৫০ বছরে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কতটা জয় এল

ঠিক ৫০ বছর আগের এই সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন মাদকের অপব্যবহারকে ‘এক নম্বর গণশত্রু’ ঘোষণা করেছিলেন। এই অপরাধ দমনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশগুলোকেও কঠোর পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে—এমন কথাও তিনি বলেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক রাজনীতি, সেনাবাহিনী, অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধও বিস্তৃত হয়েছে।

বর্তমানে আমাদের ভেষজ ও কৃত্রিম উপায়ে মাদকের উৎপাদন রয়েছে। এসব অবৈধ মাদক পাচার করার জন্য আবার ছোট-বড় নানা পর্যায় রয়েছে। মাদক পাচারের জন্য শাস্তি রয়েছে। অতিরিক্ত কারাবাস রয়েছে। অর্থ পাচার রয়েছে এবং এর সঙ্গে নানা ধরনের সংগঠিত অপরাধ জড়িয়ে আছে। সব মিলিয়ে মাদকের এই চক্র মোটেও দুর্বল নয়, ভীষণ শক্তিশালী।

১৯৭১ সাল থেকে মার্কিন প্রশাসনের প্রতিটি সেক্টর মাদকের বিরুদ্ধে পুনরায় যুদ্ধে নামে। যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিমালা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে সমাজের সঙ্গে এতটাই মিশে গেছে যে রাজনৈতিক নেতারা বাধ্য হয়েই এ নীতিমালা অপরিবর্তিত রেখেছেন। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অ্যাটর্নি জেনারেল ‘স্মার্ট অন ক্রাইম ইনিশিয়েটিভ’ নামের একটি শক্তিশালী মাদকবিরোধী নীতি গ্রহণ করেছিলেন। মাদক অপরাধের জন্য যে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, কঠোর ও অহেতুক কারাদণ্ড দেওয়া হয়, তা এই পলিসির মাধ্যমে মোকাবিলার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মূল সমস্যাগুলোকে প্রশ্ন না করে এই উদ্যোগ কেবল কারাগারের সমালোচনা করেই শেষ করা হয়েছে।

২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বিশ্বের সবাইকে মাদকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। এই আহ্বানের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেন।

মার্কিন নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এখন পর্যন্ত জীবন রক্ষাকারী ও ব্যয় সাশ্রয়ী সেবাগুলোর ব্যাপারে একটু কম সমর্থন রয়েছে। ভেজাল ওষুধ, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও আর্থিক ব্যয় হ্রাসের সঙ্গে এই সেবাগুলো সম্পর্কিত। ক্ষতি-হ্রাসকারী সেবাগুলো এখন আগের চেয়ে আরও বেশি প্রয়োজন। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বলছে, গত বছরের মে মাস পর্যন্ত প্রায় ৮১ হাজার মার্কিন নাগরিক মাদকের অতিরিক্ত ডোজ গ্রহণের কারণে মারা গেছেন। সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, এই মৃত্যুর সংখ্যা মার্কিন নীতিনির্ধারকদের টনক নাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন এই ২০২১ সালে এক আশ্চর্যজনক সাহসী ওষুধ নীতি প্রণয়ন করেছে, যা চিকিৎসা সম্প্রসারণসহ ওষুধজনিত ক্ষতি কমাবে।

বাইডেন প্রশাসন ওষুধ যুদ্ধের প্রচলিত পদ্ধতি থেকে আমূল সরে এসেছে এবং ‘প্রমাণভিত্তিক ক্ষতি হ্রাস প্রচেষ্টা’র ওপর জোর দিয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত করেছে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবাকে। যেমন পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করা, জীবাণুমুক্ত ইনজেকশন সরবরাহ করা এবং এসবের মাধ্যমে হেপাটাইটিস সি ও এইচআইভি যেন না ছড়ায়, তা পরীক্ষা করা। মার্কিন সরকার এই ক্ষতিহ্রাসকরণ পরিষেবা খাতে ৩০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে ঘোষণা করেছে।

বর্তমানে বাইডেন প্রশাসন যখন ওষুধ নীতি পরিবর্তন করছে, তখন কেউ কেউ আশা করছে যে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষতি হ্রাসকরণ নীতির দিকে ঝুঁকবে। আমাদের উচিত সুইজারল্যান্ডের মতো দেশগুলোর অভিজ্ঞতার দিকে আরও নজর দেওয়া। তারা ক্ষতি হ্রাসকরণ পরিষেবায় ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে এবং যারা ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক নেয়, তাদের সংখ্যা কমিয়েছে। একই সঙ্গে কমিয়েছে এইচআইভি সংক্রমণের হারও।

দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, যেসব দেশে ক্ষতি হ্রাসকরণ পরিষেবাগুলো সীমিত বা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, সেসব দেশই বিশ্বজুড়ে হেপাটাইটিস, যক্ষ্মা ও এইচআইভি ছড়িয়ে দিতে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে। যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ, যারা এইচআইভি/এইডস প্রতিরোধে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে। এখানে দুটি ইস্যু ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ২০০৩ সাল থেকে এইচআইভি/এইডস মোকাবিলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী ৮৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে। কিন্তু আমরা যদি এইচআইভি/এইডসকে বিশ্বস্বাস্থ্যের হুমকি বলে মনে করি, তবে অবশ্যই ওষুধ নীতি পরিবর্তন করতে হবে। যারা দীর্ঘদিন ধরে ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ করে আসছে, তারা একই সুচ একাধিকজন ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজে এইচআইভি ছড়ানোর কাজ করেই যাবে। এদের ক্ষতি হ্রাসকরণ পরিষেবার আওতায় আনতে হবে।

মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এই বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আমাদের সবাইকেই মাদকের কবল থেকে বের করে আনা।

ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

হেলেন ক্লার্ক নিউজিল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী

ওলুসেগান ওবাসানজু নাইজেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট

রিকার্ডো লাগোস চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট লেখকদের তিনজনই গ্লোবাল কমিশন অন ড্রাগ পলিসির কমিশনার