হতাশা থেকে মুক্তি মুমিনের বড় পুরস্কার

ধর্মের প্রতীকী ছবি।

বিশ্বাস, আশা ও ভালোবাসা মুমিনের জীবনের প্রধান বৈশিষ্ট্য। বিশ্বাসী, আশাবাদী, ভালোবাসায় পরিপূর্ণ মানুষ ব্যর্থ হয় না এবং হতাশাগ্রস্তও হয় না। হতাশা আসে ব্যর্থতার গ্লানি থেকে। সাধারণত মানুষ প্রাপ্তিতে তৃপ্ত ও অপ্রাপ্তিতে অতৃপ্ত হয়। তাৎক্ষণিক লাভ-ক্ষতিকে মানুষ সফলতা ও ব্যর্থতার মানদণ্ড মনে করে এবং সেভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।

কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি যখন মানুষকে নিয়ামত দান করি, তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও পাশ কাটিয়ে যায়। আর যদি কোনো অনিষ্ট তাকে স্পর্শ করে, তখন সে হতাশ হয়ে পড়ে।’ (সুরা ১৭ ইসরা, আয়াত: ৮৩)।

মুমিনের কাছে দুনিয়ার জীবন মহাসফরের একটি মঞ্জিলমাত্র এবং দুনিয়ার জীবন পরকালের শস্যক্ষেত্র। এখানকার সাময়িক সুখে মুমিন বিভোর ও বিমোহিত হন না এবং সাময়িক দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণা-যাতনায় মুমিন বিচলিত হন না। মুমিন সর্বদা চূড়ান্ত লক্ষ্যপানে অবিচল থেকে দৃঢ় পদে অবিরাম চলতে থাকেন তঁার মহাযাত্রায়।

আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে বলেন, ‘বলো, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’ (সুরা ৩৯ জুমার, আয়াত: ৫৩)।

মুমিন কখনো ক্লেশে ক্লিষ্ট হয়ে শ্রান্ত হন না। তঁারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে ধৈর্য ধারণ করেন। মহান আল্লাহর পবিত্র বাণী, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো এবং দৃঢ়তা অবলম্বন করো আর আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা ৩ আলে ইমরান, আয়াত: ২০০)।

রজনী শেষে যেমন প্রভাত আসে, তেমনি দুঃখের পর সুখ আছে। কাজেই কোনো দুঃখে মুষড়ে পড়া মুমিনের সাজে না। মানুষ যত বড় পাপীই হোক, আল্লাহকে ডাকলে আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দেন। আপনি যত দুঃখ-কষ্টের মধ্যেই থাকুন না কেন, আল্লাহকে স্মরণ করুন; নিশ্চয় তিনি আপনার ডাকে সাড়া দেবেন। এটা আল্লাহর ওয়াদা, তিনি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না। এ বিষয়ে কোরআন কারিমের ঘোষণা, ‘তামাদের পালনকর্তা বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি সাড়া দেব”।’ (সুরা ৪০ মুমিন, আয়াত: ৬০)। তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা হতাশ হয়ো না এবং দুঃখ কোরো না, যদি তোমরা মুমিন হও, তবে তোমরা জয়ী হবেই।’ (সুরা ৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৯)। ‘তিনি অসহায়ের আহ্বানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে এবং তিনি বিপদ-আপদ দূর করে দেন।’ (সুরা ২৭ নামল, আয়াত: ৬২)।

সুখ-দুঃখ জীবনেরই অংশ, এ জগতের এর কোনোটিই স্থায়ী নয়। কোরআনের মহাবাণী, ‘কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে, অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি রয়েছে।’ (সুরা ৯৪ ইনশিরাহ, আয়াত: ৫-৬)। এই সুরার ব্যাখ্যায় মুফাসসিররা লিখেছেন, এতে প্রতীয়মান হয়, একটি কষ্টের দুই পাশে দুটি বা আরও বেশি সুখ বিদ্যমান এবং দুটি বা আরও অধিক সুখের মধ্যে একটিমাত্র কষ্ট থাকতে পারে।

মুমিন কখনো হতাশ বা নিরাশ হতে পারেন না। আল–কোরআনের সতর্কবাণী, ‘তারা (ফেরেশতারা) বলল, “আমরা আপনাকে সত্য সুসংবাদ দিচ্ছি; আপনি নৈরাশ্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না।” তিনি (ইব্রাহিম আ.) বললেন, “আপন প্রভুর রহমত থেকে কে নিরাশ হতে পারে পথভ্রষ্টরা ব্যতীত?’” (সুরা ১৫ হিজর, আয়াত: ৫৩-৫৬)।

হজরত ইয়াকুব (আ.) দীর্ঘ অপেক্ষার পরও আশাবাদী ছিলেন। সে আশার বাণী কোরআনে বিবৃত হয়েছে। তিনি তাঁর সন্তানদের বলেছেন, ‘হে আমার সন্তানেরা! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সন্ধান করো। তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চিত জেনো, আল্লাহর রহমত থেকে তো অবিশ্বাসী কাফের ছাড়া অন্য কেউ নিরাশ হতে পারে না।’ (সুরা ১২ ইউসুফ, আয়াত: ৮৭)।

ফলাফলের ভরসা আল্লাহর ওপর রেখে মুমিন শেষ পর্যন্ত চেষ্টা-সাধনা চালিয়ে যাবেন। এ বিষয়ে কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ধৈর্যের সঙ্গে, নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করো। অবশ্য তা কঠিন; শুধু বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।’ (সুরা ২ বাকারা, আয়াত: ৪৫)।

বিপদে বিহ্বলতা দূর করার জন্য আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে তাঁকে স্মরণ করা ও ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর শরণাপন্ন হওয়ার নির্দেশ রয়েছে কোরআন কারিমে। ‘যারা বিশ্বাস করে এবং তাদের অন্তরগুলো আল্লাহর জিকির দ্বারা প্রশান্তি লাভ করে, জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণ দ্বারা অন্তর শান্তি পায়।’ (সুরা ১৩ রাআদ, আয়াত: ২৮)।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক

smusmangonee@gmail,com