সম্পন্ন মানবের শুভাগমনে ইসলামের পূর্ণতা

আল্লাহ তাআলা ভালোবেসে সৃষ্টি করলেন বিশ্ব-নিখিল। তিনি তাঁর সৃষ্টিতে দেখতে চান ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। তাই নিজের ভালোবাসার প্রতিবিম্ব হিসেবে পাঠালেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, মানবজাতির সর্বোত্তম আদর্শ আখেরি নবী ও সর্বশেষ রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে, যিনি ইনসানে কামিল বা পরিপূর্ণ মানব।

মানবীয় অবয়বে আল্লাহর গুণাবলির সমাহার ঘটেছিল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যে। তাঁর শুভাগমনে ইসলামের পরিপূর্ণতা ঘটেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর রং! আর আল্লাহর রং অপেক্ষা অধিকতর সুন্দর রং কী হতে পারে? আমরা তাঁরই ইবাদতকারী অনুগত বান্দা।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৩৮)।

প্রকৃতির ধর্ম, মানবধর্ম, ভালোবাসা ও প্রেমের ধর্ম। মহান আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলামের পূর্ণতা দানের জন্যই মহানবী (সা.)-এর আবির্ভাব। কোরআনের ভাষায়, ‘তিনি তাঁহার রাসুলকে পথনির্দেশ ও সত্য ধর্মসহ প্রেরণ করেছেন অপর সকল ধর্মের ওপর উহাকে জয়যুক্ত করার জন্য। আর সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট। মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল, তাঁহার সহচরগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল। আপনি তাদের আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় রুকু ও সিজদায় অবনত দেখবেন। তাদের লক্ষণ তাদের মুখমণ্ডলে সিজদার প্রভাব পরিস্ফুট থাকবে। তাওরাতে তাদের বর্ণনা এইরূপ এবং ইঞ্জিলেও তাদের বর্ণনা এরূপই। তাদের দৃষ্টান্ত একটি চারাগাছ, যা হতে নির্গত হয় কিশলয় অতঃপর ইহা শক্ত ও পুষ্ট হয় এবং পরে কাণ্ডের ওপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে, যা চাষির জন্য আনন্দদায়ক। এভাবেই আল্লাহ মুমিনদের সমৃদ্ধি দ্বারা কাফিরদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করেন। যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের।’ (সুরা-৪৮ ফাৎহ, আয়াত: ২৮-২৯)।

মহানবীর সুমহান আদর্শ ও চরিত্র বলেই ইসলামের প্রচার ও প্রসার ঘটেছে। ‘অবশ্যই আপনি মহান চরিত্রে সর্বোচ্চ পর্যায়ে অধিষ্ঠিত।’ (সুরা-৬৮ কলম, আয়াত: ৪)। ‘অবশ্য তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের নিকট এক রাসুল এসেছেন, তোমাদের যা বিপন্ন করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক, তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী। তিনি মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল ও দয়ালু। অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আপনি বলুন, “আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোনো ইলাহ বা উপাস্য তথা ইবাদতের উপযুক্ত মাবুদ নাই। আমি তাঁরই ওপর নির্ভর করি এবং তিনি মহান আরশের অধিপতি।”’ (সুরা-৯ তাওবাহ, আয়াত: ১২৮-১২৯)।

জ্বরের মুখে যেমন মিষ্টি দ্রব্যও তিক্ত মনে হয়, তেমনি মন্দ লোকের নিকট ভালো জিনিসও অসহ্য লাগে। কোরআনের ভাষায়, ‘তারা তাদের মুখের ফুৎকারে আল্লাহর জ্যোতি নির্বাপিত করতে চায়, কাফিরেরা অপ্রীতিকর মনে করলেও আল্লাহ তাঁর নূরের পূর্ণ উদ্ভাসন ব্যতীত অন্য কিছু চান না। মুশরিকেরা অপ্রীতিকর মনে করলেও তিনি পথনির্দেশ ও সত্য ধর্মসহ তাঁর রাসুল প্রেরণ করেছেন।’ (সুরা-৯ তাওবাহ, আয়াত: ৩২-৩৩)। ‘অপরাধীরা অপ্রীতিকর মনে করলেও আল্লাহ তাঁর বাণী অনুসারে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ (সুরা-১০ ইউনুস, আয়াত: ৮২)।

প্রিয় নবীজি (সা.)–এর ভালোবাসা মুমিনের ইমান; সুন্নাতের অনুসরণই ভালোবাসার প্রমাণ। কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হে রাসুল!) আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার অনুসরণ করো; ফলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন, তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ৩১)।

হিংসা-বিদ্বেষ ও কলুষমুক্ত অন্তর নবীজি (সা.)-এর মহান সুন্নাত সর্বোত্তম আদর্শ। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে (আদর করে) বলেছেন, ‘হে আমার প্রিয় সন্তান! যদি তুমি পারো তবে সকাল-সন্ধ্যা রাত-দিন এভাবে অতিবাহিত করো যেন তোমার অন্তরে কারও জন্য কোনো হিংসা-বিদ্বেষ না থাকে তবে তাই করো।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমার অন্যতম সুন্নাত আদর্শ। আর যারা আমার সুন্নাত আদর্শকে (আমলের মাধ্যমে) ভালোবাসবে তারা প্রকৃত আমাকেই ভালোবাসে; আর যারা আমাকে ভালোবাসে তারা আমার সঙ্গেই জান্নাতে থাকবে।’ (তিরমিজি: ২৭২৬)।

ইসলামের শিক্ষা হলো ‘প্রতিবাদের শ্রেষ্ঠ পন্থা উত্তম আচরণ’। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মন্দের প্রতিবাদ করো উত্তম দ্বারা, তারা যা বলে আমি সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৯৬)।

বিশ্বশান্তির জন্য মহানবী (সা.)-এর অনুসৃত আদর্শ অনুসরণ ও ইতিবাচক কর্মকালই একমাত্র পথ।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব

[email protected]