অন্য ভুক্তভোগীদের পাশেও দাঁড়াক প্রশাসন

সম্পাদকীয়

সমাজে সবলের কাছে দুর্বলেরা একপ্রকার কোণঠাসা হয়ে থাকে। সামাজিক প্রতিপত্তির সঙ্গে সেখানে কাজ করে রাজনৈতিক প্রভাবও। প্রশাসনিকভাবেও তারা সুবিধাভোগী থাকে বেশি। ফলে ভুক্তভোগী মানুষের অসহায় আত্মসমর্পণ ছাড়া কিছুই করার থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে বরগুনায় তিন বোনকে অনশনে নামতে হলো। পৈতৃক ভিটেমাটি দখল হয়ে যাওয়ার পর প্রশাসনের অসহযোগিতার কারণে সেসব ফেরত পাচ্ছিলেন না মা-বাবাহারা তিন বোন। একপর্যায়ে গত বুধবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে কাফনের কাপড় পরে তাঁরা এমন কর্মসূচি নেন। তবে অনশন শুরুর প্রায় পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে জেলা পুলিশের সহায়তায় জমি ও বাড়ি ফিরে পান তাঁরা। আমরা এ ঘটনায় পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। সেই সঙ্গে এ প্রশ্নও রাখতে চাই, অন্যায়ের বিচার পাওয়ার জন্য কেন অনশনে বসতে হলো এই তিন তরুণীকে। দুই–আড়াই বছর ধরে প্রশাসনের কাছে কেন অবহেলার শিকার হতে হলো তাঁদের।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বরগুনার বামনা উপজেলার গোলাঘাটা গ্রামের বাসিন্দা এই তিন বোনের মা-বাবা মারা যাওয়ার পর তাঁদের দেখার কেউ ছিল না। বাধ্য হয়ে বড় বোন চট্টগ্রামে গিয়ে পোশাক কারখানায় কাজ নেন। ছোট দুই বোনকেও তাঁর সঙ্গে নিয়ে যান। স্বল্প আয়ের চাকরি করে বোনদের পড়াশোনাও করাচ্ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালে বাড়ি এসে দেখেন, এলাকার প্রভাবশালীদের যোগসাজশে তাঁদের চাচারা পৈতৃক জমি ও বাড়ি দখল করে নিয়েছেন। তাঁদের অবর্তমানে সেসব সম্পত্তি নিলামে বিক্রি হয়েছে বলা হলেও ভূমি অফিসে গিয়ে জানা যায়, তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। দখলবাজি করে তাঁদের সঙ্গে বড় ধরনের অন্যায় করা হয়েছে। তখন থেকে সম্পত্তি ফেরত পেতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। একপর্যায়ে অনশনে বসতে বাধ্য হন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত দেরিতে হলেও স্থানীয় প্রশাসনের বোধোদয় হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতিতে জমি ও বাড়ি দখলমুক্ত করে তিন বোনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। জমিতে ঘর তোলার জন্য অর্থসহায়তাও দেওয়া হয় তাঁদের।

এ মাসের শুরুতে আরেকটি প্রতিবেদনে প্রকাশ পায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক এলাকায় এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ী পরিবারের বাগানবাড়ির জন্য ভিটেমাটি হারাতে হয়েছে অনাথ তিন বোনকে। পৈতৃক বাড়ি ও জমি হারিয়ে ফুফু-চাচার সঙ্গে গ্রামের এক পরিত্যক্ত রান্নাঘরে আশ্রয় নিতে হয়েছে তাঁদের। এমন অনেক ঘটনাই আমরা দেখতে পাই। এ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের একটাই চাওয়া, স্থানীয় প্রশাসন তাঁদের পাশে দাঁড়াক। আমরা চাই, প্রশাসন তাঁদের প্রতি মানবিক সাড়া দিক। এর মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।