকা কতটুকু থাকবে সেটা নিয়েও বিতর্ক হয়।

পুঁজিবাদী অর্থনীতিবিদের মধ্যেই একটা অংশ মনে করেন অর্থনীতিতে সরকার অনেক সক্রিয় থাকবে। সরকার বাজারকে নানাভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবে, প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ করবে; এমনকি কিছু সেক্টরকে কখনো পাবলিক সেক্টরের বাইরে দেওয়া যাবে না। কিন্তু এর বিপরীত ঘরানার অর্থনীতিবিদেরা বলেন, অর্থনীতিতে সরকারের যত কম নিয়ন্ত্রণ থাকবে, সেটা তত ভালো। একটা বাজার সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়াই তার ‘অদৃশ্য হাত’-এর মাধ্যমে নিজের মতো করেই সবকিছু ঠিক করে নেবে এমন একটা তত্ত্বে বিশ্বাস করেন এ ঘরানার অর্থনীতিবিদেরা। কিন্তু এ অর্থনীতিও সরকারকে দূরে থাকতে বলে, কোনো পক্ষ নিতে বলে না। সেই ব্যবস্থাও সরকারকে কিছু আইন এবং নিয়মকানুন তৈরি করে সেটা নিশ্চিত করতে বলে।

ক্লিপটোক্র্যাসি বা তস্করের শাসনে সরকারই হচ্ছে ছোট-বড় সব ‘সিন্ডিকেট’এর প্রধান ‘সিন্ডিকেট’। পরিহাসের ব্যাপার হচ্ছে, আমরা আমাদের যাবতীয় সংকটে সিন্ডিকেট আবিষ্কার করি এবং সেটা থেকে মুক্তি চাই ‘আসল সিন্ডিকেটের’ কাছেই।

কিছু কিছু অর্থনীতি কখনো এমন পর্যায়ে চলে যায় যখন সরকার তার সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা কিছু ব্যবসায়ী পুঁজিপতিকে অন্যায়ভাবে নানা সুযোগ-সুবিধা দিতে থাকে। সরকারের ক্রনি (বন্ধু) না হলে কারও পক্ষে ব্যবসায় টিকে থাকা কিংবা উন্নতি করা সম্ভব হয় না। এটা স্বজনতোষী পুঁজিবাদ (ক্রনি ক্যাপিটালিজম) বলে পরিচিত। এটা খুব খারাপ একটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। কিন্তু ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশ এ পর্যায়ও পেরিয়ে গেছে কয়েক বছর আগেই। বাংলাদেশ তাহলে এখন কোথায়?

পরিবহন তো বটেই, অন্যান্য সেক্টরের ছোট-বড় সব ব্যবসায়ী এ দেশের নাগরিক। রাষ্ট্রের কাছে, সরকারের কাছে ন্যায়ানুগ আচরণ পাওয়া তাদেরও অধিকার। দেশের ব্যবসায়ী-পুঁজিপতিদের জন্য একটা অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশ নিশ্চিত করাও সরকারের দায়িত্ব। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালোভাবে বিকশিত হলে সেটার সুফল পৌঁছে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ঘরে। সরকারের ভূমিকা থাকার কথা খেলার মাঠের রেফারির মতো, নিয়মকানুনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা; যে পক্ষই নিয়ম ভাঙুক সেই পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু সাম্প্রতিক ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ কাণ্ডে ঘটেনি সেটা।

দেশের সব সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থার সামনে দিয়ে তথাকথিত ই-কমার্স সাইটগুলো মানুষকে লুট করল। তাদের মধ্যে ছিল অসংখ্য বেকার তরুণ, যারা করোনার সময় ভয়ংকর আর্থিক সংকটে পড়ে তাদের সঙ্গে ‘ব্যবসা’ করতে গিয়েছিল। অনেকে পরিচিতজনদের কাছ থেকে ঋণ, পরিবারের সামান্য সঞ্চয় নিয়ে নেমেছিল। কিন্তু তাদের পথে বসানো হলো। মর্মান্তিক নিষ্ঠুরতা হয়েছে এই তরুণদের সঙ্গে।

একটু আগেই বলেছিলাম বাংলাদেশ স্বজনতোষী পুঁজিবাদী ব্যবস্থায়ও নেই। কখনো সরকার আর লুণ্ঠনকারী ব্যবসায়ী-পুঁজিপতি মিশে একাকার হয়ে যায়, আলাদা করা যায় না তাদের। লেনদেনের এক অংশীদারত্ব তৈরি হয় শাসক এবং লুটপাটকারী পুঁজিপতিদের মধ্যে; পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র লুণ্ঠনের অংশ হয়ে পড়ে। সেসব পুঁজিপতির অনুকূলে আইন তৈরিসহ (যেমন: ইনডেমনিটি দিয়ে কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের আইন) অন্যায় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয় জনগণের স্বার্থকে পুরোপুরি বিসর্জন দিয়ে। এটা ক্লিপটোক্র্যাসি বা তস্করের শাসনব্যবস্থা। বাংলাদেশে এখন এ ব্যবস্থাই চলমান বলে মনে হয়।

ক্লিপটোক্র্যাসি বা তস্করের শাসনে সরকারই হচ্ছে ছোট-বড় সব ‘সিন্ডিকেট’এর প্রধান ‘সিন্ডিকেট’। পরিহাসের ব্যাপার হচ্ছে, আমরা আমাদের যাবতীয় সংকটে সিন্ডিকেট আবিষ্কার করি এবং সেটা থেকে মুক্তি চাই ‘আসল সিন্ডিকেটের’ কাছেই।

ডা. জাহেদ উর রহমান ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক